Breaking News

স্বপ্নপূরণ। পর্ব-০৮

হঠাৎ করে প্রিয়ার মেয়ে মিষ্টি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন সকাল থেকে তাই প্রিয়া
তার মেয়েকে বড় কোন ভালো ডাক্তারের কাছে দেখাতে নিয়ে যাবে।
প্রিয়া তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
রহিমা বেগম তার মেয়ের রুমে এসে বলেন যে প্রিয়া আমিও যাই তোর সঙ্গে তাহলে তোর একটু ভালো হয়।
না মা, তোমাকে যেতে হবে না আমার সঙ্গে আমি একাই যেতে পারবো
আর তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও তাহলে বাসার কাজগুলো কে করবে?
আমাদের আসতে যদি দেরি হয় তখন।
আমি ঠিক ওখান থেকে এসে করতে পারব তবু ও যাই না তোর সঙ্গে।
মা তুমি ছোট বাচ্চাদের মতো জেধ করতেছো কেন আমি কি ওখানে বেড়াতে যাচ্ছি নাকি?
মিষ্টিকে ডাক্তার দেখাতে যাব এমনিতেই দেশের যে অবস্থা।
তুমি বাসায় থাকো আমি মিষ্টি নিয়ে একাই যাচ্ছি।
রহিমা বেগম তার মেয়ের কথা শুনে রুম থেকে বাহির হয়ে আবার নিচে এসে তার কাজ করতে শুরু করে। অন্যদিকে রফিক সাহেব প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও অফিসে চলে যায় সকাল সকাল।
তিনি মিষ্টির অসুস্থতার কথা জানেন না কারণ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে। প্রিয়া তার বাবাকে বলে নি ।
অযথা টেনশন করবে দেখে ।
প্রিয়া রেডি হয়ে তার মেয়েকে কোলে করে নিচে নেমে আসে তারপর তার মার আমার কাছে গিয়ে বলে।
মা আমি গেলাম মিষ্টি কে নিয়ে ।
রহিমা বেগম রান্নাঘর থেকে বলেন যে , প্রিয়া দেখেশুনে যাস রাস্তায় কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোনে জানাস।
ঠিক আছে মা , আমি তাহলে গেলাম ।
ওকে যা তাহলে।
প্রিয়া তার মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাসা থেকে রাস্তায় চলে আসেন।
রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে রিক্সার জন্য।
একটু পরে রিক্সা পেয়ে যায় তারপর রিকশায় করে প্রিয়া ডাক্তারের চেম্বার এর কাছে চলে আসেন।
তারপর রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে ডাক্তারের চেম্বার দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।
প্রিয়ার এখনো সিরিয়াল আসেনি তাই সে পাশেই একটা বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করতেছে।
এখানে নাকি অনেক বড় ডাক্তার বসে।
এই জন্য প্রিয় তার মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছে।
একটু পরে প্রিয়া সিরিয়াল আসে।
প্রিয়া আর বসে না থেকে তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তারপর তার মেয়েকে নিয়ে ধীরে ধীরে ডাক্তারের রুমে গেটের সামনে গিয়ে হালকা দরজা খুলে বলে,
এক্সকিউজ মি আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
ইয়েস কামিং।
প্রিয়া ডাক্তারের ভয়েস শুনে কিছুটা অবাক হয়ে যায় কারণ ভয়েসটা প্রায় ঈমানের মত ছিল।
প্রিয়া আবার ভাবতেছি এখানেই ঈমান আসবে কিভাবে ধুর আমি এগুলো কী ভাবতেছি?
প্রিয়া আর কোন কিছু না ভেবে তার মেয়েকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
প্রিয়া ভেতরে ঢোকার সাথেই প্রিয়া দেখতে পায় একজন মানুষ উল্টো পাশে বসে কি যেন করতেছে?
প্রিয়া ভিতরে ঢুকায় মানুষটা তাকে বলে,
আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ুন।
প্রিয়া এই কথা শুনে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।
এখানে আসার পর থেকে প্রিয়ার কেমন অস্থিরতা কাজ করতেছে।
তার মনে হচ্ছে এখানে তার পরিচিত কেউ আছে।
প্রিয়ার মনে বারবার এই কথা দোলা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রিয়া কেন এই কথা মনে দোলা দিচ্ছে সে ভেবে পাচ্ছেনা।
তো আপনার কি সমস্যা? (এই কথা বলে ডাক্তার উলটো পাশ থেকে প্রিয়ার সামনাসামনি মুখ করে)
প্রিয়া ডাক্তারের মুখ দেখে প্রায় কেঁদে ফেলে। এটা আর কেউ নয় ঈমানে।
প্রিয়া এটা আগে যদি জানত তাহলে কখনো এখানে আসতো না ।
প্রিয়ার মন বুঝতে পেরেছিল যে তার কোন কাছের মানুষ এখানে আছে সেটাই ঠিক হলো।
প্রিয়া ঈমানকে দেখে সাথে সাথে চেয়ার থেকে উঠে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ঈমান ও প্রিয়া দেখে অবাক হয়ে যায় এভাবে প্রিয়াকে দেখতে পারবে এভাবে
কখনও কল্পনা করেনি।
প্রিয়া প্রায় দরজার কাছে চলে এসেছে শুধু দরজাটা খুলবে আর বাইরে যাবে এর
ভেতরে কে যেন তার পিছন থেকে শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে।
পিছনে ফিরে দেখে ঈমান তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে।
এটা দেখে প্রিয়ার প্রায় পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়।
যে মানুষটা তার স্বার্থের জন্য আমাকে এবং আমার বাচ্চাকে ফেলে চলে গিয়েছে সে
কোন অধিকারে আমার শাড়ির আচল ধরে টানে।
প্রিয়া পিছনে ফিরে দেখা ঈমান তার শাড়ির আঁচল ধরে মুচকি হাসতেছে।
কি ব্যাপার আপনি আমার শাড়ির আচল ধরে রাখছেন কেন?
এমনিতেই ধরে রেখেছি তোমার কোন সমস্যা।
চেনা নাই জানা নেঈ আপনি আমার শাড়ীর আঁচল ধরে রেখেছেন কেন।
আবার আমাকে বলতেছেন আমার কোন সমস্যা কিনা।আপনার কি এটা করা
স্বভাব নাকি যে শাড়ি পরা মেয়ে দেখলে তার আঁচল ধরে টানবেন।
সবার কথা বলতে পারলাম না কিন্তু তোমারটা টানা খুব জরুরী ছিল।
আপনি কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলতেছেন।
আপনি আমার শাড়ির আচল ছেড়ে দেন আমি এখান থেকে চলে যাব।
আচ্ছা ঠিক আছে ছেড়ে দেবো কিন্তু আগে তো এখানে এসে বসো।
আমার মেয়েকে দেখাবো না আমি অন্য ডাক্তারের কাছে আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো তবুও আপনাকে দেখাবো না ।
কেন আমাকে কি ডাক্তার মনে হয়না ?
আপনাকে ডাক্তার মনে হবে না কেন আমরা হচ্ছি গরীব ঘরের মেয়ে আপনি হচ্ছেন অনেক বড় ডাক্তার আপনার ফ্রী দিতে পারবো না এইজন্য আপনার কাছে আমার মেয়েকে দেখাবো না।
আমি যদি তোমার মেয়েকে ফ্রি-তে দেখি তাহলে তো দেখাবে ।
আপনি ফ্রিতে দেখতে চাইলেও আমি আপনার কাছে আমার মেয়েকে দেখাবো না।
আচ্ছা তুমি বারবার আমাকে আপনি করে বলতেছ কেন?
আপনাকে আপনি করে বলব না তো কি করব অনেক বড় মানুষ তা বাদে ও অনেক বড় ডাক্তার তাই আপনাকে আপনি করে বলাটা ভালো।
আচ্ছা এভাবে দাঁড়িয়ে কথা না বলে চলনা বসে কথা বলি।
আমি কেন আপনার সঙ্গে কথা বলব।
কথা না বললে নাই কিন্তু তোমার অসুস্থ মেয়েকে আমাকে দেখাবে না।
প্রিয়া তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে যে তার মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
সে এখন কি করবে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা?
মন বলতেছে একবার বসে ঈমানের সঙ্গে কথা বল আবার পরে মন বলতেছে এখান থেকে চলে যা।
কি হল এত ভাবাভাবি না করে এখানে এসে বসে পড়ো?
প্রিয়া আর কোন কিছু না ভেবে ঈমানের কথা মতো সেখানে গিয়ে আবারো বসে পড়ে।
প্রিয়া চুপ করে তার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।
ঈমান ও তার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। ঈমান আজকে অনেক খুশি কারণ সে মনে মনে প্রিয়াকে
অনেক খুজতে ছিল। ঈমান দেশে আসা দুইদিন হচ্ছে এই দুই দিন প্রিয়াকে খুজেনি সেটা
কিন্তু না অনেক খুঁজেছে প্রিয়াকে কিন্তু খুজে পাইনি। আজকে কিভাবে যে প্রিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে
যাবে সেটা কখনো ভাবতে পারেনি এবং ঈমান। ঈমান প্রিয়াকে এক নয়নে
তাকিয়ে রয়েছে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে দেখিনি তাকে।
আমার মেয়েকে আপনাকে কেন দেবো।
আরে আমি তোমার মেয়েকে দেখব না কি হয়েছে তোমার সেজন্য তোমার মেয়েকে তো আমার কাছে দিতে হবে?
প্রিয়া বাধ্য হয়ে মিষ্টিকে ঈমানের কোলে দেয় ।
ঈমান প্রিয়ার মেয়েকে কোলে নিয়ে দেখে কত মিষ্টি একটা মেয়ে। ইমান এখন ভাবতে লাগলো
যে সেদিন যদি প্রিয়াকে ছেরে না গিয়ে বিয়ে করত তাহলে আজকে এটা তার মেয়ে হত।
আচ্ছা প্রিয়া কি নতুন করে বিয়ে করেছে নাকি এটা আমার সন্তান?
সেই কথাটা প্রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে সে তো কখনো আমাকে বলবেনা এটা আমার সন্তান
কিনা আজও নতুন করে বিয়ে করেছে কিনা? মনে তো হচ্ছে এটা আমাদের
সন্তান আমি শুধু স্বার্থপরের মত ছেড়ে গিয়েছি।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com