কোন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না
গর্ভধারণের বিষয়টি আসলে একটি হিসেবের সাথে জড়িত। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা যায় পিরিয়ড বা মাসিকের দিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। আবার অষ্টম দিন থেকে ১৭ দিন পর্যন্ত গর্ভধারণের মোক্ষম সময়।
১৮ তম দিন থেকে পিরিয়ড হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ সময়। অর্থাৎ পিরিয়ডের ৭ দিন আগে ও পরের সময় নিরাপদ।
এ সময়ে গর্ভধারণ হয় না। মাঝামাঝি দিনগুলোতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা একটি পদ্ধতি,
এই পদ্ধতিতে আপনি কোনরকম জন্মনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহার না করেই সহবাস করতে পারবেন,
এবং আরও জানতে পারবেন কোন সময় আপনার গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
এই পদ্ধতিতে গণনা করে বোঝা যায় মাসের কোন সময় আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি
এবং কোন সময় আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে কম।
এখানে আপনি আপনার বিভিন্ন শারীরিক বিভিন্ন লক্ষনের ব্যাপারে জানবেন।
আপনি এই পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নিজে নিজে বই পড়ে শিখতে পারবেন না।
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকেই আপনি সঠিকভাবে শিখতে পারবেন।
এক নজরে – প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছু কথা
• আপনি প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতির নিয়মগুলি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন,
তাহলে এই পদ্ধতি ৯৯% পর্যন্ত কার্যকর।
অর্থাৎ প্রতি বছর প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারি ১০০ জন মহিলার মধ্যে মাত্র ১ জন গর্ভবতী হন।
• সঠিক নিয়ম অনুযায়ী যদি এই পদ্ধতি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে এর কার্যকারিতা অনেক অংশেই কমে যায়। এটি ৯৯% কার্যকারী করতে সময় এবং দায়িত্ব নিয়ে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়।
• এর কোন শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এছাড়া এই পদ্ধতি দিয়ে আপনি বের করে নিতে পারেন আপনার মাসিক চক্রের কোন দিনগুলো গর্ভবতী হওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়।
• আপনার প্রতি মাসিক চক্রের কিছু দিন আছে যেগুলো গর্ভবতী হওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়।
সেই সময় আপনার কিছু শারীরিক উপসর্গ হয় ও কিছু লক্ষন দেখা দেয়।
সেই শারীরিক উপসর্গ ও লক্ষণগুলো কি কি তা আপনাকে বুঝতে হবে।
সেই জন্য আপনাকে প্রতিদিন লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে বিভিন্ন শারীরিক লক্ষন কিংবা পরিবর্তন
– যেমন আপনার শরীরের তাপমাত্রা, আপনার স্রাবের ধরণ, রকম ইত্যাদি।
এইভাবে যদি আপনি এই শারীরিক লক্ষণগুলি ৩-৬ মাসিক চক্র ধরে খেয়াল করেন,
তাহলে আপনি নিজে বুঝতে পারবেন কোন সময় সহবাস করলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
এবং কোন সময় ঝুঁকি কম। তাই এই পদ্ধতি সঠিকভাবে শিখতে প্রায় ৩-৬ মাসিক চক্র লাগে।
• আপনার যদি কোন শারীরিক সমস্যা হয়, বা আপনি কোন শারীরিক বা মানসিক চাপে থাকেন বা ভ্রমন করেন, তাহলে আপনার শারীরিক লক্ষনগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।
• আপনার যখন গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে বেশী সম্ভবনা, তখন যদি আপনি সহবাস করতে চান, তাহলে তখন আপনাকে কোন অস্থায়ী জন্ম নিরোধ পদ্ধতি ব্যাবহার করতে হবে যেমন কনডম (condom), ডায়াফ্রাম (diaphragm), বা ক্যাপ (cap)।
• প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি এবং কনডম ব্যবহার করে আপনি নিজে যৌন রোগ (STI – sexually transmitted infections) থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।
প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে?
এই পদ্ধতিতে প্রধান লক্ষ হচ্ছে গর্ভনিরোধ করা।
এটি করার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট সময়ে
(আপনার যখন গর্ভধারন করার সবচেয়ে বেশি সম্ভবনা তখন) সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে,
বা যদি সেই সময় সহবাস করেনও, তাহলে অস্থায়ী গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যাবহার করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ ও লক্ষণ দেখে আপনাকে বুঝতে হবে সেই সময় আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু এবং তখন সহবাস করলে, আপনি গর্ভবতী হবেন কি না।
একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে এই পদ্ধতিটি শিখে নেওয়া খুবই জরুরী। আমরা এখন যে তথ্য আপনাকে দিবো, তা আপনাকে এই পদ্ধতি ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক ধারণা দিবে। তবে এই তথ্যকে সঠিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণের বিকল্প ধরা যাবে না!
প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতিতে ৩ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রণালী আছে। এই সব প্রণালী একযোগে ব্যাবহার করলে আমরা প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্প
না পদ্ধতির কার্যকারিতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে পারি। সেই ৩ টি প্রণালী হল –
• আপনার মাসিক চক্রের কোন পর্যায়ে আপনি আছেন তা গননা করা
• প্রতিদিন আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা
• আপনার যোনিমুখে যা পরিবর্তন হচ্ছে তা লক্ষ করা। এর জন্য আপনার স্রাবের ধরণ ও রকম পর্যবেক্ষণে রাখাই যথেষ্ট।
এই প্রণালির ব্যাপারে আরও বিস্তারিত নিম্নে দেয়া হল।
আপনার মাসিক চক্র
একজন মহিলার মাসিক চক্র ধরা হয় তার মাসিকের প্রথম দিন থেকে তার পরের মাসিকের প্রথম দিন পর্যন্ত। মহিলাদের মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত্ব তা ২৪- ৩৫ দিন পর্যন্ত হয়, তবে মাসিক চক্র এর চেয়ে ছোট বা এর চেয়ে বড়ও হতে পারে। গড়ে মাসিক চক্র ২৮ দিন ধরা হয়।
ডিম্বস্ফোটন আপনার মাসিক চক্রের সময়-
• আপনার শরীর হরমোন নিঃসরণ (secrete) করে যা আপনার ডিম্বাশয়য়ের (ovary) উপর কাজ করে
• আপনার একটি ডিম্বাশয়য়ে সংরক্ষিত ছোট্ট একটি ডিম্বাণু (ovum) আস্তে আস্তে বড় এবং পরিপক্ক (mature) হতে থাকে
• যখন এই ডিম্বাণু পরিপক্ব হয় তখন তা ডিম্বাণু থেকে বহিরাগত (released) হয়
(এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডিম্বস্ফোটন – ovulation) ।
ডিম্বানু এখন আপনার গর্ভনালী (fallopian tube) দিয়ে আপনার জরায়ুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
মাঝে মাঝে প্রথম ডিম্বাণু বহিরাগত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য ডিম্বাশয় থেকেও
আরেকটি ডিম্বাণু বহিরাগত হতে পারে।
মাসিক চক্রের ঠিক মধ্য সময়ে (mid-cycle) এই ডিম্বস্ফোটন (ovulation) হয়।
সেই সময়টি সাধারণত্ব আপনার পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১০-১৬ দিন আগে হয়।
তবে এটি নিশ্চিত একটি সময় নয়। আপনার মাসিক চক্রের উপরে নির্ভর করে এই সময় আগে পিছে হতে পারে।
ঠিক কখন নিশ্চিত ডিম্বস্ফোটন হবে সেই ব্যাপার সবসময়ই কিছুটা অনিশ্চিত।
যখন আপনি আপনার গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সম্ভব্য সময় গণনা করবেন,
এই অনিশ্চয়তাটি আপনাকে মনে রাখতে হবে, এবং সেই অনুযায়ী হিসাব করতে হবে।
যখন শুক্রাণু (sperm) একটি ডিম্বাণুর(ovum) সাথে মিলিত হয় (fertilization occurs), তখনই গর্ভধারণ করা সম্ভব। সহবাসের পর শুক্রাণু (sperm) একজন মহিলার শরীরে প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
আপনাকে প্রায় ৫-৬ টি মাসিক চক্র ধরে এই গননা করতে হবে। এর কারণ আপনার মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য সময়ের সাথে সাথে বদলায় এবং এই পদ্ধতি ব্যাবহারের জন্য আপনার গননা যথাসম্ভব নির্ভুল হওয়া উচিত।
এই গণনা করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে ক্যালেন্ডার পদ্ধতি (calendar method)।
এটি এইভাবে করতে হবে-
• প্রতি মাসে আপনি আপনার মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য সঠিক ভবে লিখে রাখুন।
এই ভাবে ৬ মাস করুন।
• আপনার সবচেয়ে ছোট মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য এবং আপনার সবচেয়ে লম্বা মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য নিন।
• আপনার সবচেয়ে ছোট মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য থেকে ১৮ দিন বাদ দিন।
আপনার যেই সময়টি আসবে, মাসিকের সেই দিন থেকে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী।
• এইবার আপনার সবচেয়ে লম্বা মাসিক চক্রের থেকে ১১ দিন বাদ দিন।
এইবার যেই সময়টি আসবে, মাসিক চক্রের সেই দিন পর্যন্ত আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী।
• এইভাবে আপনি ভের করতে পারেন আপনার মাসিক চক্রের কোন দিন থেকে কোন
দিন পর্যন্ত গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে উত্তম সময়। এখন এই সময় আপনি সহবাস থেকে
বিরত থাকতে হবে এবং যদি সহবাস করেনও তাহলে কোন অস্থায়ী জন্ম বিরতিকরন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
উদাহরণ-
আপনার সবচেয়ে ছোট মাসিক চক্র যদি ২৫ দিন হয় এবং আপনার সবচেয়ে লম্বা মাসিক চক্র যদি ৩৩ দিন হয় তাহলে –
• ২৫ থেকে ১৮ বাদ দিলে থাকে ৭
• ৩৩ থেকে ১১ বাদ দিলে থাকে ২২
• এখন বের হয়ে গেলো আপনার মাসিক চক্রের কোন দিন থেকে কোন
দিন আপনার গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সম্ভব্য সময়।
আপনি আপনার মাসিক চক্রের ৭ দিন থেকে ২২ দিন পর্যন্ত সহবাস করবেন না।
তাছাড়া আপনি ovulation calculator ব্যবহার করতে পারেন।
কোন সময় আপনার গর্ভধারণ করার সবচেয়ে বেশী সম্ভবনা তার একটি ধারণা
পাবেন ovulation calculator ব্যবহার করে।
তবে এটি মনে রাখতে হবে যে এটি ১০০% সঠিক নয় এবং ovulation calculator এর দেওয়া
তারিখ ডিম্বস্ফোটনের নিশ্চিত তারিখ হিসেবে ধরে নেওয়া যাবেনা।
তাপমাত্রা পরিমাপ
আপনার যখন ডিম্বস্ফোটন (ovulation) হয়, তার ঠিক পরপর আপনার শরীরের তাপমাত্রা হালকা বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিটি এই ভিত্তির উপরে তৈরি করা।
আপনাকে একটি ডিজিটাল থার্মোমিটার (digital thermometer) বা
এমন একটি থার্মোমিটার ব্যাবহার করতে হবে যা প্রাকৃতিক-উপায়ে-পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতির জন্য তৈরি।
এই সব থার্মমিটার যেকোনো ঔষধালয়ে (pharmacy) সহজেই পাওয়া যায়।
কান বা কপাল থার্মোমিটার (ear or forehead thermometer)
এই কাজের জন্য উপযুক্ত নয় কারণ এইসব যথেষ্টভাবে সঠিক সংকেত দেয় না।
এই শারীরিক লক্ষণগুলো দেখে এবং খেয়াল রেখে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন
কোন সময় সহবাস করলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে কম সম্ভবনা।
আপনাকে খেয়াল করতে হবে
– শরীরের তাপমাত্রা, স্রাবের ঘনত্ত ও প্রকৃতির উপর এবং এইগুলি পর্যবেক্ষণ করে
আপনাকে বুঝতে হবে কখন সহবাস করলে আপনি গর্ভবতী হবেন না।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com