Breaking News

গল্প- থিওরি । ২য় পর্ব

রোদ প্লিজ আমি খুব ভালো করে তোমায় চিনি তুমি কিচ্ছু কারণ ছাড়া করো না আমি সেই কারণটা জানতে চাই।
বেশ বলব আগে বলো ছয় মাসে তোমার বিবাহিত জীবনে কি আমি কোনো প্রভাব ফেলেছি?
মায়া কি তোমার জীবনে কোথাও এতটুকু জায়গা জুড়ে নেই?
হিমালয় কিছুক্ষণ চুপ থাকলো,
তারপর রোদের চোখে চোখ রেখে একটু সামনে ঝুকে আসলো,
যখন তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেছিলে আমি একদম দিশেহারা হয়ে গেছিলাম না খেয়ে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে এডমিট হতে হয়েছিলো,
সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলে মা তার মাথায় হাত রেখে আমায় বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য ওয়াদা করিয়েছিলেন,

একরকম বাধ্য হয়েই বিয়েটা করেছিলাম,
কিন্তু তুমি তো আমাকে চেন রোদ আমি কিরকম আমি কিন্তু আবেগের বশে অন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করি নি আমি মায়াকে তার সব অধিকার দিয়েছি কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করি নি,
অবহেল করি নি,অন্ধকারে রাখি নি সবটা জানিয়েছি,খেয়াল রেখেছি গুরুত্ব দিয়েছি,
হ্যা হয়তো মায়াবতী ওই মেয়েটার মায়াতেও পড়ে গেছি তোমাকে ছাড়া যেমন বাচতে শিখেছি ওকে ছাড়া হয়তো সেটা সম্ভব না ও আমার অভ্যেস হয়ে গেছে এখন আমি চাইলেও আর তোমাকে নিয়ে জীবন টা শুরু করতে পারব না। আমি তো প্রতারক নই রোদ আমি ওই মেয়েটাকে ঠকাতে পারব না। মায়া খুবই শান্ত একটা মেয়ে একজন আদর্শ স্ত্রী, বাড়ির লক্ষী বউ,ভালোবাসার বড্ড কাঙালী,

সবকিছু ছেড়ে মেয়েটা আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে একটু ভালোবাসার আশায়,
কিন্তু ওখানেই আমি অপারগ, ভালোবাসার অনুভূতি টা যে কি তা আমি তোমায় বোঝাতে পারব না,
বুকের মধ্যে না পাওয়ার ক্ষতটা যে কিরকম করে জ্বালা দেয় তুমি বুঝবে না কখনোই বুঝবেনা, মায়া প্রতি মধ্যরাতে উঠে বসে আমার দিকে চেয়ে থাকে ভালোবাসা খোজে আমি বুঝি খুব মায়া হয় বিশ্বাস করো, আমাদের রক্তে মাংসে খেলা হয় কিন্তু ভালোবাসাটা হয় না, আমি এখনো আমার রোদকে খুজি যে আমায় শাসন করতো আমার পাগলামি গুলোকে সহ্য না করে প্রতিবাদ করত, আমি এখনো মাঝরাতে জেগে উঠি মায়ার মতোই ভালোবাসা খুজি কিন্তু পাই না এমনকি ভালোবাসার মানুষটার দেখাও মেলে না, তোমার থিওরি কি বলে রোদ কিসের টানে মানুষ একজনের সাথে সংসার করে অন্যজন কে ভালোবাসে?

রোদ অন্য দিকে মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছে
রোদে তো আর বৃষ্টি হতে পারে না খুব কষ্টে গলার কাছের দলাটা আটকে রেখেছে।
হিমালয় আলতো করে রোদের হাতটা ওর দুহাতের মুঠো তে নিতেই রোদ কেপে উঠল,
—ভয় নেই এই ছোয়াতে লালসা নেই, নির্ভরতার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম এবার চাইলে কাদতে পারো।আমার চেয়ে বেশি তোমায় কেউ বুঝবে না কোনোদিন না।
রোদ আর চুপ থাকতে পারে নি ডুকরে কেদে উঠেছে মেয়েটার এই বাইরের শক্ত খোলসের মধ্যে যে কতটা মায়া তা হিমালয় ভালো করেই জানে। কিছুক্ষণ কাদার পর রোদ নিজেকে শান্ত করল, তার পর অন্য হাতটা হিমালয়ের হাতে রেখে বলল,

আমি আজীবন তোমার মনের বন্দী সিন্দুকটায় থাকতে চাই তবে তালাবদ্ধ আমার জন্য আর তুমি মায়াকে বঞ্চিত করবে না মেয়েটা তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসে, জানি কথা টা বলার অধিকার আমার নেই এটা মায়ারই অধিকার তোমাকে জানানো কিন্তু স্বার্থপর আমি লোভটা সামলাতে পারছি না।
কি কথা রোদ?

তুমি বাবা হতে চলেছ, তোমার জীবন পূর্নতা পাবে মায়ার জন্যই সেটা সম্ভব হচ্ছে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওটা তোমায় মায়া দিতে চলেছে।
হিমালয় বড় চোখ করে চেয়ে আছে রোদের দিকে ওর চোখে স্পষ্ট বিস্ময় আর প্রাপ্তির আনন্দ
দেখতে পাচ্ছে রোদ এই তৃপ্তিটাই ও হিমালয়ের চোখে দেখতে চেয়েছিল,
যা কখনোই রোদ পূরণ করতে পারত না রোদ যে কখনোই মা হতে পারত না ওর
অসম্পূর্ণ জীবনের সাথে কখনোই ও হিমালয় কে জড়াতে চায় নি তাই খুব ধীর পায়ে পিছিয়ে এসেছিল, কিছু ভালোবাসা পূর্নতা পায় না পার্ফেক্ট কিছু জুটির মাঝে অপূরণীয় একটা

ক্ষত তৈরী হয়েই যায় যা তাদের ভালোবাসাকে কখনো পূর্নতা পেতে দেয় না
এবার থেকে মায়াবতী কে ভালোবাসবে তো হিমালয়? আমার থিওরি ঠিক প্রমাণ করবে না?
হিমালয় কি বলবে বুঝতে পারছে না এই মূহুর্তে ওর ছুটে মায়ার কাছে
যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু রোদকে হারাতে চাইছে না কি করবে এখন হিমালয় নিজেই বুঝতে পারছে না
তোমাকে আরেকটা কথা বলব তারপরই আমি চলে যাব তুমি আমায় আটকাবে না প্লিজ তুমি তো জানোই আমি কারোর করুনা নিয়ে বাচতে পারব না।

হিমালয় রোদের দিকে নিশ্চুপ চেয়ে আছে ওর কথা শোনার অপেক্ষায় আছে,
আমি একজন অপূর্ণ নারী হিমালয়, একজন মেয়ে তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন সে মা হতে পারে মায়াবতী
এখন একজন পূর্ণ নারী যা আমি কখনোই হতে পারতাম না তুমি আমায়
ভালোবাসতে সবটা জেনে হয়তো বিয়েটাও করতে কিন্তু আমি কখনো তোমাকে
আজকের এই প্রাপ্তির আনন্দ টা দিতে পারতাম না,

তোমার আজকের এই সুখটা অনুভবের পর আমি তোমায় আমার অসম্পূর্নতার কথা বলছি
যাতে তুমি বুঝতে পারো এর স্বাদটা কত সুখের যা তুমি আমার সাথে থেকে কখনোই
পেতে না আমি তোমাকে ভালোবাসি হিমালয় আমি চাই পৃথিবীর সব সুখ তুমি পাও
তুমি খুব ভালো হিমালয় সবটা পাওয়ার অধিকার তোমার আছে।আমি তো তোমায়
সবটা দিতে পারতাম না তাই প্রতারণাই না হয় করলাম।এখন আর বসে থেকো না প্লিজ
এখন তোমার মায়ার কাছে যাওয়া উচিত আমি আসছি, হয়তো আর কখনো আমাদের
দেখা হওয়ার প্রয়োজন নেই তাই না? ভালো থেকো হিমালয়। মায়ার লেখা চিঠিটা যত্ন
করে ভাজ করে ব্যাগের মধ্যে রেখে রোদ উঠে গেলো সেখান থেকে আর
একবারের জন্যেও পেছনে ফিরে তাকায় নি সে।

রোদ চলে যাচ্ছে হিমালয় চেয়ে আছে কিন্তু আটকাতে পারছে না কি বলবে হিমালয়!
এতদিন যে মেয়েটার প্রতি চাপা অভিমান পুষেছিলো সেটাও উড়িয়ে দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে রোদ।
হিমালয় খুব করে চাচ্ছে মেয়েটার হাতটা ধরে আটকাতে কষে একটা চড় মেরে বলতে
তোমার কোনো অধিকার নেই রোদ আমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত একা নেওয়া খুব বেশি বাস্তববাদী তুমি,
একবার আমাকেও জানাতে পারতে অনেক সমাধানই

বের হতো আমার জীবনে এত বড় প্রাপ্তি তোমার সাথে পূর্নতা পেতো,
তোমার অপূর্নতা নিয়ে বেচে থাকা আমায় সারাজীবন পোড়াবে সেটা তুমি কখনোই বুঝতে পারবে না,
নিজের কথা রেখে সারাজীবন আমায় ভালোবেসে কাটিয়ে দিয়ে আমাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে তুমি আমায় অপরাধী করে গেলে, আজো তুমি একতরফা কথা বললে,আজো আমায় কিছু বলার সুযোগ দিলে না,

কিন্তু হিমালয় কিছুই বলতে পারলো না সবটা কষ্ট খুব যত্ন করে দলা করে বুকের বা পাশটায় চেপে রাখলো,
তার দায়িত্ব বেড়ে গেলো রোদের থিওরি ঠিক প্রমাণ করার দায়িত্ব, মায়াবতীর কাছে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, হিমালয় যে রোদের কোনো কথা ফেলতে পারে না।
১৭ বছর পর…..
রোদ রোদ কোথায় তুমি কি হলো রোদ কোথায় তুমি? একি রোদ তুমি নাকি গোল্ডের চেইনটা নিতে চাচ্ছ না কেন?

—প্রথমতো আর কতবার বলব তুমি আমায় রোদ বলে ডাকবে না আমার নাম রৌদ্রময়ী সবাই তাও ডাকে
—তুমি তো জানোই সবাই ডাকলেও আমি ডাকব না আমি তোমায় রোদ বলেই ডাকি আজীবন তাই ডাকবো। এবার বলো চেইনটা কি তোমার পছন্দ হয় নি আমি কি অন্য ডিজাইন বা আরো বড় একটা এনে দেব?

—পছন্দ হওয়াটা ব্যাপার না বাবা আসলে আমি ওই চেইন টার যোগ্য নই এর আগেও আমি ২ টো সোনার চেইন হারিয়ে ফেলেছি এটা আমি আর নেব না,

আর তুমি জানো যখন রৌদ্রময়ী আহমেদ বলেছে নেবে না তার মানে নেবে না তুমি প্লিজ মাকে বলো আমার সাথে এ নিয়ে যেন আর কোনো কথা না বলে।সকাল থেকে আমার মাথাটা খেয়ে ফেলছে।
—কিন্তু ঐটা তো আমি তোমার ১৬ তম জন্মদিনের উপলক্ষে তোমাকে উপহার দিচ্ছি তুমি নেবে না মা?
—বললাম তো বাবা না, প্লিজ আমি কখনোই সে জিনিসটা নিতে পারব না যার যত্ন আমি নিতে পারি না,
যার আমি যোগ্য নই। ওটা তুমি মাকে উপহার দিয়ে দাও, আমায় তোমার কাছে উপহার দেওয়ার উপহার হিসেবে ওটা মাকে দিয়ে দাও।

রোদের দিকে অপলক চেয়ে আছে হিমালয় মেয়েটাকে একদম ওর রোদের মতোই,ব্যাক্তিত্বের সাথে আপোষহীন, নিজের কথায় অটল।
হিমালয় মায়ার রুমে এসে দুভরির চেইন টা পেছন থেকে মায়াকে পড়িয়ে দিল,খুব স্নেহে যত্নে মায়াকে জড়িয়ে বলল,

থ্যাংক ইউ মায়া আমাকে রোদ উপহার দেওয়ার জন্য,
উহুহ থ্যাংকস টু রৌদ্রময়ী আমাকে একটা ভালোবাসায় ভরা হিমালয় উপহার দেওয়ার জন্য।
সেদিনের পর হিমালয় মায়াকে আগলে নিয়েছে ভালোবেসেছে, কিন্তু কোন ভালোবাসা তা হিমালয় বুঝতে পারে না, ওর বুকের মধ্যে তো আজো রোদ আছে খুব ভারী হয়ে বুকের সিন্দুকের মাঝে, যেখানে হঠাৎ হঠাৎ ব্যাথা করে ওঠে নিঃশ্বাস নিতে দেয় না,

এখনো ভালোবাসি বলতে গেলে ওর রোদ কেই মনে পড়ে ওর কি পাপ হয়?
আচ্ছা রোদের থিওরি কি ঠিক প্রমাণিত হয়েছে না ভুল?
ওর ১৬ বছরের রোদের থেকে জেনে নিতে হবে মেয়েটা গম্ভীর ভাবে সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে বাস্তব টা বুঝিয়ে দেবে।

সন্ধ্যায় হিমালয় রোদের ঘিরে গিয়ে দেখলো রোদ বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে, খাচ্ছে বললে ভুল হবে নাকের সামনে নিয়ে একমনে ঘ্রাণ নিচ্ছে।হিমালয়ের বুকের মধ্যের সিন্দুকটা আবার ভারী হয়ে গেছে ও রোদের সামনের বেতের চেয়ারটায় বসতে বসতে বলল,
—আচ্ছা রোদ মায়া আর ভালোবাসা কি এক? ভালোবাসাহীন মায়া কি হয়?
মেয়েটা মোটেও লজ্জা না পেয়ে বলবে বাবার চোখে চোখ রাখলো দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
— তোমার জীবনে মায়া মানে হচ্ছে মায়াবতী আর ভালোবাসা মানে রোদ,
দুটো আলাদা সমীকরণ যা তুমি কোনোদিন মেলাতে পারবে না।
আমার একটা থিওরি আছে জানো বাবা তুমি আমার থিওরির সাথে অবশ্য মিলিয়ে দেখতে পারো
যদি তোমার কোনো হেল্প হয় বলব?

—হ্যা বলো
একজন মানুষ বারবার মুগ্ধ হয় অনেকের মায়ায় পড়ে
তবে যদি একবার কাউকে ভালোবেসে ফেলে দ্বিতীয়বার সে আর ভালোবাসতে পারে না,
এরপর কেবল দায়িত্ব আর মায়া থেকে যায় কিন্তু ভালোবাসাটা আর হয় না”।
হিমালয় রোদের দিকে চেয়ে আছে মেয়েটা কফির ঘ্রাণ নিচ্ছে হিমালয়
খুব ভালো করেই জানে এখন আর রোদের কোনোদিকে খেয়াল হবে না ও খুব ভালো করে চেনে মেয়েটাকে ওর আজকের থিওরি অন্য একটা থিওরির সমাধান করে দিয়েছে খুব সহজে,
“মানুষ একাধিক বার মায়ায় পড়ে কিন্তু ভালোবাসতে পারে না দায়িত্ব থাকে কিন্তু ভালোবাসাটা হয় না”।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com