প্রিয় বান্ধবী । পর্ব -০৫
আমাদের বিয়ের ৭দিন চলছে।
খালাম্মা এতোদিন আমাদের সাথে ছিলো।
আমি আর পরী এই কয়েকদিন খালাম্মার দায়িত্বে ছিলাম।
খালাম্মা আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে, শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সংসার সুন্দর ভাবে গুছিয়ে করতে হয়!
সাকিবকে ও বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে যাতে ও নতুন জীবন সুন্দর করে তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারে!
আজ থেকে আমাকে সম্পূর্ণভাবে পরীর দায়িত্ব সাথে তার বাবার ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন খালাম্মা।
খালাম্মার গলা তখন ধরে আসছিলো।
জানি না কোন মা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে তার মেয়ের গড়া সংসার অন্যের হতে তুলে দেয় কিভাবে!
এতোদিন খালাম্মাকে এক মূহুর্তের জন্য ও মনে হয়নি সে মানুষিক ভাবে দূর্বল।
কিন্তু আজ আমি তার অন্য রূপ দেখছিম
গতকাল থেকে মৌয়ের রুমে সব কিছু নিজ হাতে গুছিয়েছে।
আর আমাকে বার বার অনুরোধ করছে আমি যেন এই রুমের কোন কিছু খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন পরিবর্তন না করি।
এখানে নাকি সে মাঝে মাঝে আসবে তার মেয়ের অস্তিত্ব অনুভব করতে।
সকাল থেকে মৌয়ের ব্যবহৃত জিনিস, কাপড় গুলা জড়িয়ে ধরে কান্না করছে খালাম্মা।
আর পাগলে মতো বিলাপ করছে।
আমার মৌরে, আমার সোনারে, আমার যাদুরে আমারে রেখে কই গেলিরে?
আমার যে অনেক কষ্ট হয়রে।
তুই তোর মা আর মেয়েকে রেখে কই গেলিরে।
আমাদের তোর সাথে কেন নিলি না রে!
খালাম্মাকে কি বলে শান্তনা দিবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
সন্তান হারানোর কি যন্ত্রণা তাকে দেখলে বুঝা যায়।
যাবার সময় আমাকে আর পরীকে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছে।
অতিরিক্ত কান্নার ফলে খালাম্মা অনেকটা অসুস্থ হয়ে গেছে।
এই অবস্থা তাকে একা যেতে দিতে চায়নি সাকিব।
তাই সাকিব খালাম্মাকে নিজে দিয়ে আসতে গেল।
খালাম্মা আর সাকিব বিদায় নিতেই বাড়িটা অনেকটা শূন্য হয়ে গেল!
বুকের মধ্যে কিসের যেন অভাব বোধ করলাম।
ছোট থেকেই মৌয়ের মতো আমি ও খালাম্মার সব আদর পেয়েছি।
খালাম্মা আমাদের ২ জন কে কোন দিন ২ চোখে দেখে নাই।
আমি ১৩ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি।
কিন্তু খালাম্মার ভালোবাসার জন্য কখনোই বুঝতে পারি নি যে আমার মা নেই।
মৌ তো মাঝে মাঝে অভিযোগ করতো আমার মা তো আর আমার মা না!
আমার মা এখন অহনার মা।
খালাম্মা তখন মুচকি হেসে বলতো মা তো মা-ই।
এখন সন্তান ১টা হোক বা ১০টা!
মায়ের চোখে সব সন্তান-ই সমান।
সারাটা দিন পরীকে নিয়ে আর টুকটাক কাজ করে কাটালাম।
পরী সারাদিন অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ করে কথা বলে!
যার কোন অর্থ-ই বুঝি না।
তাও আমি নিজ মনে ওর সাথে কথা বলি।
ওর ভাব দেখে মনে হয় আমার সব কথা বুঝে।
পরীর কাছ আমি খুব পরিচিত।
ওর জন্মের পর থেকেই আমাকে দেখে।
পরীর আর আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর।
এতোটুকুও বাচ্চা আমাকে দেখলেই ঝাপিয়ে আমার কোলে চলে আসে।
পরীর জন্মের পর থেকে মৌ অসুস্থ থাকায় পরী বেড়ে উঠা আমার হাতেই।
হয়তো আমি ওকে জন্ম দেইনি কিন্তু ওর জন্মের পর থেকে লালন পালন আমি -ই করছি।
অনেকেই বলে পরের সন্তান নাকি পরের-ই হয়।
খুব ভয় হয় যদি পরী আমার থেকে দূরে চলে যায়!
সাকিবের পছন্দের সব খাবার আলু, টমেটো, বেগুন, ইলিশ মাছে ভর্তার সাথে শুকনা মরিচ ভাজা আর পাতলা ডাল রান্না করলাম।
সাকিব বাসায় ফিরেই ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো।
টেবিলে পছন্দের সব খাবার দেখে ও আমাকে কিছু বললো না।
আমি ওকে খাবার বেরে দিতে চাইলেই ও বললো আমারটা আমি নিয়ে খেতে পারবো।
আমি কিছু না বল নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
এর মধ্যে সাকিব কোন কথা না বলায় আমি-ই বললা শুরু করলাম—
আমি জানি ভাইয়া (সব সময় ভাই বলে ডাকায় মুখ ফসকে ভাইয়া বের হয়ে গেল।)
তুমি আমাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।
আর এইটা স্বাভাবিক ও।
আমি তো তোমার আর মৌর সম্পর্ক টা শুরু থেকে দেখেছি।
আমি জানি বা বুঝি তুমি মৌকে কতোটা ভালোবাসতে আর এখনো কতোটা বাসো আর ভবিষ্যতে ও বাসবে আমি নিশ্চিত।
সাকিবঃ তাহলে তুমি কি চাই ও আমি মৌকে ভুলে যাই?
আমিঃ না কখনো না।
আমি যেমন মৌকে কোন দিন ভুলতে পারবো না ঠিক তুমি ও ভুলতে পারবে না আমি জানি।
সাকিবঃ তাহলে তুমি কি চাও?
তুমি তো জানো আমি মৌকে ভুলতে পারবো না।
আর আমি পরীকে একা বড় করতে পারতাম।
তাহলে?
আমিঃ জানো তো আমি মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি।
মা ছাড়া জীবন চলা যে কতো কঠিন বা কষ্টদায়ক তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
আমি যখন কোন ভুল করতাম আমাকে বোঝানোর মতো কেউ ছিলো না।
আমার মন খারাপ হলে, অসুস্থ হলে বা ব্যাথা হলে কেউ এসে জিজ্ঞেস করতো না- অহনা, মা আমার কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? কেউ মেরেছে?
অসুস্থ হলে সারারাত জেগে কেউ আমার পাশে বসে থাকতো না, কেউ মাথায় হাত বুলায় দিতো না।
বা সময় মতো ওষুধ খেতে দিতো না।
পছন্দের কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করলে কাউকে বলতে পারতাম না আমাকে এই খাবার টা রান্না করে দাও।
কোন কিছুর অবদার করতে পারতাম না কারো কাছে।
আসলে মা তো মা-ই হয়।
অন্য সবাই যতো যাই করুক কিন্তু মায়ের মতো করে কেউ করতে পারে না।
তাই আমি চাই না পরী যখন বড় হবে আর এই কষ্ট গুলা অনুভব করুক।
ও যখন দেখবে ওর সব বন্ধুদের মা আছে কিন্তু ওর মা কেন নেই সেটার জন্য কষ্ট পাক।
সবার মা যখন তার সন্তানকে আদর করবে বা স্কুলে নিয়ে যাবে।
নিজ হাতে খাওয়া দিবে, আমি চাই না তখন ও পরী আফসোস করুক ইস্ আজ যদি আমার ও মা থাকতো।
কোন কিছু না পাওয়ার যন্ত্রণায় বা না বলা কথা মাকে বলতে না পেরে রাতে বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করুক পরী তা আমি বেঁচে থাকতে হতে দিতে পারবো না।
হয়তো আমি পরীকে জন্ম দেই নি কিন্তু এই ৬মাস আমি ওকে আমার হাতে বড় করে তুলেছি।
মৌ যখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলো তখন আমি পরীকে মা ছাড়া বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করছিলাম।
সেই পরীকে আমি একা তোমার কাছে রেখে কিভাবে চলে যাবো বলো?
সাকিবঃ কিন্তু এখানে থেকে তুমি কি পাবা?
হয়তো পরীর মা হতে পারবা কিন্তু কখনোই মিসেস সাকিব হতে পারবা না।
আর তুমি কি পারবে তোমার প্রিয় বান্ধবীর স্বামীকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে?
আমি তোমাকে একবার হারিয়েছি কিন্তু এবার আর কোন ভাবেই হারাতে চাই না সাকিব।
আমি আজ ও তোমার সেই মায়াবী চোখে হারাতে রাজি আছি। একটা সুযোগ দাও আমায় দেখো আমি তোমার সব দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দিবো।
সাকিবঃ কিছু বলছো না যে?
আমিঃ সাকিব আমি জানি এখন কোন ভাবে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠা সম্ভব না।
আমি আপাতত পরীর মায়ের পাশাপাশি তোমার ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।
ভবিষ্যৎ এর টা ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমাদের সম্পর্ক কি হয়!!
কিন্তু এখন আমার তোমার বন্ধুত্বের হাত চাই।
পরীকে সুন্দর ভাবে বড় করে তোলার জন্য।
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com