Breaking News

বিশ্বাসঘাতক । পর্ব -০২

ব্লেড টা বুকে বসিয়ে নিচের দিকে দিলো একটা টান।সাথে সাথে আবির ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো বুক থেকে রক্ত গড়িয়ে নাভি বেয়ে পড়ছে…
– এসব পাগলামি বন্ধ করো? কেনো এমন করছো? যাকে ভালোবাসো তার বুকে ব্লেড চালাতে কস্ট হচ্ছেনা? (আবির).
নিজের ভালোবাসার উপর ব্লেড চালিয়ে কে বা কষ্ট না পায়। তেমনি নীলারও খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে ব্লেড টা আবিরের বুকে চালায়নি নিজের বুকে চালিয়েছে।.
– না কস্ট হচ্ছে না একটু ও না। যাকে আমি ভালোবাসি না তার জন্য কেনো কস্ট হবে আমার? (নীলা)
– তাহলে কাঁদছো কেনো? তোমার চোখের জল প্রমাণ করছে তুমি মিথ্যা বলছো।
আমার খুব কস্ট হচ্ছে নীলা। আমার বাঁধন খুলে দাও আমি আর পারছি না।
ঐ ছেলেগুলো আমাকে খুব মেরেছে তুমি যখন আমার বুকে চুরি বিদ্ধ
করেছিলে বিশ্বাস করো অনেক কস্ট হয়েছে আমার। (আবির)

– তুমি আমাকে ভালোবাসো? (নীলা)
– হুম অনেক (আবির)
– ভালোবাসার মানুষের দেওয়া শত কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করা যায় আর তুমি এইটুকু পারছো না? (নীলা)
– তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
– হুম আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে যখন তোমার আসল চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।.
দুজনেই কাঁদছে চোখ যেনো কথাই মানছে না।
আবির কাঁদছে ব্যাথায় আর নীলা কাঁদছে ভালোবাসার মানুষ কে ব্যাথা দিয়ে।নীলা ব্লেড টা আবার টান দিয়ে বলল….
– খুব কস্ট হচ্ছে তাই না সোনা? (নীলা)
– হু খুব। (আবির)

– আমিও যে খুব কস্ট পেয়েছি। তুমি আমাকে যে আঘাত দিয়েছো তার তুলনায় এ আঘাত কিছুই নয়।
– আমি তোমায় কি আঘাত দিয়েছি? আমি তোমাকে ভালোবাসি আঘাত দিতে যাবো কেনো?
– হাহাহাহা (একটা হাসি দিয়ে) ভালোবাসো? আর সেটা আমাকে। এটা তোমার মুখে মানায় না।
কি করিনি তোমার জন্য বলো? আর তার প্রতিদান এভাবে দিলে আমায়?.
নীলা আবিরের সাথে কথা বলছে আর তার বুকে ব্লেড চালাচ্ছে।
আবিরের কথা সহ্য করতে না পেরে আবার মুখে টেপ লাগিয়ে দিলো নীলা।
নীলা আপন মনে ব্লেড চালিয়ে যাচ্ছে আর কাঁদছে। বুকটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে আবিরের।.
ব্লেড চালানো বন্ধ করে একটা ফটো তুলল নীলা আবিরের। আর ফটো টা আবরের দিকে ধরে বলল
– দেখো তোমায় কত ভালোবাসি আমি? (নীলা) আবির নিজেকে নিজে চিন্তে পারছে না।
মোবাইলের ফটোটার দিকে তাকিয়ে দেখল নিজেকে।

বুকের বাম দিকে নীলা নামটা আর নেই স্থানটা পুড়ে গেছে।
আর বুকের ডানদিকে ব্লেড দিয়ে লেখা I Hate you।নীলা আবিরের সব বাঁধন খুলে দিয়ে বলল…
– সবে মাত্র তো শুরু এর পর থেকে কি কি হতে চলেছে তা আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবে।
আমার ভালোবাসার কসম তোমাকে আমি শেষ করে ফেলবো।
(নীলা)আবির পড়ে আছে মাটিতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কস্ট হচ্ছে। শরীরটা রক্তে ভেসে গেছে।
খুব কস্টে নিজের পায়ে দাড়িয়ে বাসায় আসলো..

।আবিরের মা, বাবা,ভাই, বোন বেরিয়ে এসে আবিরের এমন ও অবস্থা দেখে কান্না শুরু করে দিলো। সাথে সাথে ডাক্তার কে কল করলো।
– এসব কি করে হলো তোর? কে করলো এমন তোর? (আবিরের মা)
আবির কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কথা বলতে পারছে না।
শুধু চেয়ে আছে তার পরিবারের লোকগুলোর দিকে। তার এমন অবস্থা
দেখে পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙে পরে। আবিরের চোখ থেকেও অশ্রু প্লাবিত হচ্ছে
বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছে যে তার এই অবস্থা ইতু করেছে।
.এদিকে নীলা আবিরকে বুক থেকে রক্ত ঝড়িয়ে বাসায় এসে দরকা বন্ধ করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো ।

এমন ভাবে নীলা কখনও কাঁদেনি নীলার কান্নার শব্দ শুনে ইতুর বাবা,
মা দরজায় এসে ডাকাডাকি করছে। কিন্তু নীলা তাতে কান না দিয়ে কেঁদেই চলেছে।
কেনই বা কাঁদবে না কারন ভালোবাসার মানুষের উপর এমন অত্যাচার করে কে বা ভালো থাকতে পারে।
.এদিকে ডাক্তার এসে আবিরকে দেখে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থাকলো আর ভাবতে লাগলো এমন নির্মম ভাবে কেউ কাউকে আঘাত করতে পারে। আবিরের বুকে অজশ্র কাটা দাগ আর সেগুলো থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে ।ভালোভাবে চিকিৎসা করে ডাক্তার চলে গেলো।.
এদিকে নীলা কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছো তা নিজেই জানে না।.সকাল বেলা আবিরের বোন ইমা কাঁদতে কাঁদতে শশুর বাড়ি থেকে চলে আসলো। আবির জিজ্ঞেস করলো?.
– কি হয়েছে এভাবে কাঁদছিস কেনো? আরএত সকালে তুই? (আবির)
– ভাই….? (কাঁদতে কাঁদতে)

– আরে পাগলী বলবি তো কি হয়েছে?
– ভাই আমাকে আনিল অনেক মেরেছে আর ওর বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে? আর কি বলেছে জানিস?
– কি? (অবাক হয়ে)
– আর বলেছে আমায় খুব তারাতারি ডিভোর্স দিবে।
– হোয়াট..?.কথাগুলো বলে ইমা আবার কাঁদতে শুরু করলো।
তার উপর আবার ইমা মা হতে চলেছে।.আবির মোবাইল টা বেজে উঠলো
আবির মোবাইল টা বের করে দেখলো নীলা কল করেছে।
কল রিসিভ করা মাত্রই ফোনের ওপাশ থেকে নীলা বলে উঠলো…..
– খুব কস্ট হচ্ছে তাই না বোনের এমন অবস্থা দেখে?
জানো আমার ও খুব কস্ট হচ্ছে এটা শুনে যে তোমার বোনের সুখের সংসার টা ভাঙতে চলেছে So Sad (নীলা).নীলার মুখে এমন কথা শুনে আবির কি বলবে বুঝতে পারছে না
চোখের জমানো জলটাকে আর ধরে রাখতে পারলো না।

গড় গড় করে গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।নীলা আবার বলল…
– শুনো তোমার বোনের ডিভোর্স টা আর কেউ নয় স্বয়ং আমি ই করাচ্ছি?।
নীলার কথা শুনে আবিরের হাত থেকে মোবাইল টা মাটিতে পরে গেলো ।
কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেলো আবির।
কিছু বুঝতে পারছে না কেনো তার সাথে নীলা এমন করছে।
মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের দেওয়া কস্ট সহ্য করতে পারে না।
ঠিক তেমনি নীলা ও তার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া কস্ট সহ্য করতে পারছে না।.
বিছানার মধ্যে শুয়ে আছে আবির। চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে।
চোখের পানিকে আটকানোর বিন্দুমাত্র ও চেস্টা করছে না আবির। শুধু একটা কথাই ভেবে যাচ্ছে?
নীলা কেনো এমন করছে আমার সাথে?

কি দোষ করেছি আমি নীলাকে ভালোবাসাটাই কি আমার অপরাধ?
আরো নানান রকম চিন্তা ভাবনার মধ্যে আছে আবির।।
আবিরের বোন ঘরে প্রবেশ করে দেখছে ভাই এর চোখ থেকে পানি পরছে।
ইমা আবিরের পাশে বসে আবিরের চোখের পানি মুছে দিলো আবির টের পেলো বোনের উপস্থিতি তাই বিছানায় বসে পরলো।।

– ঐ কাঁদছিস কেনো? প্লিজ তুই কাঁদবি না তোর কান্না আমি সহ্য করতে পারব না।আনিল আমাকে ডিভোর্স দিবে তাতে কি হয়েছে? তুই তো আছিস। (আবির)
– আমার চোখের সামনে আমার বোনের সংসার ভাঙবে তাও আবার আমার জন্য আর আমি কাঁদবো না সে কি হয়নাকি? (আবির)

– ভাই তুই কি বলছিস এসব? তোর জন্য আমার সংসার ভাঙবে মানে? কি করেছিস তুই?
– জানিনা বোন আমি কিছু জানিনা। আমার সাথে এমন কেনো বুঝতেছিনা আমি!।
আবির কে তার বোন জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
ভাই বোন একসাথেই কাঁদছে।
মনে মনে আবির ঠিক করলো আজ রাতে নীলার কাছে যেতে হবে কেনো এমন করছে তা আমাকে জানতেই হবে?

।রাত ১২ টা আবির অসুস্থ শরীর নিয়ে নীলার বাড়ির দিকে হাটতে থাকলো।
রাস্তায় কোন গাড়ী ও নেই যে গাড়ীতে করে যাবে কারন এই শীতের সময় রাত ১২ টায় গাড়ী
খুব কম ই পাওয়া যায় আর তাছাড়া কুয়াশার জন্য ঠিক ভাবে পথঘাট ও দেখা যায় না।
খুব কস্টে আবির নীলার বাড়ির প্রাচীর পেরিয়ে নীলার রুমের সামনে আসলো।
নীলার রুমে আশিকী টু মুভির, তুম হি হো গানটা বাজছে ভিতর থেকে কান্নার শব্দ ও শোনা যাচ্ছে
আবির কিছুটা থমকে গিয়ে জানালার পাশে দাড়ালোা।
জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলো আবির,

নীলা কাঁদছে ফুঁপিয়ে কাঁদছে এক হাতে মদের বোতল আর একহাতে
সিগারেট।নীলা ড্রিংক করছে দেখে আবির নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
ড্রিংক করার সাথে আবার সিগারেট ও টানছে।।আবির নীলার ঘরে প্রবেশ করলো। নীলা আবিরকে দেখে উঠে দাড়ালো।

– কি করছো কি এসব তুমি? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার? ড্রিংক তার সাথে আবার সিগারেটএসব কি নীলা? (আবির)
.- হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক নেই কিচ্ছু ঠিক নেই। হ্যাঁ আমি ড্রিংক করছি আর সিগারেট ও টানছি তাতে তোমার কি? তুমি কেনো এসেছো এখানে? (কাঁদতে কাঁদতে বলল নীলা).
আবির নীলার কাছে গিয়ে তার হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নীলাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিলো আবির। নীলার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল…
– কেনো এমন করছো? নিজে তো কস্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কস্ট দিচ্ছো কেনো? (আবির)
– আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি প্রতিশোধ।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com