রক্তাক্ত লাশ । পর্ব -০৫
তাশফিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বুঝে গেছি আপনার আমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্টই নাই। ব্রেকাপ তো। আজ আমিও ব্রেকাপ করলাম। ভালো থাকবেন
তাশফি চলে গেল।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে আমি কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।
বসে আছি।
একটু পর আমার ডাক পড়ল ইন্টার্ভিউর জন্য।
গেলাম ভিতরে।
দুজন লোক বসে আছেন।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।
=> ওয়ালাইকুম আসসালাম। বসুন মিস্টার আরিয়ান
আমিঃ জ্বী
বসলাম।
শাওনঃ আরে ভাই একটা হয়নি আরেকটা হবে
আমিঃ আরে কি বলিস। দেশের প্রতিটা সেক্টরে এত এত দূর্নিতীবাজ আছে বলে বুঝাতে পারব না। ইন্টার্ভিউ ভালো হয়নি। বললেই হত চাকরি দিতে পারবেনা। তারা আমার কাছে ২৫ লক্ষ টাকা চেয়ে বসেছে।
শাওনঃ পুরো দেশটাই এখন এই নিয়মে চলছে। তুই আর আমি চাইলেও পাল্টাতে পারব না।
তুষারঃ তবে একবার না পারিলে দেখো শতবার। একটা না একটা হয়ে যাবে। মনে রাখিস। নিজের উপড় ভরসা রাখিস
আমিঃ হুম। যেভাবেই হোক জব তো জোগার করতেই হবে।
শাওনঃ That’s the spirit my friend..
যাহোক ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় গেলাম।
দুপুরে বসে আছি বসে জবের সার্কুলার গুলা দেখছিলাম। আম্মু আসল,,
আমিঃ কিছু বলবে?
আম্মুঃ তুই জবের জন্য ট্রাই করছিস?
আমিঃ হুম। তুমি কিছু বলবেম
আম্মুঃ তোর আব্বুর ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। আনতে হবে।
আমিঃ আচ্ছা প্রেসক্রিপশন টা রেখে যাও। আমি নিয়ে আসব।
আম্মুঃ হুম। খাইবিনা?
আমিঃ হুম খাব।
ওষুধের দোকানে যাচ্ছিলাম। তখনি পেছন থেকে কেউ ডাক দিল। তাকিয়ে হাবিলদার। ওনি ডেকে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে ওসি সাহেবের কাছে নিয়ে গেলেন। ওনার সামনে বসলাম।
ওসিঃ কি ব্যাপার এখনও মারা যাও নি?
আমি একটা হাসি দিলাম।
ওসিঃ কি খাবে?
আমিঃ কিছু খাব না। আব্বুর জন্য ওষুধ গুলো নিয়ে বাসায় পৌছাব।
ওসিঃ বাহ তোমার তো দেখছি অনেক পরিবর্তন। শুনলাম তোমার বাবা স্ট্রোক করেছেন। এখন কেমন আছেন?
আমিঃ জ্বী এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
ওসিঃ ওসব ভূত মাথা থেকে গিয়েছে নাকি এখনও..
আমিঃ কি যে বলেন না। গত কয়েকদিনে জীবনের আসল মোড় গুলা সামনে এসেছে। যেসব বিষয়ে কোনোদিন ভাবিনি। তাও দেখেছি। এসব দেখার পর আর সুইসাইড করতে ইচ্ছে করবে? এতটুকু বুঝেছি সময়টা এখন আব্বুর পাশে দাঁড়ানোর। নাহলে সন্তান হিসেবে আমি কলঙ্কীত থেকে যাব।
ওসি ঃ ওয়াও। হাবিলদার শুনেছ কি কথাটাই না বলল। সবাই যদি এভাবে পরিবর্তন ঘটাত। তাহলে দেশে যে এত দূর্নিতীবাজ সবাই ঠিক হয়ে যেত।
আমিঃ আচ্ছা স্যার আমি উঠি দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ওসিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি উঠলাম। ওষুধ গুলা নিয়ে বাসায় গেলাম।
অনেকগুলা ইন্টার্ভিউ দিলাম। কিন্তু কোনো টাতেই জব হলোনা। সবার ঘুষ চাই। হয়তো ঘুষ দিতে এতদিনে জব হয়ে যেত।
হতাশ হয়ে বাসায় বসে আছি। আব্বু রুমে আসল। এসে পাশে বসল। কাঁধে হাত রাখল।
আব্বুঃ হতাশ হয়ে গিয়েছিস? হতাশ হলে তোরই ক্ষতি হবে।
আমিঃ তেমন কিছুনা।
আব্বুঃ তুই যে জবের জন্য ট্রাই করছিস তাতেই আমি খুশি। আমি সিউর তোর খুবই ভালো একটা জব হবে। চিন্তা করিস না শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে।
আমিঃ হুম
আব্বু চলে যেতে লাগল। তখনি পেছন থেকে ডাক দিলাম।
আমিঃ আব্বু
আব্বু থমকে দাঁড়াল। কারন কতদিন পর যে আব্বু বলে ডাক দিয়েছি তার হিসেব নাই। এতটাই খারাপ সন্তান ছিলাম আমি।
আমি উঠে গিয়ে সোজা আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আব্বুও আমাকে জড়িয়ে নিল।
আব্বুঃ চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তোর সাথে আছি তো।
বলেই কপালে চুমু দিল।
তারপর চলে গেল।।
আমি শুয়ে পড়লাম। আজ নিজেকে হালকা লাগছে। কতদিন শুধু কতবছর পর আব্বুকে জড়িয়ে ধরেছি তা মনে করতে পারছিনা। অথচ ছোটবেলায় ওনার সাথে ঘুরাঘুরি করতাম। স্কুল দিয়ে আসত। ঘুরতে নিয়ে যেত। বায়না ধরলে পূরন করত। আর আমরা বড় হয়ে কি হয়ে যাই। ভূলেই যাই সব।
একদিন বাহির থেকে বাসায় ফিরতেই সবাই কত খুশি দেখলাম।
আমিঃ কি ব্যাপার এত খুশি কেন সবাই?
ছোট বোনঃ শুধু খুশিই না অনেক অনেক খুশি।
আমিঃ কি জন্য রে?
আম্মু এসে হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল।
আমি নিলাম। খুলে দেখি। এপয়েনমেন্ট লেটার। কি করব বুঝতেছিনা। এত খুশি লাগছে। একটা কোম্পানিতে সহকারি ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি পেয়েছি।
আব্বু এসে পাশে দাঁড়াল।
আব্বুঃ দেখেছ এই হলো আমার ছেলে। আমি জানতাম ও একদিন বড় চাকরি করবেই।
আব্বুর খুশি দেখে না হেসে পারলাম না। অথচ চাকরি করিনা বলে কত বকা বকত আমাকে। কত শাষন করত। আর এখন এক নিমিষেই যেন সব শেষ। আব্বু একটা সত্ত্বাই।
আব্বুঃ যাই সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে আসি।
আমি রুমে গেলাম। শাওন তুষার কে জানাইলাম।।
বুঝতে পারছিনা এক নিমিষেই কেমন সবাই পরিবর্তন ঘটে গেল। চাকরি পেয়েছি বলে সবাই কত খুশি। সব থেকে ভালো লাগছে আব্বুর হাসিটা। কত কষ্ট করেছে আমাদের জন্য। মনে হলো যেন আজ সে স্বার্থক।
পরদিন চাকরিতে জয়েন করলাম।
বসের সাথে দেখা করলাম।
বসঃ মিস্টার আরিয়ান। আপনার কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। তাই আপনাকে কিছুদিন সময় আমরা দিব। আশা করব খুব যলদিই নিজের কাজের স্পিড দিয়ে কোম্পানিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নিবেন
আমিঃ ইনশাল্লাহ স্যার। আমার উপর ভরসা করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রথমবারের মত নিজের ডেস্কে গেলাম। সব কিছু ঠিক করে দেখলাম।
মাস খানিক পর,,
একদিন রাতে শুয়ে শুয়ে নিজের অতিত টা নিয়ে ভাবছি। মোবাইল টিপছিলাম। অতিতগুলা ফিরে দেখছিলাম। কিভাবে বাপের আদরে আদরে বাদর হয়ে উঠেছিলাম। প্রেমে ছ্যাকা খাইয়া দেবদাস হয়ে গেছিলাম। সুইসাইড করতেও গিয়েছিলাম যেটা ভাবলে সব থেকে বেশি হাসি পায় এখন। সুইসাইড এর সিদ্ধান্ত নিয়ে কত সহজ? ভাবলেই হাসি চলে আসে।
ঘাটাঘাটি করতে করতে হঠাৎ তাশফির একটা পিক সামনে এসে।
শাড়ি পড়া। নাকে নলক। মুচকি হাসি। কাজলে আখি। সত্যি বলতে ওর রুপ টা এই প্রথমবার আমার নজরে আসে। এর আগে কোনোদিন এভাবে ওর দিকে তাকাইনি। ভালোবাসার নজর তো কোনোদিন দেইনি। প্রথমবার কিছু একটা ফিল হলো। ধুকধুক শব্দ হলো। যেন মন কিছু চাচ্ছে।
তবুও নিজের আবেগ কন্ট্রোল করলাম। কারন তাশফির সাথে আমি খুব ভালো করিনি। প্রচুর কষ্ট দিয়ে ছেড়েছি ওরে। ভালো তো বাসিই নাই। অভিনয় টাও খুব ভালো করিনি। নেহার প্রতিশোধ ওর উপর দিয়ে চালিয়েছিলাম। যেখানেই আছে ভালো থাকুক।
এমন সময়েই শাওনের কল আসল। রিসিভ করলাম।
আমিঃ কিরে এত রাতে?
শাওনঃ কাল ফ্রি আছিস?
আমিঃ হ্যা কেন বল
শাওনঃ আর বলিস না। নিপার বাবা মা ওর বিয়ে ঠিক করেছে।
আমিঃ কি বলিস। এখন উপায়?
শাওনঃ উপায় আর কি কোর্ট মেরেজ করতে হবে। কালই করব। তোদের লাগবে সাক্ষীর জন্য। পারবি না আসতে?
আমিঃ পারব। তবে ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বললে ভালো হত না?
শাওনঃ বলেছি। ওনারা আমার কাছে দিবেই না। যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। সেই আমেরিকা থাকে। সেখানে ডক্টর। সিটিজেনশিপ ও আছে। তাই আমার কাছে দিবেনা। তার মেয়ে সেখানে নাকি বেশি খুশি থাকবে।
আমিঃ নিপা রাজি?
শাওনঃ হুম রাজি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক। আপডেট জানাইস। আমি হাজির হয়ে যাব।
শাওনঃ ধন্যবাদ দোস্ত।
আমিঃ ধুর শালা।
ফোন রেখে দিলাম।
পরদিন হাজির হয়ে গেলাম কোর্টে।
শাওনঃ বুঝতেছিনা নিপার এত দেরি কেন হচ্ছে?
আমিঃ আরে যেই ট্রাফিক হয়তো আটকে আছে। আসবে চিন্তা করস কেন
হঠাৎ আমার চোখ গেল অন্যদিকে। আমি হা হয়ে গেলাম। নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। চিন্তাও করিনি ওরে এখানে এভাবে দেখব। কি কপাল রে ভাই। এভাবেই সামনে আসল।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com