Lady Queen । লেডি কুইন । পর্ব -০৩
ভার্সিটির ভেতর সাদা রংয়ের একটা গাড়ি ঢুকলো। গাড়ি থেকে আশফা আর শুভ্র নামলো।
আশফার চোখটা পুকুর পাড়ের দিকে গেলো। সাথে সাথে
-ওরা আজকে মনে হয় কাউকে পেয়েছে। চলো যোগ দেওয়া যাক।
-ঠিক আছে চলো।
আশফা আর শুভ্র এগিয়ে গেলো। “
মেহেরাব পানি থেকে উপরে আসতেই মেহেরাবের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেলো।
মেহেরাব হাতে স্যান্ডেল নিলো। আরোহী সহ সবাই হাসতে লাগলো।
মেহেরাব ওদের দিকে তাকিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকালো। সবাই চেয়ে পড়লো ওর দিকে। মেহেরাব পকেট থেকে বাটন নকিয়া ১২১২ মডেলের ফোন বের করলো। পিছনের ব্যাকপার্ট নেই। এটা দেখে আবারো হেসে উঠলো সবাই। কুহু বলে উঠলো
-ভাই রে আমার লাইফে এই ফাস্ট এমন একটা ক্ষ্যাত বলদ ছেলে দেখলাম।
কি অবস্থা ওর। হাহাহাহাহাহা।
কুহুর সাথে সবাই শায় দিলো।
কাব্য স্যান্ডেল মাটিতে রেখে ফোনের ব্যাটারি খুলে ফোনটা তাকাতাকি করছিলো হাতের উপর।
আর বলছে। ইস আমার ফোনটা পানি খেয়ে মনে বেহুশ হয়ে গেছে।
রৌদ্র পাবো কোথায় এখন। ফোন তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে রৌদ্রে দিয়ে আবার সুস্থ করে তুলবো।
এর ভেতর আরোহী মেহেরাবের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
মেহেরাব পুকুরের দিকে দৌড় দিলো।
সবাই হাসিতে মেতে উঠলো। আশফা এসে আরোহীকে বললো
-আজকে আবার কোন মুরগি পেলি৷ “
-আর বলিস না পুরোই আনকমন । এ তো দেখি পুরোই আস্তো ক্ষেত।
-কই সে আমরা ও একটু দেখি। “
-ঐ তো ডুব দিচ্ছে। তোরা থাক আমার একটু কাজ আছে। এই তোরা চল।
আরোহী ওদের নিয়ে চলে গেলো। আশফা আর শুভ্র দাঁড়িয়ে থাকলো।
শেষ এন্টারটেইনমেন্ট এরা দুজনেই দিয়ে শেষ করে।
মেহেরাব ফোনটা পেয়ে খুব খুশি হয়ে গেলো।
তারপর পুকুর থেকে উপরে উঠলো। মেহেরাবকে দেখে আশফা আর শুভ্র শকড্ খেলো।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে শুভ্র বললো
-তুই এখানে কেন?
মেহেরাব শুভ্র আর আশফাকে দেখে চমকে উঠলো। মাথাটা নিচু করে
-আমি এই ভার্সিটিতেই চান্স পেয়েছি।
শুভ্র মেহেরাবের কাছে এগিয়ে যেয়ে
-আরে গাধা তুই এটা আমাকে বলবি না। তাহলে তো তোকে এই অবস্থা ফেস করতে হতো না।
আশফা শুভ্রর পাশে এসে
-শুধু শুধু ওকে বকে কি হবে। ও কি জানতো নাকি।
আর আমরা ও যে এই ভার্সিটিতে ও জানলে তো বলতো।
মেহেরাব আশফার কথায় শায় দিলো৷”
শুভ্র মেহেরাবের কাঁধে হাত দিয়ে
-কি হয়েছে ফোনে।
-আরে কি করছিস৷ কাঁধ থেকে হাত নামা। তোর গায়ে ময়লা লেগে যাবে।
শুভ্রের রাগ হয়ে গেলো। মেহেরাবকে জরিয়ে ধরে
-তুই কি ভাবিস আমাকে বল তো। তোর বন্ধু আদ ও ভাবিস আমাকে।
মেহেরাব অবাক হয়ে
-এ কি করলি। পুকুরের পচা পানি তোর গায়ে গেলো। সবাই কি বলবে এখন। “
-যে যায় বলুক না কেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
আশফা হাসি মুখে বলে উঠলো
-এবার তো বন্ধুকে ছাড়ো।
শুভ্র মেহেরাবকে ছেড়ে দিতেই আশফা শুভ্র কে জরিয়ে ধরলো। মেহেরাব হা হয়ে গেলো।
আরোহী কুহু লিমন তাসনিম সবাই রাস্তা দিয়ে হেলমেট পড়ে রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে ছুটছে।
ওদের দেখে বোঝা যাবে না ওরা মেয়ে। যারা চিনে তারা তো ভালো ভাবেই চিনে। কুহু আরোহীকে বলে উঠলো
-যায় বলিস আজকে কিন্তু সেই মজা পেয়েছি।
-হ্যা এটা স্বরণিও করে রাখা দরকার।
-এই যুগে এমন ছেলে আছে বিশ্বাসি হচ্ছে না।
-যায় বলিস মজা করার মতো তো একটা ছেলেকে পাওয়া গেলো।
-হ্যা রে।
সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো।”
*
আশফা শুভ্র কে ছেড়ে দিয়ে
-এবার তবে তিনজনই ঠিক আছি।
শুভ্র হাসিমুখে
-হুম।
মেহেরাব তো দুজনের কান্ড দেখে অবাক। কিভাবে এরা এত সহজে এইগুলো করলো।
নিজেদের পোশাক নষ্ট করে ফেললো। মেহেরাব শুভ্রকে বললো
-আচ্ছা আমি যায়। সাইকেল টা ঠিক করতে হবে। “
-আমাদের সাথে গাড়িতে করে যা। আর সাইকেলটা পাশের গ্যারেজে রাখলে হবে।
-না রে তোরা যা। আমি সাইকেলটা রেখে চলে যাবো।
আশফা বলে উঠলো
-আমাদের সাথে যেতে হবে। আমরা নামিয়ে দিবো।
-আমার একটু কাজ আছে। সামনেই তো বাসা আমার। শুভ্র।
-ঠিক আছে। বিকালে বের হইস।
-কেন?
-তোকে বের হতে বলেছি বের হবি। ওকে।
আশফা আর শুভ্র চলে গেলো। মেহেরাব সাইকেলটা নিয়ে গ্যারেজে দিলো।
তারপর রাস্তা দিয়ে হেটে বাসায় গেলো।
দুপুর দুটো
আরোহীরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। চোখটা শুধু চারপাশ ঘুর ঘুর করছে সবার।
কিছুক্ষণ পর দুজন মেয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকলো।
পরণে টি শার্ট আর জিন্স। মাথার উপরে কালো সানগ্লাস।
গলায় লকেট। মুখে মেকাপ করা। আরোহী চোখের ইশারা দিলো ।
লিমন আর কুহু উঠে রেস্টুরেন্টের দরজার পাশের টেবিলে যেয়ে বসলো।
মেয়ে দুজন খাবার অর্ডার করলো। একজন ওয়েটার এসে আরোহীর সামনে দাঁড়িয়ে
-ম্যাম আপনারা সেই ১ঘন্টা যাবত বসে আছেন৷ কোনো খাবারের অর্ডার করছেন না৷
শুধু শুধু বসে থেকে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি করবেন না।
ম্যানেজার আমাদের গালিগালাজ করছে।
আরোহী কথাটা শুনার সাথে সাথে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলতে শুরু করে।
রাগ উঠে যায়। আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে
-তোর ম্যানেজারকে এখানে ডেকে নিয়ে আয়।
মেয়ে দুটো কথা আরোহীর কর্কশ কথা শুনে ওর দিকে তাকালো।
কিছুক্ষণ পর দুটো ছেলে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে মেয়ে দুটোর টেবিলের ওখানে চেয়ারে বসলো।
এর ভেতর ম্যানেজার চলে আসলো।
মেয়ে দুটো হাতের ইশারায় ম্যানেজারকে ডাকলো। ম্যানেজার এগিয়ে গেলো।
একটা মেয়ে ম্যানেজারকে ফিসফিসিয়ে
-আপনাকে না বলছি এই টাইমটা কেউ যেনো না থাকে গেইট এ তালা দিবেন।
তাহলে ওরা এখানে কেন?
-আর বলো না সেই যে বসে আছে উঠেয় না। কি করবো।
-ওকে ওদের এখান থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন না হলে তো,
ম্যানেজার মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে
-জানি। জানি। ওয়েট একটু।
ম্যানেজার আরোহীকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ম্যানেজারের
কলার ধরে মেয়ে দুটোর টেবিলের উপর ডাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
সাথে সাথে রেস্টুরেন্টের ভেতর ১০ জন ঢুকে পড়ে শর্ট গান নিয়ে।
ওয়েটার সহ সবাই চুপসে গেলো৷ ছেলে মেয়ে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।
আরোহী মেয়ে দুটের কাঁধে হাত রেখে
-এত ব্যস্ত কিসের বসো৷ গল্প করবো তোমাদের সাথে।
চারজনে বসে পড়ে
আরোহী একটা চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসে
-আমাকে কি তোমাদের সাথে নিবে। পার্টনার হিসেবে। “
একটা মেয়ে বললো
-আপনি কি বলছেন? আমাদের এভাবে আটকানোর মানে কি? আমি কিন্তু পুলিশ কমপ্লেন করবো।
আরোহী মুচকি হেসে, ফোনটা বের কর দিয়ে
-তাই। নে ফোন কর। আসুক পুলিশ তারপর বাছারা তোমরা কই পলাবা। “
মেয়ে দুটো আর ছেলে দুটো ঢোক গিললো।
আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে চোখের ইশারা করতে লিমন সহ চারজন ছেলে দুটোকে উঠিয়ে
পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে রাখলো৷
মেয়ে দুটোর থেকে কুহু ও কিছু প্যাকেট বের করে টেবিলে রাখলো।
হঠাৎ করে চোখটা বাইরের দিকে গেলো।
প্যান্ট সুট পড়া একটা লোক কালো বিবকেস নিয়ে এদিকেই আসছে।
আরোহীর ইশরায় সবাই বসে পড়লো। গান গুলো ও সাইডে রাখলো।
আরোহী পাশে আড়াল করে বসলো।
লোকটা ঢুকে ওদের সামনে এসে একটা চেয়ারে বসে বিবকেসটা এগিয়ে দিয়ে
-এখানে সব টাকা আছে। মালগুলো দাও আমাকে যেতে হবে৷ আর এইটা ম্যানেজারের।
লোকটা টেবিলের তল থেকে হাত বাড়ালো।
কারণ এখানে আজ লোকজন আছে। হাত বাড়িয়ে রেখে আছে কিন্তু অন্যজন হাত দিচ্ছে না।
লোকটা চোখের ইশারা করলো কিন্তু কেউ কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
লোকটা ক্ষিপ্ত হয়ে
-কি সমস্যা কি। টাকা নাও দাও। না হলে কেউ বাঁচবে না।
আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে
-আগে তো নিজে বাচো।
লোকটা হা হয়ে। থ ম খেয়ে
-লে লে লে ডি কুইন।
লোকটা চেয়ার থেকে বিবকেস নিয়ে দৌড় দিতে যাবে তখন আরোহীর লোকজন ধরে ফেলে।
লোকটা ঘাবড়ে বলে উঠলো
-লেডি কুইন আমাকে যেতে দাও না হলে বসের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।
-নিজে তো আগে বাঁচো তারপর তোমার বসকে দেখবো।
আরোহী ম্যানেজারের সামনে দাড়িয়ে
-কতদিন ধরে চলছে এমন কারবার। তুই জানিস না আমার শহরে এসব নিষিদ্ধ।
তাই তো বলি এই রেস্টুরেন্টে ছেলে মেয়েদের এতো আনাগোনা কেন?
সবাই এই ড্রাগস্ নিতে আসে। নষ্ট করে ফেলবি শহরটা আর আমি চুপচাপ তাই দেখবো।
আরোহী রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে যাবে
তখনি একটা মেয়ে পিস্তল উঠিয়ে গুলি করতে যাবে
তখনি অপর পাশ থেকে একজন মেয়েটার হাতে গুলি করে বন্ধুকটা হাত থেকে পড়ে যায়।
সবাইকে কালো কাপড় পড়িয়ে দিয়ে নিয়ে চলে যায়।
পরেরদিন
মেহেরাব সাইকেল চালিয়ে ভার্সিটির বড় গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো।
সবাই মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলো বড় বড় করে আছে সবাই।
মেহেরাবের সাইকেলের সামনে এসে একজন দাঁড়িয়ে পড়লো৷
মেহেরাব তো পুরো অবাক হয়ে গেলো
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com