বৃষ্টি ভেজা রাত । পর্ব- ১৭
রিদকে বিদায় দিয়ে সবাই চলে আসে বাড়ি। রিদ প্রায় সময়ই এই বাড়িতে ছিলো।
খুব হাঁসি খুশিই ছিলো সে। কিন্তু হটাৎ এমন কেনো করলো তা সবারই অজানা।
রাত সেই আসার পর থেকেই বিষন্ন মনে বসে আছে ঘরে।
সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে দুজন।
একসাথে কতোই না সময় পার করেছে তারা।
বারান্দায় চেয়ারে বসে মস্ত বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
একটু পর আরশি আসলো ওখানে।
কিছুক্ষন রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা নেই মুখে।
রাত নিরবতা ভেঙে বলে উঠে,
– কি রে কিছু বলবি?
মাথা নাড়িয়ে “না”সুচক সম্মতি জানিয়ে আবার চলে গেলো আরশি।
রাত আবার বসে রইলো আগের মতো।
রাতের খাবার খেয়ে সোফায় একটু গা এলিয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি উঠে নিজের রুমে চলে গেলো একটু আগে।
রাত্রি চৌধুরির মুখে চিন্তার ভাজ। রিদ ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পারবে কি না?
– রিদ কি তোকে কিছু বলে গেছে?
গম্ভির গলায় রাতের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুরে দেয় রাত্রি চৌধুরি।
– না মা, আমায় তেমন কিছু বলে নি।
রিদ তার বেশির ভাগ কথাই আমার সাথে শেয়ার করতো।
কিন্তু হটাৎ কেনো চলে যাচ্ছে তা অনেকবার জিঙ্গেস করলেও কিছু বললো না সে।
বললো, মামা মামির কথা নাকি মনে পরছে খুব। তাই চলে গেলো।
– কেমন আছে কি করছে, ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পরছে কিনা তাও জানিনা।
– টেনশন করোনা, সে পৌছালেই ফোন দিবে।
– আচ্ছা, ছেকা টেকা খায়নি তো আবার?
– আমি যতদুর জানি রিদের কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিলো না। বাকিটা কে জানে। হয়তো আমার থেকে লুকাতেও পারে। কিন্তু এমন কোনো বিষয় নিয়ে আমার সন্দেহ হয়নি কোনো দিন।
– আমার বাবার বংশে একটাই মাত্র ছেলে। কোনো অসুবিধা না হলেই হয়। পৌছালে আমায় একটু জানাস, টেনশানে মাথাটা ধরে আসছে তোরা থাক তাহলে।
আমার আবার না ঘুমালে ব্যাথা বাড়তেই থাকবে।
রাত্রি চৌধুরি সোফায় ভর করে উঠতেই বৃষ্টি গিয়ে এক হাত কাধে তুলে নিয়ে বলে,
– বেশি ব্যাথা করছে মা? চলেন আপনাকে রুমে দিয়ে আসি।
না আমি ঠিক আছি যেতে পারবো, তুমি এখানে আড্ডা দাও।
– না পারবেন না, আর মায়ের মুখের উপর মেয়েদের এতো কথা বলতে নেই। চলেন তো।
রাত্রি চৌধুরি কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা মা, আপনার কথাই চিরধার্য।
সকালে ঘুমের মাঝে হাতটা টেনে কেও তোলার চেষ্টা করছে রাতকে। কিন্তু আফসোস একটুও উঠাতে পারছেনা তাকে। এর আগে অনেক্ষন ধরে ডেকে না তুলতে পেরে এবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিলো বৃষ্টি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
হাপ ছেরে বিছানার এক পাশে ধপাস করে বসে পরে বৃষ্টি।
“এভাবে মরার মতো কেও ঘুমায়? কানের কাছে বোম মারলেও মনে হয়না এই ঘুম ভাঙবে।
ইচ্ছে করছে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।
এবার পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা বারি দিলো রাতকে।
তবুও রাতের কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার একটু ঘাবরে যায় বৃষ্টি। বুকের বা-পাশটায় মাথাটা রেখে কান পেতে শুনতে থাকে হৃদপিন্ডের শব্দ।
বৃষ্টির ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তা আর হলোনা। ইন্টারে উঠেই গ্রুপ চেন্জ করেছিলো সে। ওসব বিজ্ঞান তার মাথায় ঢুকবেনা। এর চেয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকাই ভালো। পড়ার চাপও কম।
কিন্তু এই মুহুর্তে ডাক্তারি করার একটা চান্স পেয়ে গেছে বৃষ্টি।
হাত ধরে পাল্স চেক করে, না সব ঠিকঠাক। কয়েকদিন আগে মুভিতে দেখেছে হিরোর কোনো এক কারনে জ্ঞান ফিরছেনা। হিরোইন তখন বুকের উপর দু,হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তার পর ঠোটে ঠোট রেখে কি যেনো করলো, কিছুক্ষন পর লাফিয়ে উঠে গেলো হিরো।
বৃষ্টি রাতের পেটের উপর উঠে বসলো। হাত দিয়ে বুকে হালকা করে চাপ দিচ্ছে। পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োগ করতে কিছুটা লজ্জা গ্রাস করে নেয় তাকে। তবুও সে দেরি না করে রাতের ঠোটে ঠোট রাখে বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর ছেরে দিয়ে দেখে রাতের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার জেনো সত্যিই ভয় গ্রাস করে নিয়েছে বৃষ্টিকে। কান্নার ভাব চলে আশে মুখে।
মুহুর্তেই যেনো খিক খিক করে হেসে উঠে রাত। যানো অনেক্ষন ধরে হাসিটা থামিয়ে রেখেছে সে। রাগের চরম পর্যায়ে নিচের ঠোটটা দাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বড় বড় পরে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। পেটের উপর বসা অবস্থায় এলোপাথারি কিল ঘুষি দিতে থাকে রাতের বুকে। রাত হাসতে হাসতে বৃষ্টির হাত দুটি ধরে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– তোমার কাছ থেকে আদর পেতে হলে তো দেখছি রোজ রোজই নতুন নতুন এক্টিন করতে হবে। কিছুক্ষন আগে যভাবে বুকের উপর মাথা রেখে হৃদপিন্ডির আওয়াজ শুনছিলে ওভাবে আর কিছুক্ষন সুয়ে থাকোনা প্লিজ। অনুভুতিটা ছিলো অতুলনিয়।
নাস্তা সেরে অফিসে চলে যাচ্ছে রাত। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিবে যাওয়ার পথে। বর্ষা শেষ হতে চললো প্রায়। দু,এক মাস পর পরতে থাকবে হার কাপানো শীত।
সকাল থেকেই আকাশটায় মেঘলা মেঘলা ভাব।
হলকা শিতক বাতাস বইছে। আকাশটা ঘিরে ফেললো মেঘ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– আজ কলেজে যাবোনা আমি।
– কেনো?
– ইচ্ছে করছেনা আজ। ধরে নিন এটা একটা অনুরুধ, প্লিজ।
– তো কি করবে?
কোনো নির্জন রাস্তায় নিয়ে চলুন না।
গাড়ি এসে ব্রেক চাপলো একটা নির্জন রাস্তায়। রাতের ফোন টা বাজছে। দেখে মামির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
– হ্যালো মামি, আসসালামু’আলাইকুম।
– ধুর বেটা আমি রিদ। তোর মামি হলাম কবে?
– ও তুই। পৌছেছিস ঠিক মতো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
– না তেমন সমস্যা হয়নি। এইতো মাত্র এয়ার্পোট থেকে বের হলাম।
তাই আম্মুর ফোন থেকেই তোকে ফোন দিলাম।
রিদ ও মামা মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রাখে রাত। দেখে পাশে বৃষ্টি নেই। সামনে তাকাতেই দেখে বৃষ্টির তালে তালে নাচছে সে। রাত মুখ দিয়ে একটা “চ” সুচক শব্দ করে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির দিকে হাটা ধরে। বৃষ্টি দৌড়ে এগিয়ে এসে রাতের হাত দু,টি ধরে ঘুরছে আর হাসছে। ঘুরতে ঘুরতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাতের বুকের উপর ঢলে পরে সে।
– এই বৃষ্টিতে ভিজে তো এর আগেও একবার জ্বর বাধিয়েছিলে। এখন আবার শখ উঠছে নাকি?
– হুম। অসুখ হওয়া মানেই আপনার থেকে এক্সট্রা কেয়ার পাওয়া। ওফ কি যে ভালো লাগছে।
– ওরে বাদর, এবার কেয়ার নয়। তোমার মতো বাদরের লেজ ধরে মাথায় তুলে আছার দিবো।
– সমস্যা নেই, আমার কোনো ভয় নেই, কারন আমার লেজও নেই।
বলেই রাতকে ছেরে বৃষ্টির তালে তালে নাচতে থাকে বৃষ্টি। রাত বলে উঠে,
– গাড়িতে উঠো বলছি।
– না, আমি ভিজবো আজ, আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলে যান। তবুও আজ এই বৃষ্টি ছেরে কোথাও যাচ্ছিনা আমি।
রাত এবার আর কিছু না বলে বৃষ্টির কাছে এসেই কোলে তুলে নেয় তাকে। হাটতে থাকে গাড়ির দিকে। বৃষ্টির হাতপা ছোরাছুরি। তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে আজ এখান থেকে কোথাও যাবেনা।
বারান্দায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। আজ এি বৃষ্টি দেখে মনে পরে গেলো, পুরুনো এক সৃতির কথা।
রাত না থাকায় রিদ যায় আরশিকে স্কুল থেকে আনতে। আসার পথে, সে কি তুমুল বৃষ্টি। রাস্তার পাশে একটা জায়গায় ফুলের চাষ করা হয়। সেখানে ফুল গুলো গোল খাচ্ছে বৃষ্ট ফোটায়। ফুল দেখে লাফিয়ে উঠে আরশি। তখন আরো ছোট ছিলো। রিদকে বলে উঠে, ভাইয়া আমায় ওই ফুলটা এনে দাও না। রিদ গাড়ি থামিয়ে চলে যায় সেখানে। ভিজতে ভিজতে আরশির জন্য নিয়ে আসে ফুলটা। আরশি মুখ কুচকে বলে উঠে,
– এটা না তো, ওই লালটার কথা বলছি।
রিদ আবার চলে যায়। লাল ফুলটা ছিড়ে পিরে আসতেই দেখে দুইটা কুকুর তাড়া করে আসছে তার দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কয়বার পড়ছে তার হিসেব নেই। কোনো মতো কুকুর গুলোর হাত থেকে বেচে গাড়িতে এসে বসে রিদ। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কুকুর গুলো এসে গাড়ির পাশে লাফাতে থাকে। গ্লাস থাকায় ভেতরে আসতে পারছেনা। আরশি ভয়ে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিদকে। রিদও কাপা হাতে এক হাত দিয়ে আরশিকে জড়িয়ে অপর হাত দিয়ে ড্রাইবিং করে চলে গেল সেখান থেকে।
ভাবতে ভাবতেই মায়ের ডাক পেয়ে উঠে চলে যায় আরশি। রিদের সাথে কটানো মুহুর্তগুলো কেনো বার বার মনে পরছে নিজেও জানেনা সে। হয়তো দুরুত্ব বেরে গেছে বলে।
কেটে গলো আরো কয়েকদিন।
সকালে মা আজ কেনো হটাৎ বাড়ি যেতে বলছে নিজেও যানেনা সে। আবার একা। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি ভাবলো কলেজের সময়টাতে তার খোজ নেওয়ার তেমন কেও নেই। এই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার চলে আসতে পারবে সে। কলেজে না ঢুকে। একটা গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো বৃষ্টি। কলেজ ছুটির আগেই আবার এখানে চলে আসবে সে। তাহলে কারো কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হবেনা। বাড়ির সামনে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে বৃষ্টি। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে বৃষ্টির মা।
– এসেছিস? আর কেও এসেছে?
– না মা, আমি কলেজ থেকে এসেছি, কেও জানেনা।
– আচ্ছা বস।
– এমন ইমার্জেন্সি ডাকার কারন কি মা?
– তোর রুমে যা, বুঝতে পারবি ডাকার কারনটা।
বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কিছু না বুঝার মতো করে হাটা ধরে রুমের দিকে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই যেনো অবাকের চরম সীমানায় সে। মুহুর্তেই একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে সারা শরির।
কারন বিছানায়হাত পা গুটিয়ে বসে আছে বর্ষা। যার কারনে বৃষ্টির জীবনের মোড়টা পুরাই পালটে গিয়েছিলো।
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com