Breaking News

রক্তাক্ত লাশ । পর্ব -০৪

তাশফিঃ সত্যিই ভালোবাসি।
হাসি দিলাম।
আমিঃ একটুও ভালোবাসো না। এমতাবস্থায় আর রিলেশন চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা। ব্রেকাপ।
তাশফিঃ কি শুরু করলেন?
আমিঃ বায় ভালো থেকো।
বলেই উঠে চলে আসলাম।
ভাবছিলাম ও কেঁদে দিবে কিন্তু না কাঁদেনি।
বাসায় আসতেই,,,
শাওনঃ কিরে কি খবর এখন?
আমিঃ ব্রেকাপ তো করেছি। কিন্তু আমার মনে হয়না ও আবার আসবে।
শাওনঃ কি বলিস
আমিঃ ঠিকি বলছি
শাওনঃ আচ্ছা আগে দেখ কি হয়।
পরদিনই তাশফি সামনে এসে হাজির,,
তাশফিঃ কি করেছি আমি হ্যা? এমন করছেন। কাল থেকে কোনো কথাই বলেননি। ফোন ও দেন নি।
আমিঃ ব্রেকাপ করেছি না?
তাশফিঃ ধুর কিসের ব্রেকাপ। আমি তো করিনি।
আমিঃ আমি করেছি।
তাশফিঃ believe me Plss i love you so much..
আমিঃ তুমি কেন? আমি পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করিনা। সবাই ছলনাময়ী।তুমি আমার সাথে পালাতেই পারবেনা তাহলে সেটা কিসের ভালোবাসা হবে? তোমার বাবা অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে তুমি তো বিয়ে করে নিবা। তখন আমি কি করব? ছ্যাকা খাইয়া আবার সুইসাইড করতে যাব?
তাশফিঃ কিন্তু এখন তো আর পালাতে হচ্ছেনা। সময় হলে সব দেখা যাবে।
আমিঃ আমি আগেই সব প্ল্যান করে রাখি। পরের চিন্তা করে ফেলে রাখতে পারব না। যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারো। যে আমাকে ছাড়া কোনো ভাবেই কাউকে বিয়ে করবেনা। প্রয়োজনে পালাবে তাহলে এসো। আমি তোমার আছি থাকব।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
শাওন তুষারের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখনি আম্মুর কল। রিসিভ করলাম।
=> ভাইয়া আব্বু স্ট্রোক করেছে। হসপিটালে আছি আমরা তুমি যলদি এসো
খানিক ক্ষনের জন্য আমি হ্যাং হয়ে গেলাম।
শাওনঃ কিরে কি হয়েছে?
আমিঃ আব্বু স্ট্রোক করেছে।
শাওনঃ কিহ
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। দ্রুত রিকশা নিয়ে হাসপাতাল চলে আসলাম।
আম্মু ছোট ভাই আর বোন দেখতেই আমার কাছে চলে আসল।
সবাই কাঁদতেছে।
আমিঃ আম্মু কেদোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মুঃ হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। কয়েকদিন ধরে তোর কথাই বারবার বলতেছিল। আজ হঠাৎ
আমিঃ চুপ করো আম্মু। বসো তুমি এখানে। কেদোনা।
এর মধ্যেই শাওন আর তুষার এসে হাজির হলো।
তুষারঃ কি অবস্থা এখন?
আমিঃ জানিনা রে। আপডেট জানতে পারিনি এখনও।
শাওনঃ আচ্ছা চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
আমিঃ সব আমার জন্য। কতদিন হয়ে গেছে বাড়ি যাইনা। খোজ খবর নেইনি।
তুষারঃ হইছে এখন চুপ থাক।
আমিঃ কেন যে আমি এতটা স্বার্থপর হয়েছি। আজ যদি আব্বুর কিছু হয়ে যায়
তুষার আমাকে জড়িয়ে ধরল।
তুষারঃ কিছু হবেনা। আল্লাহ ভরসা।
এমন সময় ডাক্তার আসল,
ডাক্তারঃ রোগী এখন ঠিক আছে। চিন্তা করবেন না।
আমিঃ উফস ডাক্তার বাঁচালেন।
ডাক্তারঃ তবে হ্যা দেখবেন যেন কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত না থাকে। একদমই টেনশন করতে দিবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
আমিঃ জ্বী ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমরা কেবিনে ডুকলাম। আব্বুর সামনে যাওয়ার মতো সাহস পাচ্ছিনা। কেননা জানি আমার জন্যই আজ এত কিছু। কতদিন পর আব্বু কে দেখলাম।
সবাই এখন কত খুশি।
আমি বাহিরে এসে চেয়ারে বসলাম।
শাওনঃ দোস্ত সব তো ঠিক হয়েই গেছে। এবার তো হাসি দে
এমন সময় আম্মু আসল,,
আম্মুঃ আরিয়ান কিছু ফলমূল আর জুস নিয়ে আয়।
আমিঃ হ্যা যাচ্ছি।
বাজারে আসলাম। কেনাকাটা করে হাসপাতাল গেলাম। কেবিনের দরজা দিয়ে ডুকতে তখনি শুনতে পেলাম,,
আম্মুঃ এত কিসের চিন্তা করো?
আব্বুঃ চিন্তা কি আর আমি স্বাদে করতাম? ছেলেটা কত বড় হয়েছে। কিন্তু কিছুই করছেনা। খবে তোমাদের কি হবে? পোলা টা আমার কথাই শুনেনা। ও ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু এত টাকা আমি কোথায় পাবো যে দিয়ে বলব নে বাবা ব্যবসা কর। তবুও নিজের পায়ে দাড়া। মিডল ক্লাস ফ্যামিলির ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করতে পারেনা।
আম্মুঃ সব ঠিক হয়ে যাবে। একদম চিন্তা করো না
আব্বুঃ ঠিক হয়ে গেলে কি আর চিন্তা করতাম। ছেলে টা তো মনে করে আমি শুধু ওরে বকি। আজ কতদিন পর ওরে চোখের সামনে দেখলাম।
আম্মুঃ আচ্ছা চুপ করো। রেষ্ট নাও।
আমি ভিতরে ডুকলাম। ফলমূল আর জুস গুলো রেখে বাহিরে চলে আসলাম।
খুব করে কান্না পাচ্ছে।
এত কিছু হচ্ছে আমি বুঝতেও পারিনি। আমার জন্য আমার আব্বু স্ট্রোক করে ফেলল। আল্লাহ তুমি আমাকে কেন এখনও বাঁচিয়ে রেখেছ। সেদিন সুইসাইড করে ফেললেই হত। আমার মত ছেলেদের বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। স্বার্থপর যে ছেলে নিজের বাবা মায়ের দুঃখ বুঝেনা সে ছেলেই হতে পারেনা। আমিও ছেলের কাতারেই পড়িনা। না জেনেই আমি সুইসাইড করতে চাইছিলাম। আমি কি প্যারায় ছিলাম। আমার আব্বু তো তার থেকেও বেশি প্যারা সামলায়। মরতে নিছিল তাও ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আর আমি সবার কথা সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করতে গেছিলাম। হায় আল্লাহ আমি কি? কেন এসব আমার মাথায় দাও নি। হয়ত আজ এসব হতোও না।
শাওনঃ দোস্ত কাঁদিস না।
আমিঃ ছোট বেলার কথাগুলো মনে পড়তেছে খুব। যা বায়না করতাম সব পেয়ে যেতাম। কোনোদিন কোনো কিছুর জন্য বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হত না। পড়াশোনা শেষ না করা পর্যন্ত আমাকে কোনোদিন কিছু করতে বলেনি। আর যখনি কিছু করতে বলা শুরু করল। তখনি আমি তাকে খারাপ ভাবতে শুরু করলাম। বিশ্বাস কর দোস্ত এমন ও ভেবেছি যে ওনি আমার বাবাই না। কোনো বাবা কি ছেলের সাথে এমন করতে পারে? এক মুহুর্তের জন্যও বুঝতে চাইনি যে ওনি আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় ছিলেন।
চুপ করে আছে সবাই।
আমিঃ আব্বুর খারাপ দিক টাই আমার চোখে পড়েছে। এই যে ছোট থেকে বড় করেছে। এত কিছু দিয়েছে তা একবার চিন্তা করিনি। খালি ভেবেছি ব্যবসা করতে টাকা দেয়নি। তো সে ভালোনা। আমার ভালো চায়না। এসব ভেবে আমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। অথচ
শাওনঃ পৃথিবীর সব বাবারাই আজব হয়। মনে কষ্ট চেপে রেখে হলেও সন্তান দের শাষন করে। বুঝতেই দিতে চায়না এসব শাষন করতে যে তারাও প্রচুর কষ্ট পায়।
আমিঃ দোস্ত একটা জব ঠিক করে দিতে পারবি?
তুষারঃ তুই জব করবি?
আমিঃ হ্যা করব। স্বপ্ন সবসময় যে সত্যি হবে তার মানে নেই। অধিকাংশ স্বপ্নই স্বপ্ন থেকে যায়
শাওনঃ তাহলে কাল থেকে তোর জন্য জব খোজা শুরু। প্রতিদিন পত্রিকা খুলে দেখবি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো।।
দুদিন পর আব্বুকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দিল। আব্বুকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রুমে বসে আছি। ছোট ভাই আসল,,
আমিঃ কিছু বলবি?
ছোট ভাইঃ হুম
আমিঃ বল কি বলবি
ছোট ভাইঃ আসলে
আমিঃ এত ইতস্তত বোধ করছিস কেন। বল কি বলবি
ছোট ভাইঃ ভাইয়া আমার হোস্টেলের বিল টা এখনও দেওয়া হয়নি। কল আসছিল হোস্টেল থেকে। পরিশোধ করতে বলেছে। কি করব বুঝতেছিনা। আব্বু অসুস্থ্য কিভাবে এখন আব্বু কে বলব?
আমি ওর দিকে তাকাইলাম। একটা হাসি দিলাম।
আমিঃ কবে দিতে হবে?
ছোট ভাইঃ কাল
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। চিন্তা করিস না আমি ব্যবস্থা করতেছি। আর হ্যা আব্বু বা আম্মুকে কিছু বলিস না।
ছোট ভাইঃ ওকে।
ও রুম থেকে চলে গেল।
নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। এতটা খারাপ আমি? কিভাবে হতে পেরেছি। আমি যখন হোস্টেলে ছিলাম মাসের শুরুতেই টাকা পেয়ে যেতাম। কোনোদিনই আব্বুর কষ্ট টা বুঝতে পারিনি। এত কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে। অথচ এত বড় হয়েও আমি এখনও ওনার পাশে দাঁড়াতে পারিনি। চেষ্টাও করিনি।
একদিন চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তাশফি এসে হাজির হলো,
আমিঃ তুমি এখন?
তাশফিঃ রিলেশন রাখবেন না?
আমিঃদেখো আমার এসব নিয়ে কথা বলার মুড নাই। কাইন্ডলি সিনক্রিয়েট করোনা। এক জায়গায় যাচ্ছি যেতে দাও।
তাশফিঃ ভালোবাসেন না আপনি?
আমিঃ না বাসিনা। তুমি কেন কোনো মেয়েকেই আমি ভালোবাসতে পারব না। তুমি প্রচন্ড সুন্দরি যেকোনো ছেলেই ফিদা হয়ে এক দেখাতেই। কিন্তু আমি ফিদা হইনি। কারন তুমি আমার জীবনে প্রথম নও। অনেক এসেছে হারিয়ে গেছে। তুমিও হারিয়ে যাবে। কিন্তু মাঝখানে আমার জীবনে থেকে স্মৃতিভরা কষ্টগুলা। সো প্লিজ পথ ছাড়ো। ব্রেকাপ করেছি। নিজের মত থাকো।
তাশফিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বুঝে গেছি আপনার আমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্টই নাই। ব্রেকাপ তো। আজ আমিও ব্রেকাপ করলাম। ভালো থাকবেন
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com