দুই মেরু । পর্ব - ০৪
রাত এখন অনেক গভীর…বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে পড়েছে…কেউ কেউ ফোনে বিজি..
নিধি এখন শান্ত হয়ে বসে আছে…কুমিল্লা আসতেই আদি নেমে গেছে.
যাওয়ার আগে নিধিকে অনেক শাসিয়েও গেছে…যত কিছুই হোক,নিধিকে তার কাছেই ফিরতে হবে এইটা যেন অঘোষিত ভবিতব্য…
নিধি আগের মতোই চুপ করে ছিল.এই জঘন্য লোকের সাথে অযথা তর্কে যাওয়া মানে নিজের সম্মানকে জুতাপিটা করা…
আদি এখনো রাগে কাঁপছে..কত বড় সাহস এই মেয়ের..আমার মুখের উপর এতো কথা বলে দিলো!এতো সাহস পেলো কোথায়?(রাগে কাঁপতে কাঁপতে)
তোমাকে আমার কাছেই ফিরতে হবে নিধিমোনি…আমিও দেখবো তোমার ওই ফুপি তোমাকে কতদিন বসিয়ে খাওয়ায়…(বাঁকা হেসে)
ফোনের রিংটোনে ঘোর ভাঙলো আদির…এতক্ষন এলিনার কথা মনেই ছিল না….
মেজাজটা আবার বিগড়ে গেলো তার…এই মেয়েটা যত নষ্টের গোড়া..আজকে যদি ওর কথায় হোটেলে না যেত তাহলে নিধি কিছু জানতে পারতো না..সব কিছু সহজেই সামলে নেয়া যেত…
এখন নিধি তার হাতের বাইরে চলে গেছে…তার এতো তেজ পাচঁ বছরে আজকেই আদির সামনে এলো..এর আগে নিধি কখনো তার অবাধ্য হয় নি,এমনকি কখনো তার চোখের দিকে তাকিয়েও কথা বলে নি…কিন্তু আজকের একেকটা কথা আদির মস্তিষ্কে বার বার আঘাত করছে…তার যেন বিশ্বসাসই হতে চাইছে না নিধি তাকে এইসব বলতে পারে…
এর মধ্যে কয়েক বার রিং হয়ে কেটে গেছে…আদি তবুও ফোন রিসিভ করলোনা…
এখন খুব টেনশন হচ্ছে এলিনার…তখন সে নিধিকে এইসব কথা বলেছে এইটা যদি আদি জানতে পারে তাহলে তাকে পুঁতে ফেলবে….নিধি বলে দেয় নি তো??
টেনশনে নিজের চুল ছিড়তে মন চাইছে…কেন এইসব বলতে গেলো…এখন কিছু হলে আদি তাকে ছাড়বে না…উফফফ..
সকাল ৬ টায় চট্টগ্রাম পৌঁছায় নিধি….বাস থেকে নেমে সিএনজি করে রওনা হয় নাছিরাবাদ এক নম্বর গেট…
২৮ নম্বর বাসার সামনে এসে সিএনজি থেমে যায়..গাড়ি থেকে নেমে ফুপুর দোতালা ডুপ্লেক্স বাড়ির দিকে তাকাল নিধি…আজ তিন বছর পর সে ফুপুর বাড়িতে আসলো…আদি কোথাও যাওয়া খুব একটা পছন্দ করতো না…তাই নিধি তার আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি খুব একটা যেত না…তার নিজের ও আদিকে একা রেখে আসতে ভালো লাগতো না….
সশব্দে দীর্ঘশাস বেরিয়ে এলো নিধির ভিতর থেকে …
কোনো কিছু না ভেবে ভিতরে প্রবেশ করলো নিধি….দারোয়ান দেখেই এগিয়ে এলো লাগেজ নেয়ার জন্য….হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো..
~ভালো আছো নিধি মা?
~জি আংকেল….(মলিন হেসে )
~অনেকদিন পরে এলে…আদি বাবা কোথায়?তোমার সাথে আসে নি?
~না আংকেল….সে এখন অনেক ব্যস্ত…তার এইসবের সময় কই….
অনেকটা উদাসীন ভাবেই কথা গুলো বললো নিধি…
দারোয়ান আংকেল বুঝতে পারলো নিধির হয়তো মন খারাপ…..জামাই বাবাজির না আসার জন্যই হয়তো রাগ করে এইসব বলছে…ভেবেই মুচকি হাসলো সে..
কথা বলতে বলতেই দরজার সামনে চলে এসেছে তারা….
কলিং বেল বাজাতেই নিধির ফুপি দরজা খুলে দিলো..যেন তাদের অপেক্ষায় দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল সে…
তাদেরকে বিদায় জানিয়ে দারোয়ান গেট এ চলে গেলো….
ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো নিধি…ফুপুর চোখেও জলেরা ভিড় করেছে…ফোনে সবটা জানিয়েছে নিধি….
দুইজনের কান্নার শব্দে ঘুম থেকে উঠে এসেছে সায়ান….নিধিকে দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে…কতদিন পরে নিধিকে দেখলো সে….তার চোখেও পানির অস্তিত্ব অনুভব করলো….
কিরে পেত্নী…সকাল সকাল তোর এমন ভয়ঙ্কর কান্নায় যদি আমার হার্ট এটাক হতো তাহলে কি হতো??দেশ একটা তাগড়া যুবক হারাতো….
নিধি ঠোঁট ফুলিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো সামনের তাগড়া যুবকের দিকে…সামনের ছেলেটা অসহায় চেহেরা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে….
ফিক করে হেসে দিলো নিধি….জড়িয়ে ধরলো তাকে…
~কেমন আছো আয়ান ভাইয়া….
~উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছিরে নিধি…চারিদিকে অনেক উত্তাপ….(আরচোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে)
সায়ান কটমট চোখে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে…নিধি তার দিকে তাকাতেই হনহন করে উপরে চলে গেলো….
যা বাবা….এর কি হলো ??
নিধির প্রশ্নে অসহায় ঘোড়ার মতো মায়ের দিকে তাকালো আয়ান….
কিছু হয় নি…তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ….
নিধি কিছু না বলে রুমে চলে গেলো….একটু রেস্ট দরকার…
সায়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে….
কিছুক্ষন আগেই মায়ের কাছ থেকে সব জানতে পারলো সে…রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার…
তাহমিনা বেগম তার ছেলে কে ভালো করেই চিনেন..সে জানে সায়ান সব সামলে নিবে….আপাতত সে নিধিকে জার্মান পাঠাতে চাইছে..তা না হলে দেখা যাবে কয়েকদিন পর এসে আদি ঝামেলা করবে….মেয়েটা আরো ডিপ্রেশনে চলে যাবে…..আগে বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসুক তারপর আদিকে তার যোগ্য জবাব দিবে…তার জন্য নিধিকে ও নিজেকে তৈরী করতে হবে….
(কে কে আদিকে নায়ক হিসেবে চান হাত তুলুন)
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com