দুই মেরু । প্রথম পর্ব
তুমি আদিকে ছেড়ে কেন দিচ্ছ না নিধি..আদি তোমাকে ভালোবাসে না..সে এখন আমার সাথে রয়েল হোটেলে আছে…
একদম কথা গুলো বলে থামলো এলিনা..যেভাবেই হোক আজ নিধিকে তাদের জীবন থেকে সরাবেই..এই মেয়েটার জন্য আদিকে নিজের করে পাচ্ছে না..
নিধি অশ্রুসিক্ত নয়নে রয়েল হোটেলের 809 no রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে..কিছুক্ষন আগে আদিকে একটা মেয়ের সাথে এখানে আসতে দেখে তাদের পিছু নেয় নিধি..অন্য একটা মেয়ের সাথে নিজের হাজবেন্ডকে হোটেল রুমে দেখে দুনিয়া উল্টে যায় তার…আদির নম্বর এ কল করতেই মেয়েটি ফোন রিসিভ করে কথাগুলো বলে তাকে….
এলিনাকে কিছু না বলে কল কেটে দেয় নিধি…টলমল পায়ে বেরিয়ে আসে হোটেল থেকে….ঝাপসা দৃষ্টিতে আবেগশুন্য হয়ে তাকিয়ে থাকে ব্যস্ত রাস্তার দিকে…
আজ কত খুশির দিন তার জন্য…আজ সে জানতে পেরেছে সে মা হতে যাচ্ছে…হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় তার চোখ যায় আদি আর এলিনার দিকে…
কিছু সময়ের ব্যবধানে রঙিন জীবনটা বড্ডো ফেকাসে লাগছে নিধির কাছে…
আজকে সকালেও আদি বেরুনোর সময় তাকে আলিঙ্গন করে চুমু খেয়েছে তার কপালে…ভালোবাসি নিধিমনি…একথা বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল…সবটাই কি অভিনয়…
কেন এই প্রতারণা… উত্তর খুঁজে পায়না নিধি…
কিছুক্ষন উদ্ভান্তের মতো দাঁড়িয়ে থেকে এগিয়ে যায় নিজের গন্তব্যে…
সন্ধ্যায় বাসায় আসে আদি…সারাদিন অনেক ধকল গেছে তার…
রুমে ঢুকতেই অনেকটা চমকে যায় সে…নিধি দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে….
আজকের হাসিতে অন্য কিছু আছে…সাজে ও আছে ভিন্নতা…
সাদা সারিতে অনেকটা বেলিফুলের মতো স্নিগ্ধ লাগছে নিধিকে….
কিন্তু হঠাৎ এই অদ্ভুত সাজের মানে খুঁজে পেলোনা আদি…
আজকে নিধিকে এলিনার বিষয়টা জানাতে চেয়েছিলো সে..
নিধিকে সে ভালোবাসে…কিন্তু তার জীবন অপূর্ণ একটা বাচ্চা ছাড়া…সেও চায় বাবা হতে…কমতো আর হলোনা…আজ পাঁচ বছর হচ্ছে বিয়ের…তবুও তাদের কোনো সন্তান নেই…তাই সে এলিনাকে বিয়ে করতে চায়…
কয়েক মাস যাবৎ তাদের এফেয়ার চলছে..দুজন অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে….
নিধি খুব কষ্ট পাবে সে জানে…কিন্তু একটু বুঝলেই সে বুঝবে…নিধি ও তাকে খুব ভালোবাসে…এতো বছরের সংসারে আদিকে ছাড়া একটা রাত ও সে কোথাও থাকে নি..
আদি নিশ্চিত নিধি সবকিছু মেনে নিবে…
তার খুশির জন্য এইটুকু সে করতেই পারে…
নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারল না সে..এই নিষ্পাপ মুখে বিষাদের ছায়া কিছুতেই আনতে চায় না সে….
সমস্ত চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে নিধির দিকে এগিয়ে যায় সে…
মুচকি হেসে বলে, কি বেপার…
আজকে এতো খুশি কেন….
নিধি আদির গলা জড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো..আদুরে ভাবে মাথা রাখলো আদির বুকে….
এই একটা জায়গায় শান্তি মিলে …ভাবতেই ঠোঁটে বিষাদের হাসি আসলো তার….
আদি ও পরম আদোরে জড়িয়ে নিলো তার ভালোবাসা কে…
আদেও কি ভালোবাসা???নাকি দীর্ঘ সম্পর্কের মায়া…
কিছুক্ষন জড়িয়ে থেকে সরে আসলো নিধি…
~ফ্রেশ হয়ে আসুন…আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে…(নিধি)
~কিসের সারপ্রাইজ
অনেকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো আদি…আজ নিধিকে খুব অচেনা লাগছে তার কাছে…
~কি হলো??দাঁড়িয়ে পড়লে যে ?
~যাচ্ছি…
আদি আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেলো….
নিধির চোখ থেকে দু ফোটা বিষাদ ঝরে পড়লো….
একবার রুমের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো…
কত ভালোবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘরে …
নিজের হাতে গড়ে তোলা সংসার….
দীর্ঘশাস বেরিয়ে এলো মন থেকে…
যেখানে মানুষটাই তার রইলো না সেখানে সংসার দিয়ে কি হবে….
প্রেগনেন্সি রিপোর্ট আর একটা চিঠি রেখে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো নিধি অজানার উদ্দেশে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com