Breaking News

বলোনা ভালোবাসি । শেষ পর্ব

তমা, অথৈ আরও কয়েকজন মিলে নীলা
কে পার্লারে নিয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে।
বরের বাড়ি থেকে সাজসজ্জার সবকিছুই আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোনো কিছুর ত্রুটি রাখেনি ওরা। পার্লারে একটা জ্যান্ত লাশ বসে আছে,
আর সেই লাশটাকেই যেনো সাজিয়ে গুছিয়ে তার মধ্যে প্রান দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
তমা আর অথৈ পুরোপুরি স্বাভাবিক।
নীলা কিছুতেই বুঝতে পারছে না সবটা জানার পরেও ওরা কিভাবে এটা
স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে?

মাথাটা ঝিমঝিম করছে নীলার। কিছুই ভাবতে পারছে না সে।.
..বাসায় মেহমান ভর্তি। রুমে বসে আছে নীলা। আশেপাশে আরো অনেকেই আছে।
কিছুক্ষন আগে পার্লার থেকে বাসায় এসেছে সে।
তমা আর অথৈ নানান কাজে ব্যস্ত। নীলার হুশ নেই কোনো দিকে।
বসে থেকে শুধু চোখের পানি ফেলছে সে। আবিরের কথা খুব মনে পরছে ওর।
আজ থেকে সে চিরতরে হারিয়ে যাবে আবিরের জীবন থেকে।
ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠছে তার।

ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু না ভেবেই আবিরেরর নাম্বারে ডায়াল করলো নীলা।
ফোন ওয়েটিং। কেটে দিলো সে। চোখ দিয়ে পানি পরছে অহরহ।
কয়েক সেকেন্ড পরেই ফোনটা বেজে উঠলো নীলার। আবির কল করেছে।
কাপা কাপা হাতে রিসিভ করে কানে ধরলো সে। কিছুই বলছে না।
ওইদিকে আবির বার বার হ্যলো হ্যালো করেই যাচ্ছে। নীলা কিছু বলতে যাবে তখনই আবির বললো..
– কথা যখন বলবেই না তাহলে কল দেওয়ার মানেটা কি?
– তু তুমি আসবেনা আমার বিয়েতে? কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল নীলা।
– কাদছিস কেন নীলা?

– কাদছিনাতো..
.- হুম কাদিস না, আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু। হাসিখুশি থাক,
দেখবি তোর সারাজীবন হাসিখুশিতেই কাটবে।
আবিরের কথায় নীলা হাউমাউ করে কেদে দিলো।
আবির অস্থির হয়ে বলতে লাগলো..
– আরে কি হলো, আবারও কান্নাকাটি শুরু করে দিলি।
এইরকম পাগলামি করলে হয়? আজ না তোর বিয়ে.. তাহলে এইরকম মরাকান্না করছিস কেন?
– তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আবির।
প্লিজ আমাকে তুমি নিয়ে যাও।
এখনও সময় আছে।নীলার কথায় এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো আবির।
কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো.
.- আমার অনেক কাজ আছে নীলা, আমি রাখছি।
নীলা চোখের পানি মুছে নিলো আবিরেরর কথায়।

বললো..
– আজ আসবে না আমার বিয়েতে?
– ব্যস্ত আছিতো, সময় পেলে আসবো।
– হুম এসো, তা নাহলে হয়তো আর কখনো আমাকে দেখতে পাবেনা।
চোখের শেষ দেখাটা দেখে যেও আমাকে। আজ যে চিরবিদায় নিবো আমি।
নীলার এই কথায় বেশ অবাক হয়ে বললো..
– কি বলছিস এইসব নীলা? শেষ দেখা মানে? আর চিরবিদায় নিবি মানেটা কি?
– নাহ মানে, আজ তো আমার বিয়ে, এই বাড়ি থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যাবো।
তাই বললাম আরকি।
– ওহ তাই বল.
.- আচ্ছা রাখছি।
– নীলা শোন

– বলো.
.- আজ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বুঝলি..নীলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। বললো..
– তার চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আজ তোমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফোনটা রেখে দিলো নীলা। চোখের পানিগুলো বাধ মানছে না আজ।
চারিদিকে একবার চোখ বুলালো নীলা। সবাই যে যার মতো কাজ, হাসি তামাশা নিয়ে ব্যস্ত।
তখনই নীলার মা এলো ওর কাছে। পাশে বসে মেয়েকে বললেন..
– আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু মা,প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে তোর, কিন্তু তুই সুখীই হবি।মায়ের এই কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো মাকে জিজ্ঞাসা করলো..
– বড়মা আসেনি মা?

– নাহ, ওর বাসায় ও আজ আয়োজন চলছে। তাই আসতে পারেনি।
– কিসের আয়োজন?
– আবিরের বিয়ের বোধহয় .. কথাটা বলেই মা চলে গেলো।
নীলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের যাওয়ার দিকে।
কিছুক্ষন আগেই তো আবিরের সাথে কথা হলো ওর। কই কিছু বললো নাতো।
তাহলে কি এটার কথাই বলেছিলো, যে সারপ্রাইজ আছে? ভাবতে পারছে না নীলা।..
সবাইকে খুব করে দেখছে নীলা। ওদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা ওর।
বাড়ির চারপাশটায় ভালো করে চোখ বুলালো।
এই বাড়িটা যে ওর আত্মার সাথে মিশে আছে।

কিভাবে পারবে ও সবাইকে ছেড়ে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে? কিন্তু যেতে যে হবেই।
যা ডিসিশন নেওয়ার নিয়ে নিয়েছে ও।.
বরযাত্রী এসেছে কিছুক্ষন আগে। একা ঘরে নীলা বসে আছে।
লাল টুকটুকে বেনারসিতে একদম পুতুল বউ এর মতো লাগছে নীলাকে।
কিছুক্ষন পর স্টেজে নেওয়া হলো নীলাকে।
বর আর কনেকে আলাদা আলাদা স্টেজে বসানো হয়েছে।
কাজী সাহেব বিয়ের কাজ করায় বসে পরলেন।
অনেক ধরনের ফর্মালিটি কম্প্লিট করে বউ এর মুখ থেকে কবুল বলাতে গেলেন কাজী সাহেব।
নীলা নিচের দিকে তাকিয়ে বসেআছে। মাথাটা ঘুরছে ওর।

শরীর কাঁপছে প্রচন্ড ভাবে।
অনেক কষ্টে দুইবার কবুল বলে যখন আরেকবার বলতে যাবে তখনই বসা থেকে
সেন্স হারিয়ে পরে গেলো নীলা। হুলস্থুল লেগে গেলো তখনই।
অথৈ একটা চিৎকার দিয়ে উটলো। হাউমাউ করে কেদে দিলো সে। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো..
– আবির ভাইয়া, নীলা বিষ খেয়ে নিয়েছে .. বলেই সেন্স হারালো অথৈ.. । নীলা পরে যাওয়ার সাথে সাথেই হাত থেকে বিষের শিশিটা পরে যায় নিচে। আর সেটা অথৈ এর নজরে আসে সর্বপ্রথম।.আবির গলার মালা ছিরে ফেলে মাথার মুকুট ফেলে পাগলের মতোছুটে আসে নীলার কাছে। সবাই কাঁদছে। আবির কেদে দিয়ে চিৎকার করর বললো.

.- ওকে এক্ষুনি ডক্টরের কাছে নিতে হবে। তারাতা‌ড়ি গাড়ি বের করুন প্লিজ…নীলার বাবা পাগলের মতো ছুটলো গাড়ি বের করতে। পিছনেই গাড়িরড্রাইভার দৌড়ে গেলো। আবির নীলাকে পাজাকোলে করে ছুটলোগাড়ির দিকে। নীলার মা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়ির হাসি আনন্দ নিমিষেই কান্নার বন্নায় পরিনত হলো।.হসপিটালে পৌছানোর সাথে সাথেই নীলাকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হলো। OT এর সামনে পায়চারি করছে সবাই। পাশের একটা বেঞ্চে মাথায় হাত দিয়ে বসে কাঁদছে নীলার বাবা। একপাশে মা সেন্সলেসের মতো পরে আছে। আবিরের বাবা নীলার বাবাকে মানানোর চেষ্টায় আছে। আবিরের মা কাঁদছে আর নীলার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সোহেল, তমা আর অথৈ সমানে পায়চারি করেই যাচ্ছে। তাদের চোখভর্তি পানিতে। অথৈ খেয়াল করলো হাসপাতালের করিডোরের এক কোনায় অস্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে আবির। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে ওর। অথৈ আস্তে আস্তে আবিরের পাশে গিয়ে দাড়ালো। মনের বিরুদ্ধে বললো..
– সব ঠিক হয়ে যাবে ভাইয়া। কাদবেন না প্লিজ।

– ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না অথৈ…
– কিচ্ছু হবেনা ওর। প্লিজ আপনি শান্ত হোন।
– শান্ত হবো আমি? শান্ত হবো? কি করে শান্ত হবো আমি?
কি করে? আজ দুপুরেও ও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে আমাকে ভালোবাসে।
অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা ও।
তারপরও আমি কিভাবে পারলাম ওর কাছ থেকে সব লুকাতে? কেন আমি বললাম না,
আমি তোমাকেই ভালোবাসি? কেন আমি বললাম না,
আমার সাথেই তোমার বিয়েটা হচ্ছে? কেন এতো বড় কষ্ট দিলাম ওকে?
যদি তখনই সবটা বলে দিতাম তাহলে এখন ওকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।
চিৎকার করে বলেউঠলো আবির। আবারও শান্ত হয়ে কান্না করে দিয়ে বলতে লাগলো..
– কিভাবে পারলাম আমি ওর সাথে এমন করতে?

আমার কারণেই আজ এমন হয়েছে। কেন খেলতে গিয়েছিলাম এই গেইমটা.
কাঁদতে লাগলো আবির। সাথে অথৈ ও কাঁদছে। ওরাওঁ যে নীলার থেকে সবটা লুকিয়েছে।
সেদিন নীলার বাবাকে সবটা বলে ওরাই নীলার আগের বিয়টা আটকিয়ে আবিরের সাথে এরেঞ্জড করেছে। নীলাকে কিছুই বলেনি ওরা ভেবেছিলো সারপ্রাইজ দিবে।
কিন্তু ভাগ্য, আজ নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। কিন্তু এইরকম সারপ্রাইজ তো হতে চায়নি কেউ
…প্রায় এক ঘন্টা পর OT থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলো।

নীলার বাবা আর আবিরের সাথে সাথে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাড়ালো।
চোখেমুখে তাদের ভয়ের ছাপ। ডাক্তারের মুখটাও খুব মলিন দেখাচ্ছে।
ডাক্তারের এরুপ চেহারা দেখে আরও ঘাবড়ে যায় ওরা। আবির অনেক কষ্টে বলল.
– কি হয়েছে ডক্টর? ওর কিছু হয়নি তো? সব ঠিক আছে তো?
ততোক্ষনে আবিরের মা বাবা আর নীলার মাও এসে দাড়ালো।
কিন্তু ডক্টর তখনও নিশ্চুপ। কিছু বলছে না। আবির আবারও বললো..
– চুপ থাকবেন না, বলুন আমার নীলার কিছু হয়নি তো?
– (—নিশ্চুপ —-)- কি হয়েছে? কথা বলছেন না কেন?

আমার মেয়ে ঠিক আছে তো? চেচিয়ে বললো নীলার বাবা।অনেকটা ইতস্তত করে ডাক্তার বললো.
.- দেখুন উত্তেজিত হবেন না। নিজেকে সামলাম। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ..
.- কিন্তু কি ডাক্তার? আরো কয়েকগুন উত্তেজনা বেড়ে গেলো আবিরের।
– পেশেন্ট যখন বিষ পান করেছে তখন উনার পেট সম্পুর্ন খালি ছিলো।
আই মীন, উনি মনে হয় দুদিন ধরে কিছুই খায়নি..
– হ্যাঁ, আমার মেয়েটা দুদিন ধরেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে,অনেক চেষ্টা করেও কিছু খাওয়াতে পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে পাশ থেকে বলে উঠলো নীলার মা।

– দুদিন ধরে কিছু খায়নি? কিন্তু কেন? অবাক হয়ে বললো আবির…
– সারাক্ষন শুধু কাদতো, জোর করেও খাওয়াতে পারিনি ওকে .
.আবিরের চোখ জোড়া ভিজে চুপচাপ হয়ে গেছে। আজ শুধু ওর কারণেই নীলার এই অবস্থা।ডাক্তার আবারও বলতে লাগলো..
– খালি পেটে বিষ পান করায় এটা খুব রিস্কি হয়ে গেছে। যদিও আমরা সবটা বিষ ওয়াস করে দিয়েছি,
তবুও আমরা রোগীকে নিয়ে কোনো আশা করতে পারছিনা। অবস্থা খুবই সিরিয়াস
.. পেশেন্ট কে আমরা কেবিনে শিফট করে দিয়েছি। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।
তবে হ্যাঁ, খুবই সাবধানে ..এতটুকু বলেই ডাক্তার চলে গেলো।..

নীলার বাবা মা সহ বাকিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরলো.. আবির একজায়গায় দাড়িয়ে আছে।
চোখ দিয়ে পানি পরছে ওর।।এক এক করে সবাই নীলার সাথে দেখা করতে কেবিনে গেলো।
নীলাকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়েছে। নীলার বাবা আর মা কেদে কেদে বার বার ডাকছে।
– মারে, একবার তাকা আমাদের দিকে। আমরা যে খুবই অপরাধী।
তোর কিছু হয়ে গেলে কিভাবে থাকবো আমরা। একবার চোখ খোল মা…
কাঁদতে কাঁদতে বললো নীলার বাবা।পিটপিট করে তাকালো নীলা।
চোখ থেকে পানি বেয়ে পরছে। বাবা বললো..
– মারে, তোর কিচ্ছু হবে না। তুই কোনো চিন্তা করিস না।
ডাক্তার বলেছে তুই ঠিক আছিস। রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবি।
মিথ্যা শান্তনা দিলেও নিজে শান্ত হতে পারছে না নীলার বাবা।নীলা কিছু বলতে পারছে না।
শুধু তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। মা বললো.
.- তুই আগে কেন বলিসনি আবিরের কথা? আর কেন এমন করতে গেলি?
আজ তো আবিরের সাথেই তোর বিয়ে হচ্ছিলো।
সবাই তোকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলো রে মা।

নীলা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।অনেক্ষণ কথা বললো তারা।
তারপর বাইরে চলে গেলো।সবাই এসেছে নীলার সাথে দেখা করতে। অথৈ, তমা,
সোহেল, আবিরেরর বাবা মা, সবাই দেখা করে গেছে নীলার সাথে।
নীলার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল, সেটা কারোরই বুঝতে বাকি নেই।
আবির বাইরে দাড়ানো। নীলার সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা তার।
একা একা নিরবে কাঁদছে। অথৈ আর তমা এসে পাশে দাড়ালো আবিরের। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো..
– ভাইয়া, আপনি যাবেন না নীলাকে দেখতে? ওর সাথে একটু কথা বলবেন না?
আবির অসহায়ের মতো তাকালো ওদের দিকে। বললো.
– কিভাবে দেখাবো এই মুখটা ওকে? কিভাবে বলবো আমি ওকে ভালোবাসি?
– প্লিজ কাদবেন না ভাইয়া.। নীলার অবস্থা খুব খারাপ।

যেকোনো সময় কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্লিজ, একবার দেখা করে আসুন।
– কি বাজে কথা বলছো তোমরা? কিছু হবেনা ওর। কিচ্ছু হবেনা আমার নীলার।
কাঁদতে কাঁদতে দিশার কেবিনে দিকে ছুটলো আবির।কেবিনে ঢুকলো সে।
প্রাইভেসির জন্য সবাই কেবিন থেকে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়ালো।
আবির ছলছল চোখে নীলার মাথার কাছে বসলো।
আস্তে আস্তে ওর হাত দুটো নিজের মুঠোবন্দি করলোসে। কিছুটা কেঁপে উঠলো সে।
আস্তে আস্তে আবিরের দিকে তাকালো সে। দুজনেই কাঁদতে লাগলো।
নীলা কিছু বলতে চাচ্ছে আবিরকে। কিন্তু মাস্ক এর কারণে কিছুই বুঝতে পারছেনা আবির।
আচমকাই মাস্কটা খুলে ফেললো নীলা। আবির অস্থির হয়ে বলতে লাগলো..
– কি করছো কি নীলা, এইরকম করনা। বিপদ হতে পারে।
– নীলা কেদে দিলো। অনেক কষ্ট করে বললো..

– আমি বাঁচতে চাই আবির। আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
– তোমার কিছু হবেনা নীলা। সব ঠিক হয়ে যাবে। এইসব কথা বলোনা প্লিজ।নীলা একটু হাসলো। বললো.
.- আমি জানি আমি বাচবোনা। আমি খুব বুঝতে পারছি তোমার সাথে এটাই আমার শেষ দেখা।
– একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম। খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। কেদে কেদে বললো আবির।
– কাদবে না আবির। তোমার কান্না আমি সইতে পারিনা।আবির চোখের পানিগুলো মুছে নিলো। বললো..
– কই কাদছিনা তো, কে বলছে কাদছি? কিন্তু তুমি এইসব অলুক্ষনেকথা বলবেনা বলে দিলাম।
– আবির, আমার একটা কথা রাখবে?

– সব কথা রাখবো। আগে তুমি সুস্থ হও..
– নাহ, এখন আমাকে কথা দাও, পরে হয়তো আর সুযোগ পাবোনা।
– আবারও এইসব বলছো..?
– আর বলবোনা। এখন বলো আমার কথাটা রাখবে..
.- কি কথা বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো..
.- প্রমিস করো..
– ok, বলো

– আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি একটুও কাদবেনা কিন্তু। কাদলে আমি মরেও শান্তি পাবোনা আবির।
– কি পাগলের মতো কথা বলছো নীলা। তোমার কিচ্ছু হবেনা তো। আমি তোমাকে কিছু হতে দিবোনা। অঝোরে কাঁদতে লাগলো আবির। সাথে নীলাও কাঁদছে।নীলা হাসলো। হটাৎ ই নীলার বুকে ব্যথা শুরু হলো। নিজেকে সামলে বললো..
– একবার বলবে আবির .
.- কি বলবো বলো..

– যেটা তোমার কাছ থেকে অনেকবার শুনতে চেয়েছি।
– একবার কেন , অনেকবার বলবো। আগে সুস্থ হও।
– প্লিজ এখন বলো। শুধু_একবার_বলো….আবির কেদে দিলো। কেদে কেদে বললো..
– ভালোবাসি নীলা। অসম্ভব ভালোবাসি তোমাকে। আমার জীবনের থেকেও বেশি।নীলা একটা শান্তির হাসি দিয়ে বললো..

– একবার জরিয়ে ধরোনা আমাকে ,আবির পাগল হয়ে গেলো নীলার কথায়। টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো নীলাকে। বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো সে। বললো
.- সবসময় তোমাকে এই বুকেই জড়িয়ে রাখবো নীলা। কখনও দুরে সরাবো না।
অসম্ভব ভালোবাসবো তোমায়।..কয়েক মিনিট কেটে গেলো।
নীলার কোনো সাড়া পাচ্ছেনা আবির।
নীলা নীলা বলে ডাকতে ডাকতে নীলার মাথাটা তুলে দেখলো নীলা চোখ বন্ধ করে আছে,
শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ। নার্ভ চেক করে দেখলো সেটাও বন্ধ।
প্রচন্ড জোরে ডাক্তারকে ডাক দিলো আবির।
ডাক্তার সহ বাকি সবাই ছুটে এলো আবিরের চিতকারে। ডাক্তার নার্ভ চেক করে সবার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..
– I am sorry, She is no more…সবার মাথায় বাজ পরলো।আবির পাথর হয়ে গেলো ডাক্তারের কথা শুনে।
কথা বলতে ভুলেগেছে ও। বাকি সবাই কান্নাকাটি করতে লাগলো।
একটা জ্যান্ত কবরস্থানে পরিণত হলো হসপিটাল টা।.
..৫ বছর পর,
কবরের পাশে বসে আছে উস্কখুস্ক আবির। পাগলের মতো প্রলাপ বকছে.
.- ছলনা করে আমার কাছ থেকে ভালোবাসার কথাটা বলিয়ে নিলে।
তুমিত একবারও আমাকে বললে না।কি কথা বলছো না কেন?
আমাকে ভালোবাসার কথা না বলেই কেন চলে গেলে তুমি?
বলোনা একবার। প্লিজ নীলা. বলে যাও আমায়। শুধু_একবার বলোনা ভালোবাসি
….দুরে দাড়িয়ে আছে তমা সোহেল, অথৈ আকাশ। চোখে পানি টলমল করছে ওদের।
সেদিনের পর থেকে আবির কাঁদতে ভুলে গেছে।
কিন্তু সারাক্ষণ নীলার কবরের পাশে পরে থাকে ও।
ওর ধারণা, নীলা এসে একবার হলেও বলবে ভালোবাসি…..

<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com