ভাবনায় তুমি । লিখা- মেহেদী হাসান রিয়াদ
শাড়ি ও ভারি গহনা সামনে রেখে বসে আছে রিমা। একটু পরেই এগুলো আকড়ে একটি নতুন সাজে রুপ নিবে সে। বিয়ে বাড়িতে চারপাশে হই হুল্লা থাকলেও রিমার মাঝে ফিনফিনে নিরবতার বিরাজ। এখনো চলছে মনের মাঝে সঠিক সিদ্ধান্তটার খোজ।
দুটি ভালোবাসার ঠিক মধ্যখানে বসে আছে রিমা। কোন পথে পা বাড়ানোটা উত্তম তা এখনো ভাবতে পারছেনা সে। কিছুক্ষন পরই একগাদা মেয়ে এসে হাজির হবে রুমে। রিমাকে সাজানোর জন্য তাদের মাঝে শুরু হবে এক অন্যরকম অস্থিরতা।
ফোনটা অন করে রিমা। রিদের নামের পাশে সবুজ বাতিটা এখনো জল জল করছে। তার মানে সে এখনো অনলাইনে।
আজ রিমার বিয়ে। কিন্তু রিদ এখনো অনলাইনে ঘুরাঘুরি করছে, তার কি কষ্ট হচ্ছেনা আজ?
রিদকে মেসেজ দিবে তার আগেই ফোনের স্কিনে ভেষে উঠলো তুষারের নাম। তুষার তার হবু স্বামি। যার সাথে রিমার আজ বিয়ে। ফোনটা কেটে দেয় রিমা।
একটা বড় দির্ঘশ্বাস নিলো সে। তুষার অস্থিরতায় আবার ফোন দিলো রিমাকে। ফোনটা রেখে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে থাকে রিমা।
কারন তার যে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাকি।
দুইমাস আগে,,,,,
— আমি ভার্জিন না।
কথাটা কোনো সংকোচ ছারাই বলে দিলো রিমা।
রেস্টুরেন্টে একে অপরের মুখুমুখি বসে আছে রিদ ও রিমা। রিদের মুখে কোনো কথা নেই। চুপচাপ বসে চেয়ে আছে রিমার দিকে।
— ছেলেটার নাম তুষার, তার সাথে আমার ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো। একবার না, দু,বার। প্রথম প্রথম আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু ও আমায় ছেরে যাওয়ার কথা বলায় আমি আবেগের বসে রাজি হয়ে যাই। কে জানতো, এতো কিছুর পরও সম্পর্কটা আর রইবেনা? তুষার যে আমার এই ভাবে ঠকাবে তা আমার জানা ছিলো না। হটাৎ করেই হারিয়ে গেছে সে।
কথাগুলো বলেই চখের এক কোন থেকে পানি মুছে নেয় রিমা।
কয়দিন পর যেই মেয়েটা তার বৌ হবে তার মুখে এমন কথা শুনে বুকটা একটু কাপুনি দিয়ে উঠে। বুকের ভেতরটা কেমন চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে। রিমাকে পথম দেখতেই রিদের দৃষ্টি আটকে যায়। যাকে সহজ ভাষায় বলে ভালো লাগে। ভেবেছিলো রিদ আজ রিমার মতামত জানবে। কিন্তু তাকে এমন কথা শুনতে হবে সে হয়তো কপ্লনায় ও ভাবেনি। নিরবতা কাটিয়ে রিমা বলে উঠে,
— হয়তো একসময় আমি আপনার বৌ হতেও পারি। তখন যদি কথা গুলো আপনার কানে যায়। আপনি নিশ্চই কষ্ট পাবেন। আর আমার মনে হলো সত্যটা আপনার জানা দরকার। তাই আমি আমার গোপন কথা গুলো আপনার সাথে শেয়ার করলাম। কারণ আমি চাইনা তুষারের মতো কাওকে মিত্যা বলে ঠকাতে।
এবার রিদ বলে উঠে,
— আপনি কি এখনো তাকে ভালোবাসেন?
রিমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কারণ তুষারের জন্য মনে এখনো একটা শুন্যতা কাজ করে। সাথে একরাশ ঘৃনা ও।
রিমার নিরবতার ভাষা বুঝতে পেরে চুপ করে রইলো রিদ।
রিমা রিদের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
— আমি জানি আপনি এখন বাসায় গিয়ে বলে দিবেন যে আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি। তাতে আমার প্রব্লেম নেই। কিন্তু আমার সত্যটা আমি আপনাকে জানালাম। এখন সিদ্ধান্তটা আপনার। জদি বলুন তাহলে হ্যা, আর জদি না বলুন তাহলে না। শুনলাম আপনি আমায় পছন্দ করেই বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এতে আমার কোনো ভিন্ন মত নেই। সম্পর্কটা কি আগাবে নাকি এখানেই থেমে যেবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তটা আপনার। আপনার আর কিছু জিগ্গেস করার থাকলে বলুন। আমার যেতে হবে।
রিদ ঠান্ডা মাথায় বললো, চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। রিমা যেতে না চাইলেও রিদের কথায় সে রাজি হয়।
গাড়িতে বসে ড্রাইবিং করছে রিদ। একটু পর পর আড়চোখে রিমার দিকে তাকাচ্ছে।
জানালার কাচটা নামিয়ে একহাতের উপরে মাথাটা রাখে রিমা। বাতাসে কানের পাশে পরে থাকা চুলগুলো উড়ছে। কিছু এসে পরছে মুখে। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রিমার।
রিমা যে কোনো এক ভাবনায় মগ্ন তা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে রিদ।
মুখে পরে থাকা চুকগুলোর জন্য মুখটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছেনা রিমার।
ইচ্ছে করছে স্নিদ্ধ চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিতে। কিন্তু এমন অদ্ভুত ইচ্ছা জাগার কারনটা বুঝতে পারছেনা রিদ। রিমা তার কি হয়? উত্তর আসবে কেও না। তাহলে ইচ্ছেটা এমন অদ্ভুত কেনো?
এই মুহুর্তটায় কেনো জানি মনে হচ্ছে বৌ নিয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছে রিদ। ভাবতেই নিরবতার মাঝেই একটু হেসে উঠে সে।
রিমা একটু ভ্রু কুচকে রিদের দিকে তাকি য়ে বলে,
— হাসলেন কেনো?
— না, এমনি।
আর কিছু না বলে ড্রাইবিং করছে রিদ।
গাড়ির ব্রেক চাপায় সামনের দিকে একটু ঝুকে পরে রিমা।
এসে গেছে তার বাড়ির সামনে। নেমে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো রিমা। রিদ তাকিয়ে আছে তার দিকে। অদ্ভুত একটা মেয়ে।
রিমা ফিরে রিদের কাছে এসে ছোট্ট করে বলে, থ্যাংক্স।
বাসায় প্রবেশ করেই দেখে বাবা বসে বসে টিভি দেখছে।
রিমাকে দেখেই বলে উঠে,
— কিরে মা ছেলেটা পছন্দ হয়েছে তোর?
— জানিনা।
— এটা কেমন উত্তর? প্রত্যেকবার যেই ছেলের সাথে তুই দেখা করতে যাস সেই না করে দেয়। আর ওর সাথে আমার কথা হয়েছে আগে, ও তোকে পছ্ন্দ করে বলেই এতোদুর এগিয়েছে। এখন শুধু তোমার মতামতটা জানতে চাই। আমি শুনতে চাইছি হ্যা অথবা না।
— তোমাদের ইচ্ছে, বাবা।
,
,
,
বাসা্য ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে যায় রিদের। বাসায় প্রবেশ করে নিজের রুমে চলে যায় রিদ। ওয়াশ রুম ফ্রেস হয়ে বের হয় সে। নিচে গিয়ে সোফায় বসে তার ছোট বোন, রিয়ার পাশে।
রিয়া হকচকিয়ে বলে উঠে,
— কি রে ভাইয়া, ভাবি কি পেতে চলছি? মানে ঠিকটাক আছে সব?
তখনই রিদের মা নাস্তা নিয়ে এসে বসে তার পাশে।
— তোর ভাইকে পছন্দ করবেনা এমন মেয়ে আছে নাকি?
— তা আর বলে লাভ কি? অনেক মেয়ের তো বিড়ালও পছন্দ হয়।
রিয়া খেয়াল করলো রিদ আড় চোখে তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রিয়া আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
— আরে আমি বলছি কি, বিড়াল তো দেখতে খুব কিউট। আর আমার ভাইটা তার চেয়েও বেশি।
রিদ সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলে উঠে,
— তবেরে,,,,,,,,,
— আহ্ কি শুরু করেছিস তোরা? এখন একটা সিরিয়াস মোমেন্ট এ আছি।
— দেখোনা মা, তোমার বাদর ছেলেটা শুধু আমায় কথায় কথায় মারে।
— মার খাওয়ার মতো কাজ করলে তো মার খাবিই।
— মা তুমিও ওর পক্ষে? আমি তো ভাবির কথাই জানতে চেয়েছি তাই না?
রিদের মা মাথা নেরে হেসে এবার রিদের দিক তাকায়,
— আচ্ছা, ওসব বাদ দে, এখন বিষয়টা কি পজেটিভ নিবো নাকি ন্যাগেটিভ?
— আমার কিছু বলার নেই মা, তোমরা কথা বার্তা আগাতে পারো।
— আলহাম্দুলিল্লাহ্।
,
,
রাতে ছাদে দোলনায় বসে আছে রিদ। চারপাশে নিরব পরিবেশ। চাদের আলোয় ছাদের আনাচে কানাচে কি আছে তা পরিস্কার না হলেও কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।
ছাদে থাকা ফুলের টপের ফুল গুলো ও স্থির হয়ে আছে। তা দেখে বুখাই যাচ্ছে। আজ একটুও বাতাস নেই। ঘুমিয়ে গেছে প্রকৃতি। জেগে আছে চাদ ও তার পাশে কিছু তারা।
এর মাঝে সে রিমাকে নিয়ে ভাবনায় মগ্ন।
“সত্যি মেয়েটা অনেক অদ্ভুত, মনের মাঝে কোনো প্যাচ নেই তার। চাইলেই সে সব লুকাতে পারতো। কিন্তু তা সে করেনি। ভালোবাসার মানে সেই খুব ভালোভাবে বুঝে, যাকে কেও একজন খুব নির্মম ভাবে ছেরে গিয়েছে। যেমনটা, হয়েছে রিমার সাথে।
কিন্তু এতো কিছু শুনলাম তার সম্পর্কে। তাও কেনো আমার ভাবনার রাতের আকাশটা তার তারারা এসে দখল করে নিচ্ছে? আর সে তো আর ইচ্ছে করে ঠকেনি তাকে ঠকানো হয়েছে।
হাতে দুটু কপি নিয়ে রিদের পাশে এসে বসে রিয়া। কপির কাপটা নিয়ে রিয়াকে সেখান থেকে বিদায় করে দিলো রিদ।
— কি হলো ভাইয়া, আজ মনে হয় আমায় বিদায় করার জন্য তুমি অস্থির হয়ে আছো?
,
,
হাতে থাকা পোনটা বেজে উঠতেই, তা রিসিভ করে রিমা।
— আসসালামুআলাইকুম,,,
— ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছেন রিমা?
— জ্বি, আলহাম্দুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
— আলহাম্দুলিল্লাহ্।
— নিশ্চই সরি বলার জন্য ফোন দিলেন তাই না?
— আমি ভেবে দেখলাম।
— কি? না বলে দেওয়াই ঠিক তাইতো?
— এতো বুঝেন কেনো? আপনি চাইলেই সব লুকাতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেন নি। আপনার সততায় আমি মুগ্ধ।
— তাহলে আপনার কোনো সমস্যা নাই?
— আপনাকে আমি যেদিন প্রথম দেখি ওইদিনই ভালোলেগেছিলো। এর পর ধিরে ধিরে তা আরো বারতে থাকে। হয়তো আপনি ছলনায় স্বিকার হলেন। তাই বলে কি, আপনাকে মানে আমার ভালো লাগাকে আমি দুরে ঠেকে দিবে?
— তার মানে উত্তরটা আমি হ্যা, ধরে নিচ্ছি? তাইতো?
,
,
,
বেলকনিতে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রিমা। কেনো জানি খুব কাদতে ইচ্ছে করছে। কেনো জীবনের মাঝ পথে তুষারের সাথে পরিচয় হলো তার? পরিচয় না হলেই বোধ হয় ভালো হতো। পরিচয় হলো ভালো কথা, হটাৎ কেনো হারিয়ে গেলে? একটিবারতো বলে যেতে পারতে। তোমার মুখে ভালোবাসিনা শব্দটা শুনলে ও হয়তো তোমায় ভুলে থাকার চেস্টা করতাম। তোমার শুন্যতায় এভাবে আমায় কাদাতো না।
আর রিদ, সে কিনা আমায় ভালো লাগে, এখনো ভালোবাসা পর্যত আগায়নি তুবুও আমার সব কিছু, হাসি মুখে মেনে নিলো? আর তুমি? এতো কিছু করেও হটাৎ হরিয়ে গেলে? একটি বার বলে গেলে কি হতো? আমার ভাবনায় যে প্রতিটা খনেই তুমি ছিলো। ছিলো তোমার প্রতি ভালোবাসা। আর তুমি তা পরিবর্তন করে নিজেকে ঘৃনার পাত্রই বানিয়ে নিলে? তুমি কি ফিরে আসবে আবার আমার জীবনে? জানি তুমি আসবেনা। জদি আসতেই তাহলো এতোটা দিন আমায় এভাবে কাদাতে না। তুমি খুব খারাপ তুষার।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com