প্রিয় বান্ধবী । লেখিকা - মাহবুবা জাহান
আমার সব থেকে প্রিয় বান্ধবীর সতীন, যে আমাকে হতে হবে তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।
যাকে এতোদিন দুলাভাই বলে ডাকতাম সে যে আমার স্বামী হবে তো কোন দিন কল্পনা ও করিনি।
এমনকি ওর বিয়ের শাড়ি, ওড়নাসহ শুরু করে গহনাটা পর্যন্ত দিয়ে আমাকে বউ সাজতে হবে তা কোন দিন চিন্তায় ও আসে নি।
যদি ও এই সব শাড়ি, গহনা মূখ্য বিষয় না।
ওর বিয়ের পর অনেক বার ওর কাছে এই শাড়ি,
গহনা গুলা চাইতাম আর বলতাম এই গুলা দিয়ে বউ সেজে ছবি তুলবো।
ও বলতো আমাকে এই সব দিয়ে নিজ হাতে সুন্দর করে লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে অনেক অনেক ছবি তুলে দিবে।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস!
আজ সেই সব শাড়ি, গহনা দিয়ে সেজে আমার প্রিয় বান্ধবীর সতীন হতে হচ্ছে আমাকে।
নতুন বউ হিসেবে আমার প্রিয় বান্ধবীর তথা সতীনের ব্যবহৃত জিনিস পরে আমার মোটে খারাপ লাগছে না।
উল্টা ভালো লাগছে।
সব কিছুতে ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছি।
আমার বান্ধবীর মা নিজে হাতে আমাকে বউ সাজিয়ে দিচ্ছে।
আমি জানি না কোন মা তার মেয়ের সতীনকে এতো সুন্দর করে সাজায় কিনা!
খালাম্মা আমাকে খুব যত্ন করে সাজাচ্ছে আর আমাদের ছেলেবেলার গল্প শুনাচ্ছে।
আমার প্রিয় বান্ধবী মৌ আর আমি অহনা।
আমাদের বন্ধুত্বের শুরু জন্মের পর থেকেই,
আমার বাসা পাশাপাশি হাওয়াতে।
জন্মসূত্রে আমি ওর ১মাস ১৩ দিনেই বড়।
এই ১মাস ১৩ দিনের ছোট-বড় আমাদের বন্ধুত্বে কোন ঝামেলা করেনি।
যেহেতু আমাদের ছোট থেকে বড় হাওয়া এক সাথে
তাই আমাদের বন্ধুত্বের গভীরতা কতোটা তা বলে বুঝানো মুশকিল!
আমরা একে অপরের খোলা ডাইরি।
কতো স্মৃতি, কতো দুষ্টুমির গল্প আমাদের আছে তা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না।
আমরা একে অপরকে ছাড়া একদম থাকতে পারতাম না!
এমন কি আমাদের আলাদা বাসা হলে ও আমাদের খাওয়া দাওয়া, পড়ালেখা, ঘুমনোসব এক সাথে করতাম।
আমাদের ২ জনের বন্ধুত্বের গভীরতা দেখে সবাই বলতো এদের একেই বাসায় বিয়ে দিতে হবে।
না হলে এরা ২ জন একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
পাগল হয়ে যাবে কিছুদিন এর মধ্যে যদি আলাদা থাকে।
আমরা ও ২ বান্ধবী মিলে পণ করে ছিলাম যে বাড়িতে ২টা ছেলে থাকবে আমরা সেই বাড়িতে বিয়ে করবো।
আমরা একেই বাড়ির বউ হয়ে এক সাথে সারাজীবন থাকবো।
আর যদি কোন কারণে ২ ভাই এক সাথে না পাই তাহলে একজনকেই ২ জন বিয়ে করে এক সাথে থাকবো।
তাও আলাদা বাসায় বিয়ে করবো না।
কিন্তু সেদিনের কোনভাবে বলা সেই সব কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে পালন হবে তা বুঝিনি।
হঠাৎ পরীর কান্নার শব্দ আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম।
ঘুম ভেঙে মাকে না পেয়ে মেয়েটা বুঝি কান্না করছে।
খালাম্মা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললো আহনা শান্ত হো।
আমি পরীকে নিয়ে আসতেছি।
তুই বস এখানে বাহিরে অনেক মানুষ আছে।
খালাম্মা পরীকে আমার কাছে নিয়ে আসতেই আমি তাড়াতাড়ি করে ওকে বুকের মধ্যে নিয়ে নিলাম।
আমার বুকের মধ্যেই আসতেই পরী শান্ত হয়ে গেল!
শুনেছি খালাদের গায়ে নাকি মায়ের গন্ধ থাকে!
যদিও আমি পরীর আপন খালা না।
কিন্তু ছোট থেকে এক সাথে পরীর মায়ের সাথে থাকায় পরী আমার গায়ে ওর মায়ের গন্ধ পায়।
তাই হয়তো আমার কোলে আসলেই মেয়েটা শান্ত হয়ে যায়!
পরী আমার বান্ধীর ৬মাসের মেয়ে!
মৌ সব সময় আল্লাহ্ এর কাছে চাইতো ওর একটা পরীর মতো মেয়ে হোক।
তাই তো আল্লাহ্ ওকে সত্যি করে পরীর মতো একটা মেয়ে দিয়েছে।
তাই ও নাম রেখেছে পরী।
একজন হুজুররের সাথে ২/৩ জন মুরব্বি এসে এই বিয়েতে আমার মত আছে কিনা জানতে চাইলো।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াতেই আমাকে তারা একটা কাগজে স্বাক্ষর করে কবুল বলতে বললো।
এই সময় খালাম্মা আমার পাশে বসে আমাকে সাহস যোগাল।
কবুল বলার সাথে সাথেই আমি আমার প্রিয় বান্ধবীর সতীন হলাম, ওর স্বামীকে নিজের স্বামী করে নিলাম সাথে ওর সন্তানকে!
কিন্তু আসলেই কি আমি সবটা পেলাম?
সত্যি কি আমার প্রিয় বান্ধবীর স্বামী কোন দিন আমার হবে?
পরী কি আমাকে কোন দিন আমায় মা বলে ডাকবে?
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com