কথা দিলাম | পর্ব -১০
তিথি কে কোলে তুলে নেয় আয়ান।বিছানায় শুয়িয়ে ওর কপালে ঠোঁট বোলায়।
এখন থেকে তোমার বিছানা থেকে নামা নিষেধ।”
মানে?”
মানে কোনো রকম স্ট্রেস নেওয়া নিষেধ।যা যা লাগবে আমাকে বলবে।আমি এনে দেব।কিন্তু তুমি বিছানা থেকে নামবে না।”
তাহলে তো হাত পায়ে জং ধরে যাবে।মোটা হয়ে যাব তো।”
বাবু আসার পর জিম-ডায়েট করে শুকিয়ে যাবে।এমনিতেও তোমার যা খাওয়া-দাওয়ার ছিরি!”
একদম আমাকে খাওয়ার খোঁটা দেবে না বলে দিলাম।ভালো হবে না কিন্তু।”
আচ্ছা।বেশ।এবার রেস্ট নাও।আমি খবরটা সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আসি।”
আমিও যাবো।”
না।”
প্লিজ।নিয়ে চলো না।” তিথির জোড়াজুড়িতে ওকে নিয়ে নিচে নামে আয়ান।
খবরটা পেয়ে চৌধুরী বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে এই খবর পেয়ে তিয়ার মাথায় আবার আগুন জ্বলে উঠল।সব শেষ।
এবার আয়ান বা তিথি কাউকেই ছাড়বে না ও।
দেখতে দেখতেই তিথি আর আয়ানের বিয়ের আট মাস কেটে গেল।
আর তিথির প্রেগনেন্সির তিনমাস।আয়ান তিথির প্রচুর খেয়াল রাখছে।
প্রতিটা মুহূর্ত তিথির দিকে খেয়াল রাখছে।ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা,
কিছু লাগবে কিনা প্রতিটা মুহূর্ত অস্থির।তবে ওদের কপালে বোধহয় সুখ জিনিসটা লেখা নেই।
আরিয়ান নিউইয়র্ক থেকে ফিরেই সোজা চলে গেল চৌধুরী বাড়িতে।”তিথি!কোথায় তুমি?তিথি!!
আরিয়ানের চিৎকারে ভেতরটা ধুকধুক করে ওঠে তিথি।আরিয়ান ফিরে এসেছে?
এবার না জানি কী করবে ও।আয়ানের সাথে তিথি নিচে নামে।
আরিয়ান রাগে ফুঁসছে।তিথিকে দেখেই ওর দিকে তেরে যায় আরিয়ান।
তোমার সাহস কী করে হলো আয়ানকে বিয়ে করার?
চিৎকার করে ওঠে আরিয়ান।তিথি কেঁপে ওঠে আরিয়ানের চিৎকারে।
খবরদার!তিথি আমার বিবাহিত স্ত্রী।
ওর সাথে কোনোরকম অভদ্রতা আমি মেনে নেব না।
তুই আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করেছিস।
তার শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। তিথিকে কিছু বলার সাহস দেখাস না।
আরিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে আয়ান।
আমি তোর সাথে কথা বলছি না।এবং বলতে চাইও না।
আমি তিথির সাথে কথা বলছি।আমার আর তিথির মধ্যে ঢুকিস না।
আয়ানের হাতটা ছিটকে সরিয়ে দেয় আরিয়ান।
ঢুকে তো আমি গেছি।তিথি আমার স্ত্রী।
তাই ওকে কিছু বলতে গেলে আমার মুখোমুখী তো হতেই হবে।
তুই….আরিয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই কোনো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পায় ও।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দিশা দাঁড়িয়ে আছে।কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে।
আরিয়ানের ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে মেয়েটাকে দেখে।মায়া জন্মাচ্ছে ওর প্রতি।”আরিয়ান,দেখ তোমার পাপের ফল।
নিষ্পাপ বাচ্চাটা তোমার জন্য আজ….” ঘৃণায় আর কিছু বলতে পারে না তিথি।
আিয়ান কিছুক্ষণ কী যেন ভাবে।
তিথি,তোমার সাথে একটু কথা আছে।আলাদা।একটু আস।
আরিয়ানের কথা শুনে তিথি আর আয়ান একে অপরের দিকে তাকায়।
আয়ান বাধা দিতে চায়।কিন্তু তিথি আরিয়ানকে নিয়ে রুমে চলে যায়।
বলো।কী বলবে?”
তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে।”
হোয়াট?পাগল হয়ে গেলে নাকি?আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
জানি।কিন্তু শরিয়ত মোতাবেক নয়।
আর বিয়েতে সাক্ষী লাগে।তোমাদের বিয়েতে ছিল সাক্ষী?”
আরিয়ানের কথা শুনে চুপ করে যায় তিথি।ঠিকই তো।
আয়ান এত তাড়াতাড়ি সবকিছু করেছে যে সাক্ষীর কথা মাথাতেই ছিল না।
কী হলো?দেখ তিথি,একটা ডিল করি তোমার সাথে।
তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
আর আমি দিশার বাচ্চাকে প্রাপ্য সম্মান দেব দিশাকেও সমাজে লাঞ্ছিত হতে হবে না।
নাহলে আমি কিছু করবো না।”
আরিয়ানের কথায় দিশা দ্বিধায় পরে গেল।
দিশার সম্মান ফেরানোটাও যে দরকার।আর আরিয়ানই সেটা পারবে।
কিন্তু আয়ান?ওর বাচ্চা?কী হবে ওদের?
বেশ।তবে তার আগে একটা কথা তোমার জানা দরকার।”
কী কথা?”
আমি প্রেগনেন্ট।আমার গর্ভে আয়ানের বাচ্চা আছে।মেনে নেবে তুমি?” আরিয়ানের মাথায় বাজ পরে এই কথা শুনে।কিছুক্ষণ ভেবে তিথির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আরিয়ান।
কংগ্রেটস।আমি দ্বিতীয় বার বাবা হতে যাচ্ছি।আমি প্রস্তুত।তুমি?” আরিয়ানের কথা শুনে প্রচণ্ড অবাক তিথি।এতটা নিষ্ঠুর আরিয়ান।কীভাবে হতে পারে?কাঁদার উপায়ও নেই তিথির।আরিয়ান তিথির হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে।সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
তিথি,সবাইকে কিছু বলবে।বলো বেবি।”
তিথি আরিয়ানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।
তিথি,কী বলবে তুমি?”
আয়ানের গলা শুনে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তিথির।মানুষটাকে পেয়েও হারালো ও।
আমি..আমি আরিয়ানকে বিয়ে করবো।”
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com