সে আসবেই | পর্ব-০৭
আমার সাথে সত্যি খুব অদ্ভুত ধরনের ঘটনা ঘটছে।
আমি বাথরুম থেকে গোসল করে এসেছি,
পেছনেই আমার বাথরুমে কিভাবে যেনো টিউবওয়েল চালু হয়ে গেছে।
আবার আমার টিভিটাও অটোমেটিক চালু হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কি আমার মনের ভুল?
নাকি সত্যিই কিছু হচ্ছে? (ফোনের ওপাশ থেকে মিলি আবারো জোরে হাসতে হাসতে উত্তর দিল)
— আমি বলেছিলাম না আয়ান …..? সে আসবেই….!
–মিলি, তুমি কি শিওর? যে মেঘলা আবার ফিরে আসবে?
— শিওর কি বলছো ? সে ফিরে এসেছে, নাহলে তোমাদের সাথে এরকম টা হচ্ছে কেন?
— দেখ মিলি, ভয় দেখাবি না। আর তুই কীভাবে শিওর হয়ে বলছিস।
— তুমি বলো,বাথরুমে কিভাবে অটোমেটিক টিউবওয়েল চালু হয়।
সেটা অফ করে রুমে আসার পর আবার কিভাবে টিভি চালু হয়ে যায়। এইটা তার কাজ।
তোমাদেরকে সে ইঙ্গিত দিচ্ছে। ( এইটা বলে মিলি ফোন কেটে দেয়।
আয়ান আবার অনেকে ভয় পেয়ে যায়। এরপর রনিকে ফোন দেয়।)
— হ্যালো রনি..
— জ্বী বল, কি হয়েছে।
–আমার সাথে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে।
— তাই নাকি রে, আমার সাথেও তো ঘটেছে।
— কেন, কি হয়েছে?
–আমি সিলিং এর মধ্যে দেখতে পেয়েছি একটা ছায়ামূর্তি। আম্মু আব্বুকে বললাম,
তারা বিশ্বাস করলো না। এরপর আবার পরে অনুভব করলাম, আমার পিঠের মধ্যে কারো হাতের স্পর্শ।
আবার যখন মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম, তখন কিছুই দেখলাম না।
ভয়ে আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
–কি বলছিস কি এসব।
— হুম রে,আচ্ছা তোর সাথে কি হয়েছে।
— এই যে, বাথরুম থেকে বের হলাম। দেখলাম অটোমেটিক টিউবওয়েল চালু হয়ে গেছে, সেটা বন্ধ করে রুমে আসতেই দেখলাম টিভিটাও নিজে থেকে চালু হয়ে গেলো।এটা আসলে কি, আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। এসব কি হচ্ছে রনি।
— সেটা তো আমারও প্রশ্ন।
–আমার মনে হয় অন্য কিছু রনি।
–কেন, কি?
–আমার মনে হচ্ছে মেঘলা ফিরে এসেছে।
–তুই না? পুরাই পাগল হয়ে গেছিস। মেঘলা কিভাবে ফিরে আসবে। সে তো মরে গেছে।
যাইহোক, এখন আমি ঘুমাচ্ছি। ফোন রাখ, এমনিতেই ভয় পেয়ে অনেকক্ষণ ঘুমাইনি।
কে জানে, এসব মনের ভুল, নাকি সত্যি। আজকের ড্রিঙ্ক করা উচিত হয়নি। আর কোনদিন করবো না।
কালকে দেখা হবে বায়। ( ফোনটা কেটে দিলো রনি।
তারপর বয়ান আরেকটু শিওর হওয়ার জন্য সবাইকে ফোনে দিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবে বলে কালকে একত্রিত হতে বলে।
ট্রিং… ট্রিং…. ট্রিং…
উফফফফ সকাল সকাল আবার কে ফোন দিল। আয়ান একটু বিরক্ত বোধ হয়। ফোনটা রিসিভ করার পরেই ফোনের ওপাশ থেকে আসিফ বলল)
— কিরে, আমরা বাজারে কখন থেকে এসে বসে আছি। তুই সকালে আসতে বলে তুইই গায়েব..?
— আরে না, দাড়া আমি আসছি। (আয়ান ফোনটা কেটে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর সোজা বন্ধুদের আড্ডায়। একটা চা দোকানে বসে চা আর সিগারেট খাচ্ছে সবাই। প্রথমে আয়ান বলে)
— কাল রাতের ব্যাপারটা তো সবাই জানিস। এরকমটা কিভাবে সম্ভব। আমাদের চারজনের সাথে এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কেন। (ব্যাপারটা নিয়ে বাকি তিনজন ও একই ভাবে অদ্ভুত ঘটনা সম্পর্কে বলে সময় কাটাচ্ছে। তবে সবাই এইটা
বিশ্বাস করতে পারে না। যে মেঘলা ফিরে এসেছে।
একমাত্র আয়ান এই কথাটা কিছুটা বিশ্বাস করছে।
আর বাকিরা ভাবছে, কালকে রাতে ড্রিংক করার কারণে হয়তো এসব ঘটনা চোখে দেখেছে।
যাইহোক, সবাই আজকে শপিং করতে যাবে। কিছুদিন পর ঈদ। ঈদের শপিং এখনো করা হয়নি।
পরক্ষণেই সবাই মার্কেট এ গিয়ে, নিজেদের পছন্দমত শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি সংগ্রহ করে নিল।
সেখান থেকে ফিরে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সবার মাঝেই আসিফ বলল)
— আচ্ছা সবাই শোন। কালকে তো সবাই অনেক ভয় পেয়েছি। জানিনা কি থেকে কি দেখেছি।তাও সত্য নাকি মিথ্যে সবারই অজানা। আজকে সবাই আমার বাসায় চল। একসাথে ঘুমাবো। ( আসিফ কথা সবাই শুনে সবাই বলল)
–আজকে একটা ছোটখাটো পিকনিক হয়ে যাক। তোর বাড়িতে খাবারের কি কি আছে বল।
— কি আছে সেটা শিওর না, তবে ফ্রিজের মধ্যে মুরগির মাংস আছে।
— ধ্যাত, সেটা ভালো লাগে না। বাড়িতে নুডুলস আছে?
— হ্যাঁ, সেটা তো আছেই।
–তাহলে চল, আজকে সেটাই খাওয়া যাক।
( এরপর সবাই মিলে আসিফ বাড়িতে চলে গেল। বাড়িতে যাওয়ার পর নিজেরা নিজেদের মত নুডুলস পাক করতে লাগলো। পাক করার পর আসিফ রুমে সবাই আড্ডা বসিয়েছে।সবার হাতের মধ্যে সিগারেট। যে যার মতো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে, চ্যাটিং করছে, এসব নিয়েই ব্যস্ত। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেছে। আরে! এই অসময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারন কি। বিদ্যুৎ তো এসময় যায় না। আর সমস্যা হলে তারপর বিদ্যুৎ যায়, এখন বিদ্যুৎ চলে গেলে কেন? আয়ান আসিফকে বলল)
— বাড়িতে মোমবাতি থাকলে ধরিয়ে নিয়ে আয়।
–ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি।
( অন্যরুম থেকে মোমবাতি আনতে গেল আসিফ। মোমবাতি ড্রয়ার থেকে বের করে টেবিলের উপর রাখে। এরপর পকেট থেকে ম্যাচ বের করে মোমবাতি জ্বালালো। মোমবাতি জ্বালানোর পর আসিফ মুখের কাছে আনতেই দেখলো, সামনে এক হাতে দুরুত্বে একটি মেয়ের মুখমন্ডল দেখা যাচ্ছে। স্পষ্ট বুঝতে পারলো আসিফ ,এইটা কাল রাতের সেই মেয়েটি। মেয়েটির চোখে বিহীন মুখমণ্ডল দেখে আসিফ চিৎকার দিয়ে আয়ানের কাছে চলে আসে। তারা সবাই জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে “? কিন্তু আয়ান কথা বলতে চেয়ে ও কথা বলতে পারছেনা। কথা বলার কোন শক্তি যেন পাচ্ছে না সে। বারবার মুখ দিয়ে উল্টোপাল্টা বোবার মত শব্দ বের হচ্ছে। এবার তারা তিনজন একটু রেগে যায় আসিফ এর উপর। আয়ান বলল)
–কিরে, কি হয়েছে বলবি তো। এভাবে চুপ থাকলে আমরা বুঝবো কিভাবে।
(এসব প্রশ্ন করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলো ব্যালকনির সামনে যে জানালাটা আছে, সেই জানালাটা নিজে থেকেই খুলে যায়। তিনজনই হঠাৎ জানালার দিকে তাকায়। আসিফ এবার একটা শব্দ উচ্চারণ করে “”ভুত “”। রনি বলল)
–ভুত? এটা মনে হয় পাগল হয়ে গিয়েছে। পাঠিয়েছে মোমবাতি ধরাতে,
আর এসে বলে ভূত। (এমন সময় যে জানালাটা অটোমেটিক খুলে গেছে,
সে জানালা টা নিজে থেকে পিটাপিটি শুরু করেছে। এটা দেখে এবার চারজনই ভয় পেয়ে যায়।
তারপর তারা খেয়াল করল ব্যালকনিতে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
ঠিক তাদের দিকে মুখ করে। মুখটা ঠিক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না,
অন্ধকার এর মধ্যে জানালার পর্দাটা এপাশ ওপাশ করছে।
হঠাৎ খেয়াল করলো, পর্দা এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়ার সাথে সাথেই মেয়েটি গায়েব।
এবার তারা চারজন ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
সবাই বুঝতে পেরেছে, সত্যিই বাড়িতে ভুত এর আগমন হয়েছে। সবাই দৌড়ে পালাতে যাবে,
এমন সময় দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
আয়ান এবার ভালোভাবে খেয়াল করল, এই রুমের মধ্যেই,তারা মেঘলাকে ধর্ষণ করে মেরেছিল।
আয়ান মনে মনে ভেবে নিয়েছে, এইটা হয়তো মেঘলা ছিল।
এরপর তারা জোরে চেঁচামেচি শুরু করছে।কিন্তু তাদের চিৎকার যেন রুমের বাহিরে যাচ্ছে না।
বাড়িতে আরো অনেক লোক আছে। কিন্তু কেউই এখন কোন কথা বলছে না কেন।
তারা এই ব্যাপারটা নিয়ে আরো বেশি চিন্তিত।এদিকে রবি তো কান্না করে দিয়েছে ভয়ে। আয়ান জোরে জোরে দরজায় লাথি মারতে থাকে, কিন্তু না, দরজাটাও ভাঙছে না।
এটা কেমন পরিস্থিতিতে পড়ল তারা। এদিকে ঝড় ও শুরু হয়ে গেছে।
বাতাসটা ধীরে ধীরে আরো জোরে বইতে লাগলো। রনি সাহস করে জানালাটা বন্ধ করে দিল।
কিন্তু বন্ধ করে, দুই পা পিছু আসতেই আবার জানালাটা খুলে যায়।আয়ান একটু আওয়াজ করে বলে)
— আরে ভাই, জানালাটা বন্ধ করে আয়।কিসের ভয়, এ…এ…এ.. এখানে কেউ নেই।
( রনি এবার কাঁদতে কাঁদতে জানলার দিকে এগোয়।
এমন সময় খেয়াল করে, রনির সামনে মেঘলা দাঁড়িয়ে।
মেঘলাকে দেখেই জবান বন্দী হয়ে যায় রনি। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
শরীরের শক্তি যেন চলে গেছে। রনি দৌড়ে,
পিছু আসবে,তখনি মেঘলা গলা চেপে ধরে রনির অনেক জোরে।
গলা চেপে ধরে ফ্লোর থেকে প্রায় দুই হাত উপরে তুলে ফেলে।
মেঘলার হাত থেকে ছাড়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করে রনি।
কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না।
এদিকে বাকি তিনজন ভয়ে অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছে।
কিন্তু না, মেঘলা ভয়ঙ্কর হুংকার ছেড়ে ছেড়ে রনির গলা চেপে আছে।
এরপর হঠাৎ করে মেঘলা অদৃশ্য হয়ে যায়। রনি ফ্লোর এর মধ্যে ধপাস করে পড়ে যায়।
আসিফ, রবি, আর আয়ান দৌড়ে গিয়ে রনিকে বলতে লাগলো)
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com