গোধূলীর আলোয় । পর্ব -৩৬
ভোর রাতের দিকে ধরফরিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলো অনু।বসেই মাথাটা চেপে ধরলো দুই হাত দিয়ে।মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়।কিছু মনে পড়তেই দুই হাতে মাথা চেপে রেখেই এদিক-সেদিক চোখ বুলালো !ছাদে আছে বুঝতে পেরে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে সারাদিনের ব্যস্ত হয়ে থাকা রাস্তাটার দিকে তাকালো!এখন কত শান্ত নির্জিব লাগছে রাস্তাটাকে!কোন হৈ চৈ নেই,গাড়ির প্যা,পু শব্দ নেই শুধু আছে কিছু রাত জাগা কুকুরের ঘ্যাও ঘ্যাও শব্দ।অনু চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে,ল্যামপোস্টের হলুদেটে আলোয় চারপাশ অন্যরকম রুপে সেজে রাত্রিযাপন করছে।ভয়াবহ এই সুন্দর রাত্রিতে অনু একটা জিনিস খেয়াল করলো,ওদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে একজনের অবয়ব সে দেখতে পেলো ল্যামপোস্টের আলোয়।অনুর মনে হলো,ওখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!কেউ একজন তার দিকেই চেয়ে আছে গভীর মনোযোগে।এই শেষ রাতে সবাইতো ঘুমাতেই ব্যস্ত তাহলে ওখানে ওটা কে?নাকি অন্য কিছু!অনু ছাদে আর দাঁড়ালোনা।চলে আসলো সে তার রুমে।নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো কিন্তু মাথা ব্যাথাটা তীব্র থেকে আরো তীব্র হয়ে উঠলো।
বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে।মিথিলাদের পরীক্ষাও সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে।এর মধ্যে নিলয়ও মিথিলাকে আধ পাগলী করে দিয়েছে।জোড় করে,ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে নুসরাতের মোবাইল নাম্বারটাও মিথিলার কাছ থেকে নিয়েছে নিলয় কিন্তু মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি সে কারণ নুসরাত তাকে পাত্তাই দেয়নি।প্রথম যেদিন নিলয় নুসরাতকে ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় দেয়,সে সময়ই নুসরাত কলটা কেটে দেয় এরপর হাজার চেষ্টা করেও নিলয় নুসরাতের নাগাল পায়নি।কতশত নাম্বার থেকে যে কল দেয় নিলয়,কোনটাই নুসরাত ধরেনা।সেই নাম্বারগুলো সাথে সাথে ব্লকলিস্টে তুলে দেয়।তারপরও নিলয় হাল ছাড়েনি।ছাড়বেওনা হাল!নুসরাতের মন সে জয় করেই ছাড়বে,ছাড়বেই।
মিথিলাকে নিলয় যেদিন বললো,
“আমি নুসরাতকে নিজের করে ছাড়বোই ছাড়বো তুমি দেখে নিও মিথিলা।”
মিথিলা সেদিন বিরবির করে বলেছিলো,
“সাথে আমাকেও পাবনার হেমায়েতপুরে পাঠিয়ে ছাড়বেই তুমি আমার ভাই।তোমাদের দুজনের কাউকেই বুঝাতে না পারার অপরাধে আমি পাগলি হয়ে যাচ্ছি,বিশ্বাস করো,পাগলি হয়ে যাচ্ছি।আমার কানা বরটার সাথে সুস্থভাবে সংসার আর করতে দিবেনা মনে হয় তুমি।একটা সিট মনে হয় আমাকে খুব তাড়াতাড়িই বুকিং করতে হবে।
একদিকে পরীক্ষা নিয়ে টেনশন,আরেকদিকে নুসরাতকে রাজি করাতে পারছেনা,আরেকদিকে নিলয়কে বুঝাতে পারছেনা,আরেকটা সমস্যা আয়মান।সে এখন রাজশাহী নাই বগুড়া গিয়ে বসে আছে।মানে ওখান থেকেই ওখানকার ব্যাংকে জয়েন করেছে।মিথিলা আয়মানকে খুব মিস করছে।ফোনে কথা বলে তবু যেনো মন ভরেনা মিথিলার।আয়মানকে কাছ থেকে সে দেখতে চাই,অনুভব করতে চাই,আয়মানের দুষ্টু ছোঁয়া নিতে চাই কিন্তু কোনটাই সম্ভব হচ্ছেনা।
আয়মান অবশ্য চুপচাপ আছে,বগুড়া থাকার জন্য মনে হয় এমন চুপচাপ।রাজশাহী থাকলে ঠিক মিথিলাকে নিজের বাসায় এতদিনে নিয়ে যেতো।যাই হোক আয়মান যে রেগে নাই এখন মিথিলার ওপর এটাই মিথিলার শান্তি একদিক দিয়ে।
“মিথিলা আমার সাথে একটু টয়লেটে চলতো।”
মিতু এসে বললো মিথিলাকে।মিথিলা শুয়ে শুয়ে পড়ছিলো।উঠতে যাবে তখনই আয়মানের কল মিথিলার ফোনে।মিথিলা ফোন কানের কাছে নিয়ে আয়মানের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।মিতু বললো,
“চল।”
মিথিলা বললো মিতুকে,
“একটু থাম।”
“কোন থামা-থামি নাই,চল।”
মিথিলা ফোনে কথা বলতে বলতেই মিতুর সাথে বাইরে গেলো।নিপা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে কাঁথার তলে শুয়ে থেকে।সুমনা মাইশাকে বললো,
“আমার যে কবে একটা বয়ফ্রেন্ড জুটবে কপালে আল্লাহ জানেরে মাইশা।বড় ইচ্ছা করে একটা প্রেম করার।”
মাইশা বললো,
“করবি,কে বাঁধা দিচ্ছে তোকে!”
“কেউ বাঁধা দিচ্ছেনা কিন্তু আমার ই কাউকে পছন্দ হয়না।আমার একটা এমন ছেলে চাই যেমনটা আমি পাচ্ছিনা।”
“কেমন ছেলে চাই তোর?”
“গাঁধা টাইপ।বিড়ালের মত ম্যাও,ম্যাও করবে এমন।আমি যা বলবো তাই করবে,তাই শুনবে।আমি যদি বলি,”বাবু আমার পা টা টিপে দাওতো” সাথে সাথেই সে বলবে,হ্যাঁ বাবু দিচ্ছি,দিচ্ছি তুমি আরাম করে বসো।এমন টাইপ বুঝছিস!”
“বিয়ের আগেই তুই বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে পা টিপিয়ে নিবি?”
“আরে ধুর,বিয়ের আগে কেনো?বিয়ের আগে হাতটাও ধরতে দিবোনা।বিয়ের পরের কথা বলছি।তাকেই তো বিয়ে করবো তাইনা।আরেক বিষয় আছে,ছেলেকে রান্না জানতে হবে।আমিতো রান্না-টান্না কিছু পারিনা।তাই বিয়ের পর সেই আমাকে রান্না করে খাওয়াবে আর আমি জিবনে যা ঘুমাইনি তখন ঘুমাবো।”
“তুই হা করে থাক।এই যুগে এমন ছেলে নাই।তাই ঔসব ম্যাও ম্যাও করা ছেলের আশা করিসনা।”
মিথিলা আর মিতু রুমে এসেছে।মিথিলা এখনো আয়মানের সাথে কথা বলছে।মিতু মাইশা আর সুমনার উদ্দেশ্যে বললো,
“কি নিয়ে বকবক করছিস দুজনে?”
মাইশা বললো,
“সুমনার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে।”
“বয়ফ্রেন্ড?”মিতু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
মাইশা বললো,
“হ্যাঁ।”
মিতু সুমনাকে বললো,
“কবে থেকে তুই প্রেম করছিস? আমাদের কাউকে বলিসনি আবার দেখালিওনা।”
সুমনা বিরক্ত মুখে বললো,
“মিতু আপু বেশি বুঝ কেনো সবসময়?বয়ফ্রেন্ড এখনো পাইনি।খোঁজ চলছে।আমি যেমনটা চাই তেমনটা পাচ্ছি না গো।”
“কেমন চাস তুই যে পাচ্ছিসনা?”
“গাঁধা টাইপ।”
“কি,গাঁধা টাইপ?”
“হুম,আমি উঠতে বললে উঠবে,বসতে বললে বসবে এমন।”
“এমন ছেলে পাবি বলে তোর মনে হয়?”
“কেনো পাবোনা শুনি,এখন তো বেশিরভাগ ছেলেই গাঁধা।দেখোনা বিয়ের পর সব কেমন বৌয়ের আঁচলের তলায় থেকে ম্যাও ম্যাও করে।বউ যা বলে তাই করে।বউয়ের কথায় বাপ-মাকে পর্যন্ত দেখেনা।”
“ওরা গাঁধা না,ওরা বদমাশ।”নুসরাত এবার কথা বললো।এতক্ষণ ও চুপচাপ পড়ছিলো।
মিতু নুসরাতকে সমর্থন করে বললো,
“ঠিক বলেছিস।শুধু বদমাস না ওরা হলো কাপুরুষ।যেই বাবা-মা সন্তানকে এত যত্ন করে,নিজে না খেয়ে সত্নানকে মানুষ করে,পড়াশোনা শেখায়, জমি বিক্রি করে হলেও সরকারি চাকরি নিয়ে দেয়,ব্যবসা করতে দেয় সেই সন্তান একদিন বিয়ে করে বউয়ের কথায় বাপ-মাকে পর করে দেয়।ওরা কাপুরুষ ছাড়া কিছুই না।”
মাইশা বললো,
“আমাদের ওখানে একজন মহিলা আছে,তার চারটা ছেলে অথচ একজনও তাকে দেখেনা।কত যে কষ্ট লাগে জানো ওনাকে দেখে।আব্বু মাঝে মাঝে বেশি করে বাজার করে এনে ওনাকে দেয়।”
নুসরাত বললো,
“মানুষ ছেলে ছেলে করে।মেয়ে জন্ম হলে মন খারাপ করে আর ছেলে হলে পারেনা দশটা গরু জবাই করে মানুষকে খাওয়াই।অথচ সেই ছেলেই একদিন বাপ-মাকে পর করে দেয়।কত বৃদ্ধ মানুষ রিকশা চালায়, দিন মজুরের কাজ করে,ওদের দেখে এত মায়া লাগে।”
নিপা কাঁথার তল থেকে মুখ বের করে বললো,
“মেয়েরাই বরং বাবা-মাকে দেখে।আমার নিজে চোখে দেখা।”
মিথিলা আয়মানের সাথে কথা শেষ করে সেও জয়েন করলো আড্ডার মাঝে।মিথিলা বললো,
“আমিও দেখেছি,মেয়েরাই দেখে বাবা-মাকে।ছেলেরাই পর করে দেয় তবে সবাইতো আর এমন না।আমাদের পাশের বাড়িতেই যেমন আছে।বাবা-মা ছাড়া কিছু বোঝেনা ওরা কিন্তু অনেক বাবা-মা আবার ছেলের বউকে দেখতে পারেনা।শ্বশুরদের থেকে শ্বাশুড়িরা বেশি এমন হয়।এরা ছেলেদের নিজের হাতে বন্দি করে রাখতে চাই আজিবন।ছেলে যদি এক ডজন চুড়িও তার বউকে এনে দেয় তাতে তারা খুশি হয়না বরং এমনভাবে বাড়িতে ঝামেলা তৈরি করে কি বলবো।
সুমনা মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“এক কথা থেকে কত কথা হয়ে গেলোরে।আমি গাঁধা ছেলে চেয়েছি তাই বলে এই না যে আমি আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে দেখবোনা হুম।”
সন্ধ্যার পর হঠাৎই নিবিড় তার বাবা-মাকে নিয়ে হাজির হয়েছে অনুদের বাসায়।অনু ওর দাদির ঘরে বসে ওর দাদিকে সুপারি কেটে দিচ্ছিলো খাটের ওপর বসে থেকে সাথে ওর দাদির সাথে গল্প করছিলো।হ্যাঁ,অনুর সাথে এখন সবাই মোটামোটি স্বাভাবিক আচরণ করে।আয়মানও বগুড়া যাওয়ার আগেই অনুর সাথে কথা বলতে শুরু করেছে।কতদিন সবাই এরিয়ে চলবে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে তাই সবাই এখন অনুর সাথে আগের মত কথা বলে।অনুও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে তবে রাত গভীর হলেই এখনো শয়তান সজলকে গভীরভাবে মনে পড়ে যাই অনুর অচেতন মনে।এখনো সজলকে সে মন থেকে তাড়াতে পারেনি।পিরিতের আঠা লাগলে পারে ছাড়ে না কথাটা মিথ্যা না হয়তো।মিথ্যা হলে অনু সজলকে এতদিনে ভূলে যেতো,ভূলে যেতো সজলের দেওয়া সুন্দর মুহূর্ত সাথে সজলের দেওয়া ব্যাথাটাও।
নিবিড় আর তার মা-বাবা অনুদের ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে পাশাপাশি।তার সামনের অন্য সোফায় আছে অনুর বাবা-মা।নিবিড়ের বাবা বললো,
“ভাই সাহেব হঠাৎ করেই চলে আসলাম আপনাদের না জানিয়ে,কিছু মনে করেননি তো?”
“কিযে বলেন ভাই সাহেব,কিছু মনে করিনি বরং অনেক খুশি হয়েছি।”এক গাল হেসে বললেন অনুর বাবা।
“অনেকদিন আসা হয়নি,আপনারাও যাননা তাই আজ সুযোগ পেয়েই চলে আসলাম।”
অনুর মা বললেন,
“ভালো করেছেন ভাই সাহেব।বসেন আমি চা-নাস্তার ব্যবস্থা করি।”
নিবিড়ের মা বললেন,
“সেসব পরে হবে আপা,আমরা পর কেউ না তাই ব্যস্ত হবেননা।আসল কথায় আসি,আপনার আর ভাই সাহেবের সাথে জরুরী কথা বলার জন্য আসছি।”
“কি জরুরী কথা আপা?”আতঙ্ক হয়ে বললেন।
“আরে টেনশন করবেননা,আসলে আমাদের নিবিড় কে তো চিনেন,সেই ছোট বেলা থেকে আয়মান ও আরো সবাই একসাথে মানুষ হয়েছে।”
“জ্বি ভাবি।নিবিড় তো আমার আরেকটা ছেলে।”
নিবিড় মুচকি হাসলো।নিবিড়ের মা বললো,
“আয়মানের তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন,আমরাও ভাবছি নিবিড়ের বিয়েটা দিয়ে দিতে।ছেলে বড় হয়েছে,টুকটাক ব্যবসাও করছে ওর আব্বার সাথে।”
“ভালো তো,মেয়ে দেখেছেন?”
“মেয়ে দেখা বলতে নিবিড় পছন্দ করেছে সাথে আমাদেরো পছন্দ!”
“তাই,কোথায়?কি করে মেয়ে?”
“মেয়ে আপনার পরিচিতই,পড়ালেখা করছে।”
“কে আপা?কার কথা বলছেন?”
“আসলে আপা,নিবিড় আর আমাদেরও অনুকে খুব পছন্দ।ছোট থেকেই দেখছি মেয়েটাকে।আমাদের সবার ইচ্ছা অনুকে আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবো,আপনাদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তবেই।”
অনুর মা আর বাবা দুজন দুজনের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করলো এই পর্যায়ে।দৃষ্টি বিনিময় শেষে অনুর মা বললেন,
“আপত্তি কিসের আপা,আপত্তির প্রশ্নই আসে না।নিবিড় সোনার টুকরা ছেলে তবে….”
নিবিড়ের মা ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করলেন,
“তবে?”
“আমার তিন মেয়ে,জামাই,আয়মান এদের ও মত কি দেখতে হবে।ওরা ছাড়া তো আমি কোন কাজেই আগাতে পারবোনা।ওদের সাথে কথা বলে জানাই?”
“আরে অবশ্যই,এ আর এমন কি কথা তবে আমরা কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো।অনু মাকে আমার ভিষণ পছন্দ আপা।এমন মেয়ে আমার ঘরে থাকলে ঘরটা আমার আলোয় আলোয় ঝলমল করবে।”
অনুর মা মুচকি হাসলেন।নিবিড়ের চোখ বাড়ির এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছে।এক জায়গায় স্থীর থাকছেনা।নিবিড়ের মা নিবিড়ের এদিক-সেদিক তাকানো দেখে অনুর মাকে বললেন,
“আপা অনু মা কোথায়?দেখছিনা যে।আর আম্মাকেও দেখছিনা।(অনুর দাদিকে আয়মানের সব বন্ধুর বাবা-মায়েরা আম্মা বলে ডাকে)।
অনুর মা বললেন,
“অনু মায়ের ঘরেই আছে।ডাকছি আমি আপনারা বসেন।”
অনুর মা সোফা ছেড়ে উঠে গেলেন উনার শ্বাশুড়ির ঘরে।গিয়ে দেখলেন অনু আর দাদি কথা বলছে।
“অনু চুলটা ঠিক কর,মাথায় কাপড় দিয়ে চল আমার সাথে।মা আপনিও চলেন।”
“কোথায় যাবো আম্মা?”
“নিবিড় আর ওর বাবা-মা এসেছে।চলেন মা,না গেলে খারাপ দেখাবে।”
“আমি যাবো না,তুমি দাদিকে নিয়ে যাও!”
“তোকে দেখবে নিবিড়ের মা,অনেকদিন দেখেনি।”
“অনেকদিন দেখেনি তো কি হয়েছে আর আজ দেখে কি হবে?”
“ওত কথা না বলে চল।”
অনু অনিচ্ছা বশত আসলো বসার ঘরে।এসে নিবিড়ের বাবা-মাকে সালাম দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল-আন্টি!”
নিবিড়ের বাবা-মা এক সাথে সালামের উত্তর দিলেন।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
নিবিড়ের মা বললেন অনুকে,
“কেমন আছো মামনি?”
“জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ!আপনারা ভালো আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ মা!দাঁড়িয়ে কেনো বসো,এসো আমার পাশে বসো।”
অনু গিয়ে নিবিড়ের মায়ের পাশে বসলো।নিবিড়ের মা বললেন,
“মুখ-চোখ এত শুকিয়ে গেছে কেনো?জ্বর টর হয়েছিলো নাকি আমার মায়ের?”
অনুর মা পাশ থেকে বললেন,
“আর বলবেন না আপা,ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়াই করেনা।তাইতো এমন অবস্থা।”
নিবিড়ের মা অনুর হাত ধরে বললেন,
“খাওয়া-দাওয়া করো না কেনো?বেশি বেশি খাবে।”
অনুর দাদি বসার ঘরে আসতেই নিবিড়ের বাবা-মা সহ নিবিড় সালাম দিলো অনুর দাদিকে।এরপর কুশল বিনিময় করে বিভিন্ন কথাবার্তা চলতে থাকলো দুই ফ্যামিলির মধ্যে।
রাতের খাবার খাইলে তারপর নিবিড়দের বিদায় দিয়েছিলেন সেদিন অনুর মা।এরপর আরো কিছুদিন চলে গেছে।অনুর বাবা-মা তার তিন মেয়ে,জামাই আর আয়মানের সাথে কথা বলেছেন।সবারই মোটামোটি পছন্দ নিবিড়কে।আয়মান ও অমত করেনি।নিবিড় ভালো ছেলে,পড়াশোনা,ফ্যামিলি কোনদিক দিয়েই কমা নাই তাই না করার প্রশ্নই আসেনা।অনুর কানেও পৌছে গেছে নিবিড়রা সেদিন কেনো ওদের বাসায় হুট করে এসেছিলো।অনুর এই ব্যাপারে বলার মত কিছু নাই,নিজেই নিজের সব শেষ করেছে,তাই অনু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওর বাবা-মা,ভাই আর বোন-দুলাভাইয়েরা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাতেই সে হাসিমুখে রাজি।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com