প্রতিশোধ। ২য় পর্ব
কিন্তু ওরা যদি কেউ নাই মারে,তাহলে ও কিভাবে ছাদ থেকে পড়লো?
আর কেনই বা ছাদে গেলো?
কি হয়েছিলো ওর মৃত্যুর আগ মুহূর্তে?
দীর্ঘ ছয় মাস আশফি আমার পিছু ঘুরাঘুরি করার পর আমি ওর প্রপোজ এক্সেপ্ট করেছিলাম।আর বলেছিলাম,আমি ভালবাসায় বিশ্বাসী নই।আমাকে পেতে হলে,আমার ভালবাসা পেতে হলে বিয়ে করতে হবে।
আশফি কিছু ক্ষণ মাথা চুলকে ভেবে চিন্তে বলে,ঠিক আছে।
আমি তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
এরপর দিন থেকে আমাদের প্রেমের যাত্রা শুরু।
আশফি আমাকে অনেক স্বপ্ন দেখায়,
বিয়ের পর আমরা হানিমুনে এখানে যাবো সেখানে যাবো।
আরো কত কি।
তারপর আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠায় আশফি।
আর আমার বাবা মাকে আমি রাজি করাই।
তারপর এইতো বিয়ে করে পা রাখি আশফির ঘরে।
গাড়ীতে আশফি আমার হাত ছাড়ছিলোই না।
আমিই বার বার বলছিলাম,বাসায় গিয়ে হাত ধরে বসে থেকো।এখানে তো ছাড়ো।কেউ দেখে ফেলবে।
আর কি বলবে তখন সবাই?
আশফি আর আমাকে বরণ করে সবাই ঘরে তুলে।
হঠাৎ ডাক এলো,
কুহু,দেখে নে শেষ বারের মত আশফির মুখটা।
আমি গেলাম না।
আর জোরে জোরে বললাম,
আমি ওর ওই মুখ দেখতে পারবোনা।
আমার চোখে যেই মুখ স্পষ্ট আছে সেটাই থাকুক।
কিছু ক্ষণ পর সব কাজ সম্পূর্ণ করে আশফিকে দাফন করা হলো।
জেরিন মেয়েটা এখনো কেঁদে যাচ্ছে।খুব ভালবাসতো বোধয় মেয়েটা আশফিকে।
আমি যখন আশফির সাথে কখনো কখনো রেস্টুরেন্টে বসে থাকতাম,তখন দেখতাম আশফির ফোন বাজতো।
আর মোবাইলে স্পষ্ট ভেসে উঠতো জেরিন নাম টা।
আর একদিন আশফিকে বার বার ওর ফোন দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ও বলেছিলো,
জেরিন ওর কাজিন হয়।আর ওকে খুব ভালবাসে।কিন্তু আশফি ওকে বোন ছাড়া আর কিছুই ভাবেনা বা ভাবতে পারেনা।
-কেঁদোনা জেরিন,যা হবার তো হয়েই গেছে।এখন কাঁদলে ওর আত্মা আরো কষ্ট পাবে।
জেরিন আমার কোন কথাই শুনছেনা।
বরং আরো উচ্চস্বরে কেঁদে যাচ্ছে।
অনেকে আমার কাছে এসে হাত বুলাচ্ছে,
আর বলছে,
-আহারে,মেয়েটা বিয়ের রাতেই স্বামীকে হারালো।
এমন পোড়া কপাল কার আছে।
আবার কেউ কেউ দূরে আমাকে ইংগিত করে বলছে,
আসলে মেয়েটাই অপয়া।
ছেলেটা বিয়ে করে সারতে পারলোনা আর মরণ দুয়ারে পৌছে গেলো।
যে যার মত সেদিন বাসায় চলে গেলো।
পরের দিন সকালে,
আশফির ভাই দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে।
আমার শাশুড়ি ওকে ডাকাডাকি করছে,কিন্তু ও উঠছেনা।
কিছু ক্ষণ পর দরজা খুলে হাউমাউ করে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
-মা,ভাইয়া এভাবে কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলো?
আমি এখন ভাইয়া বলবো কাকে?
সেদিন বিকেলে কিছু আত্মীয় স্বজন আবার এসে দেখা করে গেলো আমাদের সাথে।
পরের দিন সকালে আদিল ভাইয়া এসে আমাকে ডেকে বল্লো,
আমি জানি,
তুমি কি রকম শকের ভেতর আছো।
তবুও বাস্তবতা তো মেনে নিতেই হবে।
তুমি চাইলে আবার জীবন শুরু করতে পারো আমাকে নিয়ে।
আমি তোমাকে সুখী করবো কথা দিলাম।
আমি তোমাকে ভালবাসতাম ঠিকই,কিন্তু আশফির জন্য কিছুই করতে পারিনি।
আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো।
আমি আদিল কে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
চিল্লাচিল্লি করলাম তার সাথে।তারপর দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলাম।
জেরিন এ বাসায় ই আছে,
যায়নি এখনো।
আশফির একটা ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
আমি জেরিনের কাছে গেলাম।
গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে বললাম,
-খুব ভালবাসতে আশফিকে তাইনা?
জেরিন কাঁদতে কাঁদতে মাথা ঝাঁকিয়ে বল্লো হুম।
-তাহলে বাসায় বলে ওকে বিয়ে করে নিলে না কেন?
জেরিন কাঁদছে।ওর কান্নার শব্দ আরো বেড়ে যাচ্ছে।
-কাঁদেনা পাগল মেয়ে কাঁদেনা।
এত কান্না কোথা থেকে শিখেছো শুনি?
সেদিন সন্ধ্যায়ও দেখলাম তুমি আশফিকে জড়িয়ে ধরে ছাদের উপর কান্না করছো।
এত কাঁদলে কি হয় হুম?
-তু তু তুমি..
-হ্যাঁ আমি দেখেছিলাম।
আর আশ্চর্য জনক বিষয় কি জানো?
তার কিছু ক্ষণ পরই আশফির মৃত্যু ঘটে।
বিষয় টা সন্দেহ জনক না?
-বিশ্বাস করো কুহু,আমি ওর মৃত্যু সম্পর্কে কিচ্ছু জানিনা।
বিশ্বাস করো।
-আরে আরে,এত ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন?
যাও কিছু খেয়ে নাও।
আমি যাচ্ছি।
কিছু ক্ষণ পর আদিলের ফোন আশফির মোবাইলে।
আশফি যেহেতু নেই।
ওর মোবাইল টা এখন আমার ড্রয়ারেই পড়ে আছে।
আমি মোবাইলটা বের করে কল রিসিভ করলাম।
-আপনি আবার ফোন দিয়েছেন?
আপনাকে না তাড়িয়ে দিলাম?
লজ্জা নেই আপনার?
-দেখো কুহু!একবার ভেবে তো দেখো।
-আচ্ছা একটা কথা,
আশফির মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে আপনি আশফির পাঞ্জাবী ধরে ওকে ধাক্কাচ্ছিলেন কেন বলুন তো?
আপনাদের দুজনের মাঝে কি কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো হুম?
আপনি এত রেগে ওর সাথে কথা বলছিলেন কোন কারণে?
-দেখো কুহু,ও আমার বন্ধু ছিলো।আর তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু না।
-আমি কিছুই ভাবছিনা।
আমি শুধু জানতে চাচ্ছি কি বিষয়ে হচ্ছিলো আপনাদের ঝগড়াটা?
আর তার কিছু ক্ষণ পরই হতে হলো আশফিকে লাশ?
-উফ কুহু,ভালো লাগছেনা।
রাখছি আমি।পরে ফোন দিবো।
শাশুড়ি মা আমাকে খেতে ডাকছেন।
-কুহু,এই কুহু!আয় খাবি মা।
খাওয়া দাওয়া একবারে বন্ধ করে দিলে কি হয়?
-আসছি মা।
কি করবো,মায়ের কথা রাখতে খাবার টেবিলে বসতে হলো আমার।
আশফির ভাই,বাবা মা দুজনই বসেছেন।
জেরিনকে ডাকা হয়েছে ও আসেনি।
আশফির ভাই একটা চেয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে অনেক ক্ষণ যাবত এক ধ্যানে।
চেয়ার টাতে আশফি বসতো।
-জানো মা,আশফিকে আমি গর্ভে ধরিনি ঠিকই।
তবে আহিলের চেয়ে কম দেখিনি।
ওরা দুই ভাই আমার দু নয়নের আলো ছিলো।
আহিলও কখনো আশফিকে ওর সৎ ভাই ভাবেনি।
সব সময় আপন বড় ভাই ই ভেবেছে।
দেখোনা আশফি চলে যাবার পর আহিলের কি হাল হয়েছে।
আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম যেন।
আশফিতো আমাকে কখনো এ ব্যাপারে কিছু বলেইনি।
তার মানে আশফি আর আহিল এক মায়ের পেটের ভাই না?
আশফি আর আহিল দুজন সৎ ভাই?
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com