Breaking News

কথাদিলাম | পর্ব - ৫

তিথি আমি প্রেগনেন্ট।আর আমার বাচ্চার বাবা তোমার হবু স্বামী।” দিশার কাঁপা স্বরের কথাগুলো বজ্রপাতের ধ্বনির মতো তিথির কানে প্রবেশ করে।কী শুনল ও?কিছু ভুল শোনেনি তো?মাথাটা ঘুরে ওঠে তিথির।সামলাতে না পেরে চেয়ারে বসে পরে।
সেদিন রাতে একটু বেশিই নেশা হয়ে গিয়েছিল আরিয়ানের।দিশার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
হঠাৎ এতরাতে নিজের রুমে আরিয়ানকে দেখে হকচকিয়ে যায় দিশা।
ধীর পায়ে দিশার দিকে এগোতে থাকে আরিয়ান।
“আরিয়ান,এতরাতে তুমি এখানে?”
দিশার কথার উত্তর না দিয়ে ওর দিকে এগোতে থাকে আরিয়ান।
দিশার ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।”আজকে তোমার থেকে আমি কিছু চাই।
” নেশার্ত কণ্ঠে বলে আরিয়ান।”ক..কী..কী চাও বলো।
” আতঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে আরিয়ানের থেকে দূরে সরতে থাকে দিশা।
“আজকের রাতটা তোমাকে চাই আমি।” আরিয়ানের কথায় আত্মা কেঁপে ওঠে দিশার।
“মা..মা..মানে?” দিশার চোখ-মুখে আতঙ্ক বেরে চলেছে।
“মানে আজকের রাতে সব হিসাব মিটিয়ে নেব আমি।তোমার ভালোবাসায় আমার ভাগটা বুঝে নেব।
” “আরিয়ান,তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?কী বলছ এসব?
” দিশার কোনো কথা না শুনেই ওকে কোলে নিয়ে বিছানার উপর ছুরে ফেলে।নিজের শার্টটা খুলে ফেলে দেয় বিছানার উপর।তারপর ঝাঁপিয়ে পর দিশার উপর।
“আরিয়ান!আরিয়ান প্লিজ এরকম কোরো না।আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।আরিয়ান!
” দিশার আর্তনাদ যেন আরিয়ানের কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।
ও ব্যস্ত দিশাকে উন্মুক্ত করতে।হাজার চেষ্টা করেও আরিয়ানকে থামাতে পারছে না দিশা।বাইরে ঝর উঠেছে।তবে সেই ঝরের থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে আরিয়ানের ভেতরে ওঠা দানব শক্তি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙে দিশার।ঝড় ওঠার কারণে লোডশেডিং হয়েছে।দিশাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আরিয়ান।ওর মধ্যে আজ অসুরের শক্তি ভর করেছে।দিশা নিজের ওপর থেকে সরাতে পারছে না আরিয়ানকে।নিজের শরীরে এতটুকু বল নেই যে উঠে দাঁড়াতে পারবে।তবুও অতিকষ্টে আরিয়ানের হাতটা নিজের ওপর থেকে সরায় দিশা।
অন্ধকারে হাতরে আরিয়ানের মাথার কাছে দলা পাকানো শাড়িটা পায়।শাড়িটা নিয়ে উঠে বসে।এরপর আরিয়ানের পিঠের কাছে পরে থাকা ব্লাউজ আর ছায়াটা নিয়ে গায়ে কোনোমতে শাড়িটা পেঁচিয়ে খাট থেকে নামে দিশা।দাঁড়ানোর মতো শক্তি পাচ্ছে না।নিস্তেজ পায়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোয় দিশা।কিন্তু বারান্দার কাছে যেতেই ধপ করে পরে যায়।দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে গলা ছেড়ে কাঁদা আরম্ভ করে।কাঁদার মতো শক্তিও পাচ্ছে না।দিশার আর্তনাদগুলো বাতাসের সাথে মিলে যেতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতেই জ্ঞান হারায় দিশা।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় আরিয়ান।
মাথাটা তীব্র যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে।চারপাশটা ঝাপসা লাগছে।
ও কোথায় আছে,কী করেছে কিছুই খেয়াল নেই।
আর এই ঘরটার প্রতিটা কোণা ওর খুব ভালোমতো চেনা।
তাই বুঝতেই পারছে না যে অন্য একটা মেয়ের রুমে।
ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে দেয় আরিয়ান।
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।কোমরে টাওয়েলটা কোমরে জড়িয়ে বেরিয়ে আসে।
কাল রাতের ঘটনা কিছুই মনে নেই আরিয়ানের।
বিছানার উপর থেকে শার্টটা তুলে গায়ে জড়াতেই ফোন বেজে ওঠে।
এক হাতে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে আরেক হাত দিয়ে শার্টের বাটন লাগাতে শুরু করে।
ফোনটা আসলে তিথির ফোন ছিল।
-“আরিয়ান,তুমি কোথায়?”
-“আমি আসছি তুমি ওয়েট করো।”
-“তোমার কণ্ঠ এরকম শোনা যাচ্ছে কেন?তুমি আবার ড্রিংক করেছ কালকে তাই না?”
-“বেবি,এটা আমার অভ্যাস।আমি আসছি তুমি অপেক্ষা করো।”
-“তাড়াতাড়ি।”
-“ওকে।লাভ ইউ।”
-“বাই।” ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।পেছনে ফেলে যায় এক ভয়ঙ্কর রাত যার বিন্দুমাত্রও হয়তো ওর স্মৃতিতে নেই।জ্ঞান ফিরলে বারান্দার স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে নিজেকে আবিষ্কার করে দিশা।সাথে সাথে মনে পরে যায় গত রাতের ওর সাথে ঘটে যাওয়া নিকৃষ্টতার কথা।কিন্তু চোখের পানিও বোধহয় শুকিয়ে গেছে।উঠে কোনোমতে খাটে এসে বসে দিশা।আরিয়ান চলে গেছে।কিন্তু আরিয়ানকে দরকার ওর।আরিয়ানকে ওর প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।কেন করলো ও এরকম?
এর দুইমাস পর দিশা জানতে পারে যে ওর গর্ভে আরিয়ানের সন্তান।তাই যাতে ওর মতো তিথির জীবনটাও নষ্ট না হয়ে যায় তাই তিথির কাছে এসেছে আজ দিশা।
সবটা শুনে তিথির চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসে।এতটা নিচে নেমে গেছে আরিয়ান?
ছি!আজ আরিয়ানের উপর প্রচণ্ড ঘৃণা হচ্ছে তিথির।
এর আগেও অনেক মেয়ের সাথেই আরিয়ানকে দেখেছে তিথি।
কিন্তু এতটা ঘৃণা ওর প্রতি কখনো আসেনি।
তিথি জানত যে তিথির আগে আরহান একজনকেই মন থেকে ভালোবেসেছিল।আর সে হচ্ছে দিশা।
কিন্তু আরিয়ানের স্বভাবের কারণে ওর সাথে সবকিছু শেষ করে দিয়েছিল দিশা।
তার প্রতিশোধ নিতে আরিয়ান এতটা নিচে নেমে গেল?
-“এবার বলো তিথি।তুমি কি এখনো আরিয়ানের মতো একটা অমানুষকে বিয়ে করবে?”
-“আরিয়ান জানে এই ব্যাপারে?”
-“ওর হয়তো মনে নেই।আমি মনে করাতেও চাই না আর।ওকে কিছু বলার দরকার নেই।আমি আমার বাচ্চাকে নিজের মতো করে মানুষ করবো।ওরকম পাষাণ বাবা থাকার থেকে আমার বাচ্চা বাবা ছাড়াই বড় হবে।”
-“আয়ান জানে?”
-“না।আমাদের বাড়ির কেউই জানে না।আর প্লিজ কাউকে কিছু বলো না।আমি ওদেরকে কোনোরকম ঝামেলায় ফেলতে চাই না।”
-“কিন্তু…” তিথির কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে।হোয়াটস্অ্যাপ এ কেউ একজন আননোন নাম্বার থেকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছে।ভিডিওটা ওপেন করতেই ধাক্কা খায় তিথি।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com