Breaking News

প্রিয় বান্ধবী । পর্ব -০২

খালাম্মা আমাকে একটা রুমে বসিয়ে দিয়ে গেল।
বলত গেলে আমাকে খালাম্মা বাসর ঘরে দিয়ে গেল!
এইটা যে বাসরঘর দেখে বুঝার কোন উপায় নেই!
যে কোন সাধারণ রুমের মতোই একটা রুম হলেও, যে এই রুমটা আমার না তা বার বার জানান দেয় দেওয়ালে বুঝানো সাকিব আর মৌয়ের বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ছবিতে!
প্রতিটা মেয়ের বিয়ে, বাসরঘর, স্বামী নিয়ে হাজার স্বপ্ন থাকে।
আমার ও হাজার স্বপ্ন ছিলো আমার বিয়ে নিয়ে, আমার বাসর ঘর নিয়ে, আমার স্বপ্নের রাজপুত্র নিয়ে।
কিন্তু আমার সব স্বপ্নকে যে এই ভাবে শেষ করতে হবে তা আমি কোন দিন ও কল্পনা করিনি!
তবু আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নাই!
যেই রুমটা এখন আমি বসে আছি সেই রুমটাতে দেড় বছর আগে আমি মৌকে দিয়ে গেছিলাম!।
তখন রুমটা শিউলি ফুল দিয়ে সাজানো ছিলো।
মৌ এর শিউলি ফুল অনেক পছন্দ ছিলো।

তা সাকিব আমার সদ্য হাওয়া স্বামী জানতে পেরে শরৎকালে মৌকে বিয়ে করে!
যাতে করে মৌর জন্য পুরো ঘরটা শিউলি ফুল দিয়ে সাজানো যায়!
শিউলি ফুল দিয়ে সেই ১ম আমি কোন বাসর ঘর সাজাতে দেখেছিলাম!
শিউলি ফুলের গন্ধে চারদিক পরিপূর্ণ ছিলো।
সেদিন মৌ শিউলি ফুল দিয়ে সাজানো বাসরঘর থেকে শুধু অবাক-ই হয়নি, সঠিক মানুষটা জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে বলে চোখ দিয়ে পানি ও ফেলেছে।
যে তার ছোট থেকে ছোট আবদার গুলা পূরণ করে।
সত্যি মৌ খুবেই ভাগ্যবতী ছিলো।
তাই তো সাকিবের মতো একটা ছেলে স্বামী হিসেবে পেয়েছিলো।
আমার এখনো মনে আছে সাকিব আর মৌয়ের ভালোবাসার শুরু থেকে পূর্নতা পাবার আগ পর্যন্ত দিন গুলার কথা!

তখন আমরা ক্লাস নাইনে পড়তাম।
প্রতিদিন স্কুল এ আমি আর মৌসহ আমাদের সাথে আরো ৩ জন বান্ধবী এক সাথে যাওয়া আসা করতাম।
আমাদের সবার বাড়ি কাছাকাছি হওয়াতে আমরা সবাই এক সাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতাম।
হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় লক্ষ করলাম আমাদের পাশের এলাকার একটা ছেলে আমাদের পিছে পিছে আসছে।
যদি ও আমরা ১ম কয়েক দিন পাত্তা না দিলে ও পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে একটা উৎকন্ঠা দেখে দিলো।
এই ছেলে প্রতিদিন আমাদের পিছে কেন আসে?
কি তার উদ্দেশ্য!
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাকনা ছিলো রিয়া।
ও সবার আগে বুঝতে পারে ব্যাপারটা।

ও ১০০% নিশ্চিত এর সাথে বললো এই ছেলে আমাদের মধ্যে কাউকে ভালোবাসে তাই আমাদের পিছু নেয়।
যদিও কেউ এই কথায় ১ম দিকে পাত্তা না দিলেও মৌ ছাড়া বাকি সবার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল!
আমি সহ সবাই অনেকটা ফিটফাট হয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম।
কারণ তখন ও আমরা কেউ জানতাম না এই ছেলে কাকে পছন্দ করে!
তাই আমাদের এই ফিটফাট হাওয়া।
মৌ তো ১ম থেকে বলতো এই ছেলে মনে হয় অহনাকে ভালোবাসে।
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী হচ্ছে অহনা।
মৌয়ের এই কথা অন্য কারো তেমন পছন্দ হতো না।
কারন এই লম্বা ছেলের মায়াবী চেহারায় মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের করে নেয়ার জন্য মোটামুটি সবাই বেকুল হয়ে গেছিলো।

আর ছেলেটাকে দেখা মাত্রই আমরা সবাই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শুরু করতাম!
তাকে দেখামাত্রই চুল আর ওড়না ঠিক করা ছিলো আমাদের প্রথম আর প্রধান কাজ।
আর নিজেদের মধ্যে কি সব কথা বলে এমন ভাবে হাসাহাসি করতাম যেন ছেলেটা আমাদের হাসি দেখে মুগ্ধ হয়।
এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলো মৌ।
ও ধরেই নিয়েছিলো ওকে এই ছেলে কোন দিন ও পছন্দ করতে পারে না।
মৌ অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি।
যদিও আমি কখনো মৌকে ছাড়া কোন দিন স্কুলে যাইনি কিন্তু ওই সময়টা মৌ অসুস্থ থাকার পর ও আমি স্কুলে যেতাম।

মৌ স্কুলে না যাওয়াতে সত্যিটা সামনে আসে।
একদিন ছেলেটা আমাদের ডেকে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা তোমাদের সাথে যে আর একটা মেয়ে আছে, ও কেন এখন স্কুলে আসে না?
আসলে তখন আমরা কেউ কারো নাম জানতাম না।
আমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন জিজ্ঞেস করে আপনি কি মৌয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন?
তখন ছেলে টা বললো- আসলে আমি তো ওর নাম জানি না কিন্তু আপনাদের এই ৪ জনের সাথে যে মেয়েটা থাকে সেই মেয়েটা।
রিয়াঃ কিছুটা বিরক্ত হয়ে হুম ওর নাম মৌ।
বলেন ওর সাথে আপনার কি কাজ?
ছেলেটাঃ আমার নাম সাকিব।

আমি মৌয়ের সাথে একটু কথা বলতে চাই।
যদি ওর সাথে আমার কথা বলার একটু সুযোগ করে দিতেন।
রিয়াঃ ওর সাথে আপনার কিসের কথা?
আমাকে বলেন আমি বলে দিবো।
সাকিবঃ যার কথা তাকেই বলতে চাই।
রিয়াঃ আপনি কি ওকে ভালোবাসেন?
সাকিবঃ ভালোবাসি কি না জানি না।
কিন্তু তাকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমার কেমন জানি অনুভব হচ্ছে।
আমার জীবনের পথ চলতে তাকে চাই।
যদি সে আমার সাথে পথে হাটতে রাজি হয়।

সাকিবের মুখে এই কথা শুনে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
আসলে আমাদের কি বলা উচিৎ আমরা বুঝতে পারছিলাম না।
সবাই ব্যাপারটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে না পারলেও আমি নিজেকে সামনে নিয়ে বললা আচ্ছা মৌ তো অসুস্থ, আমি বাসায় যেয়ে ওকে আপনার কথা বলবো।
ও সুস্থ হয়ে স্কুলে আসা শুরু করলে আপনি ওর সাথে কথা বলে নিয়েন।
সেদিন আমরা সবাই যে কি পরিমান কষ্ট পেয়েছিলাম তা হয়তো কোন ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না।
আমি বাসায় ফিরে মৌকে সব টা বলার পর মৌ তো পুরাই অবাক।
সে কিছুতেই বিশ্বাস করে না এই সব কথা।
ও ভেবে নেয় ওর সাথে আমরা বা ছেলেটা দুষ্টামি করছি!
তাই ও এই সবে পাত্তা দিলো না।

সবাই সাকিবের মায়াবী চেহারায় গলে গেলে ও মৌ সব সময় স্বাভাবিক থাকতো।
মৌ তো ১ম দিকে সাকিবকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি।
মৌয়ের ধারনা ছিলো সাকিবের মতো সুদর্শন ছেলে ওর মতো মেয়েকে ভালোবাসাতে পারে না।
তাই ও সাকিবের কোন কথা শুনতে রাজি ছিলো না।
সাকিব ও ওর মতো চেষ্টা চালিয়ে যেতে শুরু করে সাথে নানা ধরনের ছোট ছোট পরীক্ষা দিয়ে মৌয়ের মন জায়গা করে নিতে শুরু করে।
এর মধ্যে মৌ একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি সাকিব কে পছন্দ করি কিনা!
আমি ও মৌকে বলি ১ম দিকে অজানা একটা আকর্ষণ বোধ করতাম কিন্তু যখন জানলাম তোকে পছন্দ করে তখন থেকে কোন আকর্ষণ নেই।

এখন ভালো লাগা, খারাপ লাগা কোন কাজ করে না।
এরপর ও মৌ জিজ্ঞেস করলো সত্যি তো?
আমি ও মাথা নাড়িয়ে বললাম সত্যি।
আস্তে আস্তে ওদের মন দেয়া নেয়া শুরু হয়।
আমি মন থেকে ওদের সম্পর্কটা মনে নেই।
আর ওদের জন্য অনেক খুশী হই।
সময়ে সাথে সাথে ওরা একে অপরকে এতোটাই ভালোবাসে ফেলে যে এই সম্পর্কে যতো বাধাই আসে ওরা তা কাটিয়ে উঠে।
যদি ও তাদের ঝাগড়া, মান-অভিমান হলে সবটাই আমাকে সমাধান করতে হতো।
ওরা ২ জনেই আমার কাছে বিচার দিতো বা তাদের মান-অভিমানের কথা আমাকে জানাতো।
আমি সবটা শুনে সমাধানের উপায় খুঁজতাম
সেই সময় টাতে আমি সাকিবের ভালো বন্ধু হয়ে যাই।

এই আমি ওদের সব ভালোবাসা, মান-অভিমানের সাক্ষী!
আমি দেখেছি একটা ছেলে কিভাবে তার প্রেমিকার যত্ন নেয়, কিভাবে তাকে সম্মান করে।
আবার তাকে বউ করে নেয়ার পর কিভাবে তার সব দায়িত্ব নিতে হয়!
কিন্তু আমার ভাগ্য আমার সাথে কি খেলা শুরু করলো?
আমার প্রিয় বকুল ফুল দিয়ে বাসরঘর সাজানো তো দূরের কথা একটা ফুল ও নেই এই রুমে!
এটা কেমন বাসরঘর?
আর সাকিব!
আমি জানি সে এখনো মৌকে ভালোবাসে।
তার জীবনের সব মটা জুড়ে শুধুই ও মৌ!

খুব জানতে ইচ্ছা করছে সাকিব কি কোন দিন ও আমাকে মৌয়ের মতো করে ভালোবাসতে পারবে?
আমার ছোট থেকে ছোট আবদার গুলা পূরণ করবে?
কখনো কি আমাকে মৌয়ের জায়গা দিতে পারবে?
না আর কিছু ভাবতে পারছি না।
প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে!
শুধু জানি আমাকে সব টাই পারতে হবে।
আমাকে সব টাই আদায় করে নিতে হবে।
আমাকে পরিপূর্ণ ভাবে সাকিব এর বউ হতে হবে আর সাথে পরীর মা।
সাকিবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে যখন আমার ঘুমে চোখে লেগে আসছিলো তখনি হঠাৎ মনে হলো-
সাকিব ওই রুমে আজ আসবে না!
যেই রুম থেকে আড়াই মাস আগে তার প্রিয়তমা স্ত্রী লাশ বের হয়েছে সেই রুমে সে আজ কিভাবে নতুন স্ত্রীর সাথে বাসরঘর করে!!!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com