রক্তাক্ত লাশ । পর্ব -০৩
তাশফিঃ বিকালে ওই যে নিপা শাওন ভাইয়া আর আমি
আমিঃ ও আচ্ছা। তা কি মনে করে?
তাশফিঃ এমনিই। চেনা পরিচিতি থাকা ভালো।
আমিঃ ধন্যবাদ।
তাশফিঃ আজব তো আপনি এমন কেন?
আমিঃ কি করলাম আমি?
তাশফিঃ আচ্ছা কি করেন আপনি বলেন তো?
আমিঃ রাজমিস্ত্রির কাজ করি।
তাশফিঃ সত্যি?
আমি ঃ হ্যা আব্বুর কাজ করে আর আমি সাহাজ্য করি। দুজনেই রাজমিস্ত্রি।
তাশফিঃ কয় ভাই বোন আপনারা?
আমিঃ চার ভাই তিন বোন। সবার বড় আমি। পড়াশোনা এইট পাশ করছিলাম। টাকা পয়সার অভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি।
তাশফিঃ এতকিছু জিগাইছি আমি?
আমিঃ জানি এরপর ওগুলাই জিগাসা করতেন। তাই আগেই বলে দিলাম।
তাশফিঃ বাহ ইন্টিলিজেন্ট তো।
আমিঃ জ্বী ধন্যবাদ। বায়।
বলেই মোবাইল টা রেখে দিয়ে ঘুমানোর ট্রাই করতে লাগলাম।
এমন সময় শাওন আসল,,
শাওনঃ কি রে তাশফির কথা ভাবছিস তাই না?
আমিঃ তুই ওরে আমার আইডি দিয়েছিস?
শাওনঃ হ্যা চাইল দিলাম। তাছাড়া মেয়েটা কিন্তু অস্থির। চাইলে লাইন করিয়ে দিতে পারি।
আমিঃ আর কিছু পাস না তুই? সব জেনেও এইসব বলছিস
শাওনঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আয় খেতে আয়।
আমিঃ আসিতেছি।
খাইতে চলে গেলাম।।
খাওয়া দাওয়া শেষে ওদের সাথে আড্ডা দিলাম।
পরদিন বিকাল বেলা। শাওন তুষার আর আমি হাটতেছি।হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে ডাক দিল। পিছন ফিরে দেখি তাশফি,,
শাওনঃ আরে তুমি?
তাশফিঃ কোথায় যাচ্ছেন?
শাওনঃ এই তো হাটাহাটি করছিলাম।
তাশফিঃ আচ্ছা ভাইয়া আমার একটু শপিং করতে হবে। একজন আমার সাথে যাবেন প্লিজ
শাওনঃ আমার তো নিপার সাথে দেখা করতে হবে। তুষার তুই যাইবি?
তুষারঃ নারে। আমার তো কাজ আছে জানিসই। আরিয়ান তুই চলে যা। তোর তো কোনো কাজ নেই।
আমিঃ না আমি পারব না।
শাওনঃ দোস্ত প্লিজ চলে যা। বুঝিস না নিপার বোন। যদি নিপা জানতে পারে হেল্প করিনাই। পরে আমার বিপদ বাড়ব। ( কানে কানে বলল)
আমি শাওনের দিকে তাকালাম।
শাওনঃ প্লিজ দোস্ত
আরিয়ানঃ আচ্ছা যাচ্ছি।
তাশফিঃ উফস ভাইয়া অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শাওন আর তুষার চলে গেল।
তাশফিঃ চলুন
আরিয়ানঃ হুম।
একটা রিকশা ডাক দিলাম।
তাশফি উঠে বসল।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে বসলাম।
আমিঃ কোথায় যাবেন?
তাশফিঃ হ্যা?
আমিঃ মানে শপিং করতে ফুটপাতে যাবেন নাকি শপিং মলে?
তাশফিঃ ফুটপাতে কেন যাব?
আমিঃ বললাম আর কি। আমি তো ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করি।
তাশফিঃ আপনাকে দেখে মনে হয়না এমন।
কিছু বললাম না।
শপিং মলের সামনে আসতেই রিকশা থামাল।
ভিতরে ডুকলাম। সে একের পর এক কেনাকাটা করে যাচ্ছে। আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। যদিও অসহ্যকর লাগছে। তবুও শাওনের জন্য সব সহ্য করছি।
যাহোক শপিং শেষে আমি বাসায় চলে আসলাম।।
এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
শাওন আর তুষার আসল,,
শাওনঃ দোস্ত। আমি সিউর যে তাশফি তোকে পছন্দ করে
আমিঃ আজব তো দুইদিন হল পরিচয়। এর মধ্যেই এত কথা কেন বলিস?
তুষারঃ আমিও সিউর ওই মেয়ে তোকে পছন্দ করে।
আমিঃ আমি মেয়েদের বিশ্বাস করিনা। সো এইসবে আর জড়াব না।
তুষারঃ তোকে জড়াইতে কে বলছে। মেয়েটাকে পরিক্ষা করে নে। তাহলেই হয়।
আমিঃ not interested..
শাওনঃ আরে শুন কিছুদিন প্রেমের নাটক কর তুই? তারপর দেখ ওর কাহিনি । যখন সিউর হইবি ওই মেয়ে তোকে ছাড়া কিছু বুঝেনা তখন ছেড়ে দিয়ে টেষ্ট করবি কতদিন আটকে থাকে। যদি থাকে তাহলে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেলবি। তোরই লাভ। ওইসব নেহা টেহার কথা ভেবে কিছু হবেনা। সে তো এখন অন্য কারো সাথে খাটে….
আমিঃ চুপ করবি। ভাল্লাগছেনা একা ছাড় আমাকে।
ওরা রুম থেকে চলে গেল।
কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। নিজেকে খুবই অসহায় লাগছে।
কয়েকদিন পর,,,
আমিঃ তাশফি আই লাভ ইউ
তাশফিঃ কি কি বলছেন?
আমিঃ সিরিয়াসলি আই লাভ ইউ
তাশফিঃ আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।
আমিঃ সত্যি বলছি। যদি রাজি থাকো তাহলে তো হলোই। নাহলে..
তাশফিঃ নাহলে?
আমিঃ যেকোনো উপায়ে রাজি করিয়েই ছাড়ব
তাশফিঃ বায়
তাশফি অনলাইন থেকে চলে গেল।
আমিঃ নে তোদের কথামত প্রপোজ করে দিছি।
শাওনঃ শিউর থাক। এ মেয়ে আজ হোক বা কাল তোকে প্রপোজ করবেই।
আমিঃ দেখা যাক।
আমি অনেক চিন্তার পর ভেবে দেখলাম। ডিপ্রেশন এ থাকার চেয়ে একটু মুক্ত হতে ট্রাই করি। তাই তাশফিকে দিয়েই শুরু করলাম নেহার আমার সাথে যা করেছে তা করা।
দুদিন পর,,
তাশফি আমাকে দেখা করতে বলল। চলে গেলাম জায়গামতো। দুজন পাশাপাশি বসে আছি,
তাশফিঃ জানেন আমি আপনাকে আরো আগে থেকেই পছন্দ করতাম?
আমি অভাকই হলাম।
আমিঃ যেমন?
তাশফিঃ যেমন আপনাকে প্রথমবার ছবিতে দেখেছি। শাওন ভাইয়ার সাথে নিপা দেখাইছিল।
আমিঃ তাই নাকি? তখন থেকেই ভালোবাসো?
তাশফিঃ হ্যা। সেদিন রেষ্টুরেন্টে আপনাকে দেখার জন্যই এসেছিলাম। এবং কি শাওন ভাইয়ার সাথে প্ল্যান করে শপিং মলেও নিয়ে গেছিলাম।
আমিঃ কিহ আমার পিছু পিছু এতকিছু? তো আমাকে বলো নি কেন?
তাশফিঃ আপনার অপেক্ষা করেছি। ফাইনালি প্রপোজ করেছেন রাজি না হয়ে থাকতে পারি?
আমিঃ বাব্বাহ। যদি প্রপোজ না করতাম?
তাশফিঃ ক্রাশ হিসেবে থেকে যেতেন।
আমিঃ বায় দ্যা ওয়ে। কিছু বলার ছিল আমার
তাশফিঃ বলুন
আমিঃ আমি গরীব ঘরের ছেলে। সম্পত্তি বলতে কিছু নাই। তাছাড়া পড়াশোনাও জানিনা। আগে ভাবনা চিন্তা করে নাও। তারপর আমার সাথে জড়াও
তাশফিঃ ধুর ওসব কিছু আমার লাগবেনা। আপনি হলেই চলবে।
আমিঃ টিনের ঘরে থাকি। দুইবেলা ঠিকমত খেতেও পারিনা। সো আগে ভেবে নাও। পরে বলতে পারবানা যে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।
তাশফিঃ এত কিছু জিগাইছি আমি? এত বেশি কথা বলেন কেন? হ্যা
(চুপ হয়ে গেলাম। বুঝলাম মেয়ের মাথায় এসব এখন ডুকবেনা। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার বলতে হবে। দেখি কতদিন টিকে। মাত্র তো শুরু। )
শুরু হলো তাশফির সাথে প্রেম কাহিনি। যদিও আমি ভালোবাসিনা। যতটুকু বুঝি মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা।
তো একদিন,,,
আমিঃ ভালোবাসো তুমি আমাকে?
তাশফিঃ হুম প্রচন্ড । আপনি বাসেন না?
আমিঃ না মানে আমি তো গরীব ঘরের ছেলে। তোমার বাবা মা কি মেনে নিবে আমাকে?
তাশফিঃ আরে মানবে মানবে আপনার চিন্তা করতে হবেনা।
আমিঃ যদি না মানে?
তাশফিঃ মানবে অবশ্যই।
আমিঃ না মানলে পালাবা আমার সাথে?
তাশফিঃ পালাব কেন? আব্বু কে মানিয়ে নিব তাহলেই তো হলো
আমিঃ ধরো তোমার আব্বু মেনে নিল না। তখন কি করবে। পালাবে?
তাশফিঃ তখন দেখা যাবে
আমিঃ বুঝছি তুমি পালাবা না। অর্থাৎ তোমার বাবা তোমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চাইলে তুমি তাকেই বিয়ে করে ফেলবে
তাশফিঃ কিসব বলছেন
আমিঃ ঠিকই বলছি। এমন হলে আবার আমার ছ্যাকা খেতে হবে। দেবদাস হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে
তাশফিঃ ফাজলামি করিয়েন না তো।
আমিঃ আমি ফাজলামি করছিনা। আই এম সিরিয়াস। পালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারতেছ না। তাহলে তুমি আমাকে কি ভালোবাসো?
তাশফিঃ সত্যিই ভালোবাসি।
হাসি দিলাম।
আমিঃ একটুও ভালোবাসো না। এমতাবস্থায় আর রিলেশন চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা। ব্রেকাপ।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com