লেডি কুইন। পর্ব - ২০
রাজ আরোহীর সামনে এসে
-তোমাকে না আমার খুব ভালো লাগে। স্বপ্ন দেখতাম তোমাকে আমার রাণী বানাবো কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে তোমাকে আর রাণী বানানো হবে না। তুমি বেঁচে থাকলে আমার জন্য ক্ষতি।
-রাজ তুই কিন্তু ভূল করছিস। তোর মরণ খুব নিকটে। কাকে তুলে এনেছিস তুই জানিস না।
রাজ আরোহীর দিকে চোখমুখ পাকিয়ে
-হ্যা জানি তো। লেডি কুইন। কিন্তু তুই তো শূণ্য। তোর চারপাশের কেউই আমার কিছু করতে পারবে না।
আরোহী হেসে উঠে
-তুই এখনো মানুষ চিনতে ভূল করেছিস।
-ও আচ্ছা তাই। তাহলে দেখি তোকে আজ কে বাঁচায় ।
রাজের চোখের ইশারায় আরোহীর বাধন খুলে দেয়। আরোহী মাথায় আঘাত পাওয়াতে দাঁড়াতে পারছে না। রাজ হেসে উঠলো
-তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো। তবে তোকে নিয়ে সারাজীবন থাকার যে স্বপ্নটা দেখতাম তা আজ এখনি সব মিটিয়ে নিবো।
রাজ আরোহীর হাত ধরে টেনে গ্যারেজের ভেতরের রুমের ভেতর নিয়ে যেয়ে বিছানায় ডাক্কা মেরে ফেলে দেয়
-রাজ তুই এটা করতে পারিছ না। ছেড়ে আমাকে
-আহা সোনা এখন এসব বলতে নেই। এখন তো আমাদের খুব ভালো একটা মুহুর্ত ।
রাজ আরোহীর দিকে এগিয়ে গেলো। বিছানার উপর ভর দিয়ে আরোহীর উপর যেতে যাবে তখনি আরোহী সরে যায়। রাজ মুখ থুবড়ে পড়ে যায়৷ আরোহী অবাক হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের ভেতর আরোহী ঙ্গান হারিয়ে ফেলে।
আশফা শুভ্রকে ফোন দিয়ে বলে
-আরোহীকে মনে হয় না পাওয়া যাবে।
-হুম। কম করে তো খুঁজা হলো না। মেহেরাবের তো মুখের দিকে তাকানোই যায় না।
-আচ্ছা মেহেরাব কোথায়?
-জানি না ও তো আমার সাথে বাসায় আসিনি। মা তো আমাকে সেই বকা দিছে।
-হুম। ও যে কি করে না বুঝি না। ওর পাশে থাকা উচিত
-কেন?
-বোঝো না। আমি হারিয়ে গেলে বা কেউ কিডনাপ করলে তোমার কি অবস্থা হতো।
শুভ্র অবাক হয়ে
-মেহেরাব তাহলে আরোহীকে লাভ করে।
-হ্যা। না করলে তো আরোহী মিসিং হওয়াতে ওর মুখের আবরণ তো চেঞ্জ হতো না।
-হুম ঠিক বলছো। এই শহরে এখন যে কি হবে নে?
আরোহীর চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। গতকালকের কথা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মাথায় ব্যথা অনুভব করছে। বেডে নার্স ঢুকলো। আরোহী বললো
-আমাকে কে নিয়ে এসেছে এখানে।
-এক ভদ্রমহিলা।
আরোহী অবাক হয়ে
-এক ভদ্রমহিলা মানে? চেনেন আপনি তাকে?
-না? আপনাকে দিয়ে চলে গেছে। আর এমনকি বলে গেছে আপনার কিছু হলে তাহলে হাসপাতালের কাউকেই ছাড়বে না। আপনার কাউকে জেনো কোনো খবর না দেওয়া হয় যতক্ষণ না আপনার ঙ্গান ফিরছে।
কথাগুলো বলে নার্স চলে গেলো। আরোহী রীতিমতো থ হয়ে গেলো। কুহু বেডের ভেতর ঢুকে আরোহীকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো
-তুই ঠিক আছিস তো। কিছু হয়নি তো
-হুম ঠিকি আছি। কাদিস না।
-কে তোকে নিয়ে গেছিলো?
-রাজ।
কুহু আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে ফোন বের করে কল দিতে যাবে তখন আরোহী বলে উঠলো
-তার আর প্রয়োজন নেই রাজ হয়তো বেচে নেই।
কুহু আরোহীর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে
-মানে? তোকে কে এখানে আনলো
-জানি না। তবে একটা ভদ্রমহিলা এনেছে।
-হোয়াইট। কি বলছিস?
-নার্স তাই বললো। তারা তাকে চিনে না।
-তাহলে কি আমাদের বাইরে ও কি লেডি কুইন আরেকজন আছে।
-আমার ও কেমন জানি তাই মনে হচ্ছে। আমাদের বিপদে তারা কেন বাঁচাচ্ছে।
-হাসপাতালের তো সিসি টিভি ফুটেজ দেখলে তো বের করা যাবে মহিলাটা আসলে কে?
-হ্যা ঠিকি বলছিস।
এর ভেতর বেডে ডাক্তার ঢুকলো।
মেহেরাব ভার্সিটির ক্যাম্পাসে গাছে গোড়ায় বসে আছে৷ ভার্সিটি আজ থমথমে। নিরব হয়ে আছে। লেডি কুইন মিসিং৷ কি যে হবে শহরে সবার ভেতর আতংক সৃষ্টি হয়েছে। শুভ্র পিছন থেকে মেহেরাবের মাথায় ঠুন দিয়ে
-তোর জন্য মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।
মেহেরাব শুভ্রর দিকে তাকিয়ে
-কেন? কোথায় গেছে।
-জানি না। বলছে তুই বাসায় আসলে সে বাসায় পা রাখবে।
-আন্টি কি যে করে না? আচ্ছা যাবো বাসায়।
-তাহলে চল এখন
শুভ্র উঠতে যাবে তখন মেহেরাব শুভ্রর হাত ধরে
-শোন না?
-কি?
-আরোহীর কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো।
শুভ বসে পড়লো। মেহেরাবের কাঁধে হাত দিয়ে
-সত্যি করে বলতো তুই কি?
আরোহীকে ভালোবাসিস।
-ক ক কই না তো৷ তবে সব ভালোবাসার পূর্ণতা পায় না। পেটে গেলে সময় লাগে একটু।
-হুম বুঝেছি। তোর চোখ মুখ স্পষ্ট বোঝাচ্ছে তুই আরোহী ভালোবাসিস।
-বাদ দে।
ডাক্তার আরোহীকে বললো
-কেমন লাগছে আরোহী এখন?
-জ্বী ভালো।
-ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে ওষুধ গুলো নিয়মিত খেলে তাড়াতাড়ি সুষ্ঠু হয়ে যাবেন। মিসিং করবেন না।
ডাক্তার পিসকেপশনটা কুহুর হাতে দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবে তখন আরোহী বলে উঠলো
-আপনাদের সিসি ফুটেশগুলো একটু চেক করার ছিলো।
-হ্যা সিউর। আমি লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাবে।
ডাক্তার চলে গেলো। কুহু ফোন করে আরোহীর খবরটা বলে দিলো।
শুভ্র মেহেরাবকে বললো
-তুই তোর মনের কথাগুলো আরোহীকে বলে দে?
-না।
-কেন?
-আমার স্ট্যাটার্স ওর স্ট্যাটার্স আকাশ পাতাল।
-আরে বোকা ভালোবাসা এসব কিছু মানে না।
-তবু ও। না বলা ভালোবাসার ভেতর আলাদা একটা অনুভূতি আছে।
লিমন এসে সবাইকে বললো আরোহী হাসপাতালে সুস্থ আছে। মেহেরাব শুনে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
-শুভ্র চল না আরোহীকে দেখে আসি।
-হ্যা চল।
আরোহীর খবর শুনে হাসপাতালের চারপাশ গার্ডস দিয়ে ঘিরে রয়েছে। ছোট থেকে বড় সকল নেতারা এসে আরোহীকে দেখতে এসেছে। আরোহীকে দেখা শেষ এ চলে যাচ্ছে। আরোহী কন্ট্রোল রুমে যাবে তার কোনো উপায় পাচ্ছে না । একটু ফাকা হতেই আরোহী আর কুহু কন্ট্রোল রুমে গেলো। রাতের সকল ফুটেজ গুলো দেখতে লাগলো।
আশফা শুভ্র মেহেরাব নেহা হৃদয় এসে আরোহীর বেডে গেলো কিন্তু আরোহী নেই বেড এ। মেহেরাবের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শুভ্র নার্সকে জিঙ্গেস করতে নার্স বললো কন্ট্রোল রুমে আছে।
সবাই অবাক হয়ে গেলো।
আরোহী ফুটেজগুলো দেখছে। রাত আড়াইটার কোন ফুটেজ নেই। আরোহী অবাক হয়ে
-এই টাইমের ফুটেজ নেই কেন?
-তা তো ঠিক জানি না। তখন আমরা ছিলাম না।
-আমি যে এখানে আসছি তার তো কোনো ফুটেজ দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেলো তবে।
-আমরা এই বিষয়ে কিছু জানি না।
আরোহী চোখটা টিভির উপর পড়লো সাথে সাথে হা হয়ে গেলো। রাত ৩ টা। কুহু ও অবাক হয়ে গেলো
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com