Breaking News

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি। পর্ব -০৪

অনু আদ্রের ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। আদ্রকে প্রথম দেখে অনুর বেশ ভালো লেগেছিল। কিন্তু আদ্রের সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা অনুর সহ্য হলো না। এতো সুন্দর ছেলেটা এমন বখাটে স্বভাবের হবে তা অনু ভাবতে পারে নি। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অনু আদ্রের কথাই ভাবছিল। হঠাৎ করে অনু লক্ষ্য করল অনুর গায়ের ওড়না কিছুতেই অনুর শরীরে থাকছে না। শুধু ওড়নাটা পড়ে যাচ্ছে সেই ওড়নাটা অনু বার বার ঠিক করছে। অনু বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
–আমার ওড়নাটা এভাবে বার বার পড়ে যাচ্ছে কেন? ওড়নার ক্লিপটা কি পড়ে গেল?
অনু ওড়নার মধ্যে ক্লিপটা অনেক খোঁজেও পেল না। অনু চিন্তিত হয়ে মন খারাপ করে আপনমনে বলল,

–ওড়নার ক্লিপটা আমি হারিয়ে ফেললাম! এখন আমার কি হবে? আমি এতো সময় ধরে অনুষ্ঠানে আমার ওড়না সামলাবো কি করে?এই ওড়না তো অনেক ঝামেলা। কারণ জর্জেট ওড়না গায়ে থাকতেই চায় না।
অনু সোফা থেকে উঠে চিন্তিত হয়ে হাঁটতে লাগল। এমন সময় অনুর সামনে আদ্র এসে দাঁড়াল। আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রকে দেখে অনু কিছুটা ঘাবড়ে গেল। আদ্রের সামনেই অনুর ওড়নাটা বার বার পড়ে যাচ্ছে। তাই অনু নিজের ওড়নাটা ঠিক করতে করতে আদ্রের সামনে থেকে চলে যেতে নিলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে। আদ্র অনুর হাত চেপে ধরায় অনুর আত্মা ভয়ে কেঁপে উঠল। অনু চোখ বড়বড় করে শুকনো ঢুক গিলে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? আশেপাশে অনেক মানুষ। আমার হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।

আদ্র অনুর দিকেই দৃষ্টি রেখে অনুকে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
–তোমার হাত আমি ছেড়ে দিবো অনু। কিন্তু তোমাকে আমার সাথে একটু যেতে হবে।
অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে কাঁপা স্বরে বলল,
–আপনার সাথে আমি কোথায় যাবো? আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। আমার হাত ছাড়ুন।
আদ্র অনুর ভয় পাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। আশেপাশে প্রচুর মানুষ তারওপর আবার আদ্রের জন্মদিন উপলক্ষে গান বাজনা হচ্ছে। তাই কেউ অনু আর আদ্রকে সেভাবে খেয়াল করে নি। আদ্র অনুর দিকে এগিয়ে এসে অনুর কানের কাছে মুখ এনে শান্ত স্বরে বলল,
–তোমাকে আমি একটা জিনিস দিবো। সেই জিনিসটা এখন তোমার খুব দরকার। আমি সেটা জানি। তাই কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে চলো। যদি আমার সাথে তুমি না যাও তাহলে তোমার জন্য ভয়ংকর শাস্তি অপেক্ষা করছে। তুমি কি ভয়ংকর শাস্তি পেতে চাও?

আদ্রের কথা শুনে অনু স্তব্ধ হয়ে গেল। অনু আদ্রের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। আদ্র অনুর নিরবতায় বুঝতে পারল যে অনু আদ্রের সাথে যেতে রাজি। আদ্র অনুর হাত ছাড়লো না। অনুর হাত ধরেই টেনে আদ্র জনমানবহীন জায়গায় একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। অনু আদ্রকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। ভয়ে অনুর হাত পা কাঁপছে। অনু আদ্রকে কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–কি এমন জিনিস যেটা আপনার কাছে আছে অথচ আমার প্রয়োজন? বলুন?
আদ্র অনুর একদম কাছে এগিয়ে আসলো। অনু ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না আদ্র ভাইয়া।
আদ্র এবার বিরক্ত হয়ে রাগী স্বরে অনুকে বলল,
–আমাকে আমার কাজ করতে দাও অনু।

অনুর ভয়ে চোখে জল চলে আসলো। অনু আদ্রের দিকে কান্নারত দৃষ্টি রেখে বলল,
–মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?
আদ্র অনুর ওড়নায় হাত বাড়ালো। অনু আর্তনাদ করে উঠে আদ্রকে বলল,
–আপনি আমার ওড়না ধরছেন কেন আদ্র ভাইয়া? আমার ওড়না ধরবেন না।
অনু আদ্রের কাছ থেকে পালাতে চাইলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আদ্রের এমন কাজে অনু বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। আদ্র অনুর কোমড় চেপে ধরে রাগী স্বরে বলল,

–এখানে আমি তোমাকে আদর করার জন্য নিয়ে আসি নি বুঝতে পেরেছো?
আদ্রের স্পর্শে অনুর বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল। এমন পরিস্থিতির শিকার অনু কোনোদিন হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানলে কোনোদিনই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অনু আসতো না। অনুর মনে ভীষণ ভয় কাজ করছে। চোখ বন্ধ করে অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
–আমাকে ছাড়ুন আদ্র ভাইয়া। কিসব বলছেন আপনি?
এরই মাঝে আদ্র অনুর ওড়নাটা ঠিক করে দিল। অনু চোখ খুলে আদ্রের দিকে তাকালো। আদ্র অনুর ওড়নায় ক্লিপটা লাগিয়ে দিয়েই হাসিমুখে অনুকে বলল,

–বোকা মেয়ে। তোমার ওড়নার ক্লিপটা তুমি মাটিতে ফেলে রেখেই চলে এসেছিলে। হয়তো সুমির সাথে ধাক্কা লেগে তোমার ক্লিপটা পড়ে যায়। আমি দেখতে পেয়ে তুলে নিয়েছিলাম। অবশ্য আমি ভেবেছিলামই এটা তোমারই ওড়নার ক্লিপ। অথচ তুমি আমাকে ভুল বুঝলে অনু। আমার কথাটাও শুনার চেষ্টা করলে না।

আদ্র কথাগুলো বলেই সাথে সাথেই অনুকে ছেড়ে দিল। অনু মন খারাপ করে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। অনুর বুকের ভিতরের ধুকপুক বেড়ে গেছে। এই নিস্তব্ধ রুমে শুধু আদ্র এবং অনু আছে ভাবলেই অনুর শরীর শিউরে উঠছে। অনুকে আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–আর ঠিক দশ মিনিট পর আমাকে কেক কাঁটতে যেতে হবে। আমার জন্মদিন তাই এইটুকু নিয়ম তো আমাকে পালন করতেই হবে। তোমার সাথে হয়তো আমি এখন আর কথা বলতে পারব না। আমাকে যেতে হবে। তুমি ড্রইংরুমে যাও।

আদ্র চলে যেতে নিয়েও থেমে গেল৷ অনু এখনও একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আবারও ফিরে এসে আদ্র অনুর সামনে দাঁড়াল। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে ঘন নিশ্বাস ফেলছে। আবার কেন আদ্র আসলো? আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো অনু?

অনু মুখে কিছু না বলে মাথা এদিক ওদিক নাড়লো। যার অর্থ অনু ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু আদ্র স্পষ্ট বুঝতে পারছে অনু ভয় পাচ্ছে। আদ্র নিজের ডান হাত বাড়িয়ে অনুর গালে রাখলো। অনু আদ্রের স্পর্শে কেঁপে উঠল। আদ্রের দিকে অনু সরল দৃষ্টিতে তাকাল। আদ্র অনুর একদম কাছে এসে শান্ত স্বরে বলল,
–এই মেয়ে তুমি আমাকে এতো ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি মুখে না বললেও আমি তো বুঝতে পারছি তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো। আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আমাকে এতো ভয় পাচ্ছো? আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না।

অনু নিজের গাল থেকে আদ্রের হাত সরাতে চাইলো কিন্তু আদ্র নিজের হাত অনুর গাল থেকে সরালো না। আদ্র আরেক হাত বাড়িয়ে নিজের দুই হাতই অনুর দুই গালে ছুঁয়ে দিল। অনু এবার বিরক্ত হয়ে আদ্রকে বলল,

–কি করছেন আদ্র ভাইয়া? আপনার হাত আমার গালে কেন রাখছেন? আমার এসব ভালো লাগছে না৷ আপনার জন্মদিনের কেক কাঁটার সময় হয়ে গেছে। আপনাকে নিশ্চয়ই সবাই খুঁজছে। প্লিজ আদ্র ভাইয়া আপনি সেখানে চলে যান।

অনুর কথায় আদ্র যেন বাস্তবে ফিরে এলো। এতক্ষণ আদ্রের কাছে সবকিছু ঘোরের মতো লাগছিল। নিজের কাছেই নিজেকে কেমন পাগল মনে হচ্ছিল। আদ্র অনুর গাল ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। অনুর সাথে এই একদিনের পরিচয়ে আদ্র পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে এটা আদ্র কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আদ্র মনে মনে অবাক হয়ে বলল,

–আমার তো কোনো মেয়ের জন্য এমন অনুভূতি জাগে নি। তাহলে অনুর জন্য কেন আমার মনে এমন অনুভূতি জাগছে?তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি কেন জাগছে অনু? আমার মনের মাঝে তোমাকে নিয়েই এমন কেন হচ্ছে?
আদ্র হঠাৎ করেই অনুর দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাগী দৃষ্টিতে দিকে তাকাল। অনু আদ্রের এমন দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে কাঁপা স্বরে বলল,
–আমি কিছু করি নি। আমাকে যেতে দিন।
আদ্র অনুর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অনু বুঝতে পারল না আদ্র এভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে কি দেখছে? আর কোনো কথা না বলে সেই রুম থেকে আদ্র বেরিয়ে গেল। অনু বড় নিশ্বাস ফেলে বলল,

–এখন যেন আমার বুকের মাঝে প্রাণ ফিরে পেলাম। কিন্তু এই আদ্র ভাইয়াটা আমার সাথে এমন অদ্ভুত আচরণ করছিল কেন? পাগল হয়ে গেল নাকি?
অনু বুঝতে পারল না। তাই অনু আদ্রের পেছন পেছন চলে গেল। অনু ড্রইংরুমে গিয়ে আমেনা বেগমের কাছে গেলে আমেনা বেগম অনুকে দেখে রেগে বলল,
–কোথায় গিয়েছিলি তুই?
অনু ভয় পেয়ে আমেনা বেগমকে বলল,
–আসলে আম্মু আমি এই বাড়িটা ঘুরে দেখছিলাম।
আমেনা বেগম গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–আর যেন তোকে একা কোথাও যেতে না দেখি।
অনু মাথানিচু করে আমেনা বেগমকে বলল,
–ঠিক আছে আম্মু।
আরমান রহমান আমেনা বেগমকে বলল,

–আরে আমার মেয়েটাকে বকছো কেন? এতো সুন্দর বাড়িটা ঘুরতে চাইছে ঘুরতে দাও।
আমেনা বেগম বিরক্ত স্বরে আরমান রহমানকে বলল,
–তুমিই তো অনুকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে দিতে না। আর সেই তুমিই এখন বলছো অনুকে ঘুরে বেড়ানোর কথা? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
আরমান রহমান আমেনা বেগমকে বলল,
–হ্যা আমিই বললাম। তুমি আর এই নিয়ে কোনো কথা বলো না।
আমেনা বেগম আর কিছু বলল না। অনু মনে মনে খুশি হলো এই ভেবে যে অন্তত আব্বু তো তাকে বকে নি।

আদ্র ড্রইংরুমে অনেক পড়ে আসলো। অনুর সাথে কথা বলার পর আদ্র ড্রইংরুমে না গিয়ে নিজের রুমে চলে গিয়েছিল। রুমে আদ্র অনেক্ষণ বসে ছিল। কেন যেন আদ্রের কিছু ভালো লাগছিল না। এতক্ষণ আদ্রকে সবাই খুঁজছিল। আদ্র এসেছে দেখে সবাই খুশিতে মেতে উঠলো। আদ্রের মা রেহেনা পারভিন আদ্রকে বলল,
–কিরে আদ্র তুই কোথায় গিয়েছিলি? তোকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেন?
আদ্র রেহেনা পারভিনকে হেসে বলল,
— মা আসলে আমি শুভ আর নিলয়ের সাথে একটু বাইরে গিয়ে গল্প করছিলাম।
রেহেনা পারভিন গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,
–তাই বলে বন্ধুদের সাথে কথা বলার জন্য তোর এতো দেড়ি করতে হবে? তোর আজকে জন্মদিন আদ্র। এটা তুই ভুলে যাচ্ছিস কেন?

আদ্র রেহেনা পারভিনকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–আই এম সরি আম্মু। আর এমন হবে না।
রেহেনা পারভিন আদ্রকে বলল,
–ঠিক আছে। সবাই তোর জন্যই অপেক্ষা করে বসে ছিল। এবার তাহলে জন্মদিনের কেকটা কেঁটে ফেল।

আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন আদ্রকে বলল,
–আদ্র কেকটা কাটো। আর দেরি করো না। সবাই এই মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
বাবা-মায়ের কথায় আদ্র জন্মদিনের কেক কাটলো।সবাই আদ্রকে হেপি বার্থডে উইশ করতে লাগলো এবং সবাই হাত তালি দিতে লাগলো। চারিদিকে এতো এতো মানুষের আনাগোনা। অনুর বাবা আরমান রহমান এবং আমেনা বেগমও হাত তালি দিতে লাগলো। আদ্র আনোয়ার হোসেন এবং রেহেনা  
পারভিনকে কেক খাইয়ে দিলো। 

এরই মাঝে চারিপাশে আদ্র অনুকে খুঁজতে লাগল। অনু একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অনুর মনটা ভীষণ খারাপ। আদ্রের মাথায় কিছু ঘুরতে লাগলো। আনমনেই আদ্র হেসে এক পিছ কেক হাতে নিয়ে অনুর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। সবাই অবাক হয়ে আদ্র কোথায় যাচ্ছে তা দেখতে লাগল। আদ্র অনুর দিকেই আসছে দেখে অনু ঘাবড়ে গিয়ে মনে মনে বলল,

–আদ্র ভাইয়া আমার দিকে এভাবে কেক হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে কেন? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমাকে কি কেক মেখে আদ্র ভাইয়া ভূত বানাবে? না, এটা হতে পারে না। প্লিজ আদ্র ভাইয়া আপনি আমার সাথে এমন করবেন না।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com