Breaking News

বিশ্বাসঘাতক । পর্ব -০৭

আবির রুমের ভিতর প্রবেশ করলো নীলা আবির কে বললো..
– কি নাম আপনার?
– জ্বি নীল।নাম শুনে তানিয়া নীলার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
– ওয়াও ছেলেটা অনেক হ্যান্ডসাম তাই না রে আর নাম টাও কিন্তু খুব সুন্দর।তানিয়ার কথা শুনে নীলা বলল..

– তানিয়া কি আজে বাজে বকছিস এসব? এখানে চাকরীর ইন্টারভিউ চলছে আর তুই…. ! একদম চুপ থাক?নীলার কথা শুনে তানিয়া চুপ করে গেলো। নীলা আর তানিয়ার কথা গুলো আবির শুনে ফেলল আর মিটিমিটি করে বললো.
– আমিতো এটাই চাই যে তোমরা আমাকে পছন্দ করো। আমাকে পছন্দ না করলে যে খেলাটা জমেই উঠবে না।

.তারপর নীলা আবিরের কাগজপত্র গুলো দেখলো সব ঠিক আছে আর বেশ কিছু প্রশ্ন করলো আর আবির নীলার সব গুলো প্রশ্নের উওর অনেক সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করলো নীলার সামনে। নীলা বলল..
– আপনি কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে পারেন?
– থ্যাংক ইউ ম্যাডাম থ্যাংক ইউ সো মাচ।
– ইটস ওকে।.
আবির খুশিতে বের হয়ে এসে ফোন করলো তিথি কে
– হ্যালো তিথি

– হ্যাঁ বলুন শুনছি?
– আমার চাকরী টা হয়ে গেছে।
– তাই নাকি, কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার। আচ্ছা শুনুন?
– হ্যাঁ বলুন?
– আচ্ছা ঘরে কোন বাজার নেই আপনি যদি বাজারে গিয়ে একটু বাজার টা করে আনতেন তাহলে খুব ভালো হতো।

– আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু বাজারের লিস্ট টা?
– ওটা আমি মোবাইলে এসএমএস করে দিচ্ছি আর টাকা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি আপনি টাকাটা ক্যাশ আউট করে বাজার টা নিয়ে আসুন।.তারপর আবির বিকাশ থেকে টাকা বের করে বাজারের দিকে গেলো বাজার করার জন্য। আবির বাজারে গিয়ে দেখলো তার বোন ইমাও আসছে বাজার করতে আর বোনের কোলে একটা সুন্দর ফুটফুটে বেবি।আবিরের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে এইটা তার বোনের মেয়ে। আবির বোনের কাছে গিয়ে বলল…

– হায় কেমন আছেন?ইমা বেশকিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আবিরের দিকে তারপর বলল।
– ভালো। কিন্তু আপনি কে?
– আমার নাম নীল। ঐ যে সামনের বাসাটায় থাকি বাজার করতে এসেছি কিন্তু আমি এর আগে কখনও বাজার করিনি তাই আপনি যদি আমাকে একটু বাজার করতে সাহায্য করতেন?.আবিরের কথা শুনে ইমা কি যেনো ভাবলো আর তারপর বলল..
– আচ্ছা ঠিক আছে।আবির তার বোনের কোলে বেবিটার দিকে তাকিয়ে আছে বেবিটা কেমন যেনো চেয়ে আছে আবিরের দিকে।আবির বলল
– আপনার মেয়ে?

– হুম
– দেখতে তো খুব সুন্দর। নাম কি রেখেছেন?
– জ্বি পিও,
– নাম টা বেশ সুন্দর। আচ্ছা দিন পিও কে আমাকে দিন আমি নিচ্ছি?
– আরে না না ঠিক আছে আপনাকে নেওয়া লাগবে না আমি নিতে পারবো!
– আমি পিও কে নিয়ে পালিয়ে যাবো সেই ভয়ে আপনি পিও কে আমার কোলে দিবেন না তাই তো?
– আরে তা না আমি ওটা ভাবিনি। আচ্ছা নিন।.
ইমা তার মেয়োকে আবিরের কোলে দিলো। আবির তার ভাগিনি কে কোলে নিলো। বেবিটার শরীর টা খুব নরম।

আবির ও ইমার মধ্যে বেশ কথা হলো। আবির বুঝতে দিলো না যে সে আবির। বাজার শেষ করে পিও কে বোনের কোলে দিয়ে বাজার নিয়ে তিথির বাসায় চলে আসলো আবির।.
তারপরের দিন আবির অফিসে চলে গেলো। নীলার রুমে গিয়ে বলল.
.- আমাকে ডেকেছেন ম্যাডাম?

– হুম ডেকেছি বসুন?আবির বসলো। তারপর নীলা আবির কে কিছু কাজ দিলো আর সেগুলা করতে বললো। আবির নীলার রুম থেকে বেরিয়ে এসে নিজের কাজে মন দিলো। আর কিছুক্ষনের মধ্যে কাজ পুরো কমপ্লিট করে ফেলল। ফাইল টা নিয়ে নীলার রুমের কাছে গিয়ে বলল..
– আসতে পারি ম্যাডাম?
– হ্যাঁ আসুন।আবির ভিতরে গিয়ে ফাইল টা নীলাকে দিয়ে বলল
– ম্যাডাম এই নিন আপনার ফাইল। কাজ কমপ্লিট!নীলা ফাইলটা নিয়ে খুলে দেখলো।আসলেই কাজ কমপ্লিট। নীলা বলল
– গুড ভেডি গুড। আপনার কাজে খুব খুশি হলাম!নীলার কথা শুনে আবির বিড়বিড় করে বলল
– এখন তো খুব খুশি হচ্ছেন ম্যাডাম কিন্তু এর পরে আপনার কাঁদতে জনম শেষ হয়ে যাবে। নীলা বলল
– কিছু বললনে আমাকে?
– না না কই কি কিছু না।

– ওহহহ।
– আমি এখন আসি ম্যাডাম।
– ওকে আপনি এখন আসতে পারেন।.আবির চলে গেলো। আর নীলা ভাবতে লাগলো কে এই ছেলে যাকে খুব চেনা চেনা লাগছে কথা গুলোর মধ্যে কেমন যেনো একটা লাগে।আবির অফিস থেকে বেরিয়ে হেটে হেটে বাসায় আসছিলো এমন সময় দেখলো তার বোন ইমা পিও কে নিয়ে সামনে দিয়েই আসছে। আবির কাছে গিয়ে বলল..

– কেমন আছেন বোন?ইমা বোন ডাক শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। চোখে জল এসে গেছে। মনে পরছে ভাইয়ের কথা। আবির লক্ষ্য করছে বোনের চোখের দিকে চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো । আবির বলল
– আমি কিছু ভুল বললাম নাকি? আমার কথা শুনে আপনি কাঁদছেন যে?ইমা চোখ মুছে বলল
– আরে না কিছুনা এমনি। চোখে কিছু একটা পরেছে হয়তো তাই এমন হচ্ছে। অফিস থেকে আসলেন বুঝি?

– হুম অফিস থেকে ।
.. আবির আর বুঝতে বাকি রইলো না তার বোনের চোখের পানির কারন। কেনো বোনের চোখে জল। আবির বলল
– বোন পিও কে আমাকে একটু দিন না বাসায় নিয়ে যাই। ঐ যে সামনের ঐটা আমার বাসা আপনি কিছুক্ষন পর না হয় গিয়ে নিয়ে আসেন?.
ইমা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না কি করবে। পিও কে দিবে নাকি দিবে না। আবির আবার বলল..
– কি হলো বোন দিন না একটু?ইমা কিছু না ভেবে পিও কে দিয়ে দিলো আবিরের কোলে। আর আবির পিও কে নিয়ে এসে বিছানার উপর রাখলো। তিথি রুমের ভিতর এসে পিও কে দেখে বলল।
– Wow so Sweet baby. কে এটা?আবির বলল
– আমার বোনের মেয়ে!

– Oh my God তাই নাকি।তিথি দৌড়ে গিয়ে পিওো কে কোলে নিলো আর বলল
– কি নরম তোমার ভাগিনি। আচ্ছা নাম কি রেখেছে?
– পিও নাম টা শুনে বলল
– একদম পারফেক্ট নাম। নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তিথি আর কিছু না বলে পিও কে কোলে নিয়ে অনেক আদর করতে থাকলো। পিও এর গালে চুমু খেলো আদর করে নাম ধরে ডাকলো। ইরার এসব কান্ড দেখে আবির বলল…

– ছোট বাচ্চারা কিন্তু বেশি আদর একদম পছন্দ করে না।আবির কথা শুনে তিথি রেগে বলল
– ঐ মিস্টার আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? পিও আমাকে পছন্দ করেনি। আমাকে পিও অনেক পছন্দ করেছে। দেখেছো কেমন হাসছে আমার কোলে পিও।আর আমি একজন ডক্টর আমি খুব ভালো করেই জানি ছোট বাচ্চারা কোনটা পছন্দ করে আর কোনটা করে না। তাই আপনি আর কোন কথা না বলে চুপ থাকুন।.

আবির বুঝতে পারলো যে এখন এসব বলে কোন লাভ হবে না। আবির চুপটি করে বিছানার উপর বসে তিথির সব কান্ড দেখতে লাগলো। মুখ ফুটে কিছু বলছে না আবির। পিও কে পেয়ে যেনো তিথি মহাখুশি খুশি যেনো আর ধরে না। ঠিক সেই সময়ে পিও তিথির কোলে হিসু করে দিলো। আর সেটা আবির দেখে হাসতে হাসতে বিছানার মধ্যে গড়াগড়ি দিলো। আর বলল।.
– আমি আগেই বলেছিলাম যে ছোট বাচ্চারা বেশি আদর পছন্দ করে না। আমার কথা বিশ্বাস করেননি তো এবার বুঝুন ঠ্যালা দিলো তো জামা নস্ট করে।.
আবিরের কথা শুনে তিথির যেনো রাগ আর ধরে না। মনে হচ্ছে আবির কে গিলে খাবে। তিথি আবিরকে কিছু না বলে পিও কে বলল..

– পিও তুমি আমার কোলে এটা করতে পারলে?.তিথির কথা শুনে আবির বলল।
– তো কি করবে আপনি যা শুরু করেছিলেন আপনার এটাই পাওয়ার ছিলো। হিহিহি আবিরের কথা শুনে তিথি কটমট করে তাকাচ্ছে দিকে। আবির তিথির রাগি লুক দেখে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে পিও জন্য একটা সুন্দর জামা কিনে আনলো আর জামা আনার পর বলল.
– দিন পিওকে আমাকে দিন আমি পিও ড্রেস টা পাল্টে দিচ্ছি। আর আপনিও ড্রেস টা পাল্টে নিন?
তিথি পিও কে আবিরের কাছে দিয়ে নিজে চেঞ্জ করতে গেলো।আবির নতুন জামাটা পিওকে পরিয়ে দিলো। জামাটাতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পিওকে । বিছানার উপর শুয়ে পরলো আবির। তিথি আবার এসে আবিরের পাশে বসলো আর বলল..
– আচ্ছা আপনার গল্প আমাকে বলবেন না?
– হুম অবশ্যই বলবো।
– তাহলে শুরু করুন?
– তাহলে শুনুন।.

যখন আমি ক্লাস টু তে ছিলাম তখন আমার সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলো নীলা।
নীলা ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলো আর আমি মধ্যবিত্ত।
আমি স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতাম না কিন্তু যখন টিফিন দিতো তখন নীলা
যে টিফিনটা আনতো তা আমার সাথে ভাগ করে খেতো। আমার কস্টের
দিনগুলোতে আমার পাশে একমাত্র শুধু নীলা ই ছিলো।
প্রাইমারী থেকে স্কুলে উঠলাম আমরা দুজন। আমি আর নীলা পাশাপাশি বসে ক্লাস করতাম।
একটা দিন একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।.
এভাবে চলতে থাকলো স্কুল লেভেল। স্কুল লেবেল পার করে
নীলা আর আমি কলেজে উঠলাম কিন্তু কলেজে আর একটা বন্ধু
পেলাম তার নাম হলো তানিয়া। আমি নীলা ও তানিয়া সব সময়
ক্লাসরুম টাকে মাতিয়ে রাখতাম। নীলা অনেক সুন্দরী ছিলো তাই কলেজে রোজ
রোজ অনেক ছেলেরা নীলাকে ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করতো কিন্তু নীলা কোন ছেলেকেই পাত্তা দিতো না।

আমি নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু ভয়ে মুখ ফুটে বলতে পারিনি
কারন নীলা আমার সবথেকে ভালো বন্ধু ছিলো।.আমি এই বন্ধুত্ব নস্ট করতে
চাইনি তাই বলতেও পারিনি এই ভয়ে যে যদি নীলা আমার ভালোবাসা ও
প্রত্যাখ্যান করে দেয় আর তাছাড়া ওরা ছিলো বড়লোক। এভাবে চলতে
থাকলো বেশ কিছুদিন। এইচ এস সি পরীক্ষার শেষের দিনে নীলা আমাকে
নিজে প্রোপোজ করে কিন্তু আমি তা গ্রহন করি না এই ভয়ে যে নীলার পরিবার
এটা কোনভাবেই মেনে নিবে না। অবশ্য আমিও অনেক মেয়ের
প্রোপোজাল পেয়েছিলাম কিন্তু আমিও নীলার মতো সব গুলো প্রোপোজাল ই ক্যান্সেল করে দেই।
নীলা আমার পিছনে পাগলের মতো ছুটতো আর বলতো

– আমার সমস্যা টা কোথায় আবির। আমি কি দেখতে সুন্দর না?আমি বলতাম.
.- আমি কি বলছি যে তুই সুন্দর না।তুই আমার শুধু ফ্রেন্ড এর চেয়ে বেশি কিছু না ।
আমার কথা শুনে নীলা প্রতিদিন কেঁদে কেঁদে বাসায় চলে যেতো।
একদিন নীলা সুইসাইড এটেন্ড করেছিলো বিষ খেয়ে কিন্তু নীলার
মা বাবা কোনক্রমে সে যাত্রায় বাঁচিয়ে তোলে নীলাকে।
আমি হাসপাতালে গিয়ে নীলার বেডের পাশে বসা মাত্রই
নীলা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করেছিলো।
কিন্তু সেদিন আমি তাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারিনি আমার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়েছিলাম
সেদিন।.তারপর থেকে আমাদের একটা নতুন পথচলা শুরু হয়।
আমরা একই ভার্সিটিথেকে অনার্স শেষ করি।

নীলা ওর বাবার কোম্পানি তে জয়েন করে তখন আমারো একটা চাকরি
খুব দরকার ছিলো আর নীলা আমাকে তার কোম্পানি
তে চাকরী দেয়।বেশ ভালোই চলছিলো আমাদের প্রেম।
বিয়ের কথাও চলছিলো নীলার বাবা, মা রাজি ছিলো আমাদের সম্পর্কে ।
আমি অফিসের কাজ বাদ দিয়ে নীলার রুমে বসে গল্প করতাম
রাতে অফিস থেকে ফিরে নীলার বাড়ির ছাদে একসাথে চাঁদ দেখতাম আর গল্প করতাম।
আমাদের জিবনটা খুব সুন্দর ভাবে চলছিলো কিন্তু তারপর
নীলার মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাই আমাকে এরিয়ে এরিয়ে চল তো।.
একদিন কিছু লোক দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে অনেক মারে আর আমার পুরো শরীর রক্তাক্ত করে দেয়।
আমাকে চাকরী থেকে বের করে দেয় তারপর আমার বোনের ডিভোর্স করিয়ে দেয়
কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার অপরাধ কি ছিলো তা আমি জানতাম না।
আর সব শেষে আমার মুখে এসিড নিক্ষেপ করে আর তারপর তোআপনি আমাকে বাঁচালেন।.
আবিরের গল্প শুনে তিথি বেশ কিছুক্ষন স্তব্ধতা পালন করে।
আর আবির কথাগুলো বলে কান্না শুরু করে দেয়।
নীলা আবিরকে কি বলে শান্তনা দিবে তা জানে না।
এমন সময় বাসার কলিংবেল টা বেজে ওঠে তিথি দরজা খুলে দিয়ে চমকে উঠে বলে
– Who are you?

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com