চিরকুট । তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু
আর দশটা প্রেমের মত আমাদের সম্পর্কটা ছিলোনা।
না হয়েছে আমাদের রিক্সায় ঘুরা,
না হয়েছে এক সাথে ফুচকা খাওয়া আর না মুখোমুখি বসে চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকা।
আমাদের ভালবাসা টা ছিলো চোখে চোখে দূর থেকে দেখে দেখে।
ও ওর জানালার পাশে দাঁড়াতো।আমিও আমাদের জানালার পাশে দাঁড়াতাম।
দুজন দুজনকে লুকোচুরি খেলার ছলে দেখতাম।কেউ কাউকে বুঝতে দিতাম না যে,
আমরা দুজন দুজনকে দেখছি।
কখনো রাতের অন্ধকারে ছোট্ট একটা লাইটের আলো ওর জানালায় ছুড়ে দিতাম।
ও আসলেই আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়তাম।
ও নিজেও ঠিক তাই করতো।
দুজনের বাসা ছিলো কিছুটা দূরত্বেই।
উৎস উৎসর নানা বাড়ী থেকেই পড়াশোনা করতো।
তাই ওকে তেমন দেখা হয়নি।
যখন মাস্টার্স করতে নিজের বাড়ী চলে এলো তখন থেকেই চোখাচোখি আমাদের।
একদিন ও বাসায় আসার পর ওর কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে ওদের বাসার ছাদে রাতে জোরে জোরে গান গাচ্ছিলো।
আর আমরাও সেদিন রাতে আমাদের বান্ধবীরা মিলে ছাদে চাঁদ রাত সেলিব্রেট করি।
তখন আমার বান্ধবীরা ওদের ডেকে জোরে জোরে চেঁচামেচি করে বলেছিলো,
এভাবে চিল্লায় চিল্লায় গান গাইবেন না।
আমাদের প্রবলেম হচ্ছে।
আর আমি সেদিন চুপ ছিলাম বিধায় উৎস খানিক সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
দুই দল ঝগড়া লেগে গেলেও আমরা শুধু দুজন দুজনকে দেখছিলাম।
ভালো লাগাটা ওখান থেকেই শুরু।
এরপর থেকে আমি ছাদে এলে মাঝে মাঝে ও নিজেও ছাদে চলে আসতো।
আমি আবার লজ্জা পেয়ে নিচে চলে যেতাম।
এভাবেই চোখে চোখে চলছিলো ভালো লাগা।
একদিন হঠাৎ দেখি আমাদের ছাদের কোনায় একটা চিরকুট।
চিরকুট টা ছিলো ইটের টুকরোয় মোড়ানো।
কিভাবে যে এটা এসেছে এখানে আল্লাহ্ ই জানেন।
খুলে দেখি ওখানে লিখা,
”তুমি খুব সুন্দর“
এটা কি তুমি জানো?
তোমার লজ্জা ভরা হাসিটা না খুব মিষ্টি”
-উৎস
তারপর আমিও এই ভাবে একটা চিরকুট লিখে পাঠালাম,
”আপনার চোখ সুন্দর বলেই আমাকে আপনার কাছে সুন্দর লাগছে
আপনার চোখ দুটো খুব সুন্দর”
দুজন দুজনের সম্পর্কে তেমন কিছু না জানলেও,পড়াশোনা কিসে করি,কি রঙ পছন্দ,কি করছি,কি খাবার পছন্দ এসব বিষয়ে ঠিকই জেনে নিলাম।
প্রতিদিনের ছোট ছোট চিরকুটের মাধ্যমে।
প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকতাম একটা চিরকুটের।
কখন আসবে চিরকুট টা।
হাতে পেলেই যেন শান্তি।
লাস্ট যেই চিরকুট টা আমার হাতে আসলো,
সেটায় লিখা ছিলো,
আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই।
বিয়ে করবে আমাকে?
আমি সেদিনের চিরকুট টা পড়ে উৎসকে আর কোন চিরকুট দেইনি।
আর না গেছি জানালার পাশে,আর না দাঁড়িয়েছি আর ওর সামনে ছাদে।
ওইদিকে উৎস পাগল প্রায়,
কিন্তু আমি ওকে এড়িয়ে যাচ্ছি,
এরপর উৎস আরো কয়েকটা চিরকুট পাঠালো।
আর আমি ওকে একটা চিরকুটে লিখে দিলাম,
”আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না আমাকে ক্ষমা করবেন”
কেন সম্ভব না সেটা জানতে অবশ্যই সাথে থাকতে হবে।
চলবে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com