ভালবাসা । পর্ব -০৩
আমি নাম্বার টা ব্লক করে রাখি।
এর মাঝে আমার আর অনন্যর সাথে দেখা হয়না।
ও ওর জব নিয়ে বিজি।আমিও আমার পড়াশোনা নিয়ে।
সামনে ঈদ,
অনন্য ঈদে আমার জন্য একটা শাড়ী কিনে।
শাড়ীটা কিনে আমার এক ফ্রেন্ডকে দিয়ে আমার কাছে পাঠায়।
আর ওকে শিখিয়ে দেয় ও যেন বলে শাড়ীটা আমার ফ্রেন্ড দিয়েছে।
কারণ আমি যদি শুনি অনন্য দিয়েছে ওটা তাহলে আমি নিবোনা।
এটা ওর ভালো ভাবেই জানা।
তো যেই কথা সেই কাজ,
আমার ফ্রেন্ড ওর নিজের কথা বলেই আমাকে শাড়ীটা দেয়।
আর আমার ফ্রেন্ডের বড় বোন আবার অনন্যর ফ্রেন্ড।তাই বোনের কথায় আর অনন্যর আকুতি দেখে আমার ফ্রেন্ড আমার কাছে সত্যি টা লুকায়।
আমিও শাড়ীটা নিয়ে নেই।
শাড়ীটা ছিলো আমারই পছন্দের রঙের।
কালো রঙের।
এত্ত পছন্দ হয়েছে আমার।
যাইহোক ঈদের দিন ও আমাদের বাসায় এলো গরুর মাংস নিয়ে।
কোরবানির ঈদ।
আমার তো ওকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেলো।
আম্মু আমাকে সেমাই নুডুলস নিয়ে ওকে দিতে বললেন।
আমি তো না করে দিলাম একবারে।
কিন্তু আম্মু শুনলেন না।
পরে আম্মু রাগ করে বললেন তাই আমি গেলাম খাবার নিয়ে ওর সামনে।
ওকে দেখে আমার ওই জঘন্য মেসেজ গুলোর কথা মনে পড়ছিলো শুধু।
ও আমাকে দেখেই হাসি দিয়ে বল্লো,
ঈদ মোবারক!
আমি চোখ গরম করে বল্লাম,
অসভ্য দেখেছি কিন্তু আপনার মত অসভ্য দেখিনি।
ভদ্র হবার কি ভাব টাই না ধরে থাকেন।
অথচ আপনি যে কি তা আমার জানা হয়ে গেছে।
অনন্য অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
কি হয়েছে?
আমি বললাম,
কি হয়েছে জানেন না?
অসভ্য কোথাকার।
অনন্য এবার রেগে গিয়ে বলে,
কি হয়েছে?এসব উল্টা পাল্টা কি বলছো?
আমি ওকে আমার মোবাইল টা ওপেন করে মেসেজ গুলো দেখিয়ে বললাম,
এগুলো কি হ্যাঁ?
কি এগুলো?
দেখেন নিজের চোখ দিয়ে ভালো করে।
অনন্য মেসেজ গুলো দেখে পুরোপুরি শকড।
আর ওর নাম দেখেতো পুরোপুরি হতবাক।
-কি হলো?
কথা বন্ধ হয়ে গেছে তাইনা?
-তুমি সত্যি সত্যি ধরে নিয়েছো আমিই তোমাকে মেসেজ করেছি?
-তাহলে আবার কি?
নাম তো লিখাই আছে।
তাছাড়া আমি আগেই জানতাম,সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেরা ভালো হয়না।
-তোমার আমার প্রতি এত ক্ষোভ কেন বলোতো?
আমি সুন্দর বলে কি মানুষ না?আমি স্মার্ট বলে কি ভদ্র হতে পারবোনা?
কেন তোমার সুন্দর দের প্রতি এমন ধারণা?
নাকি ছেলেদের তুমি বিশ্বাস করোনা?
-দেখুন এত প্যাচাল আমার একদমই পছন্দ না।
নাস্তা দিয়েছি খান,খেয়ে চলে যান।
-শোনো,এই নাম্বার আমার না।
মানে?
-মানে হচ্ছে এই নাম্বার আমার না।
এই নাম্বার কার জানো?
-কার?
-এই নাম্বার আরিফ কাকার।
-কিহ?উনার?
-হ্যাঁ।
কিন্তু আমি এটাই বুঝলাম না উনি কেন তোমাকে এত বাজে কথা লিখে আমার পরিচয় দিবে।
-আজব,উনি কেন এসব লিখবে আমাকে?
উনার পরিবার কয়দিন আগেই আম্মুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
আর উনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় বলে না করে দিয়েছেন আম্মু।
-ওহ এক মিনিট এক মিনিট!
আর আমি তাকে বলেছি আমি তোমায় ভালবাসি।
আর তাই তিনি চাচ্ছিলেন তোমার চোখে আমাকে খারাপ বানাতে।
আচ্ছা তুমি সিউর হবা উনি যে আরিফ কাকা?
দাঁড়াও দেখাই,
অনন্য সাথে সাথে ওই নাম্বারে ফোন দেয়।
আর ফোন দিয়েই বলে,
-হ্যালো আরিফ কাকা।
-হ্যাঁ অনন্য, কেমন আছিস?
-এইতো ভালো।
কি খবর আপনার?
-ভালো আছি।
কই তুই?আসিস বাসায়।
-আমিতো কুহুদের বাসায় আসছি মাংস দিতে।
এইতো বসে আছি কুহুর সাথে।
এই কথা শুনেই আরিফ কাকা লাইনটা কেটে দেয়।
হয়তো সে বুঝে গেছেন তার পর্দা ফাস হয়ে গেছে।
-বিশ্বাস হলো?
অনন্য এত জঘন্য নয়।
আর তোমার ফোন নাম্বার টা পর্যন্ত আমার কাছে নেই।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
সরি।
অনন্য সেদিন কিছু মুখে না দিয়েই চলে গেলো।
আম্মু পাশের বাসার কাকীকে বিদায় দিয়ে এসে অনন্যকে খেতে বল্লেও ও বলে ওর পেট ভরা।
চলে যায় ও।
আরিফ হচ্ছে আমার কাকীর রিলেটিভ।
কাকীর মোবাইল থেকেই সে ফোন নাম্বার টা নিয়েছিলো আমার।পরে সেটা জানতে পারি।
একটু পরে খেয়াল করি একটা প্যাকেট আমার টেবিলের উপর।
প্যাকেট টা খুলে দেখি,অনেক গুলো ফুলের পাপড়ি আর
এক বান্ডিল ২ টাকার নোট।
আমি দুই টাকার নোট দেখে যতটা না অবাক হই,তার চেয়ে বেশি অবাক হই যখন সেটা খুলে দেখি প্রতিটা টাকায় কিছু না কিছু লিখা।
আর সব ভালবাসার কথা,ছন্দ মিলিয়ে।
আর ওই টা ছিলো আমার সালামী।
এমন সালামী আমি আমার জন্মে দেখিনি।
যদিও খুবই স্পেশাল ছিলো এটা।
আচ্ছা বলুন তো,
বান্ডিল টা দুই টাকার নোটেরই ছিলো কেন?
আর প্রতিটা টাকায় কিছু না কিছু লিখা ছিলো কেন?
তবে কি ধরে নিবো ছেলেটা কৃপণ?
আর ও কি আবারো আসবে ফিরে?
পরে কি হলো জানতে সাথেই থাকুন।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com