Breaking News

রক্তাক্ত লাশ । লেখকঃ আরিয়ান সুমন

বুড়িগঙ্গার তীড়ে একটি লাশ পাওয়া গেছে। ২৪/২৫ হবে বয়স।
খবর টা দেখেই চমকে উঠলাম। খাবার রেখে সোজা রুমে চলে আসলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার টা ছেড়ে ভিজতে শুরু করলাম। ভিজতে ভিজতে কান্না থামিয়ে রাখতে পারলাম না।
কিছুক্ষন পরেই আম্মু ডাকতে শুরু করল। আম্মুর ডাক শুনে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলাম।
আম্মুঃ কিরে খাবার রেখে চলে এসেছিস কেন?
আমিঃ ক্ষুদা নেই।
আম্মুঃ ক্ষুদা নেই? নাকি আব্বুর উপড় এখনও রেগে আছিস?
আমিঃ না তেমন কিছুনা
আম্মুঃ দেখ বাবা। ওনি যা বলে তোর ভালোর জন্যই তো বলে। রাগ করলে হবে?
আমিঃ I love you আম্মু।
আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ থেকে পানি বেড়িয়ে গেল।
আম্মুঃ পাগল ছেলে আমার।
বলেই কপালে চুমু একে দিল।
আমিঃ আর খাব না।

আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এই বাজার গুলো নিয়ে আয়।
আমিঃ আচ্ছা দাও যাচ্ছি।
বাজারের লিষ্ট টা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
এর ফাকে পরিচয় টা দিয়ে নেই। আমি আরিয়ান। বাবা মায়ের তিন সন্তানের একজন। এবং বড় ছেলে।
বাজারে ডুকতে যাব তখনি একজন কাধে হাত দিল।
পিছন ফিরে দেখি ওসি সাহেব।
আমিঃ স্যার আসসালামু আলাইকুম।
ওসি সাহেবঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ এখন?
আমিঃ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।
ওসি সাহেবঃ যাক দেখে খুশি হলাম। বাজারে এসেছ বাজার করতে?
আমিঃ জ্বী
ওসি সাহেবঃ গুড। এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থাকবে। আজকে সকালে দেখেছ খবর টা? বুড়িগঙ্গার তীড়ে একটি ছেলের লাশ পাওয়া গেছে? প্রেমের ব্যার্থ হয়ে জীবন দিয়ে দিছে। কি লাভ এখন? না পেলো মেয়ে টাকে না নিজে বাচল। মাঝখানে বাবা মা সব হারালো। আশা করি তুমি আর কোনোদিন এসব করতে যাবেনা।

আমিঃ জ্বী স্যার। হয়তো আজ দুটো লাশ পাওয়া যেত।
ওসি সাহেবঃ সবই আল্লাহর ইচ্ছে। আল্লাহ কার কপালে কি লিখে সেই ভালো জানে। যাক গে আমি চলি। ভালো থেকো।
আমিঃ আপনিও স্যার।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
তারপর বাজার গুলো ঠিক ঠাক করে করলাম।
পথেই পাশের বাড়ির চাচার সাথে দেখা। পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাব তখনি
চাচাঃ কি বাবা কি খবর?
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম চাচা। কেমন আছেন?
চাচাঃ ভালো। তোমার কি অবস্থা? চাকরি বাকরি তো করছ না। আর কতদিন এমন আজাইরা খাবা? আমার ছেলে কে দেখো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে।
আমিঃ জ্বী চাচা ট্রাই করছি।
চাচাঃ হ্যা ট্রাই করতেই থাকো।

মেজাজ টা খারাপ হচ্ছিল। কিছু না বলেই চলে আসলাম ওখান থেকে। এখন হয়ত মনে মনে বেয়াদব বলছে। এদের আর কোনো কাজ নাই? বাড়ির আশে পাশের ছেলেগুলোকে শুধু শুধু ব্লেইম দিবে।
যাহোক বাজার নিয়ে বাসায় গেলাম।
বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বাহিরে আসলাম।
শাওনঃ কিরে কি অবস্থা?
আমিঃ এই তো তোদের কি হাল।
তুষারঃ আচ্ছা সকালের নিউজ টা দেখেছিস? কি একটা অবস্থা প্রেমের জন্য কেউ এভাবে সুইসাইড করতে পারে?
আমি চুপ করেই থাকলাম
শাওনঃ হুম। কি লাভ বল এখন? মেয়েটাকে জীবনে পাইলো না। সাথে বাবা মাকেও একা করে দিয়ে গেল। জীবন টা কত সস্তা।
আমিঃ আচ্ছা ভিডিও দিস তো আমাকে একটু
শাওনঃ ইউটিউব সার্চ করে দেখ।
আমি তাই করলাম।
বুড়িগঙ্গার তীড়ে একটি লাশ পাওয়া গেছে। পুরো ভিডিও টা দেখলাম। ছেলেটা সুইসাইড করেছে।
ছেলের বাবা মায়ের আহাজারি তে আকাশ বাতাস যেন মিশে একাকার।
আমিঃ আচ্ছা বন্ধু আমি বাসায় গেলাম। একটু কাজ আছে।
শাওনঃ আচ্ছা বিকালের কথা মনে আছে তো?
আমিঃ হুম মনে আছে।

গতকাল রাতে,,
রাত প্রায় একটা বাজে। ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। সুইসাইড করার প্ল্যান করেছি। এ জীবন বেচে থাকার কোনো ইচ্ছেই নাই।
তখনি পিছন থেকে কেউ একজন এসে ধরে। তাকিয়ে দেখি দুজন পুলিশ।
=> কি হচ্ছে কি? এত রাতে এখানে কি করস?
=> ঊফস স্যার এর থেকে বাজে গন্ধ আসিতেছে।
বুঝলাম যে একজন ওসি আরেকজন হাবিলদার।
ওসিঃ একে থানায় নিয়ে চলো।
আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বসে আছি।
কিছুক্ষন পর ওসি সাহেব আসলেন।
ওসিঃ তোর বাড়ি কোথায়?
আমি চুপ
ওসিঃ ওখানে কি করতেছিলি? গাজা ড্রাগের ব্যবসা করিস নাকি?
আমি চুপ করেই আছি।
ওসিঃ কি হলো আমি কিছু জিগাসা করতেছি তোকে? কথা না বললে কিন্তু হাজতে ভড়ে দিব।
এমন সময় হাবিলদার।
=> কি স্যার কিসব জিগাসা করছেন। দেখছেন না সিগেরেট এর কি গন্ধ আসছে। নিশ্চয়ই গাঁজাখোর। এখন হুশ নেই।
ওসিঃ তুমি চুপ থাকো। এ হ্যালো কথা বলবি নাকি অন্য ব্যবস্থা করব? কি করতেছিলি ওখানে?
আমিঃ সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম।

আমার উত্তর শুনে কিছুক্ষনের জন্য দুজন থমকে গেল।
ওসিঃ কিহ কি বললি?
আমিঃ জ্বী সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। আপনারা ছেড়ে দিলে আমি আবারও সেখানে যাব এবং সুইসাইড করব।
হাবিলদার ঃ দেখছেন স্যার গাঞ্জা খাইয়া আবল তাবল বকা শুরু করছে।
ওসিঃ আচ্ছা তুই সুইসাইড করবি তাই তো? কেন করতে চাস সুইসাইড?
আমি ওসির দিকে তাকালাম।
আমিঃ আচ্ছা আপনার আমাকে দেখে কি মনে হয়?
ওসিঃ কি মনে হবে?
আমি চুপ হয়ে আছি?
ওসিঃ প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছিস?
আমি একটা হাসি দিলাম।
ওসিঃ কি একটা অবস্থা আজকাল কার পোলাপান জীবন টা খেলা মনে করে।
আমিঃ স্যার আমি প্রেমে ব্যর্থ হয়েছি সেজন্য সুইসাইড করতে চাচ্ছিনা।
ওসিঃ তাহলে?
আমিঃ আমার জীবন টা পুরো নড়কে পরিনত হয়ে গেছে।
ওসিঃ খুলে বল সব

আমিঃ এক বছর হলো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। কোনো চাকরি জোগার করতে পারিনি। Actually আমার চাকরির প্রতি কোনো ইচ্ছেই নেই। বিজনেস করার ইচ্ছে। কিন্তু কোনো উপায় পাচ্ছিনা। ওদিকে সকাল বিকেল আব্বু ইচ্ছেমত কথা শুনায়। প্রায়ই আমাকে নিয়ে আব্বু আর আম্মুর মধ্যে ঝগড়া হয়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।।
ওসিঃ তারপর?
আমিঃ জব করিনা বলে কিছুদিন আগে আমার গার্লফ্রেন্ড এর ও বিয়ে হয়ে গেল। তাকে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারিনি। বড়লোক ছেলে পেতেই সে বিয়ে করে নিল। আমার ফিলিংস টা তার কাছে নিছক তুচ্ছ ছিল।

থেমে একটু পানি চাইলাম। হাবিলদার পানি এনে দিল। পানি খেলাম।
আমিঃ শুধু এটুকুই নয়। পাড়া প্রতিবেশি চাচা দাদা রা তো আছেই খোচা দেওয়ার জন্য। মনে হয় তাদের এছাড়া কোনো কাজই নাই। বিনা বেতনে একটা চাকরি। যেখানে পায় সেখানেই কি করি? করিনা কেন? কতদিন চলবে এইসব জিগাসা করবে আর নিজের ছেলের সাথে তুলনা দিবে। পুরো নাভিশ্বাস উঠিয়ে ফেলেছে। যেমন এ পৃথিবীতে এসেছিই জব করার জন্য। কেন মানুষ কি অন্য কিছু করার ইচ্ছে করতে পারেনা? পুরো পৃথিবী কেন বিপরীতে গিয়ে থমকে দেয় সব কিছু? সত্যি বলতে জীবনের প্রতি কোনো ইচ্ছেই নেই এখন। এ পৃথিবীতে বেচে থাকতে পারব না। তাই সুইসাইড করব। ভালো থাকুক পৃথিবীর মানুষ গুলো।
কিছুক্ষন সবাই চুপ করে আছে।
ওসিঃ তোমার ফ্যামিলি তে কে কে আছে?
আমিঃ আব্বু আম্মু ছোট ভাই আর বোন
ওসিঃ কে তোমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসে?
আমিঃ আম্মু।

ওসিঃ আচ্ছা হোস্টেলে ছিলা কখনও?
আমিঃ হুম কলেজ আর ভার্সিটি পড়ার সময় হোস্টেলেই থেকেছি।
ওসিঃ তখন সব থেকে বেশি কল দিয়ে খোজ খবর নিত কে?
চুপ হয়ে গেলাম।
ওসিঃ এখন চুপ কেন? উত্তর টা নিশ্চয়ই তোমার আব্বু?
মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
ওসিঃ কলেজ বা ভার্সিটিতে থাকতে কাদেরকে সব থেকে বেশি মিস করতে?
আমিঃ এসব কেন বলছেন? আমাকে বুঝাতে চাচ্ছেন? আমি বুঝব না। সুইসাইড করব ডিসিশন ফাইনাল। আজ হোক কাল হোক করবই।
ওসিঃ আচ্ছা এসব বাদ দিলাম। তুমি বললা তোমার গার্লফ্রেন্ড তোমাকে ছেড়ে দিছে কারন সে স্ট্যাব্লিশ ছেলে পেয়েছে।
আমিঃ হুম?

ওসিঃ তার মানে সে তোমাকে ভালোবাসেই নাই। তো নিজে স্ট্যাব্লিশ হয়ে তাকে দেখাবে না? যে তুমিই তার জন্য বেটার অপশন ছিলা?
আমিঃ দেখুন স্যার আপনি আমাকে যতই বুঝান না কেন আমি আমার ডিসিশন থেকে এক পা ও পিছু হাটব না। এ জীবন আর চাইনা আমার।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com