প্রিয় বান্ধবী । পর্ব -০৩
আজ ভরা পূর্নিমা!
চাঁদ তার সৌন্দর্য আজ ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে!!
চারদিকে চাঁদের আলোয় খাঁ-খাঁ করছে।
চাঁদের এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই হয়তো রবী ঠাকুর এই গান লিখে ছিলেনঃ
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো।
ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো…..
আজ চাঁদের আলোতে সব কিছু-ই অচেনা লাগছে!
শুনেছি চাঁদ, ভরা পূর্নিমার এই সব নাকি সব মেয়েদের অনেক পছন্দ!
চাঁদের আলোয় নাকি সব মেয়েরাই স্নান করতে চায়।
কিন্তু ছেলে হয়ে ও বরাবরের মতো ভরা পূর্নিমার আমার পছন্দ!
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো ভরা পূর্নিমার রাতে মৌকে নিয়ে কোন নদীর ধারে বসে জ্যোৎস্না বিলাশ করবো।
কিন্তু মৌ মেয়েটা ভরা পূর্নিমার রাতকে ভয় পেত!
ওর ধারণা ছিলো ভরা পূর্নিমাতে নাকি জ্বীন-ভূত থাকে।
তাই পূর্নিমার রাতে ও, সন্ধ্যার পর কখনোই বাসা থেকে বের হতো না।
আর আমার কোন দিন জ্যোৎস্না বিলাশ করা হয়ে উঠেনি।
বাবা সাকিব আর কতোখন বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবি?
হঠাৎ কারো কথায় পিছে ফিরে তাকাতেই দেখি আমার শাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে আছে।
যদিও সে আমার ১ম শাশুড়ী মা!
আজ আর একটা বিয়ে করার মাধ্যমে ২য় শাশুড়ী মা পেয়েছি।
যদি বা তার সাথে এখনো আমার কোন কথা হয়নি।।
আচ্ছা মেয়েদের যেমন সতীন হয়, সতীনের মা-বাবা, সন্তান হয় তেমন কি ছেলেদের ও হয়!?
আমার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার ও শাশুড়ী মা বললো- নিজের সাথে আর কতো যুদ্ধ করবি?
মেয়েটা যে তোর অপেক্ষা করছে!
তোর না হয় এইটা ২য় বিয়ে কিন্তু মেয়েটার তো এইটা ১ম বিয়ে!
মেয়েটার ও তো অনেক স্বপ্ন, ইচ্ছা আছে!
যা না বাবা, মেয়েটার কাছে যা।
তোর ওপর ওর অধিকার আছে!
ওকে ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করিস না।
ওর সাথে কোন অন্যায় করিস না বাবা।
শাশুড়ী মা একনাগাড়ে কথা গুলা বলে যাচ্ছে।
শাশুড়ী মাকে আমি কি উত্তর দিবো বুঝতেছি না!
আমার ওপর অন্য কারো অধিকার আছে?
আমার আবার তাকে তার অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে!?
ব্যাপার টা সত্যি হাস্যকর!
আমার সব টা জুড়েই আছে আমার মৃত স্ত্রী!
আমার যোগ্য অর্ধাঙ্গী।
যার সাথে এই অল্পদিনের পথ চলতে পারাটা ও আমার জন্য মধুর স্মৃতি!
এই স্মৃতি নিয়ে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারবো।
এই জীবনে আমার কাউকে চাই না!
হুম আর এই মেয়েকে আমি আমার বউ হিসেবে মেনে নিবো!
এইটা সবাই কিভাবে ভাবলো?
যাকে আমি সব সময় আমার স্ত্রীর প্রিয় বান্ধবী হিসেবে জানি এমনকি আমার ও একটা ভালো বন্ধু ভাবি সে নাকি আমার স্ত্রী হবে!?
সব জেনে শুনে সে কিভাবে মৌয়ের জায়গা নিতে চায়?
মৌ তো মৌ-ই!
ওর জায়গা কোন দিন কেউ নিতে পারবে না!
শাশুড়ী মাঃ সাকিব, আমি জানি তুই কি ভাবছিস!
তুই হয়তো বউ ছাড়া বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবি কিন্তু পরী কিভাবে মা ছাড়া থাকবে!
জন্মের কিছুদিনের মধ্যে যে মেয়েটা তার মাকে হারায়, সে বাচ্চা মেয়েটা মা ছাড়া একা কিভাবে বড় হয়ে উঠবে!
অহনা কিন্তু সব টা জেনে শুনে শুধুমাত্র পরীর জন্য এই বিয়েটা করেছে।
যে মেয়েটা তোর মেয়ের জন্য এতো বড় ত্যাগ স্বীকার করলো, সে মেয়েটার জন্য তুই সামান্য কিছু করতে পারবি না?
অহনা তো আর মৌয়ের জায়গা চায়নি।
তুই শুধু ওর অধিকার টুকু ওকে দিলেই হবে!
আমিঃ হা হা হা!
মা তুমি আসলেই বোকা!
তোমার মনে হচ্ছে অহনা ত্যাগ স্বীকার করছে?
যদি তুমি তা ভাবো সত্যি ভুল ভাবছো!
অহনা শুধুমাত্র মহৎ সাজার জন্য আমাকে বিয়ে করছে!
অহনা আমাকে বিয়ে করে প্রমান করতে চায় সে আমার থেকে বেশী মৌকে ভালোবাসে।
এতোটাই ভালোবাসে তার প্রিয় বান্ধবীকে যে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করে তার প্রিয় বান্ধবীর সতীন হয়ে গেল!
আর যদি বলো পরীর কথা!
পৃথিবীতে এমন অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা তার বাবা-মা ২ জনকে ছাড়াই বড় হয়েছে।
আবার এমন ও অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যারা বাবা বা মা এদের মধ্যে একজন কে ছাড়া বড় হয়েছে।
আমিই পরীর বাবা আবার পরীর মা হয়ে পরীকে বড় করতে পারতাম কারো দয়া আমার বা আমার মেয়ের লাগতো না!
শাশুড়ী মাঃ চুপ সাকিব! একদম চুপ!
তোর মাথাটা একদম গেছে। তোর হিতাহিতজ্ঞান নেই। কি থেকে কি বকছিস তা নিজে ও জানিস না।
তোরা ২ জনেই মৌকে ভালোবাসিস।
এখানে কে বেশী বা কে কম বাসে তার প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে না।
অহনা শুধুমাত্র তার বান্ধবীর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে তাই এই বিয়ে করছে!
মৌ ওপর থেকে তার মেয়েকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হতে দেখে শান্তি পাবে।
তুই এমন পাগলামি করিস নে বাবা।
যা ঘরে যা মেয়েটা তোর জন্য অপেক্ষা করছে!
আমিঃ মা তোমার সাথে এখন কোন তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না।
শুধু একটা কথা বলতে চাই আমার মৌয়ের রুম থেকে ওই মেয়েকে বের করে দাও।
ওই রুমের প্রতিটি কোনায়, প্রতিটি জিনিসে আমার মৌয়ের স্পর্শ আছে।
ওই রুমে শুধু মৌয়ের ঘ্রান আছে, ওই মেয়ে যতোক্ষণ ওই রুমে থাকবে ততোক্ষণ মৌয়ের সব ঘ্রান ও নিয়ে নিবে।
আমি তা চাই না!
অনেক সময় বসে থাকার পর বারান্দায় আসতেই খালাম্মা আর সাকিবের কথা শুনে আমি হতবাক!
সাকিবের মনে আমাকে নিয়ে এই সব কি ধারণা!
মহৎ সাজবো আমি! সত্যি হাস্যকর মহৎ সাজার ব্যাপার টা।
কিন্তু সাকিব আর খালাম্মার কথাবার্তায় এইটা খুব ভালো ভাবেই পরিষ্কার আমাকে সাকিবের মনে তথা আমার অধিকার আদায় করার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে!
সাকিব আর খালাম্মার সামনে এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না।
বিশেষ করে খালাম্মার সামনে।
এখন খালাম্মার সামনে গেলে খালাম্মা নিজেকে অনেক অপরাধী ভাববে।
তাই আমি সরাসরি রান্নাঘরে চলে গেলাম।
এই বাড়ির প্রতিটি জিনিস আমার চেনা।
মৌ বেঁচে থাকতে প্রায় আমার আসা যাওয়া হতো।
যাই এই বাড়ির সব টা যেমন জানি তেমন সাকিবের পছন্দ, অপছন্দ সম্পর্কে সব টাই জানি।
সব কিছু মৌ এর থেকে শুনে বা দেখে জেনেছি।
এই যেমন সাকিবের যখন খুব রাগ বা মন খারাপ থাকে তখন ওর প্রচন্ড খুদা লাগে!
আর তখন নাকি ও পারলে পুরো দুনিয়াটা খেয়ে ফেলে!
এই সময় মৌ প্রায়-ই সাকিবের পছন্দের পাস্তা বানিয়ে খেতে দিতো।
আর ও নাকি গপাগপ করে সেই পাস্তা খেয়ে ফেলতো।
মৌকে অনেক বার সাকিবের জন্য পাস্তা রান্না করতে দেখেছি।
তাই আমি ও মৌয়ের মতো করে পাস্তা রান্না করার চেষ্টা করলাম।
রান্না শেষে পাস্তা নিয়ে সাকিবের সামনে ধরতেই, সাকিব কোন দিকে না তাকিয়ে আমার হাত থেকে পাস্তাটা নিয়ে খুব তৃপ্তি করে খেতে লাগলো।
সাকিবের খাওয়া দেখে আমার চোখের কোনায় পানি জমতে শুরু করলো।
আসলে খুদা জিনিস টা কি এক অদ্ভুত জিনিস তাই না?
শুনেছি প্রচন্ড খুদায় নাকি চাঁদটাকে ও রুটি মনে হয়।
সাকিবের ক্ষেত্রে ও তা হয়েছে।
প্রচন্ড খুদায় সাকিবের খেয়াল ও নাই কার হাত থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছে।
এই মূহুর্তে তার সব থেকে বড় শত্রুর তার জন্য পাস্তা এনেছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।
এমনকি সে রান্নায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আছে তা ধরতে পারছে না এই মূহুর্তে।
মানুষ যতোই চেষ্টা করুক কিন্তু হুবহু ভাবে অপর জনের মতো রান্না করা যায় না!
আমি ১০০% নিশ্চিত সাকিব যদি বুঝতে পারতো সে আমার হাতের রান্না করা পাস্তা খাচ্ছে তাহলে সে সারাজীবন না খেয়ে থাকলে ও আমার রান্না করা খাবার খেত না।
কিন্তু এই সব আমার কাছে ব্যাপার না!
আমি সব জেনে শুনেই বিয়েটা করিছি।
তাই আমাকে আস্তেধীরে সাকিবের মনে জায়গা করে নিতে হবে।
যদি ও আমি মৌয়ের জায়গা চাই না!
আমার নিজের জন্য নিজস্ব আলাদা একটা জায়গা চাই!!!
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com