অনুগল্পঃ কারণ আমি ছেলে । মেহেদি হাসান রিয়াদ
বিয়ের বয়স তো পার হয়ে যাচ্ছে বাজান। এবার বিয়েটা করে আমায় একটু শান্তি তো দিতে পারিস। আর কতোদিন এভাবে থাকবি বলতো?
মায়ের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাবার ভাচ্ছি আমি।
মায়ের সাথে ছোট ভাই রিফাতও তাল মিলাচ্ছে,
,, মা তো ঠিকই বলছে ভাইয়া, সময় তো পার হয়েই যাচ্ছে। আর কয়েক বছর গেলে তো কেও আর মেয়েও দিতে চাইবে না।
ভ্রু কুচকে রিফাতের দিকে তাকাতেই সে চুপ চাপ খেতে লাগলো।
তারা কি জানে এই বুকে জমে থাকা হাজারও কষ্টের কথা? তারা কি জানে এই বিয়ে বিয়ে করে চেচানোর পরেও বিয়ে না করার কারণটা?
খাওয়া শেষে উঠে চলে গেলাম আমি। রুমে গিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিলাম।
রাত প্রায় ১২টা ছুই ছুই,,
গরমের কাল, ইদানিং বিদ্যুতেও প্রচুর প্রব্লেম। গরমে ঘুম আসছেনা কিছুতেই।
বাইরে জোৎসার আলোয় আলকিতো গোটা শহর। প্রকৃতিটাও নিশ্চুপ।
ঘুম আসছেনা তাই ফোনটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম নিঝুম প্রকৃতিতে একটু হাটতে। খুব জেনো ইচ্ছে করছে এই সুন্দর প্রকৃতিটা একটু উপভোগ পরতে।
হাটতে হাটতে চোখ পরলো সামনে বড় ব্রিজটার উপর। লেম্পোষ্টের আলোতে একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে ওখানে। চার দিকে জন মানব শুন্য। ছেলেটার কাছে এগিয়ে গেলাম। তার পাসে গিয়ে দাড়াতেই দেখি। সে ফোনে একটা মেয়ের ছবির দিকে তাকিতাকিয়ে চোখের জল ফেলছে। আর ফোন থেকে মেয়েটার ছবিগুলো একটা একটা করে ডিলিট করে দিচ্ছে।
আমাকে দেখে কিছুটা চমকে উঠে ছেলেটা।
হাসি মুখে ছেলেটার কাধে হাত রেখে বললাম,
— এতো রাতে এখানে কি করছো একা একা?
ছেলেটা একটু গম্ভির ভাবে উত্তর দিলো,
— তা যেনে আপনার কি কাজ? কে আপনি? আপনি কি পুলিশের লোক?
— না না, এই পথে হাটছিলাম তাই তোমাকে দেখে এলাম।
— তাহলে যেদিকে যাচ্ছিলেন যান না। এখানে কেনো ঘ্যান ঘ্যান করছেন?
— এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাদছো, তোমাকে তো দেখে মনে হচ্ছে,,,,,,,
ছেলেটা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জবাব দিলো,
— হ্যা আমি এখানে সুইসাইড করতে এসেছি।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
— ব্যাপার না, আমি তোমাকে বাধা দিতে আসিনি। তবে তোমার সুইসাইডের কারন টা কি জানতে পারি? ধরো তুমি জদি মৃত্যুর আগে তোমার মৃত্যুর কারন টা কাওকে বলে যাও তাহলে মরেও একটা শান্তি পাবে এই কারণে য, মরার আগে একজনকেও তুমি তোমার মৃত্যুর কারনটা জানাতে পেরেছো। যদি তোমার মৃত্যুর কারনটা কেও না জানে, তাহলে মরেই বা কি লাভ।
ছেলেটা এবার চুপ করে আছে চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরছে।
— এই যে মেয়েটাকে দেখছেন তাকে জরিয়ে আমার জীবনের গড়া ছিলো হাজারও স্বপ্ন।
ছেলটা বলতে শুরু করলো তার মৃত্যুর কারনটা। আর মাঝে মাঝে চখের জল মুছে নিচ্ছে। ছেলেটা বলা শেষ করেও এখনো চখের পানি মুছছে।
ছেলেটার কাধে হাত রেখে বললাম,,
— তোমার নাম কি?
— জ্বি রিফাত আহমেদ।
— আমার ছোট ভাইয়ের নামও রিফাত। তুমি মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত না হয় আমাকে নিজের বড় ভাই ই ভাবতে পারো। কি পারবে?
— জ্বি ভাইয়া। আর আছিই বা কতোক্ষন।
— জানো রিফাত তোমার জীবনের সাথে আমার জীবনের একটা অদ্ভুত মিল আছে।
— কেমন?
— শুনবে?
— আচ্ছা, মৃত্যুর আগে আরো একটি কষ্টের কষ্টের জীবনি শুলে মন্দ হয়না। তাতে আরো আমার সুইসাইডের আগ্রহটা বেড়েই যাবে।
— তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি আজ সুইসাইড করবেই? আচ্ছা শুন তাহলে,,,,
তখন আমি ছিলাম স্টুডেন্ট, বাবার আয়ে সংসারে টানটান ছিলো। সাথে ছোট ভাই রিফাতের পড়ালেখার খরচ ও। আমি দুটা টিওশনিও করতাম। যাতে সংসারের কাজে একটু হেল্প করা যায়।
দিনটা ছিলো, বৃষ্টির(আমার গার্লফ্রেন্ড) জম্মদিন। অনেক দিন ধরেই টাকা বাচিয়ে জমিয়ে রেখেছিলাম যাতে অন্য ৮-১০ ছেলের মতো গার্লফ্রেন্ডের জম্মদিনে ভালো কিছু গিপ্ট দিতে পারি।
গিপ্ট কিনতে গেলাম, তখনি বাসা থেকে রিফাত ফোন দিয়ে বললো, ভাইয়া তুই কোথায়? তারাতারি বাসায় আসো বাবা অসুস্থ হয়ে পরেছে।
বাবাকে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলাম। বাবাকে বাসায় নিয়ে এলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখি, মাত্র ৭০ টাকা আছে।
সেইদিন গিপ্ট কিনা আর কিনা হলো না। ফোন টাও বন্ধ করে রেখেছিলাম।
তার কাছেও কোনো অজুহাত দেখিয়ে পার পেলাম না।
— তুমি কাল আসোনি এটা তোমার প্রথম অফরাধ, আর দ্বিতীয় অফরাধ হলো ফোনটা অফ করে রেখেছিলে কেনো? আর এখন একের পর এক অজুহাত দেখাচ্ছো।
বৃষ্টির কথার কোনো উত্তর নেই আমার কাছে, নিচের দিকে তাকি য়ে বসে আছি চুপটি মেরে।
বৃষ্টি কাধে মাথা রেখে বললো,
— টাকা ছিলোনা তাই তো? তাতে কি? গিপ্ট কি এতোই প্রয়োজন ছিলো? এমনিতেও কাল আমার বাসা গিপ্টে ভরে গেছে। কিন্তু যেই মুল্যবান গিপ্টের জন্য আমি বসেছিলাম সেটাই এলোনা। তার সেই মুল্যবান গিপ্ট টা হলো তোমার মুখ-দর্শন। গিপ্ট গুলো না হয় বাকির খাতায় জমা করে রেখে দাও। যখন তোমার দেওয়ার সামর্থ হবে তখন একসাথে নিয়ে নিবো। আর তাও দিতে না পারলেও আস্তে আস্তে করে নিয়ে নিবো। আর কখনো আমার কাছে কোনো অজুহাত দেখানোর দরকার নেই। এবার একটু হাসো,,,,,,,,,,
রাতে শুয়ে আছি তখনি ছোট ভাই রিফাত এসে বললো,
— ভাইয়া তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
— হুম বল,,,
— ভাইয়া, পরশু আমার ফরমফিলাপের লাস্ট ডেট। বাবাকে বলেছিলাম, বলছে তার কাছে নাকি টাকা নেই। কালকের দিন বাকি আছে মাত্র।
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,
— আচ্ছা তুই যা পড়তে বস, আমি দেখছি কি করা যায়?
খুব কষ্টে ধার নিয়ে রিফাতের ফরমফিলাপের টাকা জোগার হলো। তার পরদিন বৃষ্টি বায়না ধরলো, আমার সাথে আজ সারা দিন ঘুরবে।
তখনও পকেটে হাত দিয়ে বের হলো বিশ টাকার একটা নোট। ফেললাম বড় একটা দির্ঘশ্বাস।
পর দিন বৃষ্টিকে শুনালাম এক নতুন অজুহাত,,,
— আমি আসলে আজ তোমায় নিয়ে কোথাও যেতে পারছিনা। আমি এখন আমার ছোট খালার বাসায়। অন্যদিন যাবো আমরা।
বৃষ্টি রাগি গলায় বলে উঠলো,
— তুমি এক্ষুনি বাইরে আসো। আমি তোমার বাসার সামনে।
সারাদিন ঘুরাঘুরি করলাম দুজন মিলে। সব খরচ সে দিলো, আমি শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম সেদিকে।
বৃষ্টি মুচকি হেসে বললো,,
— কি মন খারাপ হচ্ছে? বললাম না সব বাকির খাতায় লিখে রাখো। যেদিন সামর্থ হবে সেদিন শোধ করে দিও।
সময় কেটে গেলো আরো,,,
বাবা তখন অসুস্থ, সংসারে হাল পুরুপুরি ভাবে ভর করেছে আমার উপর। বাবার চিকিৎসা ছোট ভাইয়ের লেখা পড়া, গোটা সংসার সব এসে পরেছে আমার উপর।
বৃষ্টি ফোন দিয়ে কাদতে কাদতে বললো,
— রিদ তুমি কোথায়? বাবা হুট করেই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। পরশু আমার বিয়ে, প্লিজ তুমি কিছু একটা করো। আমি অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমায় এখান থেকে নিয়ে যাও।
বাড়িতে গিয়ে দেখি, ছোট ভাই বসে বসে পড়ছে। মা টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
— বাবা বলছি কি, সংসারের সব বাজার সদাই শেষ, আর তোর বাবার ঔষধ ও শেষ হয়ে গেছে। আর শরিরটাও ভালো নেই কাল একটু ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবি?
মাথা নিচু করে প্লেটের ভাত গুলো আঙুল দিয়ে নারাচারা করছি। এই পরিবারের এক মাত্র ভরষা এখন আমি।
— মা তুমি চিন্তা করো না, বাবা খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবে। আমি কিছু একটা ব্যাবস্থা করছি।
“কোনো একটা ব্যবস্থা করছি” এই সব্দটাই যেনো মধ্যবিত্য পরিবারের সন্তানের নিত্য দিনের কথা।
গভির রাতে আবার বৃষ্টির ফোন এলো। ফোনটা কেটে দিলাম। পাওয়ার অফ করে শুয়ে রইলাম নিশ্চুপ হয়ে। অনেক ভেবে দেখলাম, বৃষ্টিকে নিয়ে এসে আমি কিছুই দিতে পারবো না। শুধু একমুঠু ভালোবাসা ছারা। আর কখনো কখনো বাস্তবতার কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ। ওর বিয়ে নিশ্চই কোনো বড় পরিবারের ছেলের সাথেই ঠিক হয়েছে। ও হয়তো সাপ্তাহ্ দশদিন কান্না করবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সারা জীবন সুখে থাকার জন্য কয়েকদিন নাহয় কষ্ট বরণ করে নিবে সে। কখনো কখনো ভালোবাসার মানুষকে ভালো থাকার জন্য ভালোবেসেও ছেরে দিতে হয়। সে মানুষটা ভালো থাকার জন্য না হয় সারা জীবন বেঈমান হয়েই রইলাম।
পড়ালেখাও শেষ, শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি চাকরির জন্য। কখনো খেয়ে, আবার কখনো না খেয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকি এদিক ওদিক।
বাসা থেকে ফোন দিয়ে জিগ্গেস করে, বাবা কেমন আছিস।
হাসি মুখে উত্তর দিতাম, আলহাম্দুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তার পরের প্রশ্নটাই হয়, বাবা চাকরি পাইছিস?
কি করছি, কোথায় থাকছি, খেয়েছি কিনা তা ওই প্রশ্নের নিচেই ঢাকা পরে যায়।
অনেক কষ্টের পর অবশেষে ভালো সময়ের সন্ধান পেলাম। এই যে এখন আমার ভালো থাকার জন্য সবই আছে। ভালো চাকরি, পরিবারের কাছ থেকে ভালোবাসা। সবই আছে। নেই শুধু অর্থের অভাবে হারিয়ে ফেলা শেই মানুষটা।
খেয়াল করলাম ছেলেটা ফেল ফেল করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
ছেলেটার কাধে হাত রেখে বললাম,
— চাইলে আমি আরো অনেক আগেই তোমার মতো সব ছেরে চলে যাওয়া কথা চিন্তা করতে পারতাম।
পারিনি কারন আমি ছেলে জাতি। যে জাতিকে সব কষ্টই মাথা নত করে নিতে হয় বাকিদের মুখে হাসি ফুটাতে।
কারণ বাস্তবতার সাথে লড়তে গেলে তাদের বুকে পাথর বাধতে হয়।
মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হওয়াটা সহজ হলেও তাকে অনেক বাধা ডিঙিয়ে পার হতে হয়।
যৌবন আসতেই সবাই তার উপর আশা করতে থাকে। তাকে সবার আশাটা পূর্ন করতে হয়।
সমস্ত দায়িত্ব কাধে নিয়ে কষ্টের সময়টায়ও হাসি মুখে বলতে হয়, আমি ভালো আছি।
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে, নিজেকে বুঝাতে হয়।
সবার আশা পূর্ন করতে না পারলে, তাদের অভিমান গুলোও তাকে সহ্য করতে হয়।
বাবা মা যেনো সব সময় ভালো থাকে, কোনো আত্বিয় যেনো কষ্ট না পায়।
তার সন্তান যেনো তার থেকে ভালো জীবন পায়। এই সব কিছুর হিসাব তাকে রাখতে হয়।
সামান্য কষ্টে ঘেঙে পরা চলে না ছেলেদের।
কয়েক বছরের সম্পর্কের জন্য কি তুমি সারা জীবনের সম্পর্ককে ছেরে চলে যেতে চাও।
তুমি কি জানো তোমার বাবা-মায়ের মনে তোমায় নিয়ে কতো স্বপ্ন?
আর তুমি কি এক মুহুর্তের আবেগের জন্য তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিবে?
জীবনের সাথে লড়াই করে আমি আজও বেচে আছি। কারন আমি হার মেনে নিবো না।
পরিবারের জন্য নিজের ভালোবাসা ছেরে দিয়েও আমি দমে যাইনি।
কারণ আমি আমার পরিবারের একটা স্বপ্ন।
তোমরা কয় ভাই?
ছেলেটা মাথা নিচু করে জবাব দিলো,,
— আমি একা।
— তুমি তো এখন মরে যাবে কাল সকালে তোমার বাবা মায়ের কি অবস্থা হবে তা ভেবেছো? যদি তোমার শোকে তাদেরও একটা কিছু হয়ে যায়?
ছেলেটা মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে এখনো।
তার কাধে হাত রেখে বললাম,
— এখন তোমার সিদ্ধান্ত অনুজায়িই তুমি কাজ করো। ভুল সিদ্ধান্ত নাও আর সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। তোমার সিদ্ধান্তে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি চাইলে এখন সুইসাইডের মতো জঘন্য পথটা বেছে নিতে পারো।
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপনি তো হেটেই যাবেন দেখছি। চলুন আমার বাইকে আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি। তার পর আমি বাড়ি চলে যাবো।
মুচকি হেসে তাকে বললাম,
— তার আর দরকার নেই। কাছেই আমার বাসা। তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাই ধন্যবাদ। রাত অনেক হয়েছে বাসায় চলে যাও। নিশ্চই আঙ্কেল আন্টি তোমার জন্য চিন্তা করছে।
আর এখন আমার সার্থকতা হলো, আমি একজন ভাইকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ থেকে বাচাতে পেরেছি।
কিছু না বলে ছেলেটা হুট করেই আমায় জড়িয়ে ধরলো।
— থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
ছেলেটাকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে আসলাম। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখি মা দাড়িয়ে আছে।
— এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলি তুই?
— বাইরের দিকে একটু হাটতে বের হয়েছিলাম মা।
— প্রতি দিন এতো রাতে বাইরে হাটিস, ঘুমাস কখন? তোর বাবা আমায় বলেছে, কালই মেয়ে দেখতে যাবো। বৌ আনলে সে ই তোর বেখেয়ালিপনা গুলো ঠিক করবে।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com