দুই মেরু । পর্ব - ০৩
আদির সাথে বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল নিধির…ভার্সিটি থেকে আসার সময় রাস্তায় দেখে নিধিকে আদি…এক দেখাতেই খুব পছন্দ করে ফেলে নিধিকে…কয়েকদিন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে নিধির বাবা মা নেই..বড় একটা ভাই আছে..সে জার্মানি থাকে…তাই নিধি তার চাচা চাচির সাথে থাকে…
দুই মাস পর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় আদি দেড় বাড়ি থেকে.ভালো ছেলে দেখে কেউ আর অমত করে নি…
কয়েক বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার…আদি খুব খেয়াল রাখতো নিধির…নিধির শশুর শাশুড়ি গ্রামে থাকে…অনেক বলে কয়েও তাদের শহরে আনা যায়নি…শহরের এই বন্দি জীবন তাদের পছন্দ নয়…তাই তারা গ্রামেই থেকে গেলেন…মাঝে মাঝে এসে ছেলের কাছে কিছুদিন থেকে যায়…
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল…
আসলে কোনো কিছুই ঠিক ছিল না…শুধু একটা ভালো থাকার মিথ্যা মুখোশ ছিল আর কিছু সস্তা অভিনয়…
ভাবতেই দীর্ঘশাস বেরিয়ে এলো নিধির…বাসের সিট মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো…
পাশে কারোর ঠাস করে বসার শব্দে চোখ খুলে তাকালো নিধি…
পাশের ব্যক্তিকে দেখে আবার চোখ সরিয়ে নিলো…
আদি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে…নিধির এইভাবে অবজ্ঞায় চোখ সরিয়ে নেয়া তার মোটেই পছন্দ হলো না…অন্তত পক্ষে চমকানো তো উচিত ছিল…ধ্যাৎ…
চিঠি পরে কিছুক্ষন থম ধরে বসে ছিল সে…হুস আসতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে সে…পাশাপাশি পাড়াতেই থাকায় খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় নিধিদের বাড়িতে..ঐখানে গিয়ে বুঝতে পারে নিধি যায় নি ওই বাসায়…
তখন আদির মাথায় আসে নিধির ফুপির কথা….বাস কাউন্টারে এসে জানতে পারে বাস দশ মিনিট আগে ছেড়ে চলে গেছে…
টেনশনে আদির পাগল হওয়ার অবস্থা…অনেক কষ্টে কন্টাকদারের নম্বর জোগাড় করে লোকেশন জেনে এই পর্যন্ত পৌঁছেছে সে..
~বাসায় চলো নিধি…
~কার বাসায়?(ভাবলেশহীন ভাবে)
~মানে কি?(অবাক হয়ে)
আমাদের বাসায়?
~উহু…আমাদের নয়..শুধু আপনার..ওই বাসার সাথে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করে এসেছি আমি…
প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দেয়া যায় না তাই আপাতত সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিতে পারছি না..তবে পেয়ে যাবেন খুব তাড়াতাড়ি…বেবি যেদিন পৃথিবীতে চলে আসবে ঐদিনই ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন…
এইবার একটু নড়েচড়ে বসলো আদি..চেহারায় তার স্পষ্ট অপরাধী ভাব…
সে জানে অনেক বড় ভুল করেছে সে…ভুল নয় পাপ করেছে…
কিন্তু নিধিকে হারাতে চায় না সে…
এলিনাকে বিয়ে করতে চাইলেও নিধিকে ছাড়ার কথা কখনো ভাবেনি…
ভাবতেই চেহারা মলিন হয়ে গেলো আদির..নিধির কাছে মাফ চেয়ে নিবে সে..
এলিনার সাথে আর কোনো সম্পর্কও রাখবে না…
তার পরও যদি এলিনা মানতে না চায় তাহলে তাকে ও বিয়ে করবে সে…
দুইজনকে আলাদা বাসায় রাখবে দরকার হলে….
এলিনাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে..কয়েকবের একান্তে খুব কাছাকাছিও এসেছে তারা…
এখন এতো সহজে তাকে ছাড়া যাবে না…
নিধিকে বোঝালে অবস্যই বুঝবে সে….সন্তানের প্রতি তার ও অধিকার আছে…
নিধি ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে…
এখন তার কান্না করে চোখ নাক ফোলানোর কথা…
কিন্তু অদ্ভুতভাবে তার কান্না আসছে না….
একেই হয়তো বলে অতি শোকে পাথর হয়ে যাওয়া…
~সরি….এইবার এর মতো মাফ করে দাও…এইটা তো আমার ও সন্তান…
প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো…
আমি সন্তানের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম..আমি তোমাকে ভালোবাসি…
তাই অন্যের মাদ্ধমে হলেও তোমাকে মা বানাতে চেয়েছিলাম….(মাথা নিচু করে)
ভরা বসে খিলখিল করে হেসে উঠলো নিধি….সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে….
আদি নিধির এমন আচরণে অনেকটাই অবাক হয়েছে…
যে মেয়েটা একটু অবহেলা নিতে পারতো না…কেঁদে কেটে দুনিয়া ভাসাতো…আজ এতো বড় একটা ঘটনার পর ও এইভাবে হাসতে দেখে হচকচিয়ে গেলো সে..মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো না তো!
অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে আদির দিকে তাকালো নিধি…
~পাগলরা এতো ভালো অভিনয় করে জানা ছিল না তো….
আপনি তো তাহলে সেয়ানা পাগল মনে হচ্ছে….
আসলে আপনার একজন দিয়ে মন ভরছে না…
তাই দুইজনকেই চাই আপনার…
আর বাকি রইলো বাচ্চার কথা,বাচ্চার বাবা কে সেটা তো একমাত্র আমিই বলতে পারবো…
আমার ও তো অন্য কারো সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে তাই না….
হতে পারে এইটা তার বাচ্চা…
নিধির কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আদির…রক্তিম চোখে তাকালো নিধির দিকে…
নিধির ঠোঁটে ক্রুর হাসি….আদির গা জলে যাচ্ছে এই হাসি দেখে….তাহলে কি সত্যিই নিধির অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে! সেই কি এই বাচ্চার বাবা….
নিধির বহু শক্ত করে চেপে ধরলো আদি…
নিধি মোটেই বিচলিত হলো না….
~কার সাথে নষ্টামী করে এই পাপ পেতে এনেছিস বল??এই জন্যই ওই হোটেলে গিয়েছিলি তাই না…
এখন আমার ঘরে দোষ চাপিয়ে বাঁচতে চাইছিস….(দাতে দাত চেপে বললো আদি)
~ইসসস..খুব লাগলো বুঝি?শুনেই এই অবস্থা!আর আমি তোহ আপনাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে হোটেল রুমে চরম সুখ নিতে দেখেছি…আমার তাহলে আপনার সাথে ঠিক কি করা উচিত??
(রি-চেক করা হয় নি..এতো ভালোবাসা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ….
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com