গল্পঃ মিলন । পর্ব -০৩
সেদিন সত্যি আমার কাছে কোন উত্তর ছিল না।
আপুর বিয়ের পর সব কিছু কেমন যেন পরিবর্তন হতে লাগলো।
আমার যে আপু শুভ্র ভাইয়ারর জন্য পাগলা ছিল সে আজ সুখে সংসার করতেছে!
কোন ভাবে দেখলে বুঝা যায় না যে মেয়েটা অন্য কাউকে তার মন দিয়েছিল!
এই দিকে শুভ্র ভাইয়া ও গ্রামে আসা কমায় দিছে কি কাজে নাকি ব্যস্ত থাকে!
কথাটা সবাই বিশ্বাস করলে ও আমি করি না।
প্রায় ১ বছর হয়ে গেল আপুর বিয়ে হয়ে গেল!
এই দিকে চাচী শুভ্র ভাইয়ার বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেল।
সবাই মিলে আমরা মেয়ে দেখা শুরু করলাম!
ভাইয়া বি সি এস ক্যাডার এখন তাই চাচী বলেন তার সোনার ছেলের জন্য সোনার টুকরা বউ চাই।
এমন ভাবে আমরা ৫/৬ টা মেয়ে দেখে ফেললাম!
সব মেয়ের মধ্যে কোন না কোন কিছু কম খুঁজে পাইতো সবাই।
কেউ একটু বেশী ফর্সা, তো কেউ শ্যামলা, কেউ একটু বেশী লম্বা আবার কেউ কম।
বাড়ির মহিলারা যে মেয়েদের মধ্যে এতো কিছু খুঁজে তা নীলার জানা ছিল না।
৭ নাম্বার মেয়ে দেখে সবাই উঠানে বসে সবাই সবার মতামত দিতে লাগলেন!
এমন সময় ফুপু বললেন শুভ্রর বিয়ের পর নীলার জন্য ভালো ছেলে দেখে নীলাকে বিয়ে দিয়ে দেব!
কথাটা শুনে বুকটা কেমন যেন মুচড় দিল।
এমন সময় নীরা আপু বলে ওঠলো তাহলে তো শুভ্র ভাইয়ার(আপু শুভ্র ভাইয়ার থেকে ৪ ববছরের ছোট তাই ভাইয়া ডাকা) সাথে নীলার বিয়ে দিয়ে দিলেই হয় কষ্ট করে ভালো মেয়ে বা ছেলে খুঁজতে হয় না।
এই কথা শুনে অনেকের চোখ চিকচিক করে ওঠলো!!
সবার মাঝে বিভিন্ন ধরনের কথা তর্কাতর্কি শুরু হল।
আমি কঠিন দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকাতে আপু আমাকে পাত্তা না দিয়ে সবার সাথে তর্কাতর্কিতে মেতে উঠলেন!
চাচী আমার পাশে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেন তুই তোর শুভ্র ভাইয়ার বউ হবি?
আমার ছেলের বউ হয়ে সারাজীবন এই বাড়িতে থাকবি?
আমি অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে না বলে দৌড়ে রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলাম।
আমি কিছুতে বুঝতে পারলাম না আপু শুভ্র ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চায়!?
যে শুভ্র ওর জন্য পাগল সে নাকি আমারর বর হবে যাকে আমি ৫/৬ বছর ধরে নিজের বড় বোনের বর ভেবে আসছি!
যাকে এখন আমি নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসি
তাও আপুর জন্য আমার এই ভাবনা।
৫/৬ বছর আগে আমি ভাবতাম আমার আর শুভ্র ভাইয়ার সংসার হবে আমরা সারা দিন ঘুরে বেড়াবো সারাদিন চকলেট, আচার খাব রাতে লুডু খেলবো আর ও কতো কিছু!!!
তখন তো সারাদিন ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বউ সেজে নিজেকে দেখতাম আর নিজেই লজ্জায় লাল হইতাম আর দেখে ফেললে তার সামনে ২/৩ দিন যাইতাম না।
আমার এতো স্বপ্ন সব তো সেদিন শেষ হয়ে গিয়েছিল যে দিন আপু বলেছিল ওরা ২ জন ২জনকে অনেক ভালোবাসে।
আর আমি সবটাই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছলাম।
তাহলে আজকে আপু কেন এমন করলেন!
এমন সময় আপু দরজায় করা নাড়লেন।
বলেন নীলা দরজা খুল তোর সাথে কথা আছে।
আমি দরজা খুলতেই আপু আমাকে জড়িয়ে ধরলেন জানিস নীলা সবাই রাজি হয়ে গেছে বলেই কপালে চুমু!
আমি আপুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে কি পাগলামি শুরু করলা তুমি?
তোমার কি আমাকে পাগল মনে হয়?
তুমি কি সব কিছু ভুলে গেলা?
কেন এমন করতেছ তুমি?
আপু এবার কান্না জরিত কন্ঠে তুই ছাড়া অন্য কাউকে শুভ্ররের পাশে দেখতে পারবো না।
এবার আমি রেগে গিয়ে তুমি সত্যি পাগল হয়ে গেছ নিজেই শুভ্র ভাইয়াকে ছেড়ে চলে এসেছ।
সে দিন যদি তুমি ভাইয়ারর সাথে যেতে তাহলে সবাই মেনে নিত কোন ঝামেলা ছাড়াই কারন চাচা চাচী আমাদের ২ বোনকে অনেক আদর আর ভালোবাসে!
তাহলে কেন চলে গেলেনা না?
কেন দিনের পর পর শুভ্র ভাইয়াকে কষ্ট দিলে আর আজকেই কেন বা আমাকে ভাইয়াকে বিয়ে করতে বলতেছ?
আপু সব প্রশ্নের উত্তর সব সময় খুঁজতে হয় না কিছু প্রশ্নের উত্তর সময় দেয়!
আপু আজকে আবার কসম দিল আমি যেন শুভ্র ভাইয়া কে বিয়ে করি।
আমি বলতে লাগলাম তুমি যে আমাকে কসম দিয়ে রাজি করালা কিন্তু শুভ্র ভাইয়াকে কে রাজি কে করাবে?
আপু বললো চাচী আছে দেখিস শুভ্র ঠিক রাজি হয়ে যাবে!
আপু আমাকে অনেক শক্ত করে ধরে কান্না কতে লাগলো আর বলতে লাগলো দেখিস শুভ্র তোকে অনেক সুখে রাখবে!
২ বোন এক সাথে কান্না করতে লাগলাম।
এর মধ্যে সবাই আমাকে বুঝতে লাগলো বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক!
এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বামী স্ত্রী ওপর রহমত বর্ষন করে এতে স্বামী স্ত্রীরর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়!
বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহর ইচ্ছায়!
আমি যেন ভয় না পাই!
কিন্তু আমার ভয় তো অন্য জায়গায় ভাইয়াকে নিয়ে যা আমি কাউকে বুঝাতে পারলাম না ।
ভয় চিন্তা আবার কোথাও ভালো লাগা নিয়ে বিয়ের দিন গুলা চলে আসলো!
শুভ্র ভাইয়াকে কিছু না জানিয়ে বিয়ের সব আয়োজন করা শুরু হল।
ভাইয়া সকালে বাসায় এসে জানতে পারলো আগামীকাল আমাদের বিয়ে!!
ঘটনার আকস্মিকতা কিছুতে যেন কাটছে না।
ভাইয়া সারা বাড়ি আমাকে খুঁজতে লাগলো!
ভাইয়া আসার কথা শুনে আমি লুকায় ছিলাম ভয়ে আর টেনশন!
আমি জানি ভাইয়া বিয়েটা এখন ভেজ্ঞে দিবে!
বিয়ে ভাজ্ঞার কষ্ট বা ভয় আমার নাই। কিন্তু শুভ্র ভাইয়া যে কষ্ট পাবে সেটা ভেবেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো।
আমি তো শুভ্র ভাইয়াকে কষ্ট দিতে চাইনা তাহলে কেন এমন হলো?
সকাল থেকে আমাকে অনেক খুঁজার পর ভাইয়া আমাকে পেল!
আমার কাছে আসতেই ভাইয়া জানতে চাইলো এই সব কি?
আমি কেন তাকে আগে ফোনে জানাই নাই!
আর আমি সব জেনে কেন এই বিয়েতে রাজি হলাম।
আমি কোন কথা না বলায় ভাইয়া চিৎকার শুরু করালো।
আমরা ২ বোন কেন তার জীবন নষ্ট করতে চাইতেছি?
কেন তার গুছানো জীবনটা আমরা নষ্ট করে দিলাম!
ভাইয়া এর আগে কোন দিন আমার সাথে এতো জোরে কথা বলে নাই তাই ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাইলো না। আমার চুপ থাকায় ভাইয়া এবার খেপে যেয়ে সজোরে একটা থাপড় মারলো!
আর বলতে লাগলো আমি তোকে আমার ছোট বোনের মতো ভাবতাম আর আগামীকাল তোকে আমাকে বিয়ে করতে হবে।
তুই তো আমাকে ফোনে অন্তত জানাইতে পারতি।
আমি সব সামলায় নিতাম!
আমি চোখের পানি ধরে রাখতে না পেরে গালে হাত দিয়ে দৌড়ে পুকুরপাড়ে বসে কান্না করতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম আমি তোমাকে ফোন করে সব জানাইতে চাইছি কিন্তু কেউ জানাতে দেয় নাই কারন তুমি বিয়ের কথা শুনলে তালবাহানা করতা তাই!!!
অনেকক্ষণ ধরে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে আমার কাধে হাত পেলাম!!!
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com