Breaking News

ভালবাসা । পর্ব-০২

আর এরপর এত দিন পর হঠাৎ আবার অপূর্ব এবং অপরাহ্নের আগমন ঘটে।
দুজনই আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে।
ওইদিকে অনন্যও এসে করে ওর ভালবাসার প্রকাশ।
আমি খুব বাজে রকমের একটা অবস্থায় পড়ে যাই।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারিনা।
অপূর্ব ক্ষমা চেয়েছে সত্যি।তবে এখন সে চায় আমার পরিবার যেন ওর বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায়।ও ওর মাকে বলতে পারবেনা আমার কথা।কারণ ওর মা চায় ধনীর মেয়ে।আর যার বাপ ভাই আছে।
তাই আমরা প্রস্তাব নিয়ে গেলে মানতেও পারে।
অপর দিকে আমরা আহামরি ধনী নই।
মধ্যবিত্ত পরিবার আমরা।
ভাই নেই।
বাবা মারা গেলে কোন গার্ডিয়ান নেই।
তাই ওর পরিবার আপত্তি করতে পারে।
আমি ওর কথা শুনে হাসলাম।
আর বললাম,আমি চাইনা আমার পরিবার কোথাও ছোট হোক।
তোমার আসলে বউ দরকার না,
দরকার বড় লোক শশুড় বাড়ী।যেখানে গরু মরে গেলেও বাছুর বড় হয়ে দুধ দিতে পারে।এমন বাসা দরকার।
আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি ওমন ছেলেকেই বিয়ে করবো,যে কিনা আমার বাপের টাকার লোভ করবেনা।
শশুড় বাড়ী থেকে করতে পারবে কিনা তা দেখবেনা।বাবা মরে গেলে গার্ডিয়ান আছে কিনা তা দেখবেনা।বরং আমার বাবার কিছু হলে আমার আম্মুকে দেখবে।
অপূর্ব আমার কথা শুনে বলে,
তাহলে কি বুঝবো তুমি আমাকে কোন দিন ভালবাসোনি?
আমি উত্তর দিলাম,
বাসতাম।অতীত।
এখন আর বাসি না।
অপরাহ্ন ক্ষমা চেয়ে বলে আমরা রিলেশন কন্টিনিউ করি।
দেশে আসলে বিয়ে করে নিবো।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
ওর সাথে কি ঝামেলা হয়েছে?
উত্তর দিলো,
ও আসলে আমাকে বুঝেনা।
ছেলে মানুষী করে।
একটু ফোন দিতে দেরি হলে কান্নাকাটি করে মরতে চায়।
মেসেজ দিতে লেইট হলে তোমার নাম বলে গালাগাল করে।
আজ এটা পাঠাতে বলে কাল ওটা পাঠাতে বলে।ভালো লাগেনা এসব প্যারা।
আর তুমি আমাকে সব সময় বলতে টাকা জমাও,অযথা নষ্ট করোনা টাকা।
ভবিষ্যৎ এ তোমারই কাজে লাগবে।
আর ও শুধু বুঝে দিন রাত কথা বলা।
আমারো তো একটা জীবন।
সারাদিন কথা বলা যায় বলো?
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
রিলেশন আছে এখনো?
ও বল্লো,
তুমি রিলেশনে ফিরলেই ব্রেকাপ করে দিবো প্রমিস।
আমি ওকে হাসতে হাসতে বললাম,
_যে আছে তাকে নিয়ে সুখী হও।
আমার দরজায় কড়া নেড়ো না।
আমি অন্য কারো আমানতের খেয়ানত করতে চাইনা।
ভালো থেকো।দোয়া থাকবে সব সময়।
১,যেই ছেলে পরিবারের কাছে নিজের ভালবাসার কথা জানাতে পারেনা।
যেই ছেলে বউ না বরং শশুড় বাড়ীর গার্ডিয়ান খোঁজে,বাপ মরলে কেউ করবেনা চিন্তা করে সেই ছেলে আর যাইহোক কাউকে সত্যিকারের ভালবাসতে পারেনা।
২,যেই ছেলে একবার প্রাক্তন,একবার বর্তমান,একবার প্রাক্তন একবার বর্তমান নিয়ে প্রেম প্রেম খেলে।দুজনকে হাতে রাখে।
সে আর যাইহোক,একজনকে নিয়ে কখনোই সুখী হতে পারবেনা।
:
একটা মানুষ যখন একবার মানুষ চিনতে ভুল করে দুই বার ভুল করে,তিন বারের বেলায় সঠিক মানুষটা লাইফে আস্লেও সে তাকে ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়।
আমার ক্ষেত্রেও ঠিক এমন টাই হয়েছে।
আমি আর অনন্যকে বিশ্বাস করতে পারিনি।
আর বিশ্বাস করতে না পারার মূল কারণই হচ্ছে,ও দেখতে খুবই সুদর্শন।
আর আমার কেন যেন মনে হয় এত সুন্দর ছেলের অনেক গুলো গার্লফ্রেন্ড থাকা অস্বাভাবিক কিছুনা।
আর যেই ছেলে ভালো চাকুরী করে শিক্ষিত।সেই ছেলে যে বেঈমানি করবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
আমি এসব ভেবে অনন্যকে প্রত্যাখ্যান করি।
কিন্তু আমি একবারো ভেবে দেখিনি,ছেলেটা যে আমাকে প্রেমের অফার করেনি বরং ডিরেক্ট বিয়ের অফার করেছে।
যাইহোক,আমি ওকে না করে দেয়ার পর ও আমাকে আরো অনেক বার রিকুয়েস্ট করেছে।
ও ভেবেছে আমি ওকে হ্যাঁ বললেই ও আমার বাসায় বলবে।
আর ও যদি বাসায় বলে,আর আমি যদি না করে দেই তাহলে তো কিছুই হবেনা।
বরং ওর পরিবার অসম্মানিত হবেন।
আর আমি যেহেতু দুইবার মানুষ চিনতে ভুল করেছি সেহেতু ৩য় বার আর কোন কিছু ভাবার ইচ্ছেই নেই আমার।
এরপর আমাদের বাসায় একটা বিয়ের আয়োজন হয়।
যেহেতু ও আমার রিলেটিভ সেহেতু বিয়েতে ও আর ওর পরিবারো আসে।
সবাই আমরা এক সাথে হলুদ দিতে যাই।
সাথে অনন্যও যায়।
কিন্তু চুল থেকে কখন যে আমার গাজরা(ফুলের মালা) টা পড়ে যায় আমি টেরও পাইনি।
হলুদের সবার মাঝে হুট করে দেখি অনন্য এসে আমার চুলে গাজরা লাগাচ্ছে।
আমার তো মাথা নষ্ট ওর কর্মকান্ড দেখে।
গাজরাটা গাড়িতে পরে গিয়েছিলো ও সেটা তুলে নিয়ে এসেছে।
আত্মীয় স্বজনরা কিছুই মনে করেনি।
ও পরে বল্লো গাড়ীতে পড়ে গিয়েছিলো এটা।
কিন্তু আমার তো মেজাজ গরম এমন কেউ করে সবার সামনে।
যাইহোক,পরে হলুদ দিয়ে সবাই বাসায় ফিরি।
রাতে যখন হলুদের প্রোগ্রাম হয় তখন সবাই নাচানাচি করে।
কেউ আবার জুটি বেঁধেও নাচে।
আমিই শুধু বসে বসে দেখছিলাম।
তো এক পর্যায়ে অনন্য ও উঠে গিয়ে নাচতে শুরু করে।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে টেনে নিয়ে যায়।
সবাই আমাকে যা যা বলে এগিয়ে দেয়।
আমি না যেতে চাইলেও ও নিয়ে যায় টেনে আমাকে।
ওই যে বললাম ও আমার রিলেটিভ।তাই কেউ কিছু মনেও করেনা।ভাবে বিয়ে সাদিতে তো সবাই নাচানাচি করেই।
আমি দাঁড়িয়ে থাকি আর ও নায়কের মত নাচতে থাকে।
আব্বু বাসায় থাকলে নির্ঘাত খবর ছিলো আমার।
আর যদি দেখতো এই ছেলে আমাকে টেনে নিয়ে গেছে নাচতে।
তাহলে কি হতো আল্লাহ্‌ ই জানেন।
পরের দিন বিয়েতে ও আমার সাথেই খেতে বসলো।
অনেকেই আমাকে কানে কানে সেদিন বলে,
ঝুলে যা।
ছেলেটা কিন্তু সেই।
আমি চুপচাপ শুধু শুনি।
কিন্তু মনে মনে বলি,এই ছেলের না জানি কত গার্লফ্রেন্ড আছে।
বিয়ে খাওয়া শেষ হলে ও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
বিশেষ করে আমার আম্মুকে এমন ভাবে বলে যেন আমার আম্মু তার শাশুড়ি।
আর উনি উনার শাশুড়ির কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
আমার আম্মুও বাবা টাবা বলেই বিদায় দেয়।
আম্মুতো আর জানেনা এই ছেলে যে তার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে বসে আছে।
বিয়ের কয়েক দিন পর আম্মু বলে,
অনন্য ছেলেটা কত ভালো তাইনা?
আর কি সুন্দর ছেলে।
কত নম্র ভদ্র।
ছেলে এমন হলে না বাবা মায়ের সম্মান বাড়বে।
কি আচরণ।
এই টুকু বয়সে নিজের পায়েও দাঁড়িয়ে গেছে।
-এই বুড়া কালে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।
আর আমি যে দুই বছর বয়সে দাঁড়িয়েছি নিজের পায়ে।তা তো চোখে পড়েনা।
-তোর সাথে কথায় পারা যাবেনা।
এর মাঝে হঠাৎ একদিন আমার ফোনে কয়েকটা মেসেজ আসে।
আমি মেসেজ গুলো দেখে অবাক হয়ে যাই।এত জঘন্য ভাষায় কেউ মেসেজ লিখে।
আমি রেগে তাকে মেসেজেই জিজ্ঞেস করি,কে আপনি?
ওপর পাশ থেকে উত্তর আসে আমি অনন্য।
এই উত্তর শুনে আমি এতটাই শকড হই যে, ছেলেদের উপর থেকে আমার বিশ্বাসই উঠে যায়।
আর আমি মনে মনে ভাবতে থাকি,
দুনিয়ার সব ছেলেই কি এমন?
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com