Breaking News

থার্টি ফার্স্ট নাইট । পর্ব -১১

অনাহিতা ভোরবেলা উঠে রুমির সাথে রান্না সেরে নিয়েছে।

তারপর নিজে গোসল সেরে প্রেমশাকে ডাকতে গেল।প্রেমশা ঘুমের সাগরে ডুবে ছিল।অনাহিতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি স্বরে বলল,”পিচ্চি মা,উঠো উঠো।ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।

” একই স্বরে অনাহিতা কয়েকবার ডাকলো।তার কণ্ঠস্বর শুনে অভিনবের ঘুম ভেঙে গেল।মৃদু হেসে সে অনাহিতার উদ্দেশ্যে বলল,”এত সুন্দর করে ডাকলে কারো ঘুম ভাঙবে না।

তোমার ডাকার অর্থ হলো ‘প্রেমশা আরো ঘুমাও’।” অনাহিতা বিপরীতে বলল,”আচ্ছা?

আপনি ডেকে তুলুন তাহলে।” অভিনব প্রেমশা গা স্পর্শ করতে চাইলে অনাহিতা খিলখিল হেসে বলে

,”ওয়েট ওয়েট,প্রেমশাকে না ছুঁয়ে ডেকে তুলুন।” -“অসম্ভব,প্রেমশার মতো ঘুম কাতুরে মেয়েকে কীভাবে না ছুঁয়ে ডাকবো?” অনাহিতা বিছানার পাশ থেকে উঠে গিয়ে বলল,”সেটা তো আমি জানি না।বাবার মতোই তো ঘুমায়।” অভিনব রাগি রাগি কণ্ঠে বলল,”কী বললে তুমি?আমি বেশি ঘুমায়?” হেয়ালি করে অনাহিতা উত্তর দিলো,”মোটেও না।আপনি তো সারারাত জেগে থেকে মশাদের সঙ্গী হোন।

বলেই সে খিলখিল করে হেসে উঠলো।অভিনব ক্ষণ পলক তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে দৃষ্টি তাক করে,

পরক্ষণে সরিয়ে নিলো।অনাহিতার দিকে দৃষ্টি গেলেই প্রথমে নজরে পড়ে তিল চিহ্নটি।

রেশমি মতোই কেন তিল হতে হলো?আচার-আচরণে তো মিল নেই।মেয়েটার হাসিও অসহ্যকর!

এই হাসির আওয়াজ কর্ণপাত করলে হৃদ মাঝারে অস্থিরতা শুরু হয়।

চারপাশের সবকিছু থমকে গিয়ে কানে শুধু এই একটা ধ্বনিই বাজতে থাকতে।

পাশে থাকা চশমা পরে নিয়ে অভিনব স্থান ত্যাগ করে মোবাইল ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।

অনাহিতা উঁচু আওয়াজে বলল,”রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন মশাই।

” অভিনব তা শুনতে পেয়ে বলল,”আমি রাগিনি।

” অনাহিতা বেলকনিতে এসে কোমরে হাত দিয়ে বলল

,”তাহলে প্রেমশার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে কেটে পড়লেন কেন?”

ফোনের দিকে তাকিয়ে অভিনব উত্তর দিলো,”ঝগড়া করতে চাইছো তুমি?

” কোমর থেকে হাত নামিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে অনাহিতা বলল,”যাহ বাবা!

আমি কখন ঝগড়া করলাম?” ঠোঁট কামড়ে অভিনব উত্তর দিলো,

“পাগল যেমন বুঝে না সে পাগল।তেমনি ঝগড়ুটেরাও বুঝে না সে ঝগড়ুটে।

” -“আপনি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি ঝগড়ুটে বলে অপমান করছেন?”

-“স্যরি তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে।ইন্ডাইরেক্টলি না,

আমি তোমাকে ডাইরেক্টলি ঝগড়ুটে বলছি।” অপমানে অনাহিতার মুখটা থমথমে হয়ে গেল।

অভিনব এভাবে কথার ভাঁজে কথা বলতে পারে,সেটা সে আগে ধারণা করেনি।

অনাহিতার নজরে আঁটকে গেল অভিনবের চোখে আঁটকে থাকা চশমায়।

পরক্ষণে মনে মনে ফন্দি আঁটে বলল,”আমি না-হয় ঝগড়ুটে, কিন্তু অন্য কারোর মতো কানা না।

” মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অভিনব হতবাক হয়ে বলল,”হোয়াট?কে কানা

?” অনাহিতা রুমে চলে আসতে আসতে বলল,”আমি ডাইরেক্টলি বলেছি আপনি কানা।

কা…না!” পরে বিড়বিড় করে বলল,”চোখে কিছু দেখে না।চার চোখওয়ালা চশমা পরে ঘুরে।

” শুনতে পেয়ে অভিনবও তার পিছু পিছু আসতে আসতে বলল,”আমার চোখে প্রবলেম বলে পরি না।

হ্যাডেকের জন্য।” অভিনবের আগের কথাকে নকল করে অনাহিতা বলল,

“পাগল যেমন বুঝে না সে পাগল।তেমনি কানাও বুঝে না সে কাআ..না।

” অভিনবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অনাহিতা রুম থেকে বের হয়ে গেল।

 

অভিনব শুধু তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষণে উঁচু স্বরে বলল,”চা পাঠিয়ে দিয়ো।

” প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর অনাহিতার বানানো চা খাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

তবে বেশ ছটফটে স্বভাবের মেয়েটা।দিন যত যাচ্ছে তাদের সম্পর্কটা ততই রঙিন হচ্ছে।

সকালের খাবার পর্ব শেষ করে অনাহিতা নিজের তৈরি হয়ে প্রেমশাকেও স্কুলের জন্য তৈরি করে দিলো।

অভ্যাসগত প্রেমশার কপালে চুমু দিয়ে সে বলল,”ক্লাসে গুড গার্ল হয়েই থাকবে।

কোনো কমপ্লেন যেন মিসের কাছ থেকে না শুনি।” প্রেমশাও প্রতিদিনের মতো বলল,”বাব্বাকেও বলো।

” অভিনব চুল করতে করতে বলল,”আমি গুড বয় হয়েই থাকি।

তোমার মতো দুষ্টুমি করি না।” অভিনবকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে প্রেমশা জেদের সুরে একই কথা আবারো বললো।

অনাহিতা হেসে বলল,”প্রেমশার বাবা,গুড হয়ে থাকবেন।হয়েছে এবার?

” প্রতিবারের মতো প্রেমশাও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।কথাটা বলতে আগের মতো আর অস্বস্তি লাগে না।

প্রকৃতির নিয়মে সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। নিশি দরজায় টোকা দিলো।

অনাহিতা তাকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল,”আরে নিশি,ভিতরে আসো।” প্রেমশা তাকে লক্ষ্য করে বলল,”ফুফি,আমি হিরোর সাথে কথা বলবো।” মুহুর্তে নিশির চেহারার রঙ উড়ে গেল।প্রেমশাকে অবুঝ মনে করে সেদিন সূর্যের সাথে দেখা করালো।কিন্তু মেয়েটা তাকে দেখলেই সবার সামনে হিরো হিরো করছে।বেশ কয়েকবার তাকে এড়িয়ে গেছে নিশি।আজকেও একইভাবে এড়িয়ে অনাহিতার উদ্দেশ্যে বলল,”ভাবি,তোমার জলপাই কালারের শাড়িটা দাও না একটু।

 

” অনাহিতা সম্মতি জানিয়ে আলমারির দিকে এগোলো।অভিনব তখন অফিসের ফাইল দেখতে ব্যস্ত।

নিশি ফিসফিস করে প্রেমশাকে বলল,”সমস্যা কী তোর?হিরো হিরো করিস কেন?

” প্রেমশাও একইভাবে ফিসফিস করে বলল,”আমি হিরোর সাথে কথা বলবো।

” -“ঠিক আছে।কালকে দেখা করাবো।” -“দেখা করবো না,কথা বলবো।

” -“দেখা না করে কথা কীভাবে বলবি?” -“দেখা করে।” -“এক্ষুণি তো বললি দেখা করবি না।

তাহলে?” -“কথা বলবো।” নিশি নিজের কপালে হাত রাখলো।

প্রেমশার চঞ্চলতা দিন দিন বাড়ছে।মুখটাকে গণিত টিচারের মতো করে প্রেমশা

সমীকরণ মিলানোর পূর্ণ চেষ্টা করছে।নিশি তার মাথায় আলতো করে থাপ্পড় দিলো।

অনাহিতা নিশির হাতে শাড়ি দিয়ে বলল,”আমি আর প্রেমশা এগারোটার আগেই চলে আসবো।

মা আসলে দেখিও।” নিশি তাকে আশ্বস্ত করে বলল,”সমস্যা হবে না ভাবি।

আমি কলেজ যাচ্ছি না আজ।” অভিনব নিশির কথা শুনে বলল,”কেন?

কলেজ কী দোষ করলো?” নিশি উত্তর দিলো,”এমনি যাচ্ছি না।

” অভিনব হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল,”দিন দিন ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছিস তুই।

” নিশি বিড়বিড় করে বলল,”প্রেমে করলে কত কিছু হয় ভাইয়া।

” রেশমি তার ভাসুরের ছেলেকে ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে বাইরের বেঞ্চে বসে আছে।

মূলত অপেক্ষা করছে প্রেমশার।মেয়েটাকে আজ দেখতে ইচ্ছে করছে।

মনে পড়ছে তার প্রাক্তন সংসারকে।রেশমি কোনোদিন অভিনবকে ভালোবাসতে পারেনি।

তা জেনেও অভিনব সময়ের সাথে তাদের সম্পর্কটা রঙিন করেছে।

প্রেমশার জন্ম হলো…অথচ সেই সংসারকে নিজ হাতে রেশমি ভেঙে দিয়েছে।

রুপমের এমন আচরণ তার প্রাপ্য ছিল।প্রকৃতি নিজের নিয়মে সবাইকে শাস্তি দেয়।

রেশমিও এখন বুঝতে পারছে সব কিছু।সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।

এই সন্তান সে রাখবে।প্রয়োজনে সে সন্তানের বাবাকে ছেড়ে দিবে,

কিন্তু তার অংশকে কোনোদিন ছেড়ে দিবে না। ঘড়ি কাটা যখন দশের ঘরে তখন

আগমন হলো তার মেয়ে প্রেমশার।মেয়েটা সারাক্ষণ খিলখিল করে হাসতে থাকে কারণে-অকারণে।

এজন্য রেশমি বেশ কয়েকবার তাকে বকাও দিয়েছে।

প্রেমশার হাত ধরে রাখা অপর হাতটির দিকে দৃষ্টি পড়তেই রেশমি থমকে গেল।

এই মেয়েটাই কী অভিনবের দ্বিতীয় স্ত্রী?

রেশমি ওষ্ঠদ্বয়ে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে তাদের মা-মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে,

ওমনি প্রেমশার খিলখিল করে হাসা বন্ধ হয়ে গেল।সে অনাহিতার শাড়ির

আঁচলের নিচে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলো। অনাহিতা তাকে দেখে প্রশ্ন করলো,

“আপনি কে?” রেশমি নিরুত্তর হয়ে গেল।

কী উত্তর দিবে সে?প্রেমশার মা?নাকি অভিনবের প্রাক্তন?

প্রেমশা অনাহিতার আঁচলে টান দিলো।

পেছন ঘুরে অনাহিতার তার দিকে তাকালে সে নিচু হতে বলে।

অনাহিতা কথামত নিচু হলে প্রেমশা ফিসফিস করে বলে,”এটা মাম্মা।

” অনাহিতা মুখে একদম মেঘ জড়ো হলো।আপনা-আপনি ঠোঁটের হাসি মেঘের আড়ালে চলে গিয়েছে।

রেশমি প্রশ্ন করলো,”তুমি কী অভিনবের স্ত্রী?

” প্রেমশা আড়ালে থেকেই বলল,”ইয়েস,সি ইজ মাই সুপার মাম্মা।

” তার ফেলে আসা স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী।মেয়েটা বেশ সুন্দর তো!অনাহিতার নাম শুনেছিল সে।

কিন্তু ছবি দেখেনি একবারও।নিমিষে রেশমির ওষ্ঠ জোড়ায় কৃত্রিম হাসির রেখা আরো বিস্তৃত হলো।

কতটা সুখে আছে প্রেমশা!এটা কী ক’দিনের?নাকি আজীবনের?

রেশমি বলল,”চলো,কোথাও গিয়ে বসি।” অনাহিতা বুঝতে পারলো রেশমি তার সাথে সময় কাটাতে চাইছে।

কিন্তু এখন বাসায় যাওয়া দরকার।প্রথম দেখায় না বলে দেওয়াটাও বেমানান লাগছে।

পরক্ষণেে ভাবলো বাসায় একটু দেরি করলে তেমন সমস্যা হবে না।সে রেশমির সিদ্ধান্তে সম্মতি জানালো।

রোমিলা বেগম দরজার দিকে দৃষ্টি তাকিয়ে ড্রয়িংরুমটাই পায়চারি করছে।

অনাহিতা জানিয়েছে তার মা আসবে।মায়ের সাথে দ্বিতীয়,

তৃতীয় কেউ আসবে কি’না সেটা বলেনি।বিষয়টা তার মাথায় এখনি এসেছে।

নাহয় আগে অনাহিতার কাছ থেকে জেনে নিতো। রোমিলা বেগম বিড়বিড় করে বললেন,

“যদি অনাহিতার ভাই সাথে আসে তাহলে খুব বড় একটা ঝামেলা হবে।

সেই ঝামেলা রুপ নিবে ঝড়ের।ঝড়ের সাথে আইলা,সিডর সব আসবে।আল্লাহ গো!

” তাকে এভাবে অস্থিরতা সাথে বিড়বিড় করতে দেখে রুমি বলল,”খালা,কোন দোয়া পড়েন?

” হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে রোমিলা বেগম ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন।

বুকে থুথু দেওয়ার ভান করে তিনি বললেন,”তুই?দোয়া পড়বো মানে কী?

” রুমি বিস্ময় নিয়ে বলল,”বিড়বিড় করে কী বলেন?” রাগান্বিত স্বরে রোমিলা বেগম বললেন,

“তোকে বলতে হবে?যা তুই।শুন শুন,ইশুর কাছ থেকে পান বানিয়ে নিয়ে আসিস।

” আগের চেয়ে অবাক হয়ে রুমি বলল,”অবেলায় পান খাবেন ক্যান খালা?অসুখে ধরছে?

” এত কথায় বিরক্ত হয়ে তিনি আবারো ধমক দিয়ে বললেন,”আমার ইচ্ছে করছে তাই খাবো।

তুই যা নিয়ে আয়…নয়তো কয়েকটা দিবো।” -“কী দিবেন খালা?” -“আবার প্রশ্ন করিস?

” রুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থান ত্যাগ করলো।রোমিলা বেগম অস্থির হলেই এরকম করেন।

তখন নিশি বা অভিনবই তাকে সামলাতে পারে। রুমি খবরটা দিলো নিশিকে।

সে দৌড়ে এসে দে খলো তার মা বিড়বিড় করছে।নিশি ফিক করে হেসে বলল,

“মা,ভন্ডদের মতো করছো কেন?তাবিজে ধরেছে?” -“নিশি,ফাজলামো করিস না।

অনাহিতার বাপ-ভাই সাথে আসলে কী হবে জানিস?” হেয়ালি করে নিশি বলল,”কী হবে?”

রোমিলা বেগম অশান্ত মন নিয়ে নিশির পাশে বসে বলল,”কী হবে বুঝতে পারছিস না?

” -“মা,চিল;জাস্ট চিল।ভাবি এখন ভাইয়ার বউ।ভাবি কখনোই প্রেমশাকে ছেড়ে চলে যাবে না।

” -“যদি কেস টেস করে দেয়?” -“ধ্যুর,ওসব কিছু হবে না।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।

” রোমিলা বেগম তবুও শান্ত হলেন না।তার মনে এখন পুলিশের ভয় ঢুকেছে।

রুমিটাও এখনো পান নিয়ে আসছে না।যদি পান খেয়ে একটু শান্তি লাগতো!


চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com