বিশ্বাসঘাতক | পর্ব -১১
আবির নীলাকে জোর করে ডিভোর্স দেওয়ার পর আবির নীলাকে বলল
– আমিতো কোন অপরাধ করিনি তাহলে কেনো আমার সাথে তুমি অমন করেছিলে।
সেদিন যদি অমন না করতে তাহলে আজ তোমাকে এইদিন দেখতে হতো না নীলা।
আবিরের কথার কোন প্রতি উওর করছে না নীলা।
চোখ থেকে টপ টপ করে জল ঝরাচ্ছে আর আবিরের দিকে অসহায়ের দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।আবির বলল,,,
– নীলা তুমি এখুনি আমার সামনে থেকে চলে যাবে। তোমার মুখ আর আমি দেখতে চাই না।
যদি চলে না যাও তাহলে এই মুহূর্তেই তোমার পেটের সন্তান কে লাথি মেরে নস্ট করে ফেলব।
আবিরের কথা শুনে নীলা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।
নীলার হাতের মোবাইল টাও কেরে নিলো আবির।
নীলা চলে যাওয়ার পর আবির ঘরের দরজা আটকে দিয়ে জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদতে থাকলো।
আবির নীলাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে আর আজ তাকেই এমন টা সময়ে বের করে দিলো।
কিন্তু একদিকে দিয়ে আবির খুশি হয়েছে তা হলো সে তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে।
নীলা বাসায় গিয়ে বাবা মায়ের সামনে কাঁদতে থাকলো। আর সব কথা খুলে বলল। নীলার মা নীলার কথা শুনে বলল
– মা রে তুই যেমন করেছিলি ঠিক তেমনি আবিরও তোর সাথে করেছে। আবির তোর উপর প্রতিশোধ নিয়েছে।
– মা এখন আমি কি করবো।
– কাঁদিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে।আর তোর এই সময়ে এত ভেঙে পরা চলবে না। তোকে শক্ত হতে হবে।
,,,,নীলার মা নীলাকে অনেক ভাবে বোঝালো। নিজের মেয়েকে শক্ত হতে বলল।
কেননা এখন এতটা ভেঙে পরা চলবে না কারন কিছুদিন পর নীলা মা হতে চলেছে।
এদিকে আবির ঘরে বসে কাঁদতে কাঁদতে আবির ও নীলার ফটো গুলো দেখতে লাগলো।
আবির নীলার সব খবর রাখে কখন কার সাথে কথা বলে কি না বলে।
আবির দেখতে পেলো কিছুক্ষন আগে একটা অচেনা নাম্বার থেকে
কল এসেছিলো আর প্রায় এক মিনিট কথা হয়েছে নীলার সাথে।
আবির নীলার ফোনে কল রেকর্ড চালু করে রেখেছিলো আর তা প্রতিদিন চেক করে ডিলিট করে দেয়।
,,,,আবির কল রেকর্ড চালু করতেই নীলা আর তানিয়ার কথাগুলো শুনে ফেলল।
তানিয়া বলেছে,, আবির নির্দোষ!আবির এই কথার মানে বের করতে লাগলো।
তানিয়া কেনো এমন ধরনের কথা বলল নীলাকে। তার মানে কি তানিয়া সব জানে?
নাকি তানিয়া ই এই সব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো?
,,,এমন সব নানান ধরনের কথা ভাবতে লাগলো আবির।
আবিরকে এর একটা সমাধান বের করতেই হবে আর তা যে ভাবেই হোক না কেনো।
আবিরের কাছে তানিয়ার বেশ কয়েকটা নাম্বার ছিলো সব গুলোতে কল দিলো কিন্তু সব গুলা নাম্বার ই অফ।
কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না আবির ।
আবিরের মনে সন্দেহ সৃস্টি হলো তানিয়ার উপর।
আবির চোখ মুছে কান্না থামিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো তানিয়ার খোজেঁ কিন্তু তানিয়ার দেখাও মিলল না।
সারাটা দিন না খেয়ে পাগলের মতো খুজতে লাগলো সমস্ত স্থানে কিন্তু না কোন কাজ হলো না।
আবির তার সমস্ত ফ্রেন্ডদের কে জানিয়ে দিলো তিথিকেও এসব ব্যাপারে জানালো।
সবাই মিলে তানিয়াকে খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো না।
,,,আর তানিয়া নীলার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বিদেশে চলে গেছে তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে। সেখানে বেশ ভালো আনন্দেই আছে তানিয়া। কিন্তু আবির বুঝতে পারছে না তানিয়া ঠিক এখন কোথায়।
,,নীলা সব সময় তানিয়ার কথা নিয়ে ভাবতে থাকে।
নীলার মনের ধারনা তাহলে কি আবির সত্যিই নির্দোষ?
আর আবিরও তো এমন কথাই তাকে বলল যে সে কোন অপরাধ করেনি।
তাহলে কি এসব তানিয়ার চাল?
যদি তানিয়া ই এসব কান্ড ঘন্টায় তাহলে আবিরের সাথে ঐ মেয়েটার অশ্লীল ভিডিও টা কি করে হলো।
আর ওটা তো ইডিট করা ভিডিও না।,,,
নীলা সব সময় এসব কথাই ভাবতে থাকে।
নীলা ও তানিয়াকে খোজার জন্য লোক লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু কোন খোজ আনতে পারেনি তার লোক।
কারন তানিয়া তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আইল্যান্ড এর একটা সুন্দর দ্বীপে দিন কাটাচ্ছে তাদের ধরা অসম্ভব।
আর সেখানে একটা অনেক শক্তিশালি ঘর ও তৈরী করেছে তানিয়া আর যাতায়াত করে হেলিকপ্টারে করে।
আর এসব কথা আবির কিছুই জানে না আবির শুধু দেশে বিদেশে খোঁজ লাগাতে থাকে তানিয়ার
আবির তানিয়াকে এভাবে প্রায় দেড় মাস খুজতে লাগলো।
তানিয়াকে না পেয়ে আবির অনেক ডিপ্রেশনে ভুগতে লাগলো আর অন্যদিকে ঠিক নীলা ও।
ঘরে শুয়ে আবির নীলার ফোনটা টিপতে লাগলো।
মেমোরি কার্ড এরা হাইড সেকশন গুলো ওপেন করে
প্রতিটা ফোল্ডার খুব ভালো ঘাটতে লাগলো আবির।
যদি কোন সুত্র পাওয়া যায় সেই জন্য।
একটা ফোল্ডারে গিয়ে দেখলো একটা ভিডিও আবির ভিডিওটা
প্লে করে নিরবতা পালন করলো।,আবির নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
কারন ভিডিওটা ছিলো অশ্লীল আর মেয়েটার সাথে যে ছেলেটা ছিলো তা হলো আবির ই।
আবির অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো আমি এমন কাজ কখন করলাম আমিতো কোন মেয়ের সাথেই কোন সম্পর্কে জরাইনি তাহলে এই ভিডিও হলো কিভাবে।
আর এই ভিডিও দেখেই নীলা আমাকে সন্দেহ করতে বাধ্য হয় আর আমার উপর অমন অত্যাচার চালায়।,
,,,,,,,,,,,,,আবির ভিডিওটা খুব ভালো করে দেখলো দুই মিনিটের ভিডিও ছিলো।
আবির কিছু করেনি আবিরের নগ্ন শরীরটা পরে আছে বিছানায়
আর একটা মেয়ের নগ্ন শরীর আবিরের শরীরের উপর।
আর মেয়েটা আবিরকে অবিরাম কিস করছে।
,,,,আবির ভিডিওটা নিয়ে অনুসন্ধান চালালো আর এর রহস্য বের করলো।
আবিরকে অজ্ঞান করে এমন ভিডিও বানানো হয়েছিলো।
কিন্তু আবিরএটা বের করতে পারছে না যে কাজ টা কে করেছে।
আবিরের কাছে শুধু একটাই অপশন আর তা হলো তানিয়া।
কিন্তু আবির তো তানিয়ার কোন খবর ই বের করতে পারছে না যে সে কোথায়।
,,,আবির তানিয়ার ভালো বন্ধু ছিলো তাই তার ভালো লাগা খারাপ লাগা শেয়ার করতো আবিরের সাথে। তানিয়া পাহাড়, সমুদ্র, ট্রাভেলিং খুব পছন্দ করতো কিন্তু আবির এখন এই সারা বিশ্বের কোন জায়গায় খুজবে ভেবে পাচ্ছে না। আর তানিয়াকে ধরার কোন সূত্র আবিস্কার করতে পারছে না আবির।
,,,,,,আবির বাবা মায়ের কাছে চলে এলো এই ডিপ্রেশন থেকে কিছুক্ষনের জন্য মুক্তি পেতে।
নীলার কথা খুব মনে পরছে আবিরের। বেচারি নীলাকে কতটা কস্ট ই না দিয়েছে আবির।
প্যান্টের বেল্ট খুলে কতদিন যে নির্মম ভাবে মেরেছে তার খেয়াল নেই।
তখন নীলা শুধুমাত্র ব্যাথায় চিৎকার করতো মাঝে মাঝে মুখে টেপ লাগিয়ে দিয়েও মেরেছে আবির নীলাকে।
এসব কথা চিন্তা করতে করতে আবিরের চোখ থেকে জল টপ টপ করে বেরিয়ে পরছে।
এমন সময় পিও এসে আবিরের কাছে এসে বলল…
– মামা মামা তুমি কাঁদছো কেনো? আমার তকলেট এনেছো?আবির চোখ মুছে পিও কে কোলে নিয়ে বলল
– এমনি মামুনি চোখ কিছু একটা পরেছিলো তাই জল বের হচ্ছিলো। আর এই নাও তোমার তকলেট।
আবির পিও কে চকলেট দিলো। তারপর পিও আবিরকে জরিয়ে ধরে থাকলো।
এমন সময় আবিরের বোন ঘরে আসলো।বোন বলল.,,,,
– কি হয়েছে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?আবির তার বোনকে সব খুলে বলল।তারপর আবিরকে খেতে ডাকলো।সবাই মিলে একসাথে খাচ্ছে এমন সময় আবিরের মা বলল….,,
– হ্যাঁ রে খোকা বউমা কেমন আছে রে? তাকে নিয়ে আসলেও তো পারতি।মায়ের কথা শুনে আবির বলল
– মা আসলে আমি তোমার বউমাকে ডিভোর্স দিয়ে ফেলেছি।আবিরের এমন কথা শুনে বাবা,মা বোন খাওয়া বন্ধ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। ইমা বলল,,,
– ভাই এসব তুই কি বলছিস? ডিভোর্স দিয়েছিস মানে? কিন্তু কেনো এমন কেনো করলি?আবির বলল
– আমি ডিভোর্স দিয়ে শুধু মাত্র প্রতিশোধ নিয়েছি।
– কিসের প্রতিশোধ?
– আমাকে এসিড মারার প্রতিশোধ, তোর সংসার ভাঙার প্রতিশোধ!
– ভাই তুই কি বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
– আসলে আমি বিয়ে করেছি নীলাকে। নীলা আমাদের সাথে যা করেছে আমিও বিয়ের পর তার সাথে ঠিক তেমন ই করেছি। এখন সে প্রেগন্যান্ট আর আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছি।
,,,,,আবিরের কথা সবাই কেমন চুপ করে থাকলো। আবির কথাগুলো বলার পর কাঁদতে থাকলো। চোখ কোন কথাই মানছে না। আবিরের মা বলল…,,
-বাবা কাজটা তুই মোটেও ঠিক করিসনি।
ভুলে গেছিস সবকিছু আমরা তোকে যা দিতে পারিনি তা নীলা তোকে দিয়েছে।
তোর স্কুলের ফি অবদি নীলাই দিয়েছে।তোর খাতা কলম কেনার টাকা নীলা ই দিয়েছে।
ভুলে গেছিস সব কিছু?আবির কাঁদতে কাঁদতে বলল
– মা আমি কি করবো বলো। কিন্তু তারপর আমাদের সাথে কি করেছে তা কি তোমাদের কারোর খেয়াল নাই?
– মনে হয় নীলার কোথাও একটা ভুল হয়েছে তাই এমন করেছে তা ছাড়া নীলার মতো একটা মেয়ে তোর সাথে এমন করতে পারে না।,
আবির মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারলো।আবির বলল মনে মনে,
ঠিক কথাই বলেছো মা আমাদের দুজনের কথাও একটা বড় ধরনের ভুল হয়েছে
আর তার সমাধানের চেস্টাই এখন চালাচ্ছি।,
,,,আবির খেতে খেতে আরো কিছুক্ষন কথা বলল। আর এমন সময়ে মোবাইলে একজন কল করেছে আবির কর ধরতেই ওপাশ থেকে বলল
– আবির তানিয়ার খোজ পাওয়া গেছে?
,,,,এই কথা শুনে আবির খাবার টেবিল থেকে উঠে পরলো। আবিরের মা বলল
– কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
– মা প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছি প্রতিশোধ। এটা শেষ প্রতিশোধ আমার। আমার শত্রু কে পেয়ে গেছি মা।
– কে সে?
– এখন এসব বলার সময় নেই মা। আমি পরে সব বলব আমি গেলাম।
,,আবিরের মা বাবা ভাবতে লাগলো কোথায় যাচ্ছে আবির।আবিরের মা বলল
– নীলাকে তো ডিভোর্স দিলো আবির। আবার কার উপর প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছে ছেলেটা?
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com