Breaking News

সে আসবেই । পর্ব -০৩



(আয়ানের জবাব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মিলি।মেঘলা আয়ানের সাথে পালানোর কথা। কিন্তু তার সাথে তো গেলো না।তাহলে যেতে পারে কোথায় মেঘলা।এমন সময় আকাশে মেঘাচ্ছন্ন দেখা দিয়েছে।
মেঘলা মেঘলা আকাশের মাঝে অনেক জোরে জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হঠাৎ করে আবহাওয়া এরকম বদলে যাওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার। তারপর…..

ঝড়ের এমন অবস্থা দেখে আয়ান দৌড়ে গিয়ে তার গাড়ির মধ্যে বসে পড়ে। মিলি ইউনিভার্সিটির একটি ছাদনাতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এদিকে আয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ড্রাইভিং করছে এবং মাথার মধ্যে মেঘলার ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত। সে যেটা করেছে, সেটা কি ঠিক? নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটি মেয়েকে এভাবে এতো কিছু করলো, আসলেই মেয়েটির সাথে অনেক খারাপ কিছু হয়ে গেছে, তবে এখানে কি করার। সে নিজেকে বাঁচাতে যা খুশি করতে পারে।
1 বছর আগে আয়ান প্রথম মেঘলাকে প্রপোজ করে ভার্সিটিতে। তাও আবার সবার সামনেই। সবাই খুব ভালো করেই জানে, আয়ান এবং মেঘলার মধ্যে একটা গভীর রিলেশন আছে।মেঘলা প্রথম প্রপোজ এক্সেপ্ট না করলেও, 5 দিন পর রাজি হয়ে যায়। তারপর তাদের রিলেশন চলতে চলতে এতোটুকু পর্যন্ত আসে। সেই আয়ান আজ তার বন্ধুদেরকে নিয়ে তাকেই মেরে ফেলে,যাকে সে একদিন বলতো, তোমাকে ছাড়া আমি খাবো না, আগে তুমি খাও,পরে আমি খাবো।তুমি না ঘুমালে আমি ঘুমাবো না, তোমার একটা কিস ছাড়া আমার ঘুম হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি। ভালোবাসার সময় একজন প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকা যা কিছু বলে সবকিছুই। তাহলে এগুলো কি মিথ্যে? হতে পারে কারো জন্য সত্যিই! আবার কারো জন্য মিথ্যে চলনা।যাইহোক, সেদিকে না গিয়ে সোজা ঘটনায় আসি।

আয়ান মেঘলাকে নিয়ে, সেই এক বছর আগের ঘটনা থেকে,
এখন পর্যন্ত সবগুলো মনে করতে করতে ড্রাইভিং করছে।
কেন যেন এক অজানা কারণে আয়ানের চোখের কোনায় পানিও জমে গেছে।
হয়তো এই পানি মেঘলাকে যে সে মেরে ফেলেছে সে জন্য নয়,
এ পানি হচ্ছে মেঘলা তার জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে গেছে সেজন্য।
কিন্তু মেঘলার খুনি তো সে নিজেই। তাহলে এসব নিয়ে এখন আফসোস করে কি লাভ।
এসব ভাবনা করতে করতে আয়ানের চোখ হঠাৎ লুকিং গ্লাসের দিকে যায়।
গ্লাসের মধ্যে যেটা দেখে, সেটা দেখেই আয়ান চমকে উঠে।
সে দেখল লুকিং গ্লাস এর মধ্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মানে পিছনের সিটের মধ্যে মেঘলা বসে আছে।
তাও আয়ানের দিকেই তাকিয়ে। আয়ান এমন দৃশ্য দেখার সাথে সাথে জোরে একটা ব্রেক মারলো।
পিছনে তাকাতেই দেখে, মেঘলা পিছনে নেই। কিন্তু সে কিছুক্ষণ আগেই মেঘলাকে দেখেছিল।
এইটা কিভাবে সম্ভব। এরপর নিজের মাথায় নিজে একটা থাপ্পর দিয়ে ভাবল,
মেঘলাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে করতে এখন এসব ভুলভাল জিনিস দেখছে।
আয়ান আবার গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় চলে আসলো।
অন্যদিকে, যেখানে মেঘলাকে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।
সেখানে একটি গার্মেন্টস তৈরি করার নির্দেশ পড়ে যায়।
অবশ্যই এই ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই সিদ্ধান্ত করা ছিল।
তবে নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য আজকেই সেখানে মানুষ যায়।
মাটির ভিতর থেকে পিলার তুলতে, শ্রমিকদের হাতে মাটি খুড়া হয়,
এবং সঙ্গে সঙ্গে মাটির ভিতরে সবাই স্পষ্ট দেখতে পায় মেঘলার লাশ।
অবশ্যই অবস্থিত সেখানে সবাই চিনতে পারেনি মেঘলাকে।
সঙ্গে সঙ্গে তারা থানায় ইনফর্মেশন করে।

পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখল যে মেঘলার আব্বু আম্মু যে ছবিটি দিয়ে গেছিলো।
তাদের সেই ছবির সাথে এইটা পুরোপুরিই মিল।
তবুও শিওর হওয়ার জন্য থানা থেকে ফোন দিয়ে তার সব ফ্যামিলিদেরকে সেখানে আনা হয়।
সবাই এসে মেঘলার লাশ দেখে সেখানেই কান্না জুড়ে দেয়।
তাদের কান্না যেন প্রকৃতিও কান্নায় ভেঙে পড়ছে।
আকাশটা হঠাৎ করেই মেঘাছন্ন হয়ে যায়, আবার হঠাৎ করে পরিষ্কার হয়ে যায়।
গাছপালাগুলো বাতাসে এমন ভাবে দোল খাচ্ছে,
যেন তারাও চিৎকার দিয়ে বলছে, মেঘলার মৃত্যুতে তারাও অনেক দুঃখী।
কিন্তু এই কাজ কারা করেছে, সেটা কেউই জানেনা।
অনেকে ধারণা করেছে মেঘলার মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ যেহেতু ডাস্টবিনে পাওয়া গেছে,
তাহলে হয়তো কোন কিডন্যাপকারীরা তাকে কিডন্যাপ করে
ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে এবং এখানে পুতে দিয়েছে। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায় সবার কাছে।
একেবারে মেঘলার ভার্সিটি থেকে ওর বাড়ি পর্যন্ত।
বলতে গেলে পুরো এলাকা জুড়ে এই ব্যাপারটা নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়।
অন্যদিকে আয়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সে ভাবল আর যাইহোক, আমরা তো কোনো বিপদে পড়িনি। আয়ান আসিফ,রবি এবং রনিকে ফোন দেয়। ফোন দেওয়ার কারণ হচ্ছে সবার সাথে মুখোমুখি হতে চায় সে। সবার সামনে আসতেই আয়ান তাদের প্রশ্ন করল)
–আমাদের তো আর কোন বিপদ নেই তাই না..?
রনি বলল,

–একটা জিনিস খেয়াল করেছিস আয়ান? মেঘলার ফোন কিন্তু পুলিশের কাছে। সেখানে কল লিস্ট, তারপর কল রেকর্ডিং সবকিছুই থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যদি আমাদের কোন বিপদ হয়? আমরা যদি ধরা খেয়ে যাই? আয়ান হাসতে হাসতে উত্তর দিলো,
–আমি কি এতই বোকা নাকি রে। মোবাইল ফোন ডাস্টবিনে ফেলার আগে, মোবাইল ফোন থেকে সিম কার্ডটা বের করে ভেঙ্গে ফেলেছি, এবং সাথে মোবাইলটাও প্লাস মেরে দিয়েছি। যাতে কোনো ইনফরমেশন না থাকে। আর রিয়ার ব্যাগের মধ্যে কিছু টাকা ছিলো, সেগুলোও হাতিয়ে নিয়েছি। হা হা হা
–ভালো করেছিস, তার মানে আমরা এখন চিন্তা মুক্ত। চল,এই খুশিতে আজকে একটা পার্টি দেওয়া যাক।
— ঠিক আছে, আজ রাতে হবে, আনলিমিটেড মাস্তি।

( মেঘলার মৃত্যুর কোন প্রমাণ না পাওয়াতে সবাই চুপ হয়ে যায়। এই ব্যাপার নিয়ে এখন আর কেউ গলা ঝারায় না। অবশ্যই আয়ানকে একবার থানায় ডাকা হয়েছিল। আয়ান উত্তর দিয়েছে)
— স্যার, রাতে আমার সাথে ওর কথা হয়েছিল। তারপর বলেছে সে পরের দিন আমার সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু তারপরের দিন, না করেছে দেখা, আর না করেছে ফোন। এতে খুব চিন্তিত হয়ে যাই আমি।তারপর তো আপনারাই জানেন,যে সে মিস্টেক।
(এমন বাহানা করে গেছে, পুলিশের কাছে সে দেখিয়েছে আয়ান কিছুই জানেনা।
পুলিশ ও আয়ানকে অনেকগুলো প্রশ্ন করার পর ছেড়ে দিল।
কারণ আয়ান বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা গুলো তাকে বাঁচিয়ে দিল।
আসলেই কি আয়ান বেঁচে গেছে? একটি মেয়েকে তারা এভাবে হত্যা করেছে, 
এর কি কোন বিচার হবে না?

অন্যদিকে ব্যালকনিতে বসে বসে কফি খাচ্ছে মিলি।
মেঘলার ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশিই চিন্তায় আছে।
মনে মনে ভাবছে, আয়ানের কাছে যদি মেঘলা না যায়,
আর অন্যদিকে মেঘলার লাশ পাওয়া গেছে মাটির নিচে,
মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে,
এতে করে তো একটা জিনিসই দাঁড়ায়, হয়তো কোন কিডন্যাপকারী করে তাকে কিডন্যাপ করে,
টাকা পয়সার বদলে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে তাকে মেরে, মাটিতে পুঁতে দেয়।
কিন্তু কেন যেন তার বিশ্বাস হচ্ছে না।

মেঘলাকে এভাবে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া রিক্স এর ব্যপার।
শান্ত হলেও একটু ছলছল ছিল সে। ঘঠনা চক্রে কিছু না কিছু হয়ে যেত।
তবে আর এসব ভেবে লাভ কি, মেঘলা তো মারা গেছে।লমিলি আবার কফি খাওয়ার দিকে মন দিল।
হঠাৎ.. রুমের লাইট অন, অফ, অন, অফ, করতে লাগলো। এদিকে বাতাসের বেগ বেড়ে গেছে।
মিলি কফি টেবিলে রেখে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করে।
তারপর আবার কফিটা হাতে নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমের মধ্যে ঢুকে যায়।
বাহিরে বাতাসের ফলে মিলি দরজা জানালা সব গুলো বন্ধ করে দেয়।
এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। সে ভাবলো, হয়তো বাহিরে অনেক জোরে ঝড় হচ্ছে,
সে জন্য লোডশেডিং হয়েছে। মিলি মোবাইলের ফ্লাশ লাইট দিয়ে মোমবাতি খুঁজতে থাকে।
ড্রয়ারের মধ্যে হাত দিবে, এমন সময় মিলি খেয়াল করলো,
জানালার ওপাশে ব্যালকনিতে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিলি চিৎকার দিলো)

চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com