Breaking News

কথা দিলাম । পর্ব : ১২ এবং শেষ

আয়ান তিথিকে আর তিথি আয়ানকে তৈরি করে দেয়।
এটা খুবই হাস্যকর যে বর বউ একে অপরকে সাজাচ্ছে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেওয়ার জন্য!
এই শোনো,তিয়া কবুল বললে বলুক।তুমি যেন আবার বলে দিও না।
তুমি তোমার কাজটা তাড়াতাড়ি করো তাহলে আমিও কবুল বলবো না।
হুম।বুঝেছি।
কী বুঝলে?
আমাকে আর পছন্দ হচ্ছে না।নতুন বউ লাগবে।
তিথির কথা শুনে আয়ান হাসতে শুরু করে।
পেছন থেকে তিথির কোমর জড়িয়ে ওর গালের সাথে গাল লাগায়।
আমার এত সুন্দর বউ থাকতে আর বউ দিয়ে কী করবো?
তোমাকে দেখতেই দিন যায় আরেকটাকে কখন দেখব?”

ইশ!এত নির্লজ্জ!
তোমার কাছে নির্লজ্জ হতে দোষ কী?আমি নির্লজ্জ বলেই তো তুমি আমার বাচ্চার মা।
তুমি চুপ করবে?চলো।
চলো।” আয়ান আর তিয়া মুখোমুখি বসেছে।
তিথি আর আরিয়ানকে সামনাসামনি বসানো হয়েছে।তিয়ার কবুল বলা শেষ।
এবার আয়ানের পালা।অসহায় দৃষ্টি দিয়ে আয়ান তিথির দিকে তাকিয়ে আছে।
আর তিথি মিটমিটিয়ে হাসছে।
আয়ান খুব ভালোমতো বুঝে গেছে তিথি বিষয়টার মজা নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ মজা নেওয়ার পর তিথি ভাবে আর দেরি করা ঠিক হবে না।
আয়ান যদি আবার রাগের মাথায় কবুল বলে দেয়!
এক মিনিট,কাজি সাহেব” তিথির কথায় হাফ ছেড়ে বাঁচে আয়ান।
এই বিয়ে হবে না।” সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।
বলে কী এই মেয়ে?নিজেই বলল বিয়ে করবে আবার নিজেই বিয়ে ভাঙছে!পাগল নাকি?
এই পক্ষের কনে আর ঐ পক্ষের বর যে বিবাহিত।বিয়ে পড়ালে আপনার যে ধর্ম থাকবে না।
রেগে উঠে দাঁড়ায় আরিয়ান।

কী বলছ তুমি এসব?
ঠিকই বলছি,আরিয়ান খান।আমি মিসেস সিয়া হুসেইন চৌধুরী।
মি.আয়ান চৌধুরীর বিবাহিত স্ত্রী।আমাদের বিয়েতে শরিয়ত আর সাক্ষী দুটোই ছিল।
এবং ভালোবাসাও ছিল।অর্থাৎ আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হালাল এবং পবিত্র।
তোমার মতো অপবিত্র নয়।

মানে?
মানে?অফিসার।
তিথি,তুমি পুলিশ ডেকেছ কেন?
সেটা ওনারাই বলুক।বলুন অফিসার।কেন এসেছেন আপনারা?”
মি.আরহান খান।আপনার বিরুদ্ধে রেপ কেস করা হয়েছে।এছাড়াও ভিডিও ধারন ও ভাইরালের জন্য মানহানির মামলাও রয়েছে।ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।”
তিথি!এত বড় বেইমানি?”
আমি বেইমানি করলাম?আমি চাইলে সেদিনই তোমাকে পুলিশে দিতে পারতাম।এত নাটকের প্রয়োজনই ছিল না।কিন্তু তাতে তুমি শুধু একটা পাপের শাস্তি পেতে।কাউকে বিয়ের কথা দিয়ে তাকে মাঝ পথে ফেলে চলে গেলে অনুভূতিটা কেমন হয় সেটা বোঝাতেই এতদূর নিয়ে আসা।”
(বাঁকা হেসে)”মিসেস তিথি হুসেইন চৌধুরী।তোমার প্ল্যানটা যে ফেল করে গেল।”

মানে?”
মানে,আমি কষ্ট পাচ্ছি না।কারণ এমনিতেও আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না।
আমি শুধু তোমাদের ভালোবাসাটা পরীক্ষা করলাম।
প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি বুদ্ধির ঢেঁকি।এখন দেখছি না।তুমি তো বুদ্ধির জাহাজ!”
কী বলছ তুমি?”
সেদিন আমার মেয়েটার মুখ দেখেই ঠিক করেছিলাম।
বিয়ে করলে আমি দিশাকেই করবো।
তোমাদের সুখ নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই।
কিন্তু নিজের সুখটা বেছে নেওয়ার অধিকার তো আছে আমার।”
দিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আরিয়ান।
দিশা,আমি জানি অনেক বড় অন্যায় করেছি আমি।কিন্তু সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমার মেয়েটাকে ভালোবাসি।প্লিজ দিশা আমাকে ক্ষমা করবে?
দিশা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আরিয়ান ওকে এই কথা বলছে?
দিশা,আমাকে বিয়ে করবে?তুমি রাজি থাকলে তোমাকে বিয়ে করে আমি জেলে যাব।
দিশার চোখ ছলছল করে ওঠে।আরিয়ান কী সত্যি বলছে নাকি এটাও নিতান্তই অভিনয়?
প্লিজ দিশা,কিছু তো বলো।

আরিয়ানের চোখে আজ অনুতপ্ততা,দিশার প্রতি ভালোবাসা আর মেয়েটার প্রতি মায়া দেখছে দিশা।
আর চুপ থাকতে পারে না দিশা।মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেয় যে ও রাজি।
তিথি,যদি আরিয়ান আমাকে বিয়ে করে তাহলে তো ওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়।
ওকে জেলে যেতেই হবে?”
দেখ,দিশা আপু….”
না,দিশা।আমি জেলে যাবো।আমাকে যেতেই হবে।
তোমার একার জীবন তো আমি নষ্ট করিনি।
আরও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি।শাস্তিটা আমার প্রাপ্য।”
আমি চাইনা আমার মেয়ে এরকম একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হোক।”
আমিও চাইনা আমার মেয়ে কোনো মিথ্যেকে আঁকড়ে ধরে বড় হোক।
ওকে সত্যিটাই মেনে নিতে হবে।”
কিন্তু আরিয়ান…”

প্লিজ দিশা।তবে অফিসার,মানহানির মামলাটা আমার বিরুদ্ধে নয় অন্য কারোর বিরুদ্ধে হবে।
কারণ না আমি ভিডিও রেকর্ড করেছি।আর না ভাইরাল।”
তাহলে কে করেছে?” তিয়ার দিকে তাকায় আরিয়ান।
এতক্ষণের সব ঘটনাই তিয়ার মাথার উপর দিয়ে গেছে।
এখন ভয় পাচ্ছে তিয়া।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে।বারবার ঢোক গিলছে।
কী হলো তিয়া?বলো।তুমি সেদিন জোর করে আমাকে ড্রিংক এর ওভার ডোজ দিয়েছিলে।
দিশার রুমে ক্যামেরা সেট করেছিলে।
যাতে ভিডিও ভাইরাল করে একদিকে দিশার জীবনটা নষ্ট হয়।
আরেকদিকে তিথি আমাকে ভুল বুঝে বিয়েটা বাতিল করে দেয়।
আবার আয়ান তিথি কে ভুল বোঝে।
ফলে আয়ানের জীবন থেকে তিথির অস্তিত্ব মুছে যায়।
এক ঢিলে এত্তগুলো পাখি মারতে চেয়েছিলে তুমি।রাইট?”
ক..কী..কী বলছ এসব?আমাকে ফাঁসাচ্ছ কেন?”
ফাঁসাবো কেন?তুমি তো ফেঁসেই গেছো।আমার কাছে প্রমাণ আছে।
তিয়ার ভয় আরও বেরে গেছে।আরও বেশি ঘামছে ও।
যাই হোক।অফিসার,আমাদের বিয়েটা খেয়েই যান।
আর হ্যাঁ আমার আর দিশার সাথে সাথে আয়ান 
আর তিথিকেও আবার শরিয়ত মোতাবেক সাক্ষীসহ বিয়ে করতে হবে।”
তিথি আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ নামিয়ে নেয়।
তিয়া রাগ আর অপমানে মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
ওর সব আনন্দ,সব স্বপ্ন শেষ।

তিথি আর আয়ান এবং দিশা আর আরিয়ানের বিয়ে পড়ানো হলো।
এবার আরিয়ানের যাওয়ার পালা।
দিশা কাঁদছে।
আরিয়ান দিশার কাছে এসে দুই হাত দিয়ে দিশার মুখটা তুলে চোখের পানি মুছে দেয়।
ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
চিন্তা করো না।ইনশাআল্লাহ্ খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।”
আমি অপেক্ষা করবো।”
নিজের খেয়াল রেখ।খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করবে।
নিজের আর বাবুর খেয়াল রাখবে।”
হুম।”
আরিয়ানের এক বছরের জেল হয়।
এর মধ্যে তিথিরও ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়। ।
আজ আরিয়ানের ফেরার দিন।আরিয়ান বাড়িতে ঢুকতেই দিয়া “বাবা,বাবা”
চিৎকার করতে করতে ছুটে যায় আরিয়ানের কাছে।
আরিয়ানও মেয়েকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দেয়।
দিশাও এগিয়ে আসে।এবার সব বাঁধা শেষ।সুখের সংসার বাঁধবে এখন ওরা।


<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com