অদ্ভুত বাসর রাত। শেষ পর্ব
নীলা আর একমুহূর্ত দেড়ি না করে হসপিটালের দিকে রওনা দিলো।
ফোনে জানতে পারে সে যে হসপিটালে চিকিৎসা করেছে, আবির সেখানেই ভর্তি রয়েছে।
এক দিক দিয়ে তার ভালোই হয়েছে।একটা টাক্সি নিয়ে হাসপিতালের দিকে রওনা দিলো।
সে অদ্ভুত ভাবে ভাবতে লাগলো শেষ মুহুর্তে আবির কিছু একটা বলতে,চাইছিলো।
নীলার এতক্ষনে বিবেকটা কাজ করতে শুরু করেছে।
আবিরের জন্য তার খুব কান্না পাচ্ছে। ওদিকে আবিরকে তাড়াতাড়ি করে বেডে শুয়ে দেওয়া হলো।
অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেওয়া হলো।পুরো হসপিটালের ভিতর ঝড় বইতে লাগলো।
সবার মুখে একটাই কথা,আবিরের উপর আক্রমন??
কে এই সাহসী যে আবির কে খুন করার সাহস দেখাতে পারে??
এদিকে নীলা হাসপাতালে পৌঁছে গেলো।টাক্সিওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে হাসপাতালের ভিতর চলে গেলো।
ভিতরে গিয়ে বেশ অবাক হয়ে তাকাতে লাগলো।
সবাই চুপ করে বসে রয়েছে কিন্তু সে সেদিকে না গিয়ে সোজা ডাক্তার নিশানের রুমে চলে গেলো।
রুমে ঢুকে দেখে ডাক্তার সাহেব বেশ ভাবনা নিয়ে কেবিনে বসে রয়েছে।
নীলার প্রবেশে বেশ অবাক হলেন তিনি।
চেয়ার থেকে উঠে ধীরে ধীরে নীলার পাশে গিয়ে চারপাশ টা
দেখতে লাগলো।নীলা ডাক্তার সাহেব এর এমন আচরণে বেশ ঘাবড়ে গেলেন।
ডাক্তার নীশান যেটা সন্ধেহ করেছিলো সেটাই ঠিক।
সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলোএসব প্লান কার ছিলো।
কিছুক্ষন পর টেবিলের উপর বসে বললো,,,,,
বলুন মিস নীলা হঠাৎ এভাবে সবার পরে আমার কাছে আসার কারন কি??
না মানে তেমন কিছুনা।(ভয়ে ভয়ে)
না না আপনাকে দেখে সেটা বোঝাই যাচ্ছে না।
এই রকম একটা মুহূর্তে আপনার ভিতর এত শান্ত ভাব কি করে এলো??
—- না মানে,,,,,,,,
আপনাকে হাসপাতালে এনে কি করা হতো এটাই জানতে চান তাইতো।
নিশানের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে যাই নীলা।
ভাবতে লাগলো এনি কিভাবে জানলো এই ব্যাপারটা??
—- আ আ আ আপনি জানলেন কি করে??
—- আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি তবে এই প্রশ্নটা অনেক আগে করা উচিত ছিলো।
তাহলে হইতো এভাবে আমার বন্ধুকে এখানে থাকতেই হতো না।
নীলা বুঝতে পেরেছে ডাক্তার নিশান তাকে দেখেই বুঝে নিয়েছে ব্যাপারটা কি ছিলো।
কিন্তু সে বুঝলো কিভাবে??নিশ্চয় কিছু একটা গন্ডগোল আছে।
—- হ্যাঁ বলুন না আমাকে কেন বারবার এখানে আনা হতো?প্রতিবার কি করা হতো আমার সাথে??
—- শুনতে চান??একটা কথা বলবো??
—- হ্যা বলুন?
—- আপনাকে যদি বলি আপনি প্রেগন্যান্ট।তাহলে কি বিশ্বাস করবেন??
—- সেটা কিভাবে সম্ভব??এটা কখনোই হতে পারে না।
—- হুম।বুঝতে পারলাম আপনি আবির কে একদম পছন্দ করেন না।
—- কে বলেছে?আমি আবির কে অনেক ভালোবাসি।
—- আজকে আপাততো সত্যিটা বলুন।কি এমন করেছিলো যে আপনি,আবির কে দেখতে পারেন না।
আপনাদের মেয়েদের সমস্যা কি জানেন?
যে মানুষ টা আপনাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে তাকে পাওা দেন না।
যে আপনার ভালো চায় তাকে খারাপ ভাবেন আর যে খারাপ চায় তাকে ভালো ভাবেন।
—- সে আমার থেকে আমার ভালোবাসা সহ সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।আর কিছু না বলে চুপ হয়ে থাকে
—- কে কেড়ে নিয়েছে?যার রক্ত আপনার শরীলে বইছে সে??
—- আবিরের রক্ত মানে??পুরো ঘটনাটা খুলে বলুন।নীলার মাথাটা ঘুরে গিয়েছে।কি হচ্ছে এসব তার সাথে।নিশান সাহেব টেবিল থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে,,,,,
—- আপনি হইতো জানেন কি না সেটা আমার জানা নেই কিন্তু আপনি যেই আবির কে দেখছেন সেই আবির আর এই আবিরের ভিতর অনেক টা পার্থক্য রয়েছে।
যে তার সবকিছুকে ফেলে তার মাকে সেবা করতো।
যদিও পুরো শহরে তার গুন্ডা গিরি চলতেই থাকতো।
তবুও সে তার মাকে খুব ভালোবাসতো।
এর মধ্য আপনাকে আবিরের মা খুব পছন্দ করতো সবকিছু ঠিকই ছিলো।
আপনাকে দেখার জন্য সবাই বেরিয়েও পড়েছিলো
কিন্তু রাস্তাই হঠাৎ দুর্ঘটনাই মৃত্যুর কবলে চলে,
যায় তার মা।সেখানে আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম।
জানেন আবির কে তার মা শেষ মুহুর্তে কি বলেছিলো??
বাজান মেয়েটা বেশ লক্ষি।আমিতো আমার বউমাকে দেখতে পেলাম না।
তাই আমার ইচ্ছাটা পূরন করিছ।
সেখান থেকেই শুরু হয় আবিরের নতুন পথচলা।
প্রথম যখন আপনি এখানে পা রেখেছিলেন তখন আপনি কি জানেন আপনি তখন প্রেগন্যান্ট ছিলেন।
তবুও আবির সেটা মেনে নেই।
ধীরে ধীরে আপনাদের বিবাহ টাও হয়ে যাই।কিন্তু আপনার অবৈধ
সম্পর্কের কারনে ভাইরাস আক্রমনে আপনার কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।তখন কি হয় জানেন??
কি হয়??(জল ভরা চোখে)
নিজের জীবন বিপন্ন করে নিজের কিডনি টা আপনাকে দিয়ে দেই।
এমন কি আপনার শরীলে যে রক্ত বইছে সেটাও আমার বন্ধুর শরীর থেকেই নেওয়া।
আর আপনি কি না সেই মানুষকে নিজের হাতে???
একবার গিয়ে দেখে আসুন কি অবস্থায় রয়েছে সে(চিৎকার দিয়ে)
কথাগুলো শুনেই নীলা কাপতে শুরু করে।
ডাক্তার নিশান সাহেব কোন সাড়া না পেয়ে পিছনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলেন।
তাড়াতাড়ি করে টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে নীলার কাছে চলে গেলো।সে দেখে,
নীলা বেহুশ হয়েও ফ্লোরে পরে কাপছে।
তাড়াতাড়ি করে পানি মুখে ছিটাতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষন পর নীলার হুশ ফিরে এলো।
হুশ ফিরতেই দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো।
অপারেশন রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
তাকিয়ে দেখে আবির কোনরকমে বেঁচে গিয়েছে।
মুখে অক্সিজেন লাগানো রয়েছে।চোখ দুটো বন্ধ রয়েছে।
আজকে আবিরকে তার কাছে একদম অদ্ভুত লাগছে।
শুয়ে রয়েছে তবুও মুখে হাসির ছাপ এখনো রয়েই গিয়েছে।
নীলার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো।
আজ সে বুঝতে পারছে আবির তাকে কতোটা ভালোবাসে।
নীলার মন এখন অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।মুখে কোনো কথা নেই।
চুপিচুপি গিয়ে তার মায়ের পাশে বসে পড়লো।নীলা কাদতে পারছিলো না।মা কে জড়িয়ে ধরেতেই।
একদম ধরবি না আমাকে। তোকে আমার মেয়ে বলতেও ঘৃনা লাগে। তোর মতো মেয়ে জন্ম দিয়ে আমি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছি। তুই এত খারাপ। যে কিনা নিজের স্বামীকে এত নির্মমভাবে খুন করে।
মা আমাকে মাফ করে দেও। আমি চাই আবির বেচেঁ ফিরুক।
হঠাৎ রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির বেডে নড়েচড়ে উঠছে।
কিন্তু সে আর আগের মতো বসে থাকতে পারলো না।
এক চিৎকার দিয়ে রুমের ভিতর ঢুকতে লাগলো।কিন্তু নার্স এসে বাধা দিলো।
নীলার মন একদম মানতে চাইছে না। চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো।
ধীরে ধীরে আবার সে বেহুশ হয়ে পড়লো।
এদিকে কয়েকজন ডাক্তার অপারেশন রুমে ঢুকে পড়লো।সাথে সাথে রুম বন্ধ হয়ে গেলো।
একদিকে ভুল বুঝতে পেরে নীলা বেহুশ হয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে আবির মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে বেঁচে রয়েছে।
এভাবে যেতে যেতে প্রাই ৫ মাস কেটে গেলো ।
নীলা এখন আগের মতো নেই। নিজের ভেতর অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
হাদিস ও আল্লাহর হুকুম অনুসারে জীবন পরিচালনা করে।
কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে উইল চেয়ার থেকে কেও একজন ধপাস করে পড়ে যেতেই
বোবার মতো চিৎকার করতে থাকে।
হঠাৎ কেও একজন দৌড়ে এসে টেনে তুললো আবির ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার কারনে
আবিরের পা ভেঙে যায়,
সাথে হারিয়ে ফেলে নিজের কথা বলার শক্তি।
নীলা খেয়াল করলো পড়ে যাবার কারনে অনেকটা কেটে গিয়েছে তার।
নিজের আচল থেকে কাপড় ছিড়ে তাড়াতাড়ি করে বেধে দিলো আবিরকে।
চেয়ারে বসিয়ে আবিরকে নিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো।
আবির কথা বলতে না পারলেও সবকিছু বুঝতে পারে।
আর আজ সে খুব খুশি কারন বোবা হলেও সে তার মায়ের কথাটা পুরন করেছে।
নীলা নিজেকে একদম ঠিক করে নিয়েছে।
আজ সে আবিরকে একদম হারাতে চাইনা।
বুঝতে পেরেছে আবিরকে তার কতোটা প্রয়োজন।
চেয়ার টেনে কাছে এসে আবিরের বুকে মাথা রাখলো।
এখন তার আবিরের বুকে মাথা না রাখলে ঘুমই আসতে চাইনা।
আবিরের হাতটি ধরে নিজের হাত মিলিয়ে বুকে মাথা রেখে পরম আনন্দে ঘুমিয়ে পড়লো নীলা।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com