Breaking News

সে আসবেই | পর্ব -০৪



কে…? কে বাহিরে দাড়িয়ে আছে..
( কিন্তু মেয়েটি কোনো নড়চড় করছে না। একটা ছায়ামূর্তির মত দেখা যাচ্ছে মাত্র। মিলি মোমবাতি না খুজে, ধীরে ধীরে ব্যালকনির দরজার দিকে এগোচ্ছে। এরপর দরজাটা খুলতেই বাহিরের দমকা বাতাসটা যেন মিলিকে রুমের মধ্যে ফেলে দিচ্ছিলো।মিলি আবার কোন রকম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে, ফ্লাশ লাইট ধরে ব্যালকনিতে চলে আসে। এসে দেখে বাহিরে কেউ নেই।ততক্ষনাৎ মিলি হতভম্ব হয়ে যায়, এক্ষুনি সে বাইরে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ভেতর থেকে গ্লাস এর মধ্য দিয়ে একটা ছায়ামূর্তির মত দেখা গিয়েছে। অবশ্যই ছায়ামূর্তিটি একটি মেয়ের, কিন্তু এখানে তো কেউ নেই। তাহলে কি সে ভুল দেখেছে? মিলি মাথা চুলকাতে চুলকাতে পেছনের দিকে তাকালো,তাকানোর সাথে সাথেই মিলির চোখ যেনো কপালে উঠে গেছে।। মিলির হাতের ফ্ল্যাশ লাইটটা সামনে দিকে ধরা।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘলার মুখের মধ্যে।
মিলি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, মেঘলার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, মুখের চামড়া গুলো কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, বাতাসে মেঘলার চুল গুলো এমনভাবে উড়ছে, যেন মুখের মধ্যে একটা চুলও পড়তে দিচ্ছে না। মিলির হাতের ফ্লাশ লাইট এর আলো সোজা মেঘলার মুখের মধ্যে। শুধুমাত্র মেঘলার মুখমণ্ডল টা দেখতে পাচ্ছে। নিচের দিকে তাকায়নি। মিলি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল)
— মে….মে….. মেঘলা…..? তুই…? (মেঘলা মিলির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কান্না স্বরে বলল)
— মিলি, আমার সাথে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে। আমি এর বদলা নেব, আয়ান আমার সাথে প্রতারনা করেছে, তাকে তো আমি ছাড়বো না (এটা বলার পর হঠাৎ অনেক জোরে বাতাস বইতে লাগলো। বাতাসের চাপে মিলি মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে, এরপর চোখ মেলে দেখে সামনে মেঘলা নেই। মোবাইলের ফ্লাশ লাইট আশেপাশে ভালো ভাবে মেরে দেখে, নাহ, মেঘলা এখানে নেই। কিন্তু সে কিছুক্ষণ আগে মেঘলাকে দেখেছিল। এটা কি মিলির মনের ভুল? না, এমন ভুল হবে কেন। হয়তো এইটা মেঘলার আত্মা। কারণ মেঘলা বলে গেছে, আয়ান তার সাথে প্রতারনা করেছে, মেঘাল তার বদলা ও নেবে। তার মানে কি মেঘলা আবার ফিরে এসেছে? তার বদলা নেওয়ার জন্য? সত্যিই কি মেঘলার খুনি আয়ান? যাকে সে পাগলের মত ভালবাসতো?
অন্যদিকে পার্টির মধ্যে আয়ান ,রনি, আসিফ এবং রবি অনেক ইনজয় করতেছে। আয়ানের হাতের মধ্যে মদের বোতল নিয়ে অনেক মেয়েদের সঙ্গে ডান্স করছে। চারদিকে ম্যাজিক লাইট, সাথে অনেক মেয়ে, আবার এদিকে স্পিকারের সাউন্ড তো আছেই। পার্টি শেষ হওয়ার পর সবাই বাসার দিকে চলে আসবে। ক্লাব থেকে বের হয়ে আয়ান রনিকে বলল)
–গুড নাইট.. বাসায় চলে যা, কালকে দেখা হবে।
–ঠিক আছে, সাবধানে যাস। (তাদেরকে বিদায় দিয়ে আয়ান গাড়িতে বসে পড়ল। এমন সময় ফোন)
— হ্যালো মিলি, বলো।
–আয়ান, কই তুমি..?
— কেন কি হয়েছে?
–তোমার কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে।
–কেন? কি ব্যাপার নিয়ে,
–মেঘলার ব্যাপার নিয়ে। আয়ান তুমি সত্যি করে বলো, মেঘলা কি তোমার সাথে দেখা করেনি?
–দেখো মিলি, মেঘলা সম্বন্ধে আর কিছু যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে আমি বলব, তুমি আমার সাথে আর কোনদিনি কথাই বলবা না। আমাকে আর ফোন দিবেনা, রাখলাম।
( এইটা বলে আয়ান ফোনটা কেটে দিলো। মোবাইল ফোন পাশের সিটে রেখে আয়ান ড্রাইভ করতে লাগলো। বলে রাখা ভালো, আয়ান তার বাসায় আসার সময় অনেক বড় একটা ব্রিজ পার করে আসতে হয়। আর আয়ানের একটা অভ্যাস আছে, প্রতিদিন আসার সময় সেই ব্রিজের মধ্যে নেমে সে সিগারেট খায়। প্রতিদিনের মত আজকেও বরাবর সে ব্রিজ এর মধ্যে গাড়ি থামালো। এরপর সেখানে নেমে হাতের মধ্যে একটা সিগারেট নিয়ে টানতে লাগলো। আয়ানের এখন ইচ্ছে মতো হাসতে মন চাচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে আজকে একটু মন খুলে হাসতে।এতদিন মেঘলার ব্যাপারটা নিয়ে পুলিশ, বন্ধু-বান্ধব,মেঘলার ফ্যামিলিরা অনেক প্রশ্ন করেছে। আজকে সে সবকিছু থেকে মুক্তি পেয়েছে। সে জন্য মনে মনে সে আজ খুবি হ্যাপি।
আয়ান ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সিগারেটটা শেষ করল।
এরপর গাড়ির দরজা খুলবে, এমন সময় খেয়াল করল,
গাড়ির ভিতরে একটা মেয়ে বসে আছে। আয়ান কিছুক্ষণ আগে মদ খেয়েছে।
সেজন্য হয়তো চোখের ভুলভাল দেখছে ভেবে আয়ান ভালোভাবে চোখ মুছে নেয়।
তারপর আবার খেয়াল করে দেখল, নাহ,গাড়ির ভিতরে কেউ নেই।
আয়ান ও পাশে গিয়ে দরজাটা খুলে গাড়ি স্টার্ট করল। যখনই 20 থেকে 25 হাত গাড়ি চালিয়ে আসলো,
তখনই খেয়াল করল একটা মেয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান এরকম অবস্থা দেখে হঠাৎ চমকে যায়। সে ব্রেক করতে লাগলো,
কিন্তু গাড়ির ব্রেক কিছুতেই কাজ করছেনা।
নিরুপায় হয়ে সে মেয়েটির উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়।
সাথে সাথে আয়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে। আবার অটোমেটিক গাড়িও অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে গেছে।
মনে মনে ভয় পেলো আয়ান , হে আল্লাহ, আমি কি করলাম।
কেউ দেখলে তো এখন খুবই সমস্যা হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি করে আয়ান কার থেকে বের হয়ে গেল।
বের হয়ে দেখলো রাস্তার মধ্যে কেউ নেই। এইটা কি করে সম্ভব,
একটু আগে কাউকে একসিডেন্ট করেছে সে।এখন রাস্তার মধ্যে সব উধাও?
নাহ, এইটা কোনভাবে সম্ভব না। আয়ান ভাবছে, ওর সাথে কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে। এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে আয়ানের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঘমে ভরে গেল। জলদি আবার গাড়ির মধ্যে ঢুকে যখনই গাড়ি স্টার্ট করবে, ঠিক তখনই আবার মিলির ফোন।আয়ান গাড়ি স্টার্ট না করে ফোনটা রিসিভ করল, পরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল)
–কি হয়েছে, তোমাকে না বলেছি আমাকে ফোন দিয়ো না?
— আয়ান, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মেঘলার মৃত্যুর সঙ্গে তোমার, যেকোন একটা যোগাযোগ আছে।
— তুই একটা পাগল, পাগল হয়ে গেছিস তুই। এখন থেকে আমাকে আর ফোন দিবিনা
— ওই দাড়াও দাড়াও এক মিনিট। তোর ভয়েসটা কেমন যেন শুনাচ্ছে? ভয় পেয়েছিস নাকি? ( আয়ান একটু ঘাবড়ে গিয়ে তারপর গলাটা ভালোভাবে ঝেরে বলল)
না, আ… আ… আমি কেন ভয় পাবো। আমি ভয় পাওয়ার মত কিছু করেছি নাকি?
আয়ান, যদি তোমার কথা সত্যি হয়, তাহলে তো ভালো। আর যদি তোর কথা সত্যি না হয়, তাহলে দেখে নিস।
সে আসবে….মাথায় রাখো আয়ান , তার খুনের বদলা নিতে অবশ্যই সে আসবেই.
চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com