পরীমনির বন্ধ অমি । লেখাঃ আজিজুল হক শাওন
পরীমনির বন্ধু “অমি” উত্তরা যাওয়ার পথে পরীমনিকে বলল,” বন্ধু! আজ সারারাত মজা হবে। পার্টি হবে। তুই ওই ডানাকাটা পরী গানটাতে নাচবি।”
কথাটা শুনে পরীমনি বলল,” আরেহ! আজ পোশাক ভুলে বড় পরে ফেলছি। হাঁটু অবধি পোশাকে নাচ হয় না-কি! ওই গানটার জন্য শর্ট কাপড় লাগবে। বুঝলি?
বনি বলল,” তাইলে কেটে ছোট করে ফেল?”
পরী মনি জবাব দেয়,” কী ছোট করব?”
– না মানে। ওটা আর কি! ড্রেস।
– ও আচ্ছা! অত ঝামেলা করতে পারব না।কাটাকাটি করলে কাপড় নষ্ট হয়। আজ থাক!
কথাটা শুনে পরীর তিনবন্ধুর মন খারাপ হয়ে যায়।
প্রিয় বান্ধবীর নাচ দেখবে ভেবেছিল, কিন্তু আজ আর হলো না। এ দুঃখ রাখবে কোথায়!
গাড়িতে বন্ধু ” অমি ” বলল, তার বেড়িবাঁধের ঢাকা বোটে দুই মিনিটের কাজ আছে।
শুনে বনি জবাব দেয়,” মুতার জন্য ওখানে যেতে হয় নাকি? গাড়িতে বোতল আছে। সেটাতে করলেই তো পারিস!”
– আরে ওটার জন্য না। মুতার জন্য হলে তো এত অল্প সময়ে আমার হয় না। মিনিমাম একঘণ্টা লাগে।
পরীমনি রসিকতা করে বলেই ফেলল,” তুই মুতিস না-কি মুতা আবিস্কার করতে যাবি! হা হা হা…!
– হাসবি না। আসলে, দুই মিনিটের একটা ইমানি কাজে যাচ্ছি। এ কাজে অনেক পূণ্য পাওয়া যাবে।
ইমানি কথাটাশুনে তাদের সকলের ইমান জাগ্রত হয়। তাই চুপ হয়ে যায়। শত হোক তারা যে মুসলমান।
নিরবতা নেমে আসে গাড়িতে।
বেড়িবাঁধের ঢাকা বোটের গেটের সামনে চলে আসে গাড়ি। কিন্তু গাড়ি ঢুকল না। দেখে, রাত্রি বেশি হওয়ায় গেট বন্ধ। “অমি “গেটের সামনে নেমে ভিতরে ঢুকল।
পরীমনিরা গাড়ির ভিতরে লুডু খেলতে লাগল। কিন্তু ছয় উঠছে না দেখে, তার মেজাজ বেজায় উত্তপ্ত। কিন্তু “অমি” আসার কোনো নামগন্ধ নেই। ছেলেটা মাঝেমাঝে এমন প্যারা দেয়, বলার বাইরে।
কিছুক্ষণ পর গেট খুলল। গাড়ি প্রবেশ করল ক্লাবে। অমি এসে পরীকে বলল, তোরা চাইলে ফ্রেশ হতে পারিস। ভিতরের পরিবেশ খুব সুন্দর।
এখনো ছক্কা না উঠায়, পরী গেম হারার ভয়ে নেমে পড়ল তার সাথে। অন্যরাও নামতে হলো, মোবাইল যে পরীমনির। চক্ষু লজ্জার কারণে বলতে পারে নি পরীর বাথরুমের বেগ অনেক আগেই পেয়েছিল।
তাই সে ক্লাবে ঢুকতে বাধ্য হলো। দুইঘন্টা পর বাথরুম থেকে বের হয়ে এল পরী। দেখে ক্লাবে লোকসমাগম কমে গেছে।
ফোনে, অমি জানালো তারা বারে বসে আছে। সেখানে গিয়ে দেখল নাসির উদ্দিন বসা। প্রথমে উনাকে ক্রিকেটের নাসির ভেবে দূরেই ছিল। কিন্তু পরে দেখল, ও না। নাসির উদ্দিনকে দেখে ভদ্রই মনে হলো পরীমনির।
নাসির উদ্দিন পরীর সাথে নিজ থেকেই সাক্ষাত করতে এলো। পরিচয় দিলো সে এ বোটের সাবেক সভাপতি। সাথে আরো তিন চারজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। পরী বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গেল, ক্লাব থেকে বেরোবার বিষয় নিয়ে।
নাসির যে পরীমনিকে অন্য মতলবে এখানে অমিকে দিয়ে নামিয়েছে, তা পরী বুঝল না।
তিনচারজনের একটা গ্যাং নিয়ে পরীর সামনে গেল সে। তারপর, ড্রিঙ্কস খাওয়ার অপার দিলো। খাবারে অন্যকিছু মিশিয়ে দিলো। কিন্তু পরী খেলো না। কারণ, পরী ছোটবেলায় শিখেছিল, কেউ কিছু দিলে খেতে নেই। এবার নাসির বাধ্য হয়ে পরীর মুখে বোতল ঢুকিয়ে দিলো। পরীর সারাশরীরে স্পর্শ করতে থাকল। এদিকে পরী খেয়াল করল অমি লাপাত্তা। পরী বুঝতে পারল অমির ইমানি দায়িত্ব কি ছিল! পরীর অন্যবন্ধুরা বাঁধা দিলে তাদেরও মারধর করল নাসির। পরীকে বেপারোয়া প্রহার করতে লাগল। পরীকে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালালো দলটি কিন্তু পারল না। চেন্স লেস হয়ে পড়ল পরী। এদিকে, কে ওপেনিং করবে সেটাতে ভেজালে পড়ল দল। মুহুর্তেই দু’দলে ভাগ হয়ে গেল। তাদের মাঝে মারামারি শুরু হলো পরীর দেহ ভোগ নিয়ে।
এদিকে সে সুযোগ নিয়ে পরীকে নিয়ে বেরিয়ে গেল তার অন্যবন্ধুরা।
বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো পরীকে। সারারাত ঘুমে কাটাল পরী। যখন জ্ঞান এলো তখন নিজেকে অক্ষত পেয়ে আনন্দিত হলো সে।
কিন্তু অজানা কোনো ভয় চেপে ধরল তার। আজ তো সে ধর্ষিত হতে পারত, পারত লাশ হয়ে যেতে। বা সে গ্রুপ ধর্ষণ করতে না পেরে, তার সাথে খারাপ কিছুও করতে পারে। তার কাছে আর কিছুই ভালো লাগছে না। পুরো পৃথিবীটাকে অন্ধকার মনে হচ্ছে।
তাই সে ছুটে গেল থানায়। গাড়ি থেকে নেমে ওসির রুমে চলে গেল সে।
থানার ওসি সাহেব বসে আছেন। ফোনে কথা বলছেন কার সাথে যেন। থানার কনস্টেবল এসে যখন জানালো, ওয়েটিং রুমে পরীমনি এসেছে ওসি খুব খুশি হয়ে গেল শুনে। ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা পরীমনির সাথে পর্দায় কাজ করার। আজ ইচ্ছাটা তাহলে বাস্তবায়িত হবে।
উনি চিরুনি বের করে মাথা আঁচড়াতে লাগলেন। নায়িকার সামনে তো আর যেমনি-তেমনি থাকা যায় না।
কনস্টেবলকে, পরীকে আনতে বললেন ওসি। পরী এলো। পরীকে দেখে তিনি অটোমেটিক দাঁড়িয়ে গেলেন। আহা! কি মায়া! যেন সে মানবী নয়, কোনো সত্যিকারের পরী।।এমন কাউকে পেলে জীবনে মন্দ না।
বসে পড়লেন দুজনেই। একনজরে তাকিয়ে রইলেন ওসি। ভাবনা যেন শেষ হয় না।
পরীর স্যার ডাকে ভাবনা বেধ হয়।
পরী বলল,” স্যার! আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি খুব চিন্তিত!”
উনি বসে ভাবুক মুখে বললেন,” কে? মিশা সওদাগর না অমিত হাসান? হা হা হা..!
পরী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। তখন ওসি বললেন,” পাগল! ধর্ষণের সিনে আপত্তি থাকলে করবেন না। সেটার জন্য থানায় আসা লাগে নাকি। তবে বাংলা ছবিতে ধর্ষণ না থাকলে ছবি হিট হয় না। বাঙালির সাথে একটা ধর্ষণের সাথে যোগসূত্র আছে। বুঝলেন?”
এবার পরী হাতজোড় করে বলে,” স্যার সত্যি! আমার সাথে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।”
— যা মিথ্যুক! মেইন নায়িকাদের কখনো ধর্ষণ হয় নাকি! তার কয়েক সেকেণ্ড আগে এসেই তো নায়ক বাঁচিয়ে নেয়। ইতিহাসে আজ অবধি কোনো ভিলেনই প্যান্ট খুলতে পারে নি নায়িকাদের। আমি বাপু! কোনো ছবিতে দেখিনি। আপনি দেখেছেন?
– না স্যার! আল্লার কসম করে বলছি, ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে।
-আপনাকে দেখেতো মনে হচ্ছে না।
ধর্ষিতাকে তো দেখলেই চেনে যায়। কারণ, ওসিদের কাছে বিলাপ করে কান্নাকাটি করবে,পায়ে পড়বে, শরীরে দাগ দেখাবে কিন্তু পরী মনি তো তা কিছুই করছে না। নিশ্চিত পরিমনি অভিনয়ই করছেন ওসির মতে।
উনি মুখে কনফিডেন্স এনে বললেন,
– দেখেন, সিনেমায় ধর্ষণের সিনে আমি মামলা নিয়েছি শুনলে লোকে হাসবে। এটা কমন ম্যাডাম কমন।
এবার, পরীমনি রেগে যান। মাথা ঠিক রাখতে না পেরে বললেন,” কুত্তারবাচ্চা, হারামজাদা! লাগবে না তোর কেস। শালারপুত!”
থুতু মেরে হনহন করে চলে গেলেন থানা থেকে। ওসি সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন, কারণ গালি দেয়া মানে হলো কেউ সত্যি বলা। কিন্তু ততক্ষণে পরিমনী বেরিয়ে যান।
এবার, তিনি চলে গেলেন ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি এফডিসিতে। এফডিসি আন্দোলনে নামলেই তবেই এর বিচার হবে।
এফডিসির সভাপতি জায়েদ খানকে বললে হয়ত সে এটার একটা কিছু করবে। ফিল্মেও জায়েদ খান খুব প্রতিবাদী।
তাই উনি জায়েদ খানের অফিসে ঢুকলেন। জায়েদ খান খুশি হয়ে গেল পরীমনিকে দেখে। জায়েদ খানের সাথে কেউ আজকাল কাজ করতে চায় না। তাই উনি চিন্তা করেছেন, পরের ছবিতে উনিই নায়ক থাকবেন উনিই নায়িকা।
কিন্তু পরীকে দেখে ভরসা পেলেন।
কিন্তু পরী মনি ঢুকেই বলল, ভাই! আমারে ধর্ষণ করতে চেয়েছে ক্লাবে।”
নায়িকার মুখে “ভাই” কথাটাশুনে বুকের একপাশে চিনচিন করতে লাগল তার। আবার, তার বিনা অনুমতিতে এফডিসিতে ধর্ষণের শুটিং হচ্ছে তাই তার কান্না আসছে। শালার! কেউই তাকে দাম দে না।
সে আবেগকে কন্ট্রোল করে বলল,” সিনেমাতে এসব না করলে ঠিকে থাকা যায় না রে পাগল যায় না।”
— ভাইয়া! এটা সিনেমা না সত্যি সত্যি।
— কি! সত্যি সত্যি! কার এত বড় দুঃসাহস?
— নাসিরের।
নাসির নামশুনেই সে ধরে নিলো এটা ক্রিকেটার নাসিরের কাজ। এ কাজ সে ছাড়া কেউ করতে পারে না। শালা! দেশে মেয়ে একটাও রাখবে না।
কিন্তু তার ফ্যান ফলোয়িং তো অনেক বেশি, জায়েদ খানের তো তেমন নেই। তাই সে চুপ হয়ে গেল। আর যেখানে জায়েদ খানের ঘরের বাসার নিজ কাজের বুয়া দাম দেয় না, তাকে অন্যকেউ দাম দিবে কীভাবে?
তাই সভাপতি মাথায় হাত দিয়ে বলল,
– মা রে! এগুলা এখন কমন। এগুলা না হলে ভালো অভিনেতা হওয়া যায় না। যতই এগুলা তোর সাথে হবে, ততই বুঝবি তুই পুপুলার হচ্ছিস। ভুলে যা সব।
পারলে, লিংকটা পাঠায় দিস।
পরীমনি এবার তেলেবেগুনে বলল,” হিজড়ার বাচ্চা লাগব না তোর হেল্প!”
জায়েদ খান চিন্তায় পড়ে গেল, হিজড়া থেকে বাচ্চা হবে কীভাবে?
পরীমনি খুবই বিষাদে পড়ে গেল। যে-ই শুনে সে ই ভাবে হয়তো ফিল্মে, নইলে ক্রিকেটার নাসিরের কাজ। কী করা যায়!
তিনি বুদ্ধি করে গেলেন সাংবাদিকের কাছে,
-সাংবাদিক বলল,” কোথায় হাত দিয়েছে?”
– আমার মনে নেই।
– কীভাবে ছুঁয়েছে?
-আমার মনে নেই।
– বোতলটা কোন ব্যান্ডের ছিল?
– মনে করতে পারছি না ভাইয়া।
– আপনাকে যে রুমে নিয়ে গিয়েছিল, সেটাতে ব্যাড কয়টা ছিল?
– মাদার..দ! লাগবে না তোর পত্রিকা। বাল…
– ও আচ্ছা। আর কী লিখব?
পরী মনি মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে চলে এলো বাসায়।
দরজায় কেউ কড়ানাড়ালেও ভয় হতে থাকল পরীর। এ বুঝি তার জীবন নিতে তারা এল কি-না। পত্রিকা উল্টালে দেখে, ধর্ষণের রিপোর্ট করায় ধর্ষিতার পরিবারসহ সকলকে আগুনে হত্যা। টিভির খবর চালালে পরী দেখে, ধর্ষণের প্রমাণ দিতে না পারায় যুবতির আত্মহত্যা।
সে যাবে কোথায়? কার কাছে? যেখানে তার মতো সেলেব্রিটির বিচার নেই, সেখানে দেশের অন্য মেয়েদের তো অস্তিত্বও নেই। হায়রে জীবন!
সে বুঝতে পারল দেশের আইন-শাসনের অবস্থা।
অথচ কিছুদিন আগেও নগ্নতা যার প্রিয় ছিল, আজ এক ঘটনায় শিখিয়ে দিলো জীবন মানে কি!
কিন্তু না আমি বসে থাকব না।
আমি যদি হায়েনাদের বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস না করি, তাহলে দেশের মানুষ বুঝবে না দেশের কোনো নারীই নিরাপদ নয়।
পরী মনেমনে তা ভাবল। সে সিদ্ধান্ত নিলো,
এমন কিছু করব, যাতে সবার টাইমলাইনে পোস্ট আমার পোস্ট থাকে।
সবাই হাসির ছলে হলেও যাতে বুঝতে পারে দেশটা আর সেই আগের দেশ নেই।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com