লেডি কুইন । পর্ব -২৩
মশাল হাতে লোকদের ভেতর একজন বলতে লাগলো
-মহাজন কি করবো সামনে তো কিছু ছেলেমেয়ে।
-ওদের সহ পুড়িয়ে দে।
-ঠিক আছে।
আরোহী বললো
-এরা কারা। হাতে মশাল নিয়ে। সবাইকে জাগিয়ে দি।
-হ্যা। এরা নিশ্চয়ই শত্রু পক্ষ। চল সবাইকে সাবধান করি।
মশাল হাতে লোকগুলো ওদের দিকে এগিয়ে আসতেই এক এক করে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । মেহেরাবরা সবাই অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব সবাইকে নিয়ে আড়ালে গেলো। হঠাএল করে হেলিকপ্টার এর আওয়াজ শুনতে পেলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে হেলিকপ্টারের লাইটের আলো দেখতে পেলো। মশাল গুলো পড়ে যেয়ে ওখানেই আগুন জ্বলতে লাগলো। পায়ের শব্দে সবাই সামনের দিকে তাকালো কিছু লোক হাতে বন্ধুক নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া লোকগুলোকে তুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিচ্ছে হেলিকপ্টার এ টেনে তুলে নিলো। সবাই হা করে গেলো। একটা হেলিকপ্টার যেতেই আরেকটা এসে হাজির। পাচ মিনিটের ভেতর জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। আরোহী কুহু শুভ্র দৌড়ে সামনে এসে কিছুই দেখতে পেলো না। অন্ধকার চারপাশ। সবাই অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব বললো
-আমাকে কি ফেলে রাখবি এখানে।
শুভ্র মেহেরাবের কাছে আসলো। কুহু আরোহীকে বললো
-কিছুই তো মাথায় ঢুকলো না।
-আমার ও তো ঢুকলো না। কারা ছিলো এরা। কিভাবে জানলো এখানে মশাল নিয়ে আসবে অনেকে।
-মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-এই গ্রামে ও কি কোনো মাফিয়া আছে।
-আছে হয়তো।
-খোঁজ নিতে হবে।
শুভ্র মেহেরাবকে বললো
-কি হয়ে গেলো মুহুর্তের ভেতর…?
-বুঝতে পারছি না। গ্রামে এরা বা কারা। কেন বা আসলো। আরোহীর লোকজন না তো।
-আরোহীকে জিঙ্গেস করতে হবে।
-আচ্ছা আরোহীর লোকজন হলে তো আরোহী ওদের সামনে যেতো না লুকিয়ে তবে
-অন্য কেউ আছে তবে।
নেহা হৃদয়কে বলছে
-আমার না খুব ভয় করছে। বাসায় চলো।
-ভয় পেয়ো না।
-কেন যে আসতে গেলাম গ্রামে।
-তুমি বলছিলা দেখেই তো আসছি।
-আমি কি জানতাম নাকি গ্রামে এত ঝামেলা হয়।
-আচ্ছা চলো ওদের কাছে যায়।
শুভ্র আরোহীকে বললো
-তোর লোকজন ছিলো নাকি?
-না। আমার লোক হলে তো আমি আগেই যেতাম।
সবাই অবাক হয়ে গেলো। সবাই বাসায় ফিরে আসলো। কারো চোখে কোনো ঘুম নেই। ভোর রাতের দিকে কখন যে সবাই ঘুমিয়ে টের পায়নি। সকালে মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সবার। সবার মুখে মুখে মধু বংশের বাসার নাকি কোনো চিহ্ন নেই। ফাকা মাঠ নাকি। ওখানে যে ঘর ছিলো বোঝার উপায় নেই। মধুবংশকে ও নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। থানার ফাড়ি ও নেই নাকি। গ্রামের অনেকে ছুটছে দেখতে। জামাল চাচা এসে
-শুনেছিস তোরা মধু বংশের কোনো চিহ্ন নেই । গ্রামের সবাই ছুটছে দেখার জন্য। আমি গেলাম তোরা ও আয়।
সবাই রীতিমতো শকড্। একে অপরের দিকে তাকালো। আশফা বলে উঠলো
-হচ্ছেটা কি?
-কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-চল আমরা ও যেয়ে দেখি।
সবাই দেখার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটছে। চারপাশ বাতাসে ধান দোল খাচ্ছে। গ্রামের আবহাওয়াটাই খুবই সুন্দর। গাছপালা চারপাশে রৌদ্রের উষ্ণতা খুব কম। গাছের ছায়ার গ্রামের মানুষেরা তৃপ্তি পায়।
মেহেরাব শুভ্রকে বললো
– স্যালো।
-ওয়াও। আজ তাহলে হয়ে যাক।
-হুম
আশফা বলে উঠলো
-কি হয়ে যাবে?
-কিছু না।
-বলো
-স্যালো।
আরোহী আশফা নেহা কুহু অবাক হয়ে
-স্যালো কি?
-আরে ঐ যে মটর দিয়ে পানি উঠিয়ে জমিতে দেয় ওটাকে স্যালো বলি।
-তো ওখানে কি?
-গোসল করবো। খুবই মজা।
-আচ্ছা তাই নাকি। আমি ও করবো।
-পাগল হইছো তুমি।
আরোহী বললো
-কুহু তুই আর আমি যাবো। দেখি কেমন মজা।
নেহা ও আশফা বললো
-তোর সাথে আমরা ও যাবো। ওরা ওদের মতো৷
-গ্রামের লোকজন কি বলবে।
হৃদয় বললো
-কি বলবে? পিচ্ছি পোলাপান হয়ে গেছি।
সবাই হেসে উঠলো ।
মধুবংশের বাসার সামনে সবাই এসে ভিড় জমিয়েছে৷ রাতারাতি সব কিছু উদাও। কেউ কেউ বলতে লাগলো সব ভূত পেত্নীর কাজ। নাই এভাবে সব যাবে কই। আশফা শুভ্রের হাত চেপে ধরে
-এখানে কি ভূত আছে।
-হ্যা। গ্রামে তো ভূত পেত ভরা। ঐ যে বিলে স্যালো ঘরের ঐখানে দুটো জ্বীন আছে।
আশফা শুভ্রের হাত আরো জোরে চিপে ধরে
-তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।
-কই না তো।
-ভালো হবে না।
মেহেরাব আরোহী এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। মেহেরাবকে দেখে সবাই সাইড দিলো। মাঝখান দিয়ে ফাকা হয়ে গেলো।
সবাই যেয়ে অবাক হয়ে গেলো। এখানে যে বাড়ি ছিলো নতুন কেউ আসলে বলতেই পারবে না। সারাগ্রামে গুজব লটে গেলো। দূরদূরান্তের সবাই দেখতে আসছে। মিডিয়া পুলিশ দিয়ে সবাই। যে যার মতো করে মন্তব্য করে গেলো। পুলিশ অফিসার ৭ দিনের জন্য কারফু জারি করলো। এর রহস্য সে বের করবে। রেড এ্যালার্ট দিয়ে দিলো বড় এরিয়া নিয়ে।
সবাই চলে আসলো। বাসার সামনে মেহেরাব দেখতে অনেকে এসেছে। মেহেরাবের সাথে কথা বলে সবাই চলে গেলো।
দুপুরে মেহেরাব লুঙ্গি শ্যান্ড গেঞ্জি মাথায় গামছা বেঁধে বাসা থেকে বের হবে তখন শুভ্র বললো
-আমাকে না নিয়ে কই যাস।
-তুই তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। তো থাক তুই।
-বুঝিস না কেন?
-ঠিক আছে ব্যস্ত আয়।
হৃদয় এসে বললো
-আমি রেডি
মেহেরাব হৃদয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
-তুই আবার কখন হলি।
-ও তুই বুঝবি না। চল।
-শুভ্র আসুক।
শুভ্র ও ঘর থেকে বেরিয়ে
-চল।
তিনজনে যেতে যাবে তখন আরোহী কুহু নেহা আশফা একসাথে বলে উঠলো
-আমরা ও রেডি।
তিনজন পিছনে ফিরতে অবাক হয়ে গেলো। সবাই শাড়ি পড়ে হাতে কলসি। তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে মেহেরাব বললো
-গ্রামের সাজ সাজালো কে ?
-চাচি তে।
রুম থেকে চাচি বেরিয়ে এসে
-মেহেরাব তুই কিন্তু কাজটা ভালো করিসনি। তোরা একা যাইবি আর মেয়ে গুলো এমনে থাকবে।
-কই চাচি আমাদের সাথেই তো নিয়ে যাবো।
-ঠিক আছে নিয়ে যা। দেখেশুনে।
সবাই বেরিয়ে পড়লো। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটছে। সবাই চেয়ে আছে ওদের দিকে। কেউ বলবে না যে ওরা শহরের মানুষ।
শুভ্র আশফাকে বললো
-কলসি তো নিছো ভরে আনতে পারবে তো৷
-কেন? পারবো না।
-না যদি কলসি নিয়ে যদি পড়ে যাও।
-তুমি আছো না। ধরো আমাকে।
শুভ্র আর আশফা দুজনে হাসলো।
হৃদয় নেহাকে বললো
-তুমি গ্রামের মেয়েদের মতো শাড়ি পড়ছো আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না।
-কেন?
-না মানে তুমি তো কখনো পড়ো না আর গ্রামের লোকদের তো চোখে দেখতে না।
নেহা হৃদয়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে
-কথা শোনাচ্ছো। শোনো মানুষ পরিবর্তনশীল৷ কার কখন মন ঘুরে যায় বলা যায় না। গ্রামের সাজে আলাদা একটা ফিলিংস আছে। গ্রামের মানুষরা ক্ষ্যাত না। যারা ক্ষ্যাত বলে তারাই বড় ক্ষ্যাত। এরাই তো রিয়েল হিরো। কত পরিশ্রম করে৷ আর শহরের মানুষেরা বিলাসিতা করে পায়ের উপর পা তুলে।
হৃদয় পুরো থ নেহার কথা শুনে।
আরোহী মেহেরাবকে বললো
-আমাকে কেমন লাগছে
মেহেরাব মুচকি হেসে
-পুরোই পেত্নি।
আরোহী কুহুর দিকে তাকিয়ে
-আমাকে পেত্নী লাগছে।
– না তো।
-ও যে বললো
-মিথ্যে বলছে
আরোহী মেহেরাবের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে পড়লো মেহেরাব বললো
-বাতাসের আগে যায় উড়ে আবার নিছে কলসি। নেওয়ার আগেই খুজে পাওয়া যাবে না৷
আরোহী পুরো ক্ষেপে গেলো। মেহেরাব বিলের ভেতর আইলের উপর দিয়ে দৌড়। আরোহী ও দৌড় দিলো
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com