Breaking News

গোধূলীর আলোয়। মৌসুমী । পর্ব -৫১



ভোরের আলো ফুটেছে কি ফুটেনি, পাখিরা ঘুম থেকে জেগেছে কি জাগেনি, নুসরাতকে রান্নাঘরের কাজ বুঝিয়ে দিতে নিয়ে গেছে ঝুমঝুমি। তাদের শ্বাশুড়ী নাকি আদেশ দিয়েছে।
“বড় বৌমা, নিলয়ের বউকে ভোরবেলাতেই কাজ বুঝিয়ে দিবে। জমিদারের বাড়ির বউ না যে পায়ের ওপর পা তুলে থাকবে আর দাসীরা কাজ করে দিবে।”
রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ঝুমঝুমি নুসরাতকে সব দেখিয়ে দিচ্ছে।
“এই যে এই ড্রামে চাল থাকে। যখন ভাত রান্না করবে তখন এখান থেকে চাল নিবে। বেশি নিবেনা! হিসাবমত নিবে। ছয়জন মানুষের একবেলা যা লাগবে। আর এখানে এটা দেখছো, এখানে চালের আটা থাকে, এখানে থাকে ময়দা। শ্বশুর আব্বা প্রতিদিন সকালে রুটি খান। গোল গোল রুটি বুঝছো, ট্যারা-ব্যাঁকা হলেই শ্বাশুড়ির মুখের বারি খাওয়া লাগবে তাই সাবধান। আর এই যে এখানে সব মসলাপাতি পাবা। এখানে, চা করার সব সরঞ্জাম।”
সব দেখানো শেষ হলে এবার ঝুমঝুমি বললো,
“এখন রুটি বানাও, শ্বাশুড়ির জন্য ভাত রান্না করবে, কয়দিন ধরে তিনি ভাত খাচ্ছেন সকালে। নিলয় আর নিলয়ের ভাইয়ের জন্য আর আমার জন্য পরোটা করবে। আমি এখন যাই।” ঝুমঝুমি একটা হাই তুলে রান্নাঘর থেকে চলে গেলো। চলে গিয়ে আবার এসে বললো,
“শুনো মেয়ে, ডিম ভাজবে, আলুর ভাজি করবে আর ফ্রিজে গরুর ভুরি আছে সেটা নিয়ে এসে রান্না করবে দ্রুত। কাজে ফাঁকি দিবেনা একদম। শশুর আব্বা নামাজে গেছে এখনো আসেনি, আসলে লাল চা বানিয়ে দিবে, বেশি করে লিকার দিয়ে। চিনি দিবেনা এক দানাও বুঝেছো?”
নুসরাত এতক্ষণ মুখ বুজে, কান খাড়া করে সব শুনলো। গতকালকের ক্লান্তিই তার এখন অব্দি যাইনি শরীর থেকে, এখন আবার এত রান্না করতে হবে তাকে। ঝুমঝুমির কথার প্রতুত্তরে বললো,
“বুঝেছি।”
ঝুমঝুমি হাই তুলতে তুলতে চলে গেলো রান্নাঘর থেকে। নুসরাত মনে মনে ভেবে নিলো
কোন কাজ আগে আর কোনটা পরে।
রান্নাঘরের এদিকে কেউ নেই দেখে সে কোমরে শাড়ির আঁচলটা আগে গুজলো।
চুলগুলো খোঁপা করে তার ওপরে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে ভালোভাবে খোঁপাটাকে আটকালো
যেনো খুলে না যাই কাজের মাঝে এরপর ড্রামে থেকে একজনের যতটুকু চাল দরকার আন্দাজ মত চাল নিলো।
চাল নিতে গিয়ে অবশ্য ভাবনায় পড়তে হলো তাকে কারণ কতটুকু চাল নিলে ঠিক হবে তা তো
সে জানেনা তারপরো নিলো। হোস্টেলে থাকতে ও যতটুকু চাল একবারের জন্য রান্না
করতো ততটুকু নিলো। চালগুলো একটা পাত্রে নিয়ে কয়েকবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললো
তারপর পরিমাণমত চালের মধ্যে পানি নিয়ে পাতিলে করে সেটা চুলায় বসিয়ে দিলো।
এরপর লাগলো আলু ভাজি করতে। নুসরাত আলুর ভাজি কাটতে এবং রাঁধতে দুটোই ভালোই পারে তাই সমস্যা
হলো না। গরীব ঘরের মেয়ে সে তাই ঘরের কাজ মোটামোটি সবই পারে আর আগের শ্বশুর
বাড়িতেতো এসব করেই তার দিন যেতো। আলোর ভাজি কাটা শেষ হলে পেঁয়াজ কেটে নিলো,
কাঁচা মরিচসহ। গরুর ভুরির কথা সে ভূলেই গেছিলো। দৌড়ে ফ্রিজ খুলে ভুরিগুলো ভিজাতে
দিলো একটা পাত্রে। মসলা করা আছে কি না দেখার জন্য আবার ফ্রিজ খুলে দেখলো মসলা আছে কিনা!
আছে মসলা করা ভেবে মনে মনে খুশিই হলো একটু নুসরাত। এভাবে একা হাতে সে সব কাজ
করতে থাকলো বেশ মনোযোগের সাথে।
রান্না যখন প্রায় শেষের দিকে তখন নুসরাতের শ্বাশুড়ি বের হয়ে আসলেন তার ঘর থেকে।
রান্নাঘরের দিকে আসতে আসতে বললেন,
“রান্না কতদূর, বড় বৌমা?”
নুসরাত তার শ্বাশুড়ির গলা পেয়ে তাড়াহুড়া করে মাথায় কাপড় দিলো। ওর শ্বাশুড়ি রান্নাঘরে ঢুকতেই নুসরাত সালাম দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম আম্মা।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। রান্না এখনো হয়নি?”
“হওয়ার মধ্যেই আম্মা। ভাত হয়ে গেছে, আপনাকে খেতে দিবো?”
“না, নিশানের আব্বা আসেনি এখনো, আসুক আগে। বড় বৌমা কোথায়?”
ঝুমঝুমি দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো,
“এইতো আম্মা! আমি এখানে।”
“ঘুমাচ্ছিলে?”
“কই আম্মা।”
“কই আম্মা মানে! ঘুমাচ্ছিলে কেনো এতক্ষণ তুমি?”
“আপনি ঘুমা…!”
“চুপ করো।” ধমকে উঠলেন নিলয়ের মা ঝুমঝুমির উপর। ধমক খেয়ে ঝুমঝুমি কেঁপে উঠলো।
“আমি ঘুমালে তোমাকেও ঘুমাতে হবে বেয়াদব মেয়ে। যাও সব খাবার টেবিলে দাও।”
নিলয়ের মা চলে গেলেন রান্নাঘর থেকে। ঝুমঝুমি কিছুক্ষণ নিচু গলায় তার শ্বাশুড়ীকে কথা শুনিয়ে সে নিজে ধমকিয়ে উঠলো নুসরাতের উপর।
“রান্না এখনো হয়নি কেনো? মন এখানে নাই? তাড়াতাড়ি বাকি রান্না শেষ করো।”
সকালবেলাতে হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় বসে তেঁতুলের আচার খাচ্ছে মিথিলা। আয়মান পাশে বসে থেকে মিথিলার আচার খাওয়া দেখছে আর বলছে,
“আর খেওনা জান, পরে আবার খেও, এখন বাদ দাও।”
“না আমি আরো খাবো।”
“অন্য কিছু খাও। আপেল খাও, নাহয় কমলা খাও।”
“না, আমি আচারই খাবো। আচার খাইতে ভালো লাগছে।”
“আঙ্গুর খাও।”
“না, খাবো না।”
“তুমি আমার কথা শুনছোনা জান। আমি রেগে যাচ্ছি।”
“আমিও রেগে যাচ্ছি, আপনার প্যানপ্যানানি বন্ধ করেন।”
“আমি প্যানপ্যান করছি?”
“অবশ্যই।”
“দেখি দাওতো বয়ামটা।” হাত দিয়ে কেড়ে নিতে গেলো আয়মান। মিথিলাও সাথে সাথে বয়ামটা একদম বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
“দিবো না। আপনি যান এখান থেকে। সায়ন ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়ার সাথে আড্ডা দেন গিয়ে।”
“ওরা কেউ বের হয়নি রুম থেকে। ঘুমাচ্ছে হয়তো।”
“আপনিও তাহলে ঘুমান। আসেন, এখানে শুয়ে পড়েন আমি আপনার চুল টেনে দিচ্ছি।”
“তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমাকে বয়ামটা দাও আর ভালো মেয়ের মত অন্য কিছু খাও।”
“ভালো কথা মনে পড়লো, নুসরাতের সাথে একটু কথা বলি। দেখি সে এখন আমার চাচার বাড়িতে কেমন আছে।”
মিথিলা আচারের বয়ামটা পাশে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে নুসরাতের নাম্বারে ডায়াল করলো সেই সুযোগে আয়মান আচারের বয়ামটা নিয়ে লুকিয়ে ফেললো।
নুসরাতের ফোনে রিং বাজছে কিন্তু নুসরাত রিসিভ করছেনা। একবার, দু’বার, তিনবার, চারবারের বেলায় নুসরাত ফোনটা রিসিভ করলো।
“হ্যাঁ নুসরাত, কেমন আছিস বান্ধবী?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর কি অবস্থা? কেমন আছিস? শরীর ভালো?”
“আলহামদুলিল্লাহ সব ভালো। নিলয় ভাইয়া কোথায়?”
নুসরাত খাটের দিকে তাকিয়ে নিলয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে বললো,
“রুমেই আছে, ঘুমাচ্ছে।”
“ওহ, সবার স্বামীই ঘুমাচ্ছে এখন শুধু আমারটাই জেগে বসে আছে।” আয়মানের দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বললো মিথিলা। নুসরাতকে বললো,
“নাস্তা করেছিস?”
নুসরাত এখনো নাস্তা করেনি। তাকে কেউ নাস্তা করার কথাও বলেনি। মিথিলাকে বললো,
“করিনি। করে নিবো।”
“এখনো করিসনি কেনো? ওহ বুঝেছি, ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিস? ভাইয়া ঘুম থেকে উঠলে এক সাথে করবি।”
নুসরাত হালকা মুচকি হেসে বললো,
“হুম।”
মিথিলা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলো। নুসরাত ও ফোনটা কান থেকে নামিয়ে অন্য হাতে চোখ মুছলো। কপাল পোড়া মেয়ে সে। এর আগেও যে বাড়িতে বউ হয়ে গিয়েছিলো সেখানেও সুখের ‘স’ও সে পাইনি। এই বাড়িতেও যে পাবেনা তা কাল এই বাড়িতে পা দেওয়ার পরই তার বোঝা হয়ে গেছে। বাপের বাড়ি যতদিন থেকেছে এক বেলাও সে কোনদিন খাওয়ার কষ্ট পাইনি। না খেয়ে থাকতেই দেয়নি তারা অথচ আগের শ্বশুরবাড়িতেও কত না খেয়ে তাকে থাকতে হয়েছে। এখানেও হয়তো থাকতে হবে। গতকাল রাতে অল্প একটু ভাত আসার পর পরেই খেয়েছিলো সে। আজ এত বেলা হয়ে যাচ্ছে, সকাল সাড়ে দশটা অথচ কেউ তাকে একবারের জন্যও বললোনা, “নাস্তা করে নাও!” নুসরাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। একটু পর শ্বাশুড়ির হাঁক শুনে বাইরে গেলো। বাইরে বসার ঘরে যেতেই নুসরাতের শ্বাশুড়ী নুসরাতকে বললেন,
“নিলয়কে ডাকো তাড়াতাড়ি, কথা আছে ওর সাথে।”
নুসরাত বললো,
“যাচ্ছি আম্মা।”
“কথায় কথায় এত আম্মা ডাকতে হবে না। যা বললাম তাই করো। নিলয়কে ডাকো।”
নুসরাত মুখটা নিচু করে রুমে গিয়ে নিলয়কে ডাকলো,
“শুনছেন, আপনাকে ডাকে আম্মা। উঠেন জলদি।”
নিলয়ের কোন খবর নাই। সে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। নুসরাত আবার ডাকলো।
“আম্মা ডাকছে আপনাকে, উঠেন জলদি।”
এবার একটু নড়ে উঠলো নিলয়। নুসরাত আরেকটু কাছে গেলো। নিলয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“শুনছেন, এই যে! আম্মা ডাকে আপনাকে।”
এবার নিলয় চোখ মেলে তাকালো, বড় একটা হাই তুলে বললো,
“কে ডাকে?”
“আম্মা! উঠেন জলদি।”
নুসরাত নিলয়ের মা’কে আম্মা বলে সম্বোধন করছে শুনে নিলয়ের ভিতরটা অন্যরকম তৃপ্তিতে ভরে গেলো। সে নুসরাতের একটা হাত ধরে টান দিলো নিজের দিকে ওমনি নুসরাত ঢলে পড়লো নিলয়ের বুকের ওপর। নিলয় নুসরাতকে আরেকটু নিজের দিকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“কে ডাকে?”
নুসরাত নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“ছাড়েন আমাকে, কেউ এসে দেখে ফেলবে, দরজা খোলা।”
“কেউ আসবেনা। আর আসলেও চলে যাবে আমাদের এই অবস্থায় দেখে। বলো কে ডাকে আমাকে।” নুসরাতের কানের পাশে একটা চুমু দিলো নিলয়।”
নুসরাত কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“আ আ আম্মা ডাকে। ছাড়েন আমাকে।”
“উহু, কোন ছাড়াছাড়ি নাই, চিংড়ি মাছের মত লাফানো বন্ধ করো।”
“ক ক কেউ দেখে ফেল…!” নুসরাত আর কিছু বলতে পারলোনা। নিলয় বলতে দিলোনা। সে এখন নুসরাতের ওষ্ঠদ্বয়ের ওপর হরতাল শুরু করে দিয়েছে ভয়াবহ হরতাল। যে হরতালে নুসরাতের নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার যোগাড় কিন্তু হরতাল বেশিক্ষণ চললোনা তার আগেই ঝুম ঝুম করতে করতে ঝুমঝুমি এসে হাজির হলো নিলয়দের ঘরের দুয়ারে। তালি দিতে দিতে বললো,
“জিও দেবরজ্বি জিও! যাক, তোমার মধ্যেও কিছু আছে দেখে খুশি হলাম। তা দেবরজ্বি কেমন লাগলো গো? তোমার বউ অবশ্য এমন স্বাদ এর আগেও পেয়েছে কিন্তু তুমিতো নতুন।”
ঝুমঝুমির কথাগুলো শুনে নিলয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো কিছু কথা শোনাতেও ইচ্ছা হলো কিন্তু নুসরাত আছে তাই মুখ বুজে ঝুমঝুমির কথাগুলো হজম করলো আর নুসরাত লজ্জ্বায় অন্যদিকে ঘুরে বসলো।
ঝুমঝুমি ওদের আরো কাছে এসে নুসরাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“লজ্জ্বা পেতে হবেনা গো, আমি পর কেউ না। তোমার বরের, তোমার আপনজন।”
নুসরাত বড় বড় চোখে ঝুমঝুমির দিকে তাকাতেই ঝুমঝুমি এক চোখ টিপি দিয়ে বললো,
” আম্মা তোমাদের ডাকছে তাড়াতাড়ি চলো।”
ঝুমঝুমি চলে গেলো রুম থেকে। নুসরাত নিলয়ের দিকে তাকালো। নিলয়ও তাকালো নুসরাতের দিকে। তখনি নিলয়ের মা’য়ের গলা শুনতে পেলো দুজনে। নুসরাত উঠে চুল, শাড়ি ঠিক করলো। আয়নার সামনে নিজেকে দেখলো সব ঠিক আছে কি না তারপর মাথায় শাড়ির আঁচলটা তুলে দিতে দিতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। নিলয়ও আর বসে থাকলোনা উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
“তোমাকে পাঠালাম নিলয়কে ডাকতে আর তুমি গিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলে? নিলয়কে বলো আমার ঘরে আসতে।”
নিলয় বসার ঘরে আসতেই ওর মায়ের উচুঁ গলা শুনতে পেলো। কাছে গিয়ে বললো,
“হ্যাঁ বলো আম্মা, কি বলছিলো?”
“আমার ঘরে চল।”
“আচ্ছা তুমি যাও আমি নাস্তা করে আসছি।”
“আচ্ছা আয়।”
নিলয় গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।
“নুসরাত?”
“আসছি।”
“নাস্তা করেছো?”
নুসরাত ডানে বামে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,
“না, আপনি করে নেন আমি পরে করবো।”
“পরে করবে মানে? কয়টা বাজে দেখেছো ঘড়িতে? আর সবাই নাস্তা করেছে?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি করোনি কেনো?”
নুসরাত কিছু বললোনা। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো তা দেখে নিলয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
“এসো, আমার পাশে বসো।”
“আপনি খান, আমি পরে খাবো।”
“আসবেনা নাকি টেনে এনে বসাবো?”
নুসরাত গুটি পায়ে হেঁটে গিয়ে নিলয়ের পাশের চেয়ারে বসলো। নুসরাত বসতেই নিলয় পরোটাই কিছু বট মানে ভুরি নিয়ে নুসরাতের মুখের কাছে ধরলো। নুসরাত নিলয়ের দিকে তাকাতেই নিলয় আদরমাখা আহ্লাদি গলায় বললো,
“হা করো।”
নিলয় ‘হা করো’ কথাটা বলতেই কোথা থেকে আষাড়ে বৃষ্টি এসে হানা দিলো নুসরাতের চোখে। টুপ করে সেই বৃষ্টির এক ফোঁটা পানি এসে পড়লো নিলয়ের হাতের ওপর।
“পুতা জামাইয়ের রাত কেমন কাটলো? ঘুমাইছিলা রাতে না আমার পুতিনকে সোহাগ করেই রাত কাটিয়ে দিলা?”
সায়ন আর অনুকে রুম থেকে এক সাথে বের হতে দেখেই অনুর দাদি বললেন সায়নকে।
সায়ন আর অনু এদিক-সেদিক তাকালো। না আশেপাশে কেউ না বুড়ি ছাড়া। বুড়ি টুলের উপর বসে আয়েশ করে পা চাবাচ্ছে। সায়নের কোন জবাব না পেয়ে আবার অনুর দাদি বললেন,
“পুতা জামাইয়ের বলে সকালে কোথায় যাওয়ার ছিলো? এখনো পুতা জামাই যাইনি।” বলেই ফিক করে হাসলো অনুর দাদি।
সায়ন কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। অনু সায়নের চিন্তিত মুখ দেখে বললো,
“এইতো এখন যাবে।” তারপর সায়নকে বললো,
“সাবধানে যাবেন কেমন, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ। দাদি আসি, আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম পুতা জামাই। রাতে আসিয়ো।”
সায়ন আর কথা বাড়ালোনা, মুচকি হেসে চলে গেলো।”
বিকেলের দিকে কিছু মহিলা এসেছে নুসরাতকে দেখতে। একজন মহিলা প্রশ্ন করলেন?
“তোমার বাপের বাড়ি বগুড়া?”
“জ্বি!”
“শুনলাম তোমার নাকি আগেও বিয়ে হয়েছিলো, কথাখানা সত্যি?”
“জ্বি সত্যি!”
“তা ভাত খেলে না কেনো বাপু ওই স্বামীর?”
নুসরাত কোন উত্তর দিলোনা এই প্রশ্নে। আরেক মহিলা বললেন,
“সব সংসারেই সমস্যা থাকে বুঝছো। মানিয়ে নিয়ে চলতে হয় বুঝছো বাপু।”
“জ্বি বুঝছি।”
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com