বিশ্বাসঘাতক । পর্ব -০৫
ঘুমানোর চেস্টা করছে কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না নীলার চোখে। বিছানা থেকে নেমে আবার একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেট হাতে নিয়েই ঘরের আয়নাটার সামনে গেলো নীলা, চেহারাটা দিন দিন কেমন পাল্টে যাচ্ছে। চোখের নিচ দিয়ে কালো দাগ আর ঠোট একদম কালো হয়ে গেছে।
নিজের চেহারা নিজে সহ্য করতে পারছে না নীলা তাই হাতের কাছে একটা ফুলদানি ছিলো সেটা দিয়ে আয়নাটায় সজোরে ঢিল মারলো সঙে সঙে আয়নাটা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।.কিছুক্ষন চুপটি করে বসে থাকলো নীলা তারপর আবার বিছানায় গেলো ঘুমানোর জন্য। নীলা চোখ বন্ধ করলেই আবিরের মুখটা ভেসে উঠছে তার সামনে। কিছুতেই ঘুম আসে না চোখে আর ঘুমাবেই বা কেমন করে কারন নীলা যে ভালোবাসার মানুষটিকে এসিড মারা প্লানিং করছে।নীলা আবিরকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি। আর তার ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে……
– নীলা এই নীলা?নীলা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল..
– কি হয়েছে এত সকাল সকাল ডাকাডাকি করছো কেনো?
– দুপুর ২ টা বাজে। এটাকে তুই সকাল বলছিস?
– আচ্ছা ঠিক আছে যাও তুমি আমি আসতেছি।.নীলা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসলো। নীলার চেহারার যে দিন দিন অবনতি হচ্ছে তা খুব টের পাচ্ছে তার মা। নীলার মা অনেক কথাই বলে কিন্তু মায়ের কথায় কোন কান দেয় না নীলা। নীলা খেতে খেতে তার মা কে বলল.
– আচ্ছা মা কাউকে এসিড মারা কি ঠিক?নীলার মা নীলার কথা শুনে চমকে উঠলো আর বলল
– এসব তুই কি বলছিস নীলা? কেনো বলছিস এসব কথা?
– আবিরকে কে এসিড মারবো তো তাই।নীলার মুখের কথা শুনে নীলার মায়ের খাবার গলা থেকে আর নামছে না
– তুই কি পাগল হয়েছিস নাকি? কেনো করছিস এমন? ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে আর সব কিছু না যেনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও ঠিক নয় মা।
– মা তুমি জানো না ও এতদিন আমার সাথে যা করেছে তা মোটেও আমি মানতে পারছি না।.আরো বেশ কিছুক্ষন কথা হলো মা এবং মেয়ের। অনেক বোঝানোর চেস্টা করলো কিন্তু কোনভাবেই বুঝলো না নীলা। খাবার ফেলে দিয়ে উঠে গেলো আর সাথে সাথে এসিডের বোতল টা নিয়ে বেরিয়ে গেলো আবিরকে এসিড মারবে বলে। গাড়িতে উঠে ফোন দিলো তানিয়াকে.
– হ্যালো তানিয়া
– হ্যাঁ নীলা বল?
– আমি গাড়ী নিয়ে যাচ্ছি তুই বাসার নিচে থাক আমি এখনই যাচ্ছি?, ফোনটা কেটে দিয়ে তানিয়া কে গাড়িতে নিলো নীলা। নীলা তানিয়া কে বলল…
– আবির এখন কোথায়?
– লেকের পাড়ে ।
– কি করে জানলি ও লেকের পাড়ে?
– খোজ নিয়েছিলাম আর কি।নীলা গাড়ি নিয়ে লেকের পারে গেলো । নীলা দেখতে পেলো লেকের ধারে একা একা বসে আছে আবির । সন্ধা নেমে এসেছে। আশে পাশে লোকজন বলতে নেই। নীলা গাড়ি থেকে নেমে পড়লো আর তার হাতে এসিডের বোতল। নীলা এসিডের বোতল হাতে নিয়ে আবিরের দিকে যাচ্ছে দেখে নীলা এতটাই খুশি যা ভাবার মতো না। নীলা আবিরের কাছে গিয়ে বলল.
– এখানে একা কেনো? কাউকে আনলেই তো পারতে?আবির পিছন ফিরে দেখে নীলা। নীলাকে দেখে আবির বেশ অবাক হলো। কোন কথা বলছে না আবির চুপ করে আছে। তারপর আবির বলল…
– তুমি এখানে?
– কি অবাক হলে তাই তো?
– কেনো এসেছো এখানে?নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি তাই না? আমি জানি নীলা তুমি তোমার ভুল ঠিক বুঝতে পারবে আর আমাকে আবার আপন করে নিবে।
– খবরদার আমাকে টাচ করবা না? কি ভেবেছি তুমি? আমি কোন ভুল টুল বুঝবি আমি বোঝাতে এসেছি এখানে।
– তুমি এসব উল্টা পাল্টা কি বলছো নীলা? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমার কথা আর তোমার হাতে এটা কিসের বোতল?
– হ্যা কি করে বুঝবে পাশান একটা। আর বোতলে কি আছে তা একটু পর ই টের পাবে।
– জানো নীলা আমি ভালো নেই একটু ও ভালো নেই। তুমি আমার সাথে কেনো এমন করলে?
– বাহহ আবির বাহহ অভিনয় তো ভালোই করতে পারো দেখছি। একেকদিন একেকটা মেয়ের সাথে মাস্তি করে বেরাচ্ছো আর বলছো তুমি ভালো নেই!
– আমি কিছু করিনি নীলা বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করিনি।
– হুম করলাম! বিশ্বাস করলাম। তো?.আবির আর কথা না বলে চেয়ে আছে বোতলটির দিকে। ভাবছে কি আছে এই বোতলে? আবির বলল
– নীলা বোতলে?
– বোতলে কি দেখবা?
– হুম!
– তাহলে দেখো বোতলে কি?
কথাটা বলে নীলা বোতলের মুখ খুলে এসিড সজোরে মারলো আবিরের মুখে।
আবির সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরলো যন্ত্রনায় আর চিৎকার করতে থাকলো।
নীলা চেয়ে আছে আবিরের দিকে দেখছে আবিরের ছটফটানি।
সন্ধার কারনে ভালোভাবে দেখাও যাচ্ছে না মুখটা।
.নীলা আবিরের চিৎকার সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
আর আবির ব্যাথার, যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকলো।
ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আবির কেনই বা কাঁদবে না কারন আবিরের মুখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। +
আর এই এসিড যার মুখে পরেছে সেই কেবলমাত্র বুঝেছে এর যন্ত্রনা কতটা ভয়াবহ!.নীলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে গাড়ি ভিতর।কারন আজ যেটা করেছো তা মোটেও ঠিক করেনি।
যার সাথে নীলা ছোটবেলা থেকেই সঙ দিয়ে এসেছে আর আজ তার মুখেই এসিড মারলো।
নীলার ভিতরটা যেনো জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আবিরের চিল্লানোর কারনে কিছুক্ষন একটি মেয়ে এসে দেখলো
আবিরের ওপর এসিড মারা হয়েছে তাই সাথে সাথে আবিরকে গাড়িতে করে
হাসপাতালে নিয়ে গেলো মেয়েটি।.যে মেয়েটি আবিরকে হাসপাতালে এনেছে সে
মেয়েটির নাম হলো তিথি আর মেয়েটি একজন ডাক্তার।
আবিরের চিকিৎসা নিজেই করার সিদ্ধান্ত নিলো তিথি।
আবির অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে বেডে আর তিতি খুব ভালো করে দেখছে আবিরের মুখটা।
মুখটা কেমন ঝলসে গেছে। ফেসটা পুরো নস্ট হয়ে গেছে আবিরের।
তাই তিতি আবিরের মুখটা সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিলো।
তিথি আবিরের অপারেশন করে মুখে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো।.
কিছুদিন পর…
আবির এখনও হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।
মুখে পুরো ব্যান্ডেজ এমনকি চোখ থেকেও কিছু দেখতে পায় না।
ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখে তিথি।এদিকে আবিরের মা, বাবা,
ভাই বোন আবিরকে অনেক খোজাখুজি করে কিছুতেই আবিরের নাগাল পায় না।
আবিরের গোটা পরিবার কান্নায় ভেঙে পরে পরিবারের একমাত্র উপার্জন করতো আবির আর তা দিয়েই কোনক্রমে তাদের সংসার চলতো আর এখন আবির নেই তাই এই অবস্থায় পুরো পরিবার টা ভেঙে পরে।
.৩ মাস পর আবির হটাৎ একদিন বেড থেকে লাফিয়ে উঠে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।
আর তা দেখে তিথি সাথে সাথে আবিরের কাছে এসে আবিরকে শান্ত করার চেস্টা করে।
তিথি আবিরের হাত ধরে বলে
– প্লিজ শান্ত হও?
– না আমি শান্ত হবো না কিছুতেই না। আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো!তিথি বলল
– কিসের প্রতিশোধ?
– তা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই। আপনি আমার চোখের বাঁধন খুলে দিন প্লিজ। আমি নীলাকে শেষ করে দিবো!
– আচ্ছা ঠিক তুমি শান্ত হও আমি তোমার ব্যান্ডেজ বাঁধন সব খুলে দিচ্ছি।
তিথির কথা শুনে আবির একটু চুপ করে থাকলো।
আর তিথি আবিরের মুখের সব ব্যান্ডেজ খুলে দিলো কারন আবির এখন পুরোপুরি সুস্থ।
চোখের ব্যান্ডেজ ও খুলে দিলো। আবির আস্তে আস্তে চোখ খোলার চেস্টা চেস্টা করলো।
আবির চোখ খোলার পর তিথি একটা আয়না আবিরের চোখের সামনে ধরলো আবির আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চিৎকার করে উঠলো।
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com