Breaking News

গল্পটা ভালোবাসার । শেষ পর্ব

কথাগুলো নীলিমার কানে বাজতে লাগলো।সে কিভাবে বোঝাবে, আবির আমি শুধু তোমাকেই চাই।
রাতের ঠান্ডা হাওয়াটা তার শরীরে লাগছে।শরীরটা তার বারবার কাপুনি দিয়ে উঠছে।
হাতদুটো গুটিয়ে সে রুমে গিয়ে বালিশে মাথা রাখলো।আজকে তাকে আর বসে থাকলে হবেনা?এ কদিনে সে আবিরকে যে ভালোবেসে ফেলেছে তার ভালোবাসা কথাগুলো কালকে তাকে জানাতেই হবে।
রাতটা গভীর হয়ে এসেছে।নীলিমা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে।আর আবির চুপটি করে সোফাই ঘুমিয়ে রয়েছে।রাতের এই সময়গুলো তার সোফাতেই কাটাতে ভালোলাগে।

-সকাল হতেই নীলিমা ঘুম থেকে উঠে পড়লো।চুপিচুপি ফ্রেশ হয়ে এসে চারপাশে উকি দিয়ে সে আবিরকে খু্জতে লাগলো।কিন্তু তাকে যে পাওয়াই যাচ্ছে না।তাই চুপিচুপি নীলিমা আবিরের রুমে গিয়ে উকি দিলো।রুমের ভিতর তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।সে চুপিচুপি রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।রুমে যেতেই সে বেশ অবাক হলো।বাহ রুমটা তো বেশ সুন্দর।চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ তার টেবিলের উপর নজর পড়লো।টেবিলের উপর রাখা আছে বিভিন্ন ধরনের বই আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কিছু কাগজ।নীলিমা সেখান থেকে একটা কাগজ উঠাতে খেয়াল করলো সেটা তার নামেই রেজিস্টার আছে।কথাটা ভাবতেই খেয়াল হলো সেদিনের সেই অপারেশনের কথা।

কাগজটা খুলে সে বেশ অবাক হলো।কাগজে তো অন্যকিছু দেখাচ্ছে।তাহলে আবির যে বললো,,তাকে একটা মেডিসিন দেওয়া হবে?কাগজটা ভালো করে পড়ে সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না এই রিপোর্টটা সত্য?তাহলে আবির আগে থেকেই জানতো সে একদম ঠিকঠাক আছে।পাশ থেকে একটা আওয়াজ পেতেই সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো।বেলকনিতে দাড়িয়ে সে খুশিতে হাসতে লাগলো।সে যে কতোটা খুশি ছিলো?সেটা কাউকেই বোঝাতে পারছে না। এখন তার নিজেকে বলতে ইচ্ছে করছিলো,,

—নীলিমা তুই পারবি।আজ তোকে কথাটা বলতেই হবে। রুমে এসে সুন্দর করে একটা চিঠি লিখলো।সে এখন বুঝতে পারছে আবির কেন তাকে কখনো একলা ছাড়েনি।চিঠিটা হাতে নিয়ে বাইরে যেতেই দেখে আবির দাড়িয়ে রয়েছে।সে এক দৌড়ে গিয়ে আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
—আরে আরে নীলিমা তুমি এসব কি করছো?(নীলিমা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
—আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করেছে তাই ধরেছি।আপনি একদম চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন।
—কিন্তু এভাবে ঝাপিয়ে পড়ার কারনটাতো বলবে?

—এর আগে আপনিও আমাকে অনেক বার জড়িয়ে ধরেছিলেন।তখন আমি কিছুই বলেনি তাই এখন আপনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন।আবির চুপ করে দাড়িয়ে একটু রোমান্টিকভাবে নীলিমার কোমরে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো।নীলিমাকে দেখলেই শুধু তার এই একটাই দুষ্টুমি
মাথাই ভর করে।

নীলিমা একটু নড়েচড়ে উঠলো।সে বুঝতে পারছে এটা আবির ইচ্ছা করে তার সাথে মজা করছে।বেয়াদব ছেলেটা একটুও ফিলিংস বোঝেনা।সবসময় শুধু তার সাথে দুষ্টামি করে।
—এই শুনছেন?
—হ্যা বলো?
—কোমর থেকে একটু হাতটা সরানো যাবে?
—ইয়ে মানে?(তারাতারি করে হাতটা সড়িয়ে)
—একটা কথা বলার আছে?
—কথা বলবা নাকি কিছু করবে?যেরকম জড়িয়ে রেখেছো, তাতে আমারতো কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না।একটু ঘুমানোর শখ জাগছে।

নীলিমা আবিরকে এক ধাক্কায় সড়িয়ে দিয়ে লজ্জাই মুখটা লুকিয়ে নিলো।
—একটু একটু ফিলিংস হচ্ছে।যাই হোক নীলিমা তুমি কিছু একটা বলতে চাইছিলে?
—হ্যাঁ।আচ্ছা আমি যে আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছি।এতে আপনার কষ্ট হবেনা?(মুখটা নিচু করে)
—নীলিমা মুখ থেকে কখনো এমন কথা বের করবা না।তুমি কখনো আমার থেকে যাবেই না।
—কেন?
—আমিতো তোমার সাথেই সবসময় থাকবো।
—ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলার আছে?
—হ্যাঁ বলো।

নীলিমা পিছন থেকে যেই চিঠিটা বের করতে যাবে?ঠিক তখনি আবিরের ফোন বেজে উঠলো।আবির ফোন হাতে নিয়ে খেয়াল করলো বাসা থেকে বাবা ফোন করেছে।নীলিমা চোখটা বন্ধ করে চিঠিটা আবিরের সামনে রাখতেই সে ফোনটা কানে নিয়ে পিছন ফিরে একটা দুরে চলে গেলো।
অনেক্ষন হতে নীলিমা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবির তার পাশে নেই।খেয়াল করলো একটু দূরে আবির কার সাথে যেন কথা বলছে। নীলিমার মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো।চিঠিটা তার আর দেওয়া হবেনা দেখে চিঠিটা লুকিয়ে নিলো।
বেশ অভিমানের দৃষ্টিতে সে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষন পর আবির কথা শেষ করে খেয়াল করলো নীলিমা তার দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।নীলিমার পাশে এসে,,

—কিছু মনে করোনা।বাসা থেকে বাবা ফোন করেছিলো।
—কি জন্য?
—সবসময় বাসার বাইরে থাকি।সেজন্য বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে চাইছে।(মুচকি হেসে)
—বাহ তাহলে তো আপনাকে শুভেচ্ছা জানাতেই হচ্ছে।
—হুম।নীলিমা তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে?
—কই নাতো।
—মিথ্যা বলবে না?
—যেটা বলতে এসেছিলাম সেটা এখন মনে নেই।পরে মনে পড়লে তখন জানাবো।(মুখ চাপা দিয়ে)
—নীলিমা তুমিও না?একদম বোকা একটা মেয়ে।
—হ্যাঁ পাগল ছেলের বোকা পাগলি।(আসতে আসতে)
—পাগল বললে মনে হলো?

—আরে বললাম যে, খাবার সময় হয়ে গিয়েছে।চলুন আপনার খাবারটা বেড়ে দিতে হবেতো।
আবির নীলিমার কথাই বোকা হয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। নীলিমা চুপিচুপি হাসছে।ছেলেটা বুদ্ধিমান হলেও পাগল।একটা কথাও একটু ভালো করে শুনেনা।
নীলিমা মনে মনে ভাবছে,,আবিরকে তার বাবা বিয়ের চাপ দিচ্ছে।তাহলে আবির অবশ্যই একটু চাপে থাকবে।এই সুযোগেই আমি আবিরকে আমার করে নিবো।যেভাবেই হোক আবিরকে আমার মনের কথা জানাতেই হবে।কারন আমি জানি,,ছেলেটা মেয়েদের থেকেও লজ্জা বেশী পায়।তাই সে বুড়া হয়ে গেলেও আমাকে তার ভালোবাসার কথাটা বলবে না।

-অনেক্ষন ধরে হোটেলে একা একা বসে রয়েছে।সেই যে কখন আবির তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছে।চারপাশের সবাই তারদিকে তাকাচ্ছে।তার খুব ভয় করছে।এখানে আবির তাকে এনেছে কারো সাথে দেখা করার জন্য।পানির বোতল হাতে নিতেই খেয়াল করলো আবির তার পাশে বসলো।

—ওই আপনি তো বেশ অদ্ভুত?আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলেন?
—নীলিমা আমি দুঃখিত।কিন্তু একটা কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম।(চারদিকে তাকিয়ে)
—এভাবে হবে না?মাফ চান।
—ঠিক আ আ আ….

আবিরের কথা থেমে যেতেই নীলিমা অবাক হয়ে আবিরের চোখের দৃষ্টিটা লক্ষ্য করলো।বাইরের দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো একটা ছোট্ট ৪ বছরের বাচ্চা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।বাচ্চাটা এগিয়ে আসতেই আবির দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলো।আবির এর কোলে বাচ্চা দেখে নীলিমা অবাক হয়ে গেলো।আবির নীলিমার পাশে এসে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বসলো।আবিরের মুখে ফুটে উঠেছে ভালোবাসার হাসি।যেটা নীলিমাকে চিন্তার অঘোরে ফেলে দিলো।হটাৎ পাশ থেকে শুনছো

…কথাটা শুনে নীলিমা মুখ তুলে তাকাতেই দেখে একটা যুবতী মেয়ে।তবে মেয়েটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি বিবাহিত। নীলিমা আর বুঝতে বাকি রইলো না এদের কাহীনিটা।নিজের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এলো।আবির তার সাথে প্রতারনা করেছে।সে তাকে মিথ্যা বলেছে।নিজের চোখের জলটা লুকিয়ে নিলো।

—নীলিমা তোমাকে ওদের জন্যই বসিয়ে রেখেছিলাম।এই যে এটি হলো আমার ছোট্ খোকা আর ও হলো রিয়া।
রিয়া হাতটা বাড়াতেই নীলিমার বুকটা ধক করে উঠলো।নিজের ভালোবাসাটা অন্যর কাছে এটা ভাবতেই হাতদুটো কাপতে লাগলো।পরিচিত হওয়ার পর খেয়াল করলো আবির শুধু রিয়ার সাথেই কথা বলে যাচ্ছে।একটা আহাকার তার ভিতর কাজ করতে শুরু করলো।কান্নাটা আর তার পক্ষে চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না।আবিরকে একটু ওয়াশরুমে যাবার কথা বলে হোটেল থেকে বেড়িয়ে এলো।
চুপ করে একটা ফাকা যায়গা দিয়ে সে হাটছে।টপটপ করে তার চোখ থেকে জল পড়ছে।নিজেকে তার খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো।গরীব বলে আবির তার সাথে এতোটা নোংরামি করতে পারলো?একটা মেয়েকে বিয়ে করে আরেকটা মেয়ের দিকে লালসার হাত বাড়িয়ে দিলো?

রাস্তার লোকজন হইতো তাকে পাগল ভাবছে।কিন্তু নীলিমা ঠিক করে নিয়েছে।আর সে এখানে থাকবে না।একটা প্রতারকের সাথে সে কিছুতেই থাকতে পারবে না।কান্না করতে করতে সে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য রওনা দিতে আরম্ভ করলো।

এদিকে আবির নীলিমার জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে বেশ চিন্তাই পড়ে গেলো।সে নীলিমার ভিতর কিছু একটার আন্দাজ করতে পেরেছে। নীলিমা রুমে ঢুকে তার সবকিছু গুছিয়ে নিলো।নিজের শরীল থেকে আবিরের দেওয়া শাড়িটা খুলে ফেললো।একটা প্রতারকের শাড়ি তার শরীরটাকে নোংরা করে দিবে।নিজের সবকিছু নীলিমার ব্যাগে ভরে টেবিলের উপর রেখে দিলো।চোখটা মুছে আবিরের রুমে চলে গেলো।তার সেই চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে আবিরের ডাইরির উপর রেখে দিলো।ড্রয়ার থেকে তার অপারেশনের রিপোর্টটা বের করে নিলো। রিপোর্টা বুকে জড়িয়ে ধরলো।আবিরকে সে একটা ধন্যবাদ জানালো।প্রতারনা করলেও তাকে সে সঠিক পথে ফেরাতে পেরেছে।নিজেকে পবিত্র রাখতে শিখেয়েছে।একটা মৃত্যুর হাত থেকে তাকে বাচিয়েছে।

সে আর একটুও আবিরের রুমে দাড়ালো না।চুপটি করে নিজের রুম থেকে ব্যাগটা নিয়ে রুমটা আটকে দিলো।কিছুদুর সামনে এগোতেই হটাৎ তার পা দুটো থেমে গেলো।খেয়াল করলো তার সামনে আবির দাড়িয়ে রয়েছে।কিন্তু নীলিমা আবিরের দিকে তাকালো না।
আবির ঘেমে গিয়েছে।সারাটা পথ হইতো দৌড়ে এসেছে সেজন্য এই ঠান্ডার ভিতর তার কপালটা ঘেমে গিয়েছে।নীলিমাকে দেখে দৌড়ে সে নীলিমার কাছে চলে গেলো।নীলিমার দিকে তাকিয়ে দেখে নীলিমা কান্না করছে।
নীলিমার কাধে আবির হাত রেখে,,

—আমাকে না জানিয়ে হটাৎ হোটেল থেকে চলে এলে কেন?আর তুমি এভাবে কাদছো কেন?
—কি হলো?কিছু বলছো না যে?কেউ কি তোমাকে মেরেছে?
নীলিমার কোনো আওয়াজ না পেয়ে আবির নীলিমার মুখটা উচু করতেই। ঠাস ঠাস ঠাস।
আবির নিরবে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।সে ভাবতেও পারছে না নীলিমা কেন তার গায়ে হাত তুললো?

—ওই মেয়েটাকে আনতে পারেন নি?যান গিয়ে আপনার বউ আর বাচ্চাটাকে আদর করুন।আপনার লজ্জা করেনা একটা বাচ্চা থাকতে আপনি অন্য আরেকটা মেয়ের সুযোগ নিতে চান।
কথাগুলো বলে ধাক্কা দিয়ে আবিরকে সরিয়ে দিলো।বাইরে যেতেই হটাৎ পিছন থেকে আবির নীলিমার হাতটা চেপে ধরলো।আবিরের চোখদুটো জলে টলমল করছে।

—নীলিমা তুমি আমার পুরো কথাটা এক…..
—আপনি যদি আরেকটা কথা বলেন?তাহলে আপনি আমার লাশ দেখবেন।হাতটা ছাড়ুন বলছি?
কথাটা আর তার বলা হলোনা।হাতটা হটাৎ করেই নীলিমার হাত থেকে পড়ে গেলো।আবির আর কিছু বলতে পারলো না।না পারলো কাঁদতে আর না পারলো কিছু বলতে?একদিকে নীলিমা কান্না করতে করতে চলে গেলো।অন্যদিকে আবির চুপচাপ রুমে চলে গেলো।

দুজনের ভিতরই রয়ে গেলো তাদের লুকোনো কথাগুলো।হইতো এরা আশা করেনি আর তাদের কোনদিন দেখা হবে?আবিরকে আর সেদিনের পর কোথাও দেখা যাইনি।চারদিকে সবকিছু চুপচাপ ভাবে ঘটেই চলেছে।কেউ আর বাইরে কখনো একটা ছেলেকে দেখতেই পাইনা।ধীরেধীরে চারদিকে আবার সেই পুরোনো খারাপ কাজগুলো শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই তখন শুধু একজনের পথের দিকেই তাকিয়ে থাকে।কিন্তু তাকে যে আর দেখা যায়না।ছেলেটা কি তাহলে আগের মতো নেই?নাকি অনেক আগেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে কোনো এক একাকিত্বের দুরের দেশে পাড় জমিয়েছে?
-কুয়াশা বেশ ঘন হয়ে গিয়েছে।এই ঠান্ডাটা হইতো গরিবের জন্য খুব বেদনাদায়ক।একটা মেয়ে কাপতে কাপতে বাজারের দিকে এগোচ্ছে।শরীরে রয়েছে হালকা একটা কাপড়।শরীর দেখে মনে হচ্ছে কয়েকদিন পেটে কিছু পড়েনি।চোখের নিচটা কালো রঙে ছেপে গিয়েছে।একা একা চুপি চুপি মেয়েটাকে ধীরে ধীরে বাজারের ভিতর ঢুকতে দেখা যাচ্ছে।
বাজারের এক প্রান্তে চলে গেলো মেয়েটা।মনে হচ্ছে মেয়েটার কাছে টাকা নেই।তাই নষ্ট সবজির দিকেই তার পা দুটোকে এগোতে দেখা যাচ্ছে।

সবজির দোকানে গিয়ে কিছু সবজি নিয়ে আবারো হেটে চললো।মুখদুটো শুকনো হয়ে গিয়েছে।ঠোটদুটো ফেটে হাহাকার।চোখে একটা চশমা দেখা যাচ্ছে।
হটাৎ হাটার পথে কে যেন মেয়েটির গায়ে একটা চাদর জরিয়ে দিলো।পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো,,

—এই তুমি নীলিমা না?
কথাটা শুনে মেয়েটি দাড়িয়ে পড়লো।পাশ থেকে নীলিমা তাকাতেই খেয়াল করলো মেয়েটি আর কেউ না?মেয়েটি রিয়া।পাশেই রয়েছে রিয়ার ছেলে।নীলিমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রিয়ার ছেলেকে কোলে তুলে নিলো।
—রিয়া তোমাদের ছেলেটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
—হুম।তুমি হটাৎ এই শীতের ভিতর এভাবে পাগলের মতো কোথাই যাচ্ছো?
—এইতো বাসার দিকে।(একটা ঘোর নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে)
—সেদিন তোমাকে আর দেখতে না পেয়ে খুব খারাপ লেগেছিলো।তুমি না অনেক ভাগ্যবান আবিরের মতো একটা ছেলেকে পেয়ে।তো তুমি একা কেন?আবির কোথাই?
—আবির?ওর তো তোমার সাথে থাকার কথা?(অবাক হয়ে)
—নীলিমা তুমি এসব কি বলছো?আবির কেন আমার সাথে থাকবে?এবারের কথাটা শুনে নীলিমা থেমে গেলো।
—তুমি আবিরের বিবাহিত বউ না?
—কিসব বাজে কথা বলছো??আবির তো আমার খুব ভালো বন্ধু।
রিয়ার কথা শুনে নীলিমা অবাক হয়ে যাই।১ বছর পরেও কথাটা শুনে নীলিমা চমকে উঠলো।
—তাহলে যে সেদিন ও তোমার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বাবা বললো?
—নীলিমা তুমিও না??আবির কখনো আমাকে একটুও কষ্ট দেয়নি।সবসময় আমাকে এক চোখেই দেখেছে।ও সবসময় আমার বাচ্চাকে নিজের মনে করতো।
কথাগুলো নীলিমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হলো।ভুল তো তার নিজেরই ছিলো।কেন সে শেষবারের কথাটা শুনেনি?
—রিয়া আবির এখন কোথাই আছে সেটা বলতে পারবে?
—ওই যে সেদিনের পর থেকে আর আবিরকে দেখতে পায়নি।জানিনা ও এখন কোথাই আছে?
—সেদিন আবির কিছু বলেছিলো?
—জন্মদিনের গিফট হিসেবে ও তোমাকেই আমার কাছে নিয়ে এসেছিলো।বেশিকিছু বলেনি শুধু এ টুকু বলেছিলো যে, তোমাকেই ও বিয়ে করতে চলেছে।
—কিন্তু ও তো একটা পতিতালয়ের ট্রেইনার ছিলো?

—কিহ?আবির কে তুমি এমন অপবাদ দিতে পারোনা?
ধীরে ধীরে নীলিমাকে রিয়া সব খুলে বলতে শুরু করলো।
এখন আর নীলিমা সেখানে দাড়িয়ে নেই।একটা বাড়ির পাশের বাগানের দিকে হাটতে শুরু করেছে।রিয়া তাকে এই ঠিকানাটাই দিয়েছে।

ঠান্ডার ভিতর এতোটা রাস্তা হাটতে হাটতে সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সে জানেনা এখন আবির তাকে মেনে নিবে কি না?তবে তাকে যে ছেলেটার কাছে যেতেই হবে।তার না বলা কথাটা যে তাকে বলতেই হবে।
বাগানে ঢুকতেই সে থমকে দাড়ালো।চারপাশে প্রচন্ড বাতাস বইছে।কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।চোখ থেকে জল মুছে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

কিছুদূর যাবার পর খেয়াল করলো তার কিছুদূরেই অনেকগুলো বাচ্চা খেলাধুলা করছে।
তার পাশেই রয়েছে রয়েছে একটা বসার জাইগা।চারপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা শুধু সেই বসার জাইগাই একজনকে চাদর মুরি দিয়ে বসে থাকতে দেখছে সে।লোকটির মুখভর্তি দাড়ি আর চুপচাপ বসে থাকাটা নীলিমার বুকে একটা আঘাত করে বসলো।চুপিচুপি সে গিয়ে লোকটির পাশে বসে রইলো।খেয়াল করলো লোকটির পাশে একটা চিঠি পড়ে রয়েছে।আরে ছেলেটাকে বৃদ্ধ বলছি কেন?

নীলিমা লোকটির পাশে বসে চুপিচুপি কাদতে থাকলো।কান্না দেখে পাশ থেকে লোকটি চাদরটা সরিয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বেড় করে নীলিমার সামনে ধরলো।নীলিমা ছেলেটার দিকে এক পলক ও ফেললো না।আড়ালে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে।
রুমালটা ছেলেটার হাত থেকে নিয়ে পাশে রেখে দিলো।নীলিমার কান্নাটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।
চারদিকের চুপচাপ পরিবেশে এমন কান্নাটা হইতো পাশের লোকটির পছন্দ হচ্ছেনা।কিন্তু লোকটির চোখেও জল দেখা যাচ্ছে।তাহলে পাশের ছেলেটা অন্যকারো কান্না সহ্য করতে পারেনা??
শীতের কনকনে বাতাসটা নীলিমার শরীরে লাগছে আর থরথর করে কাপছে তার শরীর।তার কান্নাটাও জমে আসছে।

হটাৎ পাশ থেকে ছেলেটা উঠে তার গায়ের চাদরটা খুলে নীলিমার শরীরে জড়িয়ে দিলো।হইতো ছেলেটার এমন করে উপকার করতে ভালো লাগে।
পাশ থেকে চিঠিটা উঠিয়ে খুলে সেটা বুকে জড়িয়ে রাখলো।চোখটা বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু তার চোখটা থামছেই না।
কেন সে কাদছে আর এখানে তো কাউকেই দেখা যাচ্ছে না?তাহলে সে কি আবিরের সাথে দেখা করবে না?

কথাটা শেষ না হতেই পাশের ছেলেটা চুপচাপ এসে নীলিমার থেকে চাদরটা একটু সরিয়ে সেখানে জাইগা করে বসে রইলো।
কি বেপার?এই ছেলেটা নীলিমার কাছে এভাবে বসলো কেন?একি নীলিমা ছেলেটার বুকে মাথা লুকালো কেন?আর চিঠিটে কি এমন লেখা ছিলো যেটাটে এতো কান্না করতে হবে??
চুপচাপ চারদিকে শুনশান বাতাস বইছে।দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।নীলিমা চুপিচুপি কান্না করছে।চিঠিটা তো পড়ে গেলো?তাহলে দেখি কি লেখা রয়েছে সেখানে?ওমা এখানে তো লেখা রয়েছে,,,

—এই যে তুমি কি আমার বউ হবে।
তারিখটা ঠিক ১ বছর আগের।
চিঠিটা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এটাই নীলিমা সেই পাগল ছেলে।
হটাৎ চারদিকের বাতাসটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলো।হইতো আর ওদের ভালোবাসাটার অধিকার আমাকে আর দিবেনা।
তবে থাকনা এরা এদের মতো।যদি নীলিমা কান্না করে তার ভালোবাসাটা নিজের করতে পারে?তাহলে কান্না করুক।তবে এটুকু তো বুঝতেই পেরেছি ছেলেটি আবিরই ছিলো।
হইতো এদের ভালোবাসাটা নিরবে প্রকাশ পাবে।
চারদিকে থেকে এলোমেলো সুরগুলো আর কিছু শুনতে দিলোনা।পাশ থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম,,

তোর বর্ষা চোখে ঝড়তে দেবোনা বৃষ্টি,,
তুই থাকবি টু টু টুটু টু টুটু টু…..বাহ আওয়াজ টা বেশ দারুন।
এই যে দুইজন পাগল আর পাগলী?তাহলে গানের সুরে সুরে তোমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সমাপ্ত

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com