Breaking News

কথা দিলাম | পর্ব - ৭

ঘুম ভাঙতেই আয়ানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে তিথি।চোখ আটকে যায় ছেলেটার মায়া জড়ানো মুখটার দিকে।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিথি।জেগে থাকলে এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিত।কিন্তু ঘুমন্ত আয়ানের মায়ায় জড়িয়ে গেছে ও।আস্তে করে আয়ানের হাতটা নিজের ওপর থেকে নামিয়ে রাখে তিথি।উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।কিচেনে মীরা আর মিসেস বন্যা চৌধুরী কাজ করছেন।
-“আরে আরে।নতুন বউ সকাল সকাল রান্নাঘরে?”

-“আপু,নতুন হই বা পুরাতন বউই তো।আসতে তো হবেই।”
-“হুম।এই নাহলে আমার মেয়ের কথা।তুই এই বাড়ির বউ না আমার মেয়ে।বুঝলি?”
-“হ্যাঁ,মা।” তিথিও তদের সাথে কাজে লেগে যায়।ঘুম ভেঙে পাশে তিথিকে না পেয়ে উঠে বসে আয়ান।মেয়েটা সকাল সকাল উঠেই কিচেনে গেছে।আয়ান উঠে দরজার কাছে আসে।যা ভেবেছে তাই।তিথি কিচেনে কাজ করছে।আয়ানের থেকে পালানো?মজা তো বুঝতেই হবে।

চপিং বোর্ডে সবজি কাটছিল তিথি।”তিথি,বাবু একটু আস তো।” আয়ানের ডাকে চমকে ওঠে তিথি।পাগল হয়ে গেল নাকি?সকাল সকাল উঠে কী আবোল তাবোল বকছে?”জান,কোথায় তুমি?রুমে আস।কাজ আছে।” মীরা আর বন্যা চৌধুরী মিটমিটিয়ে হাসছে।তিথি লজ্জায় যায় যায় অবস্থা।সবজি কাটার গতি বেরে গেছে তিথির।এই সবজির জায়গায় লোকটার আলজিভটা থাকলে আরও ভালো হতো।”সোনা,আমি ডাকছি শুনতে পাচ্ছ না?আমি কিচেনে গেলে কিন্তু সবার সামনে থেকে কোলে তুলে আনব।” তিথি মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে লজ্জায়।ভাইয়ের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে তিথির কাছে আসে মীরা।

-“তিথি,তুমি নাহয় যাও।আমি এইদিকটা দেখছি।”
-“আপু!”
-“আহা,যাও না।আমার ভাই যেটা বলল সেটা কিন্তু করতেও পারে।যাও।” মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে রুমে যায় তিথি।আয়ান পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।তিথিকে দেখেই শয়তানি হাসি হাসে।তিথি রাগে কটমট করছে।
-“স্টুপিড!সকাল সকাল ড্রিংক করেছ নাকি?নিজে নাহয় নির্লজ্জ।আমার তো মান-সম্মান আছে।”
-“তুমি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে গিয়েছিলে কেন?”
-“তো কী করতাম?তোমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতাম?”
-“সেটাই করা উচিত ছিল।”
-“অসহ্য!কী করা লাগবে বলো।”

-“টাওয়েলটা এনে দাও।”
-“হোয়াট?এই সামান্য কারণে এতকিছু?”
-“আর কী চাইব বলো?একটা কিস করবা?”
-“উফ!বিরক্তি!এই নাও তোমার টাওয়েল।” টাওয়েলটা নিয়ে আয়ানের দিকে ছুড়ে দেয় তিথি।তারপর ঘর থেকে বের হতে গেলে আটকে দেয় আয়ান।
-“আমি যেতে বলেছি?”

-“আরও কী লাগবে?” আয়ান উঠে তিথির কাছে যায়।তিথির কোমর টেনে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়।আয়ানের মুখ তিথির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।তিথির ভেতরের ধুকধুক বেড়ে গেছে।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।আয়ানকে সরাতেও পারছে না।যত জোরে ধাক্কা দিচ্ছে।আয়ান তত জোরে ওকে জড়িয়ে ধরছে।তিথির গালে ঠোঁট বুলিয়ে মুচকি হেসে ওকে ছেড়ে দেয় আয়ান।”ইটস্ কলড মর্নিং কিস।” তিথি রাগী দৃষ্টিতে একবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। “আয়ান!আয়ান!!” চিৎকার করতে করতে বাড়িতে ঢোকে তিয়া।তিয়ার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে হাজির হয়।আয়ান নিচে নামতেই ওর দিকে তেড়ে যায় তিয়া।
-“তোমার সাহস কী করে হয় আমাকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করার?”
-“এতে সাহসের কিছুই নেই,তিয়া।বিয়েতে মোটেও আমার মত ছিল না।আমাকে বিয়ে করলে তুমি সুখী হতে না।”

-“আমি কিছু জানি না।আমাদের এংগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছিল আর তুমি?”
-“তিয়া,নিজের জীবনটা গুছিয়ে নাও।অযথা নিজের আর আমাদের শান্তি নষ্ট করো না।”
এমন সময় তিথি নেমে আসে।তিথিকে দেখে আরও চটে যায় তিয়া।
-“তোমাকে আমি ছাড়ব না,তিথি।তুমি আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিলি।আমি তোকে দেখে নেব।”
-“দেখো তিয়া,আমি তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে চাইনি।তোমার ভালোবাসা যদি আমার কাছে আসে।আমার কিছু করার নেই।আমি ফিরিয়েও দিয়েছিলাম।ও না মানলে আমার কিছু করার নেই।”
-“আহা,তুমি তো বাচ্চা না?তোমার হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে বাবু সাইন কর আর তুমি সাইন করে দিলে।”

-“খবরদার তিয়া!যা বলার আমাকে বলো।তিথিকে কিছু বলার সাহস করো না।আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
-“বেশ!আমিও দেখে নেব তোমরা কতটা সুখী হতে পারো।”
রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে যায় তিয়া।আয়ানও রুমে চলে যায়।তিথিও পেছন পেছন উপরে যায়।আয়ান প্রচণ্ড রেগে আছে সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
-“আয়ান,তিয়ার সাথে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।তোমার ওর সাথে এই ব্যবহার করাটা উচিত হয়নি।আসলেই তো তুমি ওর ভালোবাসা ছিলে।আমার কেড়ে নেওয়াটা ভুলই হয়েছে।” তিথির কথায় প্রচণ্ড রেগে যায় আয়ান।তিথির দুই কাধ ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আয়ান।ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে তিথি।

-“কী ভাব কী তুমি নিজেকে?বউয়ের অধিকার দিয়েছি বলে মাথায় চরে বসবে?আমি বলেছি এই বাড়ির বউ হিসেবে সব অধিকার পাবে তুমি।কিন্তু যতদিন না এটা স্বীকার করছ যে তুমি আমাকে ভালোবাস ততদিন আমার স্ত্রীর অধিকার পাবে না তুমি।” তিথির চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।আয়ানের চোখে ক্রোধ দেখছে ও।

-“তোমাকেই আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না আমি।এই বলো যে আমাকে ভালোবাস।আবার মিজবিহেভ ও কর।আমি তো এটাই বুঝি না আমার প্রতি তোমার ফিলিংস্ কী?”

-“সেটা বুঝলে তো কাজই হতো।”
-“বুঝতে চাই আমি,আয়ান।বোঝাও না আমাকে।”
আয়ানের দৃষ্টি ক্রমশ শান্ত হয়ে ক্রোধ সরে গিয়ে নেশা ভর করে।
-“বুঝতে চাও।”
-“হুম”

মাথা নেরে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয় তিথি।এবার আয়ান তিথির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়।ওর উষ্ণ নিঃশ্বাসগুলো তিথিরর মুখের উপর আছড়ে পড়ছে।চোখ বন্ধ করে নেয় তিথি।অনুভব করে ওর ঠোঁটে অন্য একজোড়া ঠোঁটের শীতল স্পর্শ যা ক্রমশ দৃঢ় হতে থাকে।কিছুক্ষণ পর সরে আসে আয়ান।মুচকি হেসে বলে,”এবার বুঝলে আমার ফিলিংস্?” তিথি মুচকি হেসে আয়ানের বুকে মুখ লুকায়।আয়ান বুকে জড়িয়ে নেয় তিথিকে।আজ ওদের মধ্যে থেকে সব বাঁধা দূর হয়ে গেছে।তিথিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার পানে যায় আয়ান।পারি দেয় সুখের সাগরে।আজ আর কোনো বাঁধা নেই দুজনের মাঝখানে।দুজন দুজনের মধ্যে মিশে যায় ওরা।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com