গল্পটা ভালোবাসার । পর্ব -০৭
ওযুখানা থেকে এসে ফ্লোরে জায়নামাজ টা পেড়ে নিলো।বোরখাটা পড়ে আয়নার সামনে থেকে নামাজের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।তাকে আজকে এই ছেলেটাকে পাবার জন্য খোদার কাছে মিনতি করতে হবে।এতো রাতে আগে কখনো উঠার অভ্যাস নেই তাই নামাজ শেষ করে সে বিছানাই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
-সকাল হতেই হঠাৎ নীলিমার চোখে রোদ লাগতেই তার চোখদুটো খুলে গেলো।তাকাতেই দেখে আবির তার কাছে হাজির।
—এখনো ঘুমিয়ে আছো?ঘড়িতে কতো বাজে সেটা দেখেছো?(আবির)
—আপনি একটু সাড়া দিলেই উঠে যেতাম।তো বলুন এখন আমাকে কি করতে হবে?
—আজকে তোমাকে পতিতালয় ভ্রমন করতে নিয়ে যাবো।
—কি?সত্যি আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে?
—হ্যাঁ তুমি ঘুম থেকে উঠে দেখ একটা কাপড় রাখা আছে।সেটা পড়ে বাইরে চলে এসো।কথাটা বলে আবির রুম থেকে বের হয়ে গেলো।নীলিমার মন খুশিতে ভরে গেলো।তার ইচ্ছাটা আজকে পূরন হতে যাচ্ছে।টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখে তার জন্য একটা পোশাক রাখা আছে।প্যাকেট থেকে পোশাক বের করে বুঝতেই পারছে না এটা কিভাবে পরিধান করে?
পাশে খেয়াল করে দেখলো তার জন্য ও আবির ব্যবস্থা করে রেখেছে।পোশাকটা পড়ে আয়নার সামনে যেতে সে নিজের মুখ নিজেই ঢেকে নিলো। এটা কি?তার শরীরের প্রায় অংশই তো দেখা যাচ্ছে।নিজেকে তার খুব খারাপ লাগছিলো।কিন্তু আবির পড়তে বলেছে বিধাই সে সেটাই পড়ে বাইরে বের হয়ে এলো।চুপিচুপি নীলিমা গাড়ির ভিতরে বসে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।আবির নীলিমার এমন কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে।আবির জানে নীলিমা একবার সেখানে যাবার পর আর ভুলেও এইরকম পরিকল্পনা করবে না।তবে নীলিমাকে দেখতে বেশ হয়েছে।কিন্তু নীলিমার দিকে তাকাতে পারছে না।চুপচাপ হাসিটা থামিয়ে রেখে গাড়িটা নিয়ে রওনা দিলো।
-পতিতালয়ের গেটে আবির গাড়িটা থামাতেই চারপাশের ছেলেপেলে গুলো কিছু একটা আচ করতে পেরেই চুপচাপ এক কোনাই গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।গাড়ি থেকে আবির নামতেই খেয়াল করলো চারপাশটা একদম ফাকা।সে পিছনে তাকাতেই দেখে তার পিছনে ১৫ টা গাড়ি দাড়ানো।আবির একটা হাসি দিয়ে চুপচাপ ভিতরে চলে গেলো।নীলিমা গাড়ি থেকে নামছে আর চারপাশটা বারবার দেখছে।মনে মনে বলতে লাগলো,,
—ছি কি বিচ্ছিরি পোশাক।ওড়নাটাও নেই।কোমর আর হাটু এভাবে বের হয়ে থাকলে লোকজন তাকে দেখে কি ভাববে?গেটের ভিতরে যেতেই নীলিমার চোখদুটো বড় হয়ে গেলো।কি সব হচ্ছে এখানে?যে যেখানে পারছে সেখানে কিসব আজেবাজে কাজ করছে।পাশের রুম থেকে আওয়াজ আসতেই নীলিমা এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে দুরে চলে
এলো।চারদিকের মেয়েদের গায়ে তার থেকেও বিচ্ছিরি পোশাক।কেউ কেউ আবার নিজেই ছেলেদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। হটাৎ তার এক পাশে নজর যেতেই কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রুমে একটু উকি দিতেই এক ঝটকায় মাটিতে পড়ে গেলো।এখানে কি করা হচ্ছে মেয়েদের সাথে।
নীলিমার পাশের মেয়েটাকে হটাৎ করে কয়েকটা ছেলে এসে উচু করে নিয়ে চলে গেলো।মেয়েটা অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে বাচাতে পারলো না।তার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো?
তার পাশ থেকে মেয়েটাকে নিয়ে গেলো।কিন্তু তাকে কেন কেউ কিছু বললো কেন?কথাটা ভাবতেই হটাৎ তার বুকের দিকে খেয়াল করতেই দেখে একটা কার্ড লাগানো।
নীলিমা একটু ভালো করে লক্ষ করে দেখে সেখানে একটা পুলিশ লাইসেন্স কার্ড লাগানো।
চারদিকে এমন অবস্থা দেখে চারপাশটা তার কাছে আধারের মতো লাগছিলো।পাশের একটা গেট থেকে দেখে একটা উলঙ্গ মেয়েকে কয়েকজন ধরে আবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।নীলিমার বুঝতে বাকি রইলো না, মেয়েটাকে এখানে পাচার করা হয়েছে।
-এক দৌড়ে চারু বাইরে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।গাড়িটা আর সেখানে এক মুহুর্ত দাড়ালো না।সোজা বাসার সামনে থেমে গেলো।গাড়ি থেকে নীলিমা নেমে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।আবির বুঝতে পেরেছে নীলিমা সবটুকুই বুঝে নিয়েছে।সে জানতো নীলিমাকে পুরো বোঝানোর দরকার নেই।
সেজন্য নীলিমাকে শুধু পতিতালয়ের কেনাবেচার জাইগাটাই দেখিয়েছে।আসল ভোগের জাইগাটা তাকে দেখাই নি।
.রাতে দুজনেই ছাদে বসে রয়েছে।পাশাপাশি বসে দুজনেই কফি হাতে নিয়ে তাদের সামনে থাকা চাদটা দেখছে।পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,,
—ভাইয়া আজকালেও মেয়েরা এতো নির্যাতিত?
—এটাই সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা।যেটার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।
—ভাইয়া একটা কথা বলবো?
—হ্যাঁ বলো?
—আপনি এই পেশাই কত দিন আছেন?
—প্রায় ১০ বছর।
—আপনি তো অনেক মেয়েকে সেখানে পাঠান।কখনো কারো প্রতি আপনার আপনার মায়া লাগেনি?
কথাটা শুনে আবির কিছুক্ষন নিরব রইলো।
—একটা মেয়ে যদি তার নিজের জীবন নিজে থেকেই বিপদের দিকে ঠেলে দেই।তখন আমার কিছু করার থাকেনা।যদি কেউ কখনো আমাকে বলতো,ভাইয়া আমি এসব পথে যাবোনা।তাহলে তাকে তক্ষুনি ছেড়ে দিতাম।কিন্তু জানিনা এসব মেয়েরা কখনো সে পথ থেকে আর ফিরে আসতে চাইনা।
—ভাইয়া এটার জন্য কি শুধু আমাদেরকেই দায়ী করলে ঠিক হবে?
—নীলিমা তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো?
—হ্যাঁ করেন।
—যখন তুমি আমার দেওয়া পোশাক পড়ে বের হয়েছিলে।তখন লোকজনের তোমার প্রতি কেমন আকর্ষন হয়েছিলো?
—আমি যখন চারপাশটা দেখছিলাম।সবাই আমাকে বারবার দেখছিলো।
—মেয়েদের এই একটাই সমস্যা যেটা তারা তাদের পোশাকের মধ্যে প্রচার করে বেড়াই।অনেকে বলে তাহলে শিশুরা কেন নির্যাতিত হয়?আসলে এই কথাটার কোনো ভিত্তিই নেই।কারন খারাপ কাজ মানে খারাপ।যেটা তুমি ওদেরকে দেখাচ্ছো সেটা তারা তোমার থেকে নিতে না পেরে শিশুদের উপর প্রভাব ফেলছে।
—সবাই তাদের নিয়তির শিকার।(একটা ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে নীলিমার )
—তো আজকের কাহিনীর পর তোমার ডিশিসন কি হলো?
—সেটা এখনো ভাবিনি।আচ্ছা আমাকে আর কতোদিন থাকতে হবে এখানে? কথাটা শুনে আবির কিছুটা গম্ভির হয়ে গেলো।তার ভিতর কি চলছে সেটা সে নিজেও বুজতে পারছে না। মেয়েটাকে সে তার কথাটা বোঝাতে পারছে না।আবির নীলিমার পাশে গিয়ে নীলিমার হাতটা ধরে,,
—নীলিমা আকাশের ওই চাদটা দেখছো?
—জি।(কিছুটা ভিত আর চমকে গিয়ে)
—এই চাঁদকেই আমরা রাতের সবচেয়ে সৌন্দর্য ভাবি।কিন্তু এই চাদের সুন্দর প্রতিভাটা কোথা থেকে আসে?সেটা আসে সুর্য আছে সেটার জন্য।আর ঠিক তেমনি একটা মানুষের জন্য দরকার আরেকটা হাত।যেটা তাকে বাঁচতে শেখাবে আর তার হাতদুটো সবসময় ধরে রাখবে। কথাটাগুলো নীলিমার ভিতরে শিহরিত হতে শুরু করলো।নীলিমার চোখে চোখ রেখে দাড়িয়ে পড়লো আবির।সে নীলিমার চোখে কিছু একটা লক্ষ তাকালো।হইতো আজ দুজনেরই কিছু একটা ফিল হচ্ছে।
নীলিমার হাতদুটো উচু করে,,
—এই হাতদুটো দেখছো ?এটা তুমি তোমার ইচ্ছাতে সবদিকেই নিতে পারবে।ঠিক তেমনি সেখানে যাওয়াটা তোমার উপর নির্ভর করবে।শুধু একটু বুদ্ধি দিয়ে ভেবে দেখো। কথাটা বলেই পাশ থেকে আবির হেটে হেটে চলে গেলো।
চলবে
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com