লেডি কুইন । পর্ব -১৪
Happy birth day to you
Many many happy returns of the day মেহেরাব।
মেহেরাব পুরো হা করে পড়লো। শুভ্র আশফা হাসছে। লাল নীল বাতিতে ঘরটা সুন্দর করে সাজানো। সামনে বড় একটা কেক। শুভ্র বলে উঠলো
-কেমন দিলাম?
মেহেরাব কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ ও কখনো কল্পনাও করতে পারিনি এটা হবে।
মেহেরাবের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে।
অপর পাশের দরজার দিকে চোখ পড়তে হা হয়ে যায় মেহেরাব।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অপরুপ এক সুন্দরী শাড়ি পড়ে ঢুকলো।
সে আর কেউ নয় আরোহী। মেহেরাব পুরোই শকড্। পিছন থেকে নেহা বলে উঠলো
-আমাকে না জানিয়ে এতকিছু করা হলো। আমাকে জানালে তো কিডনাপটা আরো সুন্দর করা যেতো।
শুধু শুধু হয়রানি হলাম। পুলিশদের বলে দিয়েছি। মেহেরাব নেহার দিকে তাকিয়ে পড়লো।
পাশে হৃদয় দাড়ানো।”
আশফা বলে উঠলো
-সব তো আরোহীর জন্যই সম্ভব হলো। ঐ তো এত কিছু করছে।
মেহেরাব আরোহীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে আরোহী কোথা থেকে জানলো আজ আমার জন্মদিন।
ও কি আমাকে আগে থেকে চিনতো নাকি। না তা হবে কেন? আরোহীর কাছ থেকে শুনতে হবে।
কুহু এসে বললো
-যার জন্য এতো আয়োজন সেই তো কিছু বলছে না। বোবা হয়ে গেলো না তো।
শুভ্র হেসে বললো
-বোবা হওয়ার কাজই তো করা হয়েছে। ও কি বলবে মুখ দিয়ে আসছে না।
আরোহী বলে উঠলো
-হয়েছে অনেক। মেহেরাব এদিকে এসে দাঁড়িয়ে কেকটা কাট।
মেহেরাব আরোহীর কথা মতো কেকের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। আরোহী মেহেরাবের হাত ধরে একটা ঘড়ি পড়িয়ে দিয়ে
-Happy birth day। যত্ন করে রেখে দিও। হারিয়ো না।
মেহেরাবের চোখ দিয়ে আচমকা পানি গড়িয়ে পড়লো।
এরকম ভাবে একটা ক্ষ্যাত ছেলেকে সারপ্রাইজ দিবে এটাই বা কম কি।
মেহেরাব আরোহীর দিকে চেয়ে আছে। আরোহী হাতটা ধরে কেক কাটলো।
আরোহীর চুলের কিছু অংশ মুখের উপর এসে পড়লো মেহেরাব হা করে তাকিয়ে আছে।
এ যেনো কোন এক রাজকন্যাকে দেখছে। কেক কাটা শেষে আরোহী মেহেরাবের দিকে তাকালো।
শুভ্র পাশ দিয়ে ধাক্কা মেরে
-কোন রাজ্যে হারালি।
মেহেরাব ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে
-ক ক ক কই কিছু না তো।
-তো কেকটা হাতে নিয়ে খাইয়ে দে।
মেহেরাব হাতে কেক নিয়ে প্রথমে আরোহীকে তারপর সবাইকে খাইয়ে দিলো। সবাই বেশ আনন্দ উল্লাস করছে। কেউ কেউ গানের তালে ড্যান্স শুরু করে দিয়েছে।
আরোহী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো জানালায় হাত দিয়ে। মেহেরাব আরোহীর পাশে দাঁড়িয়ে
-ধন্যবাদ। আমার মতো ক্ষ্যাত ছেলের এভাবে বার্থ ডে উইস করার জন্য।
আরোহী মেহেরাবের দিকে রাগি চোখে তাকালো। মেহেরাব মাথাটা নিচু করে নিলো। আরোহী রাগে বললো
-তোর মত ক্ষ্যাত ছেলে অন্য কেউ হলে ও আমি এটাই করতাম। তোর প্রতি দয়া হয়েছে তাই করেছি। সামনে থেকে যা।
মেহেরাব কিছু না বলে চলে আসলো। কুহু পাশে যেয়ে
-এভাবে বললি কেন?
-কি করবো ও কি বললো শুনেছিস। ও কি বোঝে না আমাকে।?
-মানে
-কিছু না। ওর জন্য দয়া হয়েছে তাই করেছি।
আরোহী ওখান থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকে শাড়ি খুলে ছিঁড়তে লাগলো আর রাগে বলতে লাগলো
-ক্ষ্যাত গাধা বদল আমার আনন্দ টাই মাটি করে দিলো। এত কষ্ট করে শাড়ি পড়লাম আমাকে কেমন লাগছে একবার ও বললো না। আমি দেখতে এতটা বাজে।
মেহেরাব পাশে দাড়িয়ে ভাবছে। ও আমার জন্য দয়া করলো। গরীব দেখে কি দয়া করতে মন চাইলো। ভালো করেছে দয়া করেছে তাতে কষ্ট নেই কোনো। ওকে এভাবে দেখবো কখনো ভাবতে পারিনি। কত সুন্দর লাগছিলো। রাজকন্যা মতো দেখতে। আমি তো বার বার ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছি। ওকে দেখলে আমার আলাদা একটা অনুভূতি জেগে উঠে। কিন্তু কেন?
শুভ্র মেহেরাবের মাথায় টোকা দিয়ে
-এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস। একটা তো ট্যাংস দিতে পারিস।
– হুম ধন্যবাদ। তবে এভাবে করার কি দরকার ছিলো।
-আমরা কিছুই করিনি আরোহী আমাকে ফোন দিয়ে সবটা বলেছে তাই ভাবলাম তোকে তো কোনো ভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া হলো না তো এবার দি।
-আরোহী কিভাবে জানলো এটা।
-তোর ভর্তির কাগজ দেখছে সেখানে।
হৃদয় নেহাকে পাশে নিয়ে
-একটা মিষ্টি দাও না।
নেহা মুখ ভেংচি মেরে
-জ্বি না। আগে মাম্মিকে যেয়ে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো বিয়ে করতে চাও তখন না হয় ভেবে দেখবো দেওয়ার কথা।
-দাও না।
-বললাম তো।
নেহা চলে যাওয়া ধরলো হৃদয় হাত টেনে ধরে
-এই জন্যই তোমাকে এত ভালোবাসি।
নেহা হৃদয়ের কাছে এগিয়ে যেয়ে বুকে হাত দিয়ে কিল মেরে
-তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে গেছো।
পরেরদিন সকালে
ভার্সিটির গেইট দিয়ে মেহেরাব যখন ঢুকবে তখন একটা আওয়াজ শুনতে পেলো।
গাছ থেকে পড়ার। মেহেরাব বাইরে বাম পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা খোলা পড়ছে।
মেহেরাবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷
মেহেরাব খোলাটার কাছে গেলো। আর সেখানেই খোলার সামনে বসে খোলাটা হাত দিয়ে দেখছে।
(খোলা মানে তো বুঝেন তো নাকি। না বুঝলে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
খোলা হচ্ছে সুপারি গাছের যে শুকনো পাতাটা পড়ে ওকে ।)
আশফা আর আরোহী আসতেছিলো।
মেহেরাবকে বসতে দেখে শুভ্র আরোহী গাড়ি থেকে নেমে মেহেরাবের কাছে গেলো। শুভ্র বললো
-কি রে এভাবে এতিমের মতো বসে আছিস কেন?
মেহেরাব পিছে ফিরে শুভ্রকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে হেসে দিয়ে
-দোস্ত
-কি হয়েছে বলবি তো।
মেহেরাব খোলাটা হাতে নিয়ে শুভ্রর সামনে ধরলো। শুভ্র ও খুশি হয়ে গেলো। আশফা বোকার মতো চেয়ে আছে। শুভ্র মেহেরাবের কাছ থেকে খোলাটা কেড়ে নিয়ে
-আগে আমি বসবো তুই টানবি তারপর আমি টানবো।
-না আমি আগে বসবো তুই টানবি।
-না না আমি।
-না আমি।
দুজনে খোলাটা ধরে টানাটানি করছে। আশফা হেসে যাচ্ছে দুজনের কান্ড দেখে। তখন আশফা বলে উঠলো
-দুজনের কাউকেই বসতে হবে না। আমি বসবো দুজনে ধরে টানবা৷
মেহেরাব শুভ্র আশফার দিকে তাকিয়ে শুভ্র বললো
-কখনোই না। আগে আমি।
মেহেরাব বললো
-না আমি।
-আচ্ছা দোস্ত একটা কাজ করি টস করি যে জিতবে সেই বসবে।
-আচ্ছা
আশফা কয়েল দিয়ে টস করলো শুভ্র জিতে গেলো। শুভ্র হেসে উঠলো। মেহেরাব বললো
-আমার সাথে চিট করা হয়েছে।
আশফা বলে উঠলো
-কই না তো। একদম লিগার করছি।
-ঠিক আছে। আমার ও টাইম আসবে।
শুভ্র খোলার উপর বসলো। শুভ্র বললো
-তুই ঐ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবি৷ আমি আসার সময় ওখান থেকে তোকে টেনে আনবো।
-ঠিক আছে।
আশফা বললো
-আমি কি দাড়িয়ে থাকবো।
মেহেরাব বললো
-আপনি ওর সামনে বা পিছনে বসেন। দুজনকে এক সাথে টানি।
-তুই পারবি নাকি।
-কেন পারবো না অবশ্যই পারবো।
আশফা শুভ্রর সামনে বসলো শুভ্র পিছনে। আশফা খোলার পাতা কিছুটা ধরলো।
মেহেরাব টানা শুরু করলো। অনেকে দেখে হাসছে। দারোয়ান বলে উঠলো
-তোমরা তো ছোট বেলার সৃতি মনে করিয়ে দিলে। ছোট থাকতে কত চড়তাম।
আর এখন এসব কোনো কিছু নেই।
মেহেরাব বলে উঠলো
-প্রানী যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে সময়ের সাথে এই গুলো ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে একই সাথে৷ এখন আছে শুধু ফোন। কিন্তু এটা জানে না এটার মজা কতটা আনন্দ দায়ক।
মেহেরাব টেনে নিয়ে চলে গেলো জায়গা মতো তখনি আরোহী এসে বাইক থামিয়ে
-কি হচ্ছে এসব।
আশফা বলে উঠলো
-দোস্ত অনেক মজা রে। তুই এসব বুঝবি না। গাড়িতে চড়ার থেকে এতে অনেক আনন্দ
-তাই নাকি। কেমন মজা আমি ও দেখি একটু৷
মেহেরাব বলে উঠলো
-শুভ্র এখান থেকে না আমাকে নিয়ে যাওয়ার পড়ে তারপর বসবে।
-ঠিক আছে।
আরোহী বলে উঠলো
-না আমি বসবো।
মেহেরাব খোলার উপর বসে পড়লো ৷
শুভ্র টানতে যাবে তখনি আরোহী মেহেরাবের পিছনে বসে পড়লো। মেহেরাব বললো
-আরে কি করছেন পড়ে যাবেন এভাবে বসলে।
-আমি যা বলার তো বলেছি
আশফা বললো
-ঠিক আছে দুজনে বোস আমরা টানি।
-কিন্তু।
শুভ্র থামিয়ে দিয়ে
-কোন কিন্তু না। আরোহী কে সামনে দে।
মেহেরাব উঠে আরোহীকে সামনে দিলো মেহেরাব পিছনে বসলো। আরোহী বললো
-পড়ে যাবো না তো। ভয় লাগছে।
আশফা আরোহীর হাতে খোলার পাতা ধরিয়ে দিয়ে
-এটা ধরে বোস পড়বি না।
শুভ্র আর আশফা ধরে দিলো জোড়ে টান কিছুদূর হাসতে হাসতে গেলে ও পিছন থেকে
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com