Breaking News

স্বপ্ন । শেষ পর্ব

কিন্তু আমি রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
পেছন ফিরে আর তাকালাম না।
রেখে এলাম স্বপ্নকে মানুষ রুপি অমানুষদের হাতে।
স্বপ্না কাঁদছে।বাবাকে রেখে যাবোনা,বাবাকে রেখে যাবোনা বলে।
রাস্তায় এসেই স্বপ্নার হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম।
যেই মোবাইলটা বাড়ীতে ঢোকার আগেই ভিডিও ক্যামেরা অন করে আমি স্বপ্নার হাতে দিয়েছিলাম।
আর ওকে বলে রেখেছিলাম,বাসায় ঢুকতেই তুমি সবাইকে একটু একটু করে ভিডিও করবা।
যে যে সামনে আসবে সবাইকে।আর তারা যা যা বলেন সব যেন রেকর্ড হয়।
কিন্তু কেউ যেন না বোঝে।

আর এটা একটা গেইম।যদি তারা বুঝে যায় তুমি তাদের সব ভিডিও করছো,
তাহলে কিন্তু আমরা গেইমে হেরে যাবো।
আর তোমার বাবাকে সুস্থ করতে পারবোনা।
কিন্তু যদি আমরা জিতে যাই তবেই তোমার বাবাকে আমরা সুস্থ করতে পারবো।
মেয়ে আমার সব টুকু বুঝে নেয়।
আর যেই পরিস্থিতিই হয়ে যাক না কেন,মোবাইল ফেলেনি হাত থেকে।
আর এমন ভাবে রেখেছে কেউ বোঝার ক্ষমতাও নেই ও এমন কিছু করতে পারবে।
মোবাইলে এত ক্ষণে সব রেকর্ড হয়ে গেছে।
তাই আমি আর দেরি না করে থানায় চলে গেলাম স্বপ্নাকে নিয়ে।
ও বার বার ওর বাবাকে নিয়ে আসতে চাইছে।
আমি বললাম,এখনই তোমার বাবাকে আমরা উদ্ধার করবো।
তারপর পুলিশকে ভিডিও টা দেখাতেই তারা কয়েক জন আমার সাথে চলে আসলেন স্বপ্নদের বাসায়।
যেই ভাবনা সেই কাজ,

পুলিশ ততক্ষণে বাসার সবাইকে গিয়ে হাতে নাতে ধরেন।
আর স্বপ্নকে উদ্ধার করেন।
যেহেতু প্রমাণ আমাদের হাতে সেহেতু এদেরতো রক্ষা নেই।
স্বপ্নর সৎ মা খুব কান্নাকাটি করে,স্বপ্নকে মাফ করে দিতে বলে কিন্তু স্বপ্ন কোন কথা বলেনা।
পুলিশ সবাইকে ধরে নিয়ে যান।
স্বপ্না দৌড়ে স্বপ্নকে জড়িয়ে ধরে।
আর বলতে থাকে,চলো বাবা তুমি আমাদের সাথেই চলো।
এখানে তোমার আর থাকতে হবেনা।ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।
তুমি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় থাকবে।
-কিন্তু তোমার আব্বু যে রাগ করবেন মা।

আমি স্বপ্নর মুখে এমন স্বাভাবিক কথা শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকালাম।
-তোমার আব্বু তোমার আম্মুকে খুব বকবেন।
-কিচ্ছু হবেনা।আব্বু তো কখনো আসেইনা।
আসলে আমরা সবাই এক সাথে থাকবো।
-আব্বু আসেনা মানে?
ও কি বলছে এগুলো?
-তুমি সুস্থ হয়ে গেছো?
স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছো তুমি?
-জানিনা কি হয়েছিলো আমার,

তবে আমি গত কাল রাতে যখন হঠাৎ তোমাকে সামনে দেখতে পাই তখন অবাক হয়ে যাই।
আর বোঝার চেষ্টা করি আমি কিভাবে তোমার কাছে এলাম।
কিন্তু তোমাদের কিছুই বুঝতে দেইনি।
-তারমানে তুমি ওই মেয়ের ছবি দেখেই স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছো।
আর আমাদের বুঝতে দাওনি।
-হ্যাঁ।

-এভাবে চলে আসলে যে চুপচাপ আমার সাথে?যদি আমি তোমাকে ফেলে চলে যেতাম?
-আমার এই বিশ্বাসটা ততক্ষণে হয়ে গিয়েছিলো যে,তুমি আমায় একা ফেলে যাবেনা।
-পরিবারের কথা কেন লুকিয়েছিলে আমার কাছে?
যদি না লুকাতে তাহলে হয়তো আজ তোমার এই অবস্থা হতোনা।
-এমন জঘন্য একটা পরিবেশে বাস করছিলাম যে,কিছু বলার মত ভাষা ছিলোনা।
-সেদিন আমাকে গ্রহণ করলেনা কেন?
কেন ধরলেনা আমার হাত?

আমিতো তোমাকে এখান থেকে বেড় করে নিয়েও যেতে পারতাম।
এখন যেমন বেড় করলাম।
-চাইনি এমন জঘন্য একটা জীবনে তোমাকেও জড়াতে।
যেখানে সৎ মা এবং তার ছেলেপেলের সব রাজ্যতা।
যাকে ভালবাসি তাকে কিভাবে এই নরকে নিয়ে আসি বলো?
যেখানে নিজের বাবাও হয়ে গিয়েছিলো পর।
কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন।
কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে যায়।
আর তুমিও হারিয়ে যাও জীবন থেকে।

যাকগে,এখন তো সুখে আছো।
আমার সাথে নিজেকে জড়ালে কোনদিনও সুখী হতে পারতেনা।
আমার একলা জীবন একলাই বেশ।
-ওই মেয়ে তোমার বউ না?
-না,আমার সাথে তাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো আমার সৎ মা।
কিন্তু আমি বিয়েটা করিনি,
আর ওদের সব ষড়যন্ত্র টের পেয়ে যাই বলে ওরা আমাকে এইভাবে তিলেতিলে মেরেছে।

আমার শরীর অবশ করে ফেলতো ইঞ্জেকশন দিতে দিতে।
কিন্তু কিসের ইঞ্জেকশন ছিলো তা আমি জানিনা।
-ওগুলো ছিলো তোমাকে পাগল বানানোর ইঞ্জেকশন।
আর আমি তোমাকে পাগল অবস্থাতেই রাস্তাতে পেয়েছি।
কিন্তু তুমি বাসা থেকে পালালে কি করে?
-আমি সাহেবকে বেড় করে দিয়েছিলাম মা।
-কে আপনি?
-আমি এই বাসায় কাজ করতাম মা।
আমি সাহেবের এমন অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারতেছিলাম না।
তাই তাকে বাসা থেকে সুযোগ করে বেড় করে দিয়েছিলাম।
যাতে পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে হলেও যেন বাকিটা জীবন বেঁচে থাকে।
আর যদি কোন ভালো মানুষ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চিকিৎসা করে ভালো করে তাহলেতো তার ভাগ্য।
-আপনার উপকার আমরা সারাজীবন মনে রাখবো খালা।
-সাহেবকে দেখে রেখো মা।আমি ওই পাশের বাসায় কাজ করি এখন।
এ বাসা ছেড়ে দিছি।

ভালো থেকো তোমরা।
স্বপ্ন খালাকে জড়িয়ে ধরলেন।
খালাও মাথায় হাত রেখে দোয়া করে গেলেন।
আমিও স্বপ্নার হাত ধরে স্বপ্নাকে বললাম এবার চলো আমরাও যাই মা।
-বাবাকে নিয়ে যাবোনা আমরা আম্মু?
-তোমার বাবা যাবেনা মা।
-বাবা তুমি যাবেনা?
-তোমার মা আমাকে নিবেনা মা।

তোমার মা আমার হাত টাও ধরবেনা আর কোন দিন,বলবেও না ভালবাসি।তোমার আব্বু যে রাগ করবে।
-সুস্থ হবার পর হাত টা বাড়িয়েছো একবার?
বলেছো একবার ভালবাসি বলতে?
-অন্যের বউ এর হাত ধরার অধিকার যে আমার নেই।
আর অন্যের বউ এর মুখ থেকে ভালবাসি শোনারও যে অধিকার নেই আমার।
-কিন্তু নিজের ভালবাসার মানুষটার হাত ধরার অধিকার তো আছে নাকি?
নিজের ভালবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালবাসি শোনার অধিকার তো আছে?
-মানে?
-মানে আমি অন্যের বউ নই.
-কিহ?
-জ্বী।

-তাহলে স্বপ্না?
-স্বপ্না আমাদের নাবিলার মেয়ে।
-ওই যে নাবিলা?আমরা যে এক সাথে পড়তাম,তোমার বান্ধবী?
-হ্যাঁ।নাবিলা জাফরকে গোপনে বিয়ে করেছিলো।
কিন্তু জাফর পরে ওই বিয়ে অস্বীকার করে।
কিন্তু ততদিনে নাবিলা জাফরের সন্তানের মা হতে চলেছিলো।
ও চাইছিলোনা যে ওই সন্তানের কোন ক্ষতি হোক।
নাবিলার পরিবার বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে বলেছিলো।
কিন্তু নাবিলা তা করেনি।
পরে ওর বাবা মাকে ও বলে,ও ওই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবে।
হয়তো সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখলে জাফরের মন গলে যাবে।
জফরের পরিবারকেও জানানো হয়েছিলো সব।তারা বলেছিলো,
তাদের ছেলে বউ নিয়ে না খেলে তাদের কিছু করার নেই।
পরে নাবিলা একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

বাচ্চাটাকে কোলে নেয়ার আগেই ও এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
নাবিলার বাবা মা নিজেদের মেয়েকে হারিয়ে বাচ্চাটাকে অপয়া বলে গালিগালাজ করতে থাকে।
আর এতিমখানায় দিয়ে আসতে চায়।
আর সেদিন আমিই ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে বুকে টেনে নেই।
আর হয়ে যাই ওর মা।
তুমি জানোই তো,আমার বাবা নেই।
হুট করে মাও একদিন আমাদের দুজনকে ছেড়ে চলে যান।
এতিম হয়ে যাই আমরা।
তারপর যাতে কেউ আমাদের দিকে আঙুল তুলতে না পারে সেই জন্য আমরা মা মেয়ে আমাদের ওই এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় এসে পাড়ি জমাই।
এইতো চলছে আমাদের মা মেয়ের জীবন।
আর বিয়ে?ওটা আর হয়নি আমার দ্বারা।

আমার কথা গুলো শুনে স্বপ্ন আমার আর স্বপ্নার দিকে ওর হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো।
আর বলতে লাগলো,
একটা বার ধরবি আমার হাত?
আর বলবি ভালবাসি?
আমি আর স্বপ্না দুজন স্বপ্নর হাত দুটো ধরলাম।
স্বপ্ন স্বপ্নাকে আর আমাকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আর আমি আর স্বপ্না কাঁদতে কাঁদতে স্বপ্নকে বলতে লাগলাম ভালবাসি,ভালবাসি,ভালবাসি।

(সমাপ্ত)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com