বলোনা ভালোবাসি | পর্ব -২৩
কিরে, তুই কি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়েটা করতে চাইছিস?
– জানিনা..
– বলবি না আমাকে?
-। কি বলবো বলো..?
– এই বিয়েতে তোর ইচ্ছে আছে?
– না থাকলেই বা কি.. অভিমান করে কথাটা বললো নীলা..
– এই বিয়েতে যে তোর মত নেই সেটা আমি আগেই বুঝেছি।
আর তাছাড়া ওদেরকে আমার কাছে বেশ সুবিধার মনে হয়নি।
– কেন?
– সেটা তোর না জানলেও চলবে। আগে বল তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
– তোমার ছেলেকেই তো ভালোবাসি, কিন্তু এখন তো তারই কোনো খোজ নেই।
কথাটা বলার ইচ্ছা থাকলেও মুখ ফুটে বের করলো না নীলা।
– কিরে, বললি না তো?
– আমার কিছু বলার নেই। আমার আব্বুর সম্মান আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
উনার সম্মান রক্ষার জন্য আমিআমার ভালোবাসাকে কুরবানি দিতেও প্রস্তুত।
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না নীলা। দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো নীলা।
আবিরের মা হতাশ দৃষ্টিতে নীলার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।.
নিজের রুমে বসে থেকে নীলা কাঁদছে আর ভাবছে, আবির তো তাকে একটা কল ও দিলোনা।
একটা খবরও নিলোনা। ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে নীলা।
চোখ দিয়ে টুপটুপ করে গাল বেয়ে পানি পরছে। মনে হাজারো ভাবনা নীলার।
সেকি আদৌ বিয়েটা করে সুখী হবে?
কখনোই না, তাহলে নিশ্চিত অসুখী জেনেও কেন সে বিয়েটাই রাজি হচ্ছে?
বাবার জন্য? বাবা কি এতোটাই খারাপ যে মেয়ের সুখের কথা ভাববে না?
না না, বাবাকে বললে হয়তো বাবা আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করবে।
হ্যাঁ, তাই করবো। বাবাকে সব জানাবো আমি।
জানাতেই হবে। আবিরকে ছাড়া যে কিছুতেই থাকতে পারবো না আমি। তবে এর আগে আবিরকে জানাতে হবে।নীলা ফোন ঘেঁটে আবিরের নাম্বারটা বের করে কল দিলো। তিনবার কল বেজে থেমে গেলো।
চতুর্থ বারের মতো কল বাজতেই ফোনটা রিসিভ করলো আবির। নীলা অস্থির হয়ে বলতে লাগলো…
.- হ্যালো আবির, কোথায় ছিলে তুমি? কখন থেকে কল করছি।
আর তুমি একটা ফোন ও করোনি আমাকে..
একদমে কথাটা বললো নীলা।আবির বেশ সাবলীলভাবে বলতে লাগলো
..- কি হয়েছে? এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? আস্তে ধীরে কথা বল
..- না মানে.. তোমার কোনো খবর পাচ্ছিলাম না তাই। ধীরে সুস্থে কথাটা বললো নীলার ।
– ওহ, তা কেন ফোন করেছিস হটাৎ করে? কোনো সমস্যা?
– আবির, আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে..। কিন্তু আমি.. এতোটুকু বলতেই মাঝপথে বাধা দিয়ে আবির বলতে লাগলো.
– বাহ, তাই নাকি? কংগ্রেটস .নীলা অবাক হয়ে গেলো আবিরের কথায়। বললো.
.- মজা করো না তো। আমি এখন সিরিয়াস মুডে আছি।
– আমিও সিরিয়াস মুডেই আছি নীলা।
– তাহলে কনগ্রেটস দিচ্ছো কেন? উপায় বলো কি করা যায় এখন।
– উপায় বলবো মানে? বিয়েটাই তো করবি। তাছাড়া আর কি?
– আহ, আবারও মজা করছো? আমিতো বললাম, আমি এখন এইসবের মুডে নেই।
– মজা করবো কেন আমি? তোর বিয়ে, মজাতো তুই করবি।
– কি বলছো এইসব তুমি আবির? তোমার মাথা ঠিক আছেতো?
– দেখ, বিয়ে ঠিক হয়েছে, বিয়ে করবি। আমাকে এইসবে ইনভল্ব করবিনা।
– মানে? তুমি না আমাকে ভালোবাসতে? তাহলে এখন এইসব বলছো কেন?
– ভালোবাসতাম.. এখন বাসিনা।
– মানে কি? কি বলছো তুমি?
– পুরোপুরি বাংলা ভার্সনেই বলছি। বুঝছিস না কেন?নীলা কেদে দিলো। কেদে দিয়ে বললো.
.- আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আবির। এমন করোনা প্লিজ..আমাকে বিয়ে করে নাও তুমি।
– পাগল হয়েছিস নাকি.. আমি তোকে বিয়ে করতে পারবোনা। আর তাছাড়া আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, আর ওকেই আমি বিয়ে করবো।
.- নেহা..? অবাক হয়ে বললো নীলা।
– মাথা খারাপ, ও তো এখন জেলে আছে। আর ওর মতো পচা শামুকে আমি আবারও পা দিবো নাকি। আজব.
.- তাহলে মিথ্যা বলছো কেন? প্লিজ এমন করোনা আবির। আমি মরে যাবো।
– শুধু শুধু মরতে যাবি কেন? জীবন একটাই। সে জীবনটাকে এঞ্জয় কর নিজের মতো করে। বিয়ে করে নে। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
– তুমি আমার সাথে মজা করছো তাইনা? কাপা কাপা কন্ঠে বললো নীলা।
– মোটেও না। আর তাছাড়া আমারও বিয়ে ফিক্সড হয়ে গেছে। কিছুদিন পর আমিও বিয়ে করে নিবো ওকে। তাই বলছি ঝামেলা করিস না, তুইও বিয়েটা করে ফেল। সুখী হবি।
– কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছো আমার সাথে?. তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মানে কি? কই, বড়মা তো কিছু বলেনি।
– মাকে এখনো জানাইনি। আমরা নিজেরাই ঠিক করেছি বিয়ে করবো। মাকে জানাবো। মা নিশ্চয়ই অমত করবে না।আচ্ছা রাখছি। নতুন বিয়ে করছি, তাই অনেক কাজ আছে। .. ব্যে .
.নীলা কিছু বলছে না। শুধু চোখের পানি ফেলছে।.নীলার বাবা খুব ব্যস্ত ইদানীং।
বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়েছে সামনের শুক্রবার। আজ রবিবার।
মানে গুনে গুনে আরো ৪ দিন পর, ৫ দিনের মাথায়। নীলা রুম থেকে বের হয় না।
অথৈ এসেছিলো কিছুক্ষন আগে। কিন্তু নীলা দেখা করেনি।
নীলার বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেছে। অবশ্য এর দুইদিন আগেও এসেছিলো।
সেদিন নীলার সাথে কথা বলেই গিয়েছিলো।.
নীলা নিজের রুমে বসে আবারও ফোন দিলো আবিরকে। বেহায়া মন,
নিজেকে মানাতে পারছে না। কিন্তু আবির ফোনটা কেটে দিচ্ছে।
বার বার কল দেওয়ার পরেও ফোনটা তুলছে না আবির। উল্টো কেটে দিচ্ছে।
নীলা হুহু করে কেদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে একটা টেক্সট করলো আবিরকে।
-“প্লিজ, একবার ফোনট রিসিভ করো, বেশি জ্বালাবো না প্রমিস।”টেক্সটা দেওয়ার কিছুক্ষন পরেই আবির কল ব্যাক করলো। নীলা জলদি ফোনটা রিসিভ করে বললো..
– কোথায় ছিলে এতোক্ষন? কতোবার কল দিয়েছি, রিসিভ করছো না যে?
– শপিংমলে আছি নীলা। খুব বিজি।
– ওখানে কি করছো?
– ওর জন্য কিছু ড্রেস কিনতে আসছি। সাথে কিছু গহনাও, বিয়েতে তো লাগবে এইসব।
– তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করছো আবির?
– মিথ্যা বিয়ে করা যায় নাকি পাগল? আর তাছাড়া মা বাবাকেও বলেছি ওর কথা। ওরা মেনে নিয়েছে। আমি খুব হ্যাপি নীলা।
– ওহ,আর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো নীলা। আবিরকে আর বিরক্ত করতে চায়না ও।
থাকনা ও নিজের মতো। ও যদি সুখী হয়, তাহলেই হবে নীলার।
এইসব ভাবতেই ভাবতেই চোখ দুটো পানিতে ভরে গেলো।
.আবিরের মা এসেছে কিছুক্ষন আগে। নীলার বাবা মা অনেক ডেকেও নীলার রেসপন্স পাচ্ছে না।
ওদিকে বরের বাড়ি থেকে হাতের মাপ নেওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছে।
হাতের বালা বানানোর জন্য তো হাতের ঠিকঠাক মাপ লাগবে।
কিন্তু কারো কথায়ই বের হচ্ছে না নীলা। শেষে আবিরের মা এসেছে এই কাজটার জন্য।
কারণ সবাই জানে, সবার কথা না মানলেও বড় মায়ের কথা কখনো ফেলবে না নীলা।
সত্যিই তাই হলো। বড় মা এসে নীলাকে কয়েকবার ডাকতেই দরজাটা খোলে দিলো নীলা।
বড়মা হাসিমুখে ভিতরে ঢুকে নীলাকে নিয়ে খাটে বসলো।
বড়মা কিছু না বলেই নীলার হাতের মাপ নিচ্ছে। নীলা বললো..
– এইসব করছো কেন?
– দরকার আছে বলেই তো নিচ্ছি। ওরা তো আর কেউ তোর হাতের মাপ জানেনা।নীলা আর কিছু বললো না।বড়মা হাতের মাপটা নিয়ে নীলার মুখের দিকে তাকালো । বললো..
– ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি? চেহারার কি হাল করেছিস তুই?নীলা এই কথার উত্তর না দিয়ে বলল..
– আবির নাকি বিয়ে ঠিক করেছো?বড়মা হেসে দিয়ে বললো..
– হ্যাঁ, হটাৎ করেই ঠিক হয়েছে। ও ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটা। মেয়েটাও খুব ভালোবাসে। তাই আর অমত করিনি। ওদের সুখই আমার সুখ।
– কই, আমাকে তো বলোনি।
– কিভাবে বলবো? আমিওতো হটাৎ ই জানলাম। আর তুইও এখন এইসব শুনার মুডে নেই।
– ওহ..বড়মা চলে গেলো। নীলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো। প্রকৃতির রুপটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওর। কিছুদিন পর হয়তো আর দেখতে পাবেনা এই সুন্দর্য। তাই মন ভরে দেখে নিচ্ছে আজ।.
.কেটে গেলো তিনটে দিন।আজ নীলার গায়ে হলুদ। আগামীকাল বিয়ে। পুরোটা বাসা আজ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো বাসা লাইটিং করা। নীলাকে আজ অনন্য রুপে সাজানো হয়েছে। যেনো একটা হলুদ পরী ও..অথৈ আর তমা এসেছে কিছুক্ষন আগে। সোহেল ও এসেছে। কিন্তু প্রোগ্রামের শেষে আবার চলে যাবে। কি যেনো কাজ আছে। বাকিরা থাকবে।
..সন্ধ্যের পর আয়োজন শুরু করা হয়েছে। এক এক করে সবাই এসে হলুদ পরাচ্ছে নীলাকে।
নাহ, নীলাকে নয়, যেনো একটা পাথরের মুর্তিকে পরানো হচ্ছে।
যে মুর্তিতে নেই কোনো অনুভূতি। তবে সবার মনে অনেক আনন্দ।
মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অনেকেই গান করছে, ছবি তুলছে।
সোহেল চলে গেছে প্রোগ্রাম শেষ হবার পরপরই। সবাই যে যার মতো নিজেদের রুমে চলে গেছে।
নীলার সাথে বসে আছে শুধু তমা আর অথৈ,,
আশেপাশে ছোট বাচ্চারা আছে অনেক।
তমা আর অথৈ মিলে নীলার দুহাতে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে।নীলা চোখ বন্ধ
করে পাথরের ন্যায় চুপ করে বসে আছে।
হটাৎ ই নিজের গালে কারো হাতের স্পর্শ পেলো নীলা। শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠলো কিছুটা।
তাকিয়ে দেখলো সামনে আবির বসা। তমা আর অথৈ নেই পাশে।
হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদী পরানো শেষ।
হয়তো ওরা নিজেরা ফ্রেস হতে চলে গেছে। নীলা অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকালো। বললো..
– তুমি!!!
– হ্যাঁ আমি। সারাদিন খুব বিজি ছিলাম রে, তাই তোর পার্টিতে আসতে পারিনি।
– এখন এলে যে? এতো রাতে?
– দেখ, তুই আমার একমাত্র কাজিন, তোর হলুদ, আর আমি তোকে হলুদ লাগাবো না সেকি হয়।
তাইতো এতো রাতে চলে এলাম।আবিরের কথায় নীলা ওর হাতের দিকে তাকালো।
দেখলো আবিরের হাত ভর্তি কাচা হলুদে।
এই হলুদ দিয়েই ওর গাল স্পর্শ করেছিলো তখন। তাইতো ঠান্ডা লেগেছে।নীলা বললো..
– শুধু এর জন্যই এসেছো?
– হ্যাঁ, এর জন্যই তো। আর আরেকটা কারণ আছে এখন আসার পিছনে ..কথাটা শুনে মুহুর্তেই নীলার চোখদুটো রঙ্গিন হয়ে উঠলো। তারাহুড়ো করে বললো.
.- কি কারণ বলো..
কাল তো তোর বিয়ে, কিন্তু আমি কাল আসতে পারবোনা।
ওকে সময় দিতে হবে। কাজ আছে অনেক। কাল আমার অনেক কিছু সামাল দিতে হবে ওইদিকে।
তাই নাও আসতে পারি। তাই ভাবলাম রাতেই একবার দেখা করে যাই তোর সাথে।
নাহলে হয়তো মন খারাপ হবে তোর।
মুহুর্তেই নীলার রঙ্গিন মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।আবির কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো।
কিন্তু নীলার সবকিছু যেনো থমকে গেছে। ভেবেছিলো আবির হয়তো ওর ভালোবাসার টানে এসেছে।
কিন্তু নাহ, মানুষের সব আশা পুরণ হবার নয় সেটাই জানাতে এসেছে ও.
To be continue …
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com