বিশ্বাসঘাতক । পর্ব -০৮
Who are you? (তিথি)
– আমি পিওর মা। পিও কে নিতে এসেছি। (ইমা)
– ওহহ আচ্ছা আসুন ভিতরে আসুন?.. তারপর ইমা ভিতরে গেলো। তিথি ইমাকে কে আবিরের রুমে নিয়ে গেলো। ইমা দেখতে পাচ্ছে আবির কাঁদছে আর পিওর সাথে কথা বলছে। কিন্তু পিও তো বাচ্চা মেয়ে শুধু তাকিয়ে তার মামার দিকে আর মিটমিট করে হাসছে।
.বোনকে দেখে আবির চোখের জল মুছে নিজেকে কনট্রোল করার চেস্টা করলো। তারপর কিছু না বলে পিও কে বোনের হাতে তুলে দিলো। ইমা ও আর কিছু না বলে পিও কে নিয়ে চলে গেলো। আর তারপর আবির আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো। কিছুতেই তার কান্না থামছে না আর থামবেই বা কি করে কারন আজ নিজের বোনকে তার পরিচয় দিতে পারছে না শুধু নীলার জন্য।
.আবির চোখ মুছে নিজেকে শক্ত করলো আর নিজে নিজে বলল,
– আমাকে এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাকে কঠিন থেকে কঠিনতর হতে হবে।তিথি আবিরের কস্ট টা বুঝতে পারলো তাই আবিরের কাছে গিয়ে আবিরকে শান্ত করার চেস্টা করলো। আর বলল,
– এমন করছো কেনো? প্লিজ শান্ত হও? তিথির কথা শুনে আবির বলল..
– কি করে শান্ত হবো বলুন কি করে শান্ত হবো আমি? আমার বাবা মায়ের কাছে আমি মৃত অথচ আমি বেঁচে আছি তাদেরকে বলতে পারছি না যে আমি তোমার সেই সন্তান। আজ আমার বোন আমার কাছ থেকে চলে গেলে তাকে বলতে পারলাম না যে আমি তার ভাই।,
– দেখুন প্লিজ এভাবে আর কান্নাকাটি করবেন না। আপনি কান্না না করে আপনার কাজে মন দিন। আমি আপনার পাশে আছি। রান্না হয়ে গেছে খেতে আসুন?.কথাটা বলে তিথি চলে গিয়ে প্লেটে ভাত বেড়ে দিলো। আবির আর তিথি একসাথে খেয়ে ঘুমাতে গেলো। কিন্ত আবিরের চোখে ঘুম নেই সব ঘুম কেরে নিয়েছে নীলা। আবির বলল, নীলা তোমাকে আমি এমন শাস্তি দিবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবা না।এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে আবির কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে টের পায়নি।,আর এদিকে নীলা ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে নীলের কথা। নীলার কেনো জানি নীলকে কে আপন মনে হচ্ছে। নীলা ও ঘুমাতে পারছে না শুধু নীলের কথাই ভাবছে। এমন সময় কল দিলো তানিয়া, নীলা কল ধরতেই ওপাশ থেকে তানিয়াকে বলল,
,- কি খবর ডিয়ার নীলের কথা ভাবা হচ্ছে তাই না?নীলা অবাক হয়ে বলল
– তুই কি করে জানলি?
– আরে জানি জানি সব জানি এমন হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে সবাই তার কথা ভাবে!
– তুই কি বলতে চাচ্ছিস বলতো?
– কিছুই না শুধু এটাই বলবো তোর মন যা বলে তাই করিস? শুভ রাত্রী টাটা।,তানিয়া ফোন কেটে দিলো। তারপর নীলা ঘুমানোর চেস্টা করলো। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে তার খেয়াল নেই নীলার।
সকাল বেলা আবিেরর ঘুম ভাঙলো নীলার ডাকে। আবির ঘুম থেকে উঠে দেখে সকাল ৯ টা বাজে। আবির চোখ কচলাতে কচলাতে বলল..।
– সকাল ৯ টা বাজে আপনি এখন ডাকছেন আগে ডাকবেন না?আবিরের কথা শুনে তিথি বলল..
– ও হ্যালো মিস্টার আপনি কে যে আপনাকে আমি সকাল সকাল ডেকে দিবো? আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি যে রোজ সকাল বেলা আদর করে ডেকে দিতে হবে।.তিথির কথা শুনে আবির পুরো ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেলো। ভাবছে ঠিক ই তো। কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। আবিরের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো এক নিমিষেই। তিথি আবিরের এমন অবস্থা থেকে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। তিথি আবার বলল..।
– কি হলো মিস্টার চুপ করে আছেন কেনো? আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে তারাতারি ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে আসুন?.
আবির কথা না বারিয়ে সোজা ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেতে গেলো। নাস্তা শেষ করে আবির অফিসে চলে গেলো।আবির অফিসে গিয়ে আড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে নীলা কে। নীলা অবশ্য বুঝতে পারলো ব্যাপারটা সাথে সাথে তার কেবিনে ডাকলো আবিরকে। আবির কাছে গিয়ে দাড়াতেই নীলা বলল….
– আপনার কোন কাজ নেই?
– হ্যা আছে তো ম্যাডাম!
– তাহলে কাজ বাদ দিয়ে আমার দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
– না মানে ম্যাডাম, আপনাকে সুন্দর লাগছে তো তাই আর কি!.আবিরের কথা শুনে নীলা রেগে গেলো আর বলল.
.- দেখুন মিস্টার এটা অফিস আর আমি হলাম এখানকার বস । কথা ঠিক ঠাক ভাবে বলবেন। এর পর যেনো আপনার মুখ থেকে এই ধরনের কথা না শুনি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন?নীলার কথা শুনে আনির বলল
– জ্বি।
– জান আপনার কাজে জান?.
আবির নীলা রুম থেকে বের হয়ে কাজ করছে আর আড় চোখে আবার তাকাচ্ছে নীলার দিকে। নীলা বিষয়টা দেখেও না দেখার ভান করলো আর কাজে মন দিলো।,,,,,এভাবে চলতে থাকলো বেশ কিছুদিন। আবির প্রতিনিয়ত নীলার দিকে তাকায়। ইশারায় বোঝাতে চেস্টা করে যে সে তাকে পছন্দ করে। কিন্তু নীলা ব্যাপারটা একদম ই সহ্য করতে পারে না। কারন নীলা একমাত্র আবিরকেই ভালোবাসে আর কাউকে তার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব নয়। কিন্ত আবির ও হাল ছাড়ার ছেলে নয়। একেক দিন একেক রকম ভাবে নীলাকে ইমপ্রেস করার চেস্টা করে আর প্রতিবার ই ব্যার্থ হয় আবির।.
আবিরের এমন আচরন দেখে নীলা শেষ পর্যায়ে আবিরের চাকরী টা কেরে নেয়। চাকরী চলে যাওয়ার পর আবির নীলার বাড়ির আশে পাশে সব সময় ঘুরঘুর করে। রাতে যখন নীলা ছাদে বসে থাকে তখন আবির ছাদে উঠে নীলার সাথে কথা বলার চেস্টা করে কিন্তু নীলা সব সময় আবিরকে নীল ভেবে ইগনোর করেএবং মাঝে মধ্যে বাজে ভাষায় গালি গালাজ করে।
এভাবে কেটে যায়গা প্রায় তিন বছর। কিন্তু নীলার মনে নীলের জন্য কোন জায়গা তৈরী হয়না। আবির কি করবে বুঝতে না পেরে সোজা নীলার বাবা মায়ের কাছে গিয়ে নীলাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠায়।
.নীলার বাবা মা প্রস্তাবে রাজি হলেও নীলা কোনভাবেই এই এই বিয়েতে রাজি নয়।নীলা বলল….
-আমি আবিরকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না! আমার এই হৃদয় জুরে শুধু একজনের ই বাস আর তা হলো আবির।নীলার কথা শুনে নীলার মা বলল..
– তাহলে কেনো মারলি আবিরকে? এতই যখন ভালোবাসিছ তাহলে কেনো এমন করলি?
– মা আবির যে অন্যায় করেছে আমি শুধুমাত্র তার শাস্তি দিয়েছি আর কিছু না। আমি এ বিয়ে করতে পারবো না ব্যাস!
– আচ্ছা ঠিক আছে ভালো কথা তবে একটা কথা শুনে রাখ নীলা। যদি তুই এ বিয়েতে রাজি না হস তাহলে তোর বাবা আর আমি তোকে ছেড়ে সারা জীবনের জন্য চলে যাবো।
– মা তুমি এসব কি বলছো? প্লিজ মা এমন বলো না আমি মরে যাবো তোমাকে ছাড়া!.নীলার মা নীলার কথায় কান না দিয়ে চলে গেলো। নীলা ধপ করে মাটিতে পড়ে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। নীলা অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করে আবিরকে বিয়ে করতে রাজি হয়।.
নীলা বিয়েতে রাজি হয়েছে শুনে আবির একটু স্থির হয়ে প্লানিং করলো কিভাবে কি করবে। এমন সময় তিথি এসে বলল..।
– তাহলে বিয়েটা করেই ফেলছেন?তিথির কথা শুনে আবির বলল..
– হ্যা বিয়ে করেই ফেলছি। কেনো আপনার কোন আপত্তি আছে নাকি?
– আরে না না আমার কেনো আপত্তি থাকবে।.তিথি কথাগুলো বলে ঘর থেকে চলে গেলো। চোখের কনে জল জমে গেছে তিথির। তিথি এই তিন বছরে আবিরের উপর দুর্বল হয়ে পরেছে কিন্তু কখনও বলতে পারেনি আবিরকে কারন তিথি ভালো করেই জানে, আবির নীলাকে আর নীলা আবিরকে খুব ভালোবাসে আর তাই তাদের মধ্যে কাঁটা হতে চায়নি তিথি।.আর এদিকে আবিরের পরিবার টা বেশ ভালোই চলছে। পরিবারের সবাই ভালোই দিন কাটাচ্ছে। আর পিও এই তিন বছরে অনেকটা বড় হয়ে গেছে হাটতে শিখে গেছে, আর কথাতেও একদম পাকা বুড়ির মতো কিন্তু একটু তোতলায়। আবির কয়েকটা চকলেট নিয়ে গেলো পিও জন্য। পিও আবিরকে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো আর বলল..।
– মামা মামা আমার তকলেই?আবির বলল
– আজ যে চকলেট আনিনি মামুনি!আবির কথাটা বলার সাথে সাথেই পিওর হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে গেলো। তারপর বলল..
– তুমি তকলেট না এনে কেনো আমাকে দেকতে এসেছো? আমি তোমাল সাথে কতা বলব না? তুমি খুব পঁচা।.কথাগুলো বলে পিও আবিরকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো। আবির পিও কে বলল
– মামনি এই দেখো কি এনেছি?পিও ঘুরে দেখে অনেকগুলা চকলেট। তাই আবার দৌড় দিলো ।
আর আবিরকে কয়েকটা চুমু খেলো।
পিও চকলেট পেয়ে যেনো মহা খুশি খুশিতে নাচতে লাগলো
আর তার এই কান্ড দেখে বাড়ির সবাই, হাসতে লাগলো।পিও একাই গোটা বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখে।
পরিবারের চোখের মনি পিও
আবির পিও কে দেখতে প্রতিদিন যেতো আর তাই পরিবারের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।
কিন্তু কখনও বুঝতে দেয়নি যে সে আবির।
কিন্তু আবির সিদ্ধান্ত নিলো যে সে তার আসল পরিচয় আর গোপন রাখবে না তাই তাই পরিবারের সকলের সামনে বলল সে আবির।
.আবিরের বাবা মা আবিরের কথা শুনে কিছুটা সময়ের জন্য পুরো চুপ হয়ে থাকে কি বলবে বুঝতে পারে না। আবিরের বোন বলল…
– আপনি যে আমার ভাই তার কি প্রমান আছে?আবির বোনের কথা শুনে কিছু না বলে তার শরীরের শার্ট খুলতে লাগলো। ইমা আবার বলল
– কি ব্যাপার আপনি পরনের জামা খুলছেন কেনো?.
আবির বোনের কথার উওর না দিয়ে শার্ট টা খুলেই ফেলল। আবিরের মা,বাবা,
বোন তাকিয়ে আছে তার শরীরের দিকে। আবিরের বুকে অজশ্র কাটা কাটা দাগ,
ব্লেডের দাগ যা নীলা করেছিলো সেগুলা এখন ও রয়েছে মুছে জায়নি শরীর থেকে।
বুকের ডান দিকে I Hate You লেখাটা এখনও পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
আবিরের মুখের আকার পাল্টেছে ঠিক ই কিন্তু তার বুকের এমন
কাটা কাটা দাগ গুলো ই প্রমাণ করতে বাধ্য করে যে সে আবির।
ইমা কিছু না বলে সোজা দৌড়ে এসে আবিরকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
আবিরও কাঁদতে থাকে এমনকি আবিরের পুরো পরিবার কাঁদতে শুরু করে।.আবিরের মা বলল
– বাবা তোর এমন হলো কি করে?আবির বলল,
– মা আমার মুখে নীলা এসিড মেরেছিলো আর তারপর
একজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আমার চিকিৎসা করে।
এসিডের কারনে আমার মুখটা ঝলসে গেছিলো আমার পুরো মুখমন্ডল নস্ট হয়ে গেছিলো
তারপর তিথি নামক একজন ডক্টর আমাকে চিকিৎসা করে করে আমাকে এমন করে।আবির আবারো বলল..
– মা, বাবা আমাকে তোমরা দোয়া করো আমার কালকে বিয়ে।
– বিয়ে কার সাথে?,তারপর আবির সব খুলে বলল।
অনেকদিন পর আবির তার মায়ের হাতের রান্না খেলো। তারপর চলে আসলো।
.আজ আবিরে বিয়ে। পুরো বিয়ে বাড়ি টাই অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে।
নীলার আত্বীয়জন রা অনেক আনন্দ করছে।
তারপর নিয়মকানুন মতে বিয়েটা হয়ে গেলো নীলা এবং আবির তিথি বেশ খুশি হয়েছে।
রাত ১২ টা বাজে নীলা বউ সেজে বসে আছে বিছানায় আর নীলের জন্য অপেক্ষা করছে।
কিন্তু নীল।আবির বাড়ির ছাদে বসে ড্রিংক আর সিগারেট খাচ্ছে।
আবির কখনও সিগারেট খায়না কিন্তু আজ খাচ্ছে
আর তাকে একটা জিনিস ই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আর তা হলো প্রতিশোধ চরম প্রতিশোধ।
আর সে সময় আজ উপস্থিত।
আবির ঘরির দিকে তাকায় ১২ টা বাজে তাই হাতে একটা ব্লেড নিয়ে ঘরের দিকে হাটা দিলো।
আবিরের মনে শুধু এখন একটাই চিন্তা আর তা হলো ব্লেড দিয়ে নীলার বক্ষ্য ফালা ফালা করে দেওয়া।
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com