Breaking News

বিশ্বাসঘাতক | শেষ পর্ব

আবির তানিয়ার খবর পেয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে দৌড় দিলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো গাড়ী নিয়ে আর যে খবর টা দিয়েছে তার কাছে গিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল..
– কোথায় তানিয়া? বলো আমাকে কোথায় সে?আবিরের কথা শুনে ওর বন্ধু বলল
– তানিয়া আইল্যান্ডের একটা দ্বীপে ওর বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে গেছে।
– কিন্তু তা তুই জানলি কি করে?…আবিরকে তার বন্ধু টা তানিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডের আইল্যান্ডে তোলা পিক টা দেখিয়ে বলল…

– এই দেখ ফটো এই ফটো তানিয়া তুলেছে?
– কিন্তু তুই এই ফটো ফেলি কোথায়?
– তানিয়ার প্রেমিকা ফেসবুকে এই ফটো আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছিলো আমরা এখন আইল্যান্ডে একটি সুন্দর দ্বীপে। এবার বুঝলি?
– না বুঝলাম না। আইল্যান্ড থেকে ক্যামনে ফটো আপলোড করে সেখানে তো নেটওয়ার্ক থাকার কথা না। আর এমন স্থানে মানুষ কিভাবে থাকতে পারে একদম বসবাস উপযোগী না।
.,,,,,,,আবির কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আর যদি তানিয়া আইল্যান্ডেই গিয়ে থাকে তাহলে ও তো তাকে খুজে বের করা সম্ভব না কারন সেখানে অনেক অনেক দ্বীপ আছে। আবির এসব ভেবে অনেক ডিপ্রেশনে ভুগতে লাগলো। কি করবে কিছুই মাথার মধ্যে ঢুকছে না। মনে মনে বলছে, তোরে শুধু একবার পাই আমার জিবন ঝালা ফালা করে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে রোমান্স করা বের করছি।

,,,,,আবির তার সমস্ত বন্ধুদের বলল তারা যেনো সবাই হেলিপ্টার নিয়ে তানিয়া কে খুজতে যায়। আর যে ভাবেই হোক না কেনো যেনো তাকে খুজে বের করে। এমনকি আবির ও নিজেই গেলো খুজতে।
,,,,,এদিকে নীলার অবস্থা বেশি ভালো না।শুধু কাঁদতেই থাকে। নীলা তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সে ভাবছে কত বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছে। নীলার খারাপ অবস্থা দেখে নীলার বাবা মা নীলাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।এখন নীলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। চোখ বেয়ে টপ টপ করে জল পরছে নীলার।

আবিরের বাবা মা ও এমন অবস্থায় খুব চিন্তা করতে থাকলো আবিরকে নিয়ে। কি করছে কিছু বুঝতে পারছে না। আর এদিকে আবির পাগলের মতো খুজতে থাকে তানিয়াকে।প্রায় ৩ দিন পর তানিয়ার খোজ পেলো। অনেক কস্টে ধরেছে আবির তানিয়াকে।আর একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে তানিয়াকে। তানিয়া এর আগা গোড়া কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কেনো তাকে এভাবে ধরা হলো।
আবির তানিয়ার কাছে গিয়ে দেখলো তানিয়াকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তানিয়া আবিরকে দেখে চমকে উঠল আর বলল

– নীল তুমি?আবির তানিয়াকে বলল
– হ্যা আমি! কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না?
– নীল আমাকে কেনো বেঁধে রেখেছো?
– তুমিও যে আমাকে বেঁধে রেখেছিলে তাই আমিও তোমাকে বেঁধে রেখেছি।আবিরের কথা শুনে তানিয়া বলল

– নীল এসব কি বলছো তুমি? আমি কেনো তোমাকে বেঁধে রাখবো আমিতো কিছু ক্ষতি করিনি তোমার।
– তুমি আমার ক্ষতি না করলেও আবির আর নীলার ক্ষতি করেছো।
– মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
– আবিরকে ধরে নিয়ে গিয়ে রক্তাক্ত করা থেকে শুরু করে এসিড মারা অবদি এসব তুমি করতেছো বলো?

,,,,,,,,,,,আবিরের কথা শুনে তানিয়া ঢোক গিলতে থাকতো আর ভাবলো এসব নীল জানলো কিভাবে? তানিয়া বলল
– না না আমি কিছু করিনি। আবির নীলার ভালোবাসার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাই নীলা তার শাস্তি দিয়েছে।
– ওহহ তাই বুঝি? তা কি এমন কাজ করেছে যার কারনে নেই নীলা আবিরকে এমন ভাবে মেরেছে?
– কারন আবির শুধু নীলাকে নয় আরো বেশ কয়েকটা মেয়ের সাথে প্রেম করে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলো।

– আর সেটা তুমি জানলে কিভাবে?
,,,,,আবিরের এই প্রশ্নটা শুনে তানিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তানিয়া বলল
– দেখো নীলা এসব আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই! তুমি আমার সব খুলে দিয়ে মুক্ত করে দাও তা না হলে কিন্তু আমি পুলিশে জানাবো।
– তোমাকে খুজে বের করতে আমার ২ মাস লেগেছে আর তোমাকে ছেড়ে দিবো। আর এই আইল্যান্ড এ কে তোমাকে বাঁচাতে আসে সেটাই দেখব আমি।
– নীল তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি কি যা তা বলছো তুমি? আমি কি করেছি তোমার?আবির তানিয়ার কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলল…

– তুমি আমার সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছো। কারন আমি নীল না আমি হলাম আবির। আর তুমি আমাদের ভালোবাসায় ফাটল ধরিয়েছো তোমার কথায় নীলা আমার সাথে যা নয় তাই করেছে।
,,,,,আবিরের কথা তানিয়া কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। তানিয়া বলল
– আমি কিছু করিনি আবির। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও?
– সত্যিই তুমি কিছু করনি?

– সত্ত্যিই বলছি আমি কিছু করিনি। আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়ে এমন করতে পারি বলো?
,,,,তানিয়ার এসব কথা শুনে আবিরের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। তার কাছে থাকা ইলেক্ট্রিক তার টা তানিয়ার শরীরে লাগিয়ে দিলো আবির। ইলেক্ট্রিক শকড খেয়ে তানিয়া চিৎকার করতে থাকলো। আজ এই চিৎকার আবিরের কানের পর্দা ভেদ করতে পারলো না। বেশ কিছুক্ষন পর আবার তারের লাইন টা অফ করে দিলো। তানিয়া চিৎকার থামিয়ে বলল,,,,,
– তোমার পায়ে পড়ি প্লিজ আমাকে মেরো না।

– তাহলে বলো সব সত্ত্যি কথা?তানিয়া বলতে লাগলো….,,,,
– আবির তোমার আর নীলার ভালোবাসা দেখে আমার হিংসা হতো কারন আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বোঝার চেস্টা করোনি। তোমার আর নীলার মেলামেশা আমি একদম পছন্দ করতাম না তাই আমি প্লান করে সব কিছু ম্যানেজ করেছি।
,,,তানিয়ার কথা শুনে আবির বলল

– বাহহ তানিয়া বাহহ। খুব ভালো একটা কাজ করেছো তুমি? তুমি জানো নীলা আমাকে কতটা ভালোবাসে ওর জিবনের থেকে বেশি। আর সেই তুমি এমন করতে পারলে? তুমি জানো তানিয়া আমি নীলাকে বিয়ে করার পর কত কস্ট দিয়েছি। কিন্তু নীলা আমার দেওয়া সব কস্ট মুখ বুজে সহ্য করেছে।
,,,,কথাগুলো বলে আবির কেঁদেই ফেলল। চোখ থেকে অবিরত জল গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে । আবির আবার বলল কাঁদতে কাঁদতে

– কি ভেবেছিলে তুমি আমাদের দুজনের জিবনটা এমন করে দিয়ে তুমি সুখে থাকবে। কিন্তু না আমি তোমাকে সুখে থাকতে কখনই দিবো না কখনই না।,
,,,তানিয়া এবার কেঁদে কেঁদে বলল
– প্লিজ আমাকে মেরো না। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি এমন আর কখনও করবো না।
– না তানিয়া না আমি তো তোমায় মারবো না। তোমাকে মারলে তো তৎক্ষণাৎ সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো। তোমাকে এমন শাস্তি দিবো এর পর তুমি এমন কিছু করার চিন্তা মাত্রই করতে পারবে না।
,,,,,,,,,তানিয়া অনেক অনুরোধ করছে আবিরকে কিন্তু আবির আজ কোন কথা শুনছে না।আবির ওর ফ্রেন্ড নিশান কে বলল…

– নিশান শোন?নিশান বলল
– হ্যা বল কি করতে হবে?
– তুই তানিয়া কে এখন ধর্ষন করবি। ধর্ষনের পর ওর একটা হাত আর একটা পা কেটে ফেলবি।
,,,,,আবির নিশানকে কথাগুলো বলার পর চলে গেলো। আর নিশান ও তানিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়লো রাক্ষসের মতো। তানিয়া অনেক অনুরোধ করছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনছে না।কিছুক্ষন পর নিশান ফোন করে বলল
– হ্যালো আবির?
– হ্যা নিশান বল?
– কাজ হয়ে গেছে।

– গুড। তানিয়ার একটা হাত আর একটা পা কেটে হেলিপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যা।
,,,নিশান আবিরের কথা মতো কাজ করলো।হাত পা কেটে হাসপাতালে ভর্তি করালো।এদিকে আবির আইল্যান্ড থেকে বিমানে করে সোজা দেশে আসলো। আর এসেই নীলার খোজ করলো। আবির জানতে পারলো নীলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাই আর দেড়ি না করে আবির হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে চলে গেলো নীলার কাছে ।

,,,,হাসপাতালে গিয়ে নীলার বাবা মাকে দেখতে পেলো আবির তাদেরকে বলল নীলার কথা। নীলার মা বলল নীলার সাথে দেখা করতে আবির রুমে ঢুকে দেখতে পেলো নীলা ঘুমিয়ে আছে। তার পাশে একটা সুন্দর ফুটফুটে বেবি। আবির বুঝতে পারলো যে এটা তার সন্তান। আবির নীলার পাশে বসে নীলার হাত টা ধরে কাঁদতে থাকলো।

,,,,,খুব জোরে জোরে কাঁদছে আবির। আবিরের কান্নার শব্দে নীলার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখছে আবির তার হাত ধরে কান্না করছে। নীলাকে আবির কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,
– আই এ্যাম স্যরি নীলা ।নীলা আবিরের এমন অবস্থা দেখে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। নীলার চোখ থেকেও পানি পরছে ঝড় ঝড় করে। আবির নীলার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল
– আমার ভুল হয়ে গেছে নীলা। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও? তোমার সাথে এমন করা আমার ঠিক হয়নি।এবার নীলা চুপ করে না থেকে বলল..

– তুমি কেনো এসব বলছো? ক্ষমা তো আমি চাইবো তোমার কাছ থেকে কারন তোমাকে আমি বিনা দোষে অনেক কস্ট দিয়েছি। তোমার বোনের সুখের সংসার টা আমি ভেঙে তছনছ করে দিয়েছি। ক্ষমা তো আমি চাইবো আবির। ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেনো? প্লিজ আর কেঁদো না তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা।

,,,,আবির ও নীলা দুজনেই কাঁদছে। আবির নীলার হাত টা শক্ত করে ধরে আছে। কেউ কিছু বলছে না। নীলা কান্না জড়িত গলায় বলল
– দেখো তোমার মেয়ে হয়েছে?আবির তাকিয়ে আছে তার মেয়ের দিকে। কিন্তু কান্না টা থামাতে পারেনি এখনও। নীলা বলল
– আবির তোমার আমার মধ্যে যা হয়েছে তার জন্য তানিয়া দায়ি।
– আমি জানি নীলা সেই জন্য তো ওর শাস্তি দিয়েছি আমি।
– কি করেছো তানিয়াকে?

– আমার ফ্রেন্ডের দ্বারা ধর্ষন করিয়ে একটা হাত আর একটা পা কেটে ফেলেছি। আর ও এখন হাসপাতালে আছে যখন সুস্থ হবে তখন একটা কিডনি আর একটা চোখ তুলে নিবো। তারপর সেই কিডনি একটা গরীব মানুষ কে দান করবো আর চোখটাও।
,,,,,,নীলা খুব কস্টে বিছানা থেকে উঠে বসলো আর আবিরকে জরিয়ে ধরে থাকলো আর বলল
– আমি তোমাকে ভালোবাসি আবির। খুব ভালবাসি।

– আমিও ভালোবাসি।,,,,,এমন সময় আবিরকে তিথি ফোন করেছে। আবির ফোন ধরতেই নীলা ওপাশ থেকে বলল
– হ্যালো মিস্টার,,, আপনি তো আমার ভালোবাসা বুঝলেন না আপনি তো নীলার জন্য পাগল। আমার বিয়ে আর ১২ দিন পর ছেলেকেও আমার পছন্দ হয়েছে তাই আগে ভাগেই জানিয়ে দিলাম আর হ্যা বিয়েতে নীলাকে সাথে করে নিয়ে আসবেন আর আমার জন্য কোন উপহার আনতে হবে না। আপনি আসলেই হবে।.

.কথাগুলো বলে তিথি ফোন কেটে দিলো। এদিকে আবির আর নীলা দুজন দুজন কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে। অনেকদিন পর তারা একে অপরকে কাছে পেয়েছে। থাকুক জরিয়ে ধরে। অটুট থাকুক তাদের ভালোবাসা। এই ভালোবাসায় আর কেউ ফাটল ধরাতে পারবে না। এখন চলবে না কারো উপর কারো প্রতিশোধ এখন চলবে শুধুই ভালোবাসা।

<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com